➤ ইউক্রেনের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা চুক্তি করবে যুক্তরাষ্ট্র
➤ রাশিয়ার জব্দ করা সম্পদ ইউক্রেনে ব্যবহার করতে চায় জি-৭
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির নিজ শহর দ ক্রিভি রিহ শহরে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত নয়জন নিহত ও ২৯ জন আহত হয়েছে। ইউক্রেনের প্রসিকিউটর জেনারেলের কার্যালয় জানিয়েছে, গত বুধবার একটি রুশ ক্ষেপণাস্ত্র আবাসিক ভবনে আঘাত হানলে পাঁচ শিশুসহ অনেকে আহত হন। এর আগে চারজন নিখোঁজ হওয়ার খবরও পাওয়া গেছে।
জরুরি পরিষেবা, পুলিশ এবং স্বেচ্ছাসেবকরা এখন ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দিয়ে চিরুনি অভিযান চালাচ্ছেন। ঘটনাস্থলে আনা হয়েছে অনুসন্ধান কুকুরও। ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় জরুরি পরিষেবা ডিএসএনএস-এর পোস্ট করা একটি ভিডিওতে একজন আহত নারীকে ধ্বংসাবশেষ থেকে স্ট্রেচারে করে নিয়ে যেতে দেখা যায়। এছাড়া হামলার পর এলাকায় আগুন নেভাতে দমকল কর্মীদের দেখা যায়। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির নিজ শহরে কথিত হামলার বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেনি। নিহতদের আত্মীয় ও বন্ধুদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে জেলেনস্কি বলেছেন, প্রতিদিন এবং প্রতি ঘণ্টায় রুশ সন্ত্রাস প্রমাণ করে যে, ইউক্রেনকে অবশ্যই বিমান প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করতে হবে।
এদিকে ইতালিতে শুরু হওয়া বিশ্বের শীর্ষ ধনী দেশগুলোর জোট জি-৭ সম্মেলনের সাইডলাইনেই ইউক্রেনের সঙ্গে ১০ বছর মেয়াদি নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষর করবে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএনকে বিষয়টির সঙ্গে যুক্ত একটি সূত্র বিষয়টি জানিয়েছে। সূত্রটি জানিয়েছে, ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের অন্য কোনো সরকার চাইলে এই চুক্তি পাল্টাতে পারবে।
যুক্তরাষ্ট্র ওই ইউক্রেনের মধ্যে দীর্ঘ কয়েক মাসের আলোচনার পর এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে যাচ্ছে। এই চুক্তির খসড়া অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীকে ১০ বছরের জন্য প্রশিক্ষণ, অস্ত্র উৎপাদনে সহযোগিতা বৃদ্ধি, সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে এবং গোয়েন্দা তথ্য শেয়ার বাড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হবে। তবে এই চুক্তিটি যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশে হতে যাওয়া চুক্তি; যা পরবর্তী যেকোনো প্রেসিডেন্ট চাইলে না-ও মানতে পারেন।
চুক্তির বিষয়টির সঙ্গে যুক্ত দুটি সূত্র সিএনএনকে জানিয়েছে, এই চুক্তিতে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষার জন্য একটি নির্দিষ্ট আর্থিক কোনো অঙ্গীকার করা হয়নি। চুক্তির একটি বর্ধিতাংশ রূপরেখা দেবে যে, কীভাবে বাইডেন প্রশাসন নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে দেশটির পার্লামেন্ট কংগ্রেসের সঙ্গে সহযোগিতা করতে চায়। বিশেষ করে ইউক্রেনকে সমর্থন করার জন্য প্রয়োজনীয় দীর্ঘমেয়াদি তহবিল সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে কংগ্রেসের সঙ্গে মিলে কাজ করবে বাইডেন প্রশাসন।
অপরদিকে, রাশিয়ার জব্দ করা সম্পদ নিজ স্বার্থে বিশেষ করে ইউক্রেনের জন্য ব্যবহারে সম্মত হতে পারে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ৭ দেশের জোট জি-৭। গতকাল থেকে ইতালিতে শুরু হওয়া এই সম্মেলনে সদস্য দেশÑ যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, কানাডা, ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি ও জাপান ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি দেশের নেতারা অংশগ্রহণ করবেন। যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া প্রস্তাব অনুসারে, রাশিয়ার জব্দ করা সম্পদ থেকে জি-৭ ভুক্ত দেশগুলো প্রতিবছর ইউক্রেনের জন্য পাঁচ হাজার কোটি ডলার তহবিল সংগ্রহ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে রাশিয়ার অর্থনীতিকে আরও চাপে ফেলার পরিকল্পনা করেছে জোটটি। রাশিয়ার কাছ থেকে জব্দ করা জি-৭ভুক্ত ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে থাকা ৩২ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের সম্পদের সুদ থেকে প্রাপ্ত অর্থ ইউক্রেনকে ঋণ আকারে দেওয়া হবে। রাশিয়া ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন আক্রমণের পর পশ্চিমা দেশগুলো পর্যায়ক্রমে এসব সম্পদ জব্দ করে। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসারে, কোনো দেশ রাশিয়ার কাছ থেকে জব্দ করা সম্পত্তি ইউক্রেনকে দিতে পারবে না। কিন্তু জি-৭ যদি এই পরিকল্পনা পাস করে, তবে হয়তো সরাসরি না দিলেও সেই সম্পদ থেকে অর্জিত সুদ ইউক্রেনকে দেওয়া সম্ভব হবে, যা দেশটিকে রণক্ষেত্রে দারুণ সুবিধা দেবে।


























