১২:৪২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ধাপে ধাপে বহাল বাজার সিন্ডিকেট

◉ সরকারের বাজার অভিযান জোরদার
◉ সবজির বাজারে হাতবদলের সিন্ডিকেট
◉ এই অদক্ষ বাজার ব্যবস্থাকে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে ঢাকা চেম্বার
➥উৎপাদক থেকে ভোক্তা পর্যায়ে দাম বাড়লেও উৎপাদকরা ন্যায্য মূল্য পান নাÑ আশরাফ আহমেদ, সভাপতি, ঢাকা চেম্বার

ভোগ্যপণ্যের বাজারে সিন্ডিকেট আছেÑ সব সময় বলা হয়। কিন্তু কোথায় কীভাবে সিন্ডিকেট হয় সে ব্যাপারে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে তেমন কোনো তথ্য ছিল না বা থাকলেও সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা হতো না। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের গত আড়াই মাসের মেয়াদে বাজারে অভিযান বেশ জোরদার করা হয়। এসব অভিযানে কোন পণ্যে কোথায় সিন্ডিকেট বা কারসাজি হচ্ছে তা অনেকটাই দৃশ্যমান হয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অভিযানেও তথ্য মিলেছে ভোগ্যপণ্যের বাজারে ধাপে ধাপে সিন্ডিকেট রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, একেক পণ্যে সিন্ডিকেট হয় একেকভাবে। যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠান বাজার তদারকি করছে তাদের পর্যালোচনায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।
বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই ভোগ্যপণ্যের দাম আকাশচুম্বী হয়েছে। ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে দেশের মানুষের পকেট খালি করলেও সরকার ছিল নির্বিকার। এ কারণে বাজার আরও বেসামাল হয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষ নিত্যপণ্যের বাজারের এই দুর্বিষহ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ চেয়েছিল। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর প্রত্যাশা ছিল এবার হয়তো ভাঙবে বাজার সিন্ডিকেট, কমবে ভোগ্যপণ্যের দাম। বর্তমান সরকারের আড়াই মাস পার হয়ে গেলেও দেশের সাধারণ মানুষের সে আশা পূরণ হয়নি বরং ডিম, সবজি, মাছ-মাংস, চালসহ অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দাম আরও বেড়ে গেছে। এতে ক্ষোভ বাড়ছিল ভোক্তাদের।

বর্তমান সরকার দাম কমাতে বেশকিছু পণ্যের শুল্ক ছাড়সহ আরও কিছু পদক্ষেপও নিয়েছে, তাতেও যখন কাজ হচ্ছিল না- সরকার বাজার অভিযান জোরদার করে। একসঙ্গে মাঠে নামায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তিন উপ-সচিবের নেতৃত্বে তিনটি টিম। জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তরের টিমও নামে ঢাকাসহ সারা দেশে। এছাড়া প্রতিযোগিতা কমিশন, বিএসটিআই, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরও নড়েচড়ে বসে। একই সঙ্গে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) কম দামে বেশকিছু নিত্যপণ্য বিক্রি শুরু করে এবং খাদ্য অধিদপ্তরও ভর্তুকি মূল্যে চাল-আটা বিক্রি শুরু করে। আবার সরকার প্রতিবেশী দেশ থেকে ডিম এবং কাঁচামরিচের আমদানিও উন্মুক্ত করে দেয়।
করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর কিছু বিশ্বস্ত পাইকারি ডিম ব্যবসায়ী রয়েছেন এবং তারা বাজারের অসাধু ব্যবসায়ী। তাদের একেকজনের কাছে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো ডিম বিক্রি করে এক থেকে ৫ লাখ পিস পর্যন্ত। এই ব্যবসায়ীদের কাছে কী দামে ডিম বিক্রি করা হয় তার কোনো মূল্য উল্লেখ করা হয় না এবং তাদের মানি রিসিটও দেওয়া হয় না। মূলত তাদের সঙ্গে মূল্য নির্ধারণ হয় মোবাইল মেসেজের মাধ্যমে। ডিমের বাজারে এই করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও পাইকারি বা অসাধু কিছু আড়তদারের কারণেই দাম বেড়ে যায়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং টিমে নেতৃত্ব দেওয়া এক উপসচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘মুরগির বাজারে বড় সিন্ডিকেটের প্রমাণ পেয়েছেন তারা। এখানে মূল সিন্ডিকেট করছে খামারি ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের মাঝের একটি পক্ষ। যাদের কোনো দোকান নেই বা নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নেই। এই গ্রুপটি খামার থেকে সরাসরি মুরগি নিয়ে ট্রাকে করে একেকজন একেক বাজারে সরবরাহ করে। যেমন রাজধানীর কারওয়ান বাজারে যতগুলো মুরগির দোকান রয়েছে- সেখানে মুরগি সরবরাহ করেন একজনই। তার মাধ্যমে আসা মুরগি ছাড়া অন্য কারও মাধ্যমে আসা মুরগি এই বাজারে প্রবেশ করতে পারে না। এভাবে একেকটি গ্রুপ একেক বাজারে মুরগি সরবরাহ করে। এই গ্রুপগুলো খামার থেকে কম দামে মুরগি কিনে বেশি দামে বাজারে বিক্রি করছে। তাদের কারণেই মুরগির দাম বেশি বাড়ে। এভাবেই মুরগির বাজারে ব্যবসা চলে আসছে।’ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন বিভিন্ন বাজারের এই মিডিলম্যানদের চিহ্নিত করা হচ্ছে এবং তাদের সিন্ডিকেট কিভাবে ভাঙা যায় সেই চেষ্টা করছি।

