কথায় আছে বিধাতার লিখন খন্ডায় কে। যার কপালে আল্লাহ যা রেখেছেন যে কোন অসিলায় তা তাকে ভোগ করতেই হয়। এমনি একজন মানুষ বৃদ্ধ আব্দুল লতিফ। এক সময় ছিল গোলাভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ ও গোয়াল ভরা গরু। দুধে ভাতে যেন তার সুখের সংসার। সুখস্বাচ্ছন্দ্য ও মানসিক শান্তিতে চলতো আব্দুল লতিফ। ৭৫ ঊর্ধ্ব বয়সের আব্দুল লতিফ এর ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে সব হারিয়ে বাঁশের দাঁত খিলাল (টুথপিক) তৈরী করে বিক্রয়ের টাকা দিয়েই চলে তার সংসার। পরিবারে হাল