সবজির বাজারে হাতবদলের সিন্ডিকেট : সম্প্রতি সবজির দামও ব্যাপক বেড়ে গেছে। একমাত্র পেঁপে ছাড়া আর কোনো সবজি ১০০ টাকার নিচে মিলছে না। জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানে প্রমাণ মিলেছে, সাত থেকে আটটি হাত বদলের কারণেই দাম বাড়ছে সবজির। সরবরাহ ব্যবস্থায় বিভিন্ন পর্যায়ে পণ্যের হাতবদল হচ্ছে। এমনিতেই বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সবজির কিছুটা মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে, তার চেয়ে বেশি দাম বাড়ছে হাতবদলের নামে সিন্ডিকেটের কারণে। আছে অদক্ষ বাজার ব্যবস্থাপনাও। এই অদক্ষ বাজার ব্যবস্থাকে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে ব্যবসায়ীদের অন্যতম শীর্ষ সংগঠন ঢাকা চেম্বার। এ ছাড়া পণ্য উৎপাদন ও পরিবহন খরচ বৃদ্ধি, বাজার আধিপত্য প্রভৃতি কারণে স্থানীয় বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে। কৃত্রিম সংকট, ঋণপত্র খোলায় বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা, টাকার মূল্যমান হ্রাস, সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থায় অদক্ষতা প্রভৃতি বিষয় পণ্যমূল্য ওঠানামায় ভূমিকা রাখছে। নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিতে উৎপাদকের ভূমিকাই প্রধান। মধ্যস্বত্বভোগীদের মুনাফার হার তুলনামূলক কম। দেশে উৎপাদিত ১৬টি পণ্যের মধ্যে ১৩টিরই উৎপাদন খরচের তুলনায় খুচরা পর্যায়ে যেতে দাম দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। চাল, পেঁয়াজ, আদা, আলু, লবণ, মরিচসহ এসব পণ্যে ১০২ থেকে ৮৩০ শতাংশ পর্যন্ত দাম বেড়েছে। উৎপাদকরা ৪৪ থেকে ৪৮০ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা করেছেন। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সম্প্রতি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানে এক জরিপে এমন তথ্য পেয়েছে। গত ২০ থেকে ২৯ আগস্ট দেশের আটটি বিভাগের ৪৯টি জেলায় জরিপ পরিচালিত হয়। জরিপে ৬০০ জনের কাছ থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়, যার মধ্যে উৎপাদনকারী, আমদানিকারক, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী রয়েছেন। মোট ২১টি খাদ্যপণ্যের ওপর তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

এ বিষয়ে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, ‘উৎপাদক থেকে ভোক্তা পর্যায়ে দাম বাড়লেও উৎপাদকরা ন্যায্যমূল্য পান না। কখনও কখনও দাম বাড়ানোর জন্য পরোক্ষ খরচ জড়িত হয়। স্টোরেজ, পরিবহন এবং পণ্য প্রক্রিয়াকরণ পর্যায়ে খরচ কমাতে পারলে দাম তুলনামূলকভাবে কমে।’

জনপ্রিয় সংবাদ

সপরিবারে হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছেছেন তারেক রহমান

ধাপে ধাপে বহাল বাজার সিন্ডিকেট

আপডেট সময় : ০৭:০০:০১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ অক্টোবর ২০২৪

◉ সরকারের বাজার অভিযান জোরদার
◉ সবজির বাজারে হাতবদলের সিন্ডিকেট
◉ এই অদক্ষ বাজার ব্যবস্থাকে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে ঢাকা চেম্বার
➥উৎপাদক থেকে ভোক্তা পর্যায়ে দাম বাড়লেও উৎপাদকরা ন্যায্য মূল্য পান নাÑ আশরাফ আহমেদ, সভাপতি, ঢাকা চেম্বার

ভোগ্যপণ্যের বাজারে সিন্ডিকেট আছেÑ সব সময় বলা হয়। কিন্তু কোথায় কীভাবে সিন্ডিকেট হয় সে ব্যাপারে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে তেমন কোনো তথ্য ছিল না বা থাকলেও সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা হতো না। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের গত আড়াই মাসের মেয়াদে বাজারে অভিযান বেশ জোরদার করা হয়। এসব অভিযানে কোন পণ্যে কোথায় সিন্ডিকেট বা কারসাজি হচ্ছে তা অনেকটাই দৃশ্যমান হয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অভিযানেও তথ্য মিলেছে ভোগ্যপণ্যের বাজারে ধাপে ধাপে সিন্ডিকেট রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, একেক পণ্যে সিন্ডিকেট হয় একেকভাবে। যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠান বাজার তদারকি করছে তাদের পর্যালোচনায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।
বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই ভোগ্যপণ্যের দাম আকাশচুম্বী হয়েছে। ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে দেশের মানুষের পকেট খালি করলেও সরকার ছিল নির্বিকার। এ কারণে বাজার আরও বেসামাল হয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষ নিত্যপণ্যের বাজারের এই দুর্বিষহ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ চেয়েছিল। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর প্রত্যাশা ছিল এবার হয়তো ভাঙবে বাজার সিন্ডিকেট, কমবে ভোগ্যপণ্যের দাম। বর্তমান সরকারের আড়াই মাস পার হয়ে গেলেও দেশের সাধারণ মানুষের সে আশা পূরণ হয়নি বরং ডিম, সবজি, মাছ-মাংস, চালসহ অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দাম আরও বেড়ে গেছে। এতে ক্ষোভ বাড়ছিল ভোক্তাদের।

বর্তমান সরকার দাম কমাতে বেশকিছু পণ্যের শুল্ক ছাড়সহ আরও কিছু পদক্ষেপও নিয়েছে, তাতেও যখন কাজ হচ্ছিল না- সরকার বাজার অভিযান জোরদার করে। একসঙ্গে মাঠে নামায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তিন উপ-সচিবের নেতৃত্বে তিনটি টিম। জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তরের টিমও নামে ঢাকাসহ সারা দেশে। এছাড়া প্রতিযোগিতা কমিশন, বিএসটিআই, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরও নড়েচড়ে বসে। একই সঙ্গে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) কম দামে বেশকিছু নিত্যপণ্য বিক্রি শুরু করে এবং খাদ্য অধিদপ্তরও ভর্তুকি মূল্যে চাল-আটা বিক্রি শুরু করে। আবার সরকার প্রতিবেশী দেশ থেকে ডিম এবং কাঁচামরিচের আমদানিও উন্মুক্ত করে দেয়।
করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর কিছু বিশ্বস্ত পাইকারি ডিম ব্যবসায়ী রয়েছেন এবং তারা বাজারের অসাধু ব্যবসায়ী। তাদের একেকজনের কাছে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো ডিম বিক্রি করে এক থেকে ৫ লাখ পিস পর্যন্ত। এই ব্যবসায়ীদের কাছে কী দামে ডিম বিক্রি করা হয় তার কোনো মূল্য উল্লেখ করা হয় না এবং তাদের মানি রিসিটও দেওয়া হয় না। মূলত তাদের সঙ্গে মূল্য নির্ধারণ হয় মোবাইল মেসেজের মাধ্যমে। ডিমের বাজারে এই করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও পাইকারি বা অসাধু কিছু আড়তদারের কারণেই দাম বেড়ে যায়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং টিমে নেতৃত্ব দেওয়া এক উপসচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘মুরগির বাজারে বড় সিন্ডিকেটের প্রমাণ পেয়েছেন তারা। এখানে মূল সিন্ডিকেট করছে খামারি ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের মাঝের একটি পক্ষ। যাদের কোনো দোকান নেই বা নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নেই। এই গ্রুপটি খামার থেকে সরাসরি মুরগি নিয়ে ট্রাকে করে একেকজন একেক বাজারে সরবরাহ করে। যেমন রাজধানীর কারওয়ান বাজারে যতগুলো মুরগির দোকান রয়েছে- সেখানে মুরগি সরবরাহ করেন একজনই। তার মাধ্যমে আসা মুরগি ছাড়া অন্য কারও মাধ্যমে আসা মুরগি এই বাজারে প্রবেশ করতে পারে না। এভাবে একেকটি গ্রুপ একেক বাজারে মুরগি সরবরাহ করে। এই গ্রুপগুলো খামার থেকে কম দামে মুরগি কিনে বেশি দামে বাজারে বিক্রি করছে। তাদের কারণেই মুরগির দাম বেশি বাড়ে। এভাবেই মুরগির বাজারে ব্যবসা চলে আসছে।’ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন বিভিন্ন বাজারের এই মিডিলম্যানদের চিহ্নিত করা হচ্ছে এবং তাদের সিন্ডিকেট কিভাবে ভাঙা যায় সেই চেষ্টা করছি।

সবজির বাজারে হাতবদলের সিন্ডিকেট : সম্প্রতি সবজির দামও ব্যাপক বেড়ে গেছে। একমাত্র পেঁপে ছাড়া আর কোনো সবজি ১০০ টাকার নিচে মিলছে না। জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানে প্রমাণ মিলেছে, সাত থেকে আটটি হাত বদলের কারণেই দাম বাড়ছে সবজির। সরবরাহ ব্যবস্থায় বিভিন্ন পর্যায়ে পণ্যের হাতবদল হচ্ছে। এমনিতেই বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সবজির কিছুটা মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে, তার চেয়ে বেশি দাম বাড়ছে হাতবদলের নামে সিন্ডিকেটের কারণে। আছে অদক্ষ বাজার ব্যবস্থাপনাও। এই অদক্ষ বাজার ব্যবস্থাকে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে ব্যবসায়ীদের অন্যতম শীর্ষ সংগঠন ঢাকা চেম্বার। এ ছাড়া পণ্য উৎপাদন ও পরিবহন খরচ বৃদ্ধি, বাজার আধিপত্য প্রভৃতি কারণে স্থানীয় বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে। কৃত্রিম সংকট, ঋণপত্র খোলায় বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা, টাকার মূল্যমান হ্রাস, সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থায় অদক্ষতা প্রভৃতি বিষয় পণ্যমূল্য ওঠানামায় ভূমিকা রাখছে। নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিতে উৎপাদকের ভূমিকাই প্রধান। মধ্যস্বত্বভোগীদের মুনাফার হার তুলনামূলক কম। দেশে উৎপাদিত ১৬টি পণ্যের মধ্যে ১৩টিরই উৎপাদন খরচের তুলনায় খুচরা পর্যায়ে যেতে দাম দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। চাল, পেঁয়াজ, আদা, আলু, লবণ, মরিচসহ এসব পণ্যে ১০২ থেকে ৮৩০ শতাংশ পর্যন্ত দাম বেড়েছে। উৎপাদকরা ৪৪ থেকে ৪৮০ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা করেছেন। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সম্প্রতি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানে এক জরিপে এমন তথ্য পেয়েছে। গত ২০ থেকে ২৯ আগস্ট দেশের আটটি বিভাগের ৪৯টি জেলায় জরিপ পরিচালিত হয়। জরিপে ৬০০ জনের কাছ থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়, যার মধ্যে উৎপাদনকারী, আমদানিকারক, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী রয়েছেন। মোট ২১টি খাদ্যপণ্যের ওপর তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

এ বিষয়ে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, ‘উৎপাদক থেকে ভোক্তা পর্যায়ে দাম বাড়লেও উৎপাদকরা ন্যায্যমূল্য পান না। কখনও কখনও দাম বাড়ানোর জন্য পরোক্ষ খরচ জড়িত হয়। স্টোরেজ, পরিবহন এবং পণ্য প্রক্রিয়াকরণ পর্যায়ে খরচ কমাতে পারলে দাম তুলনামূলকভাবে কমে।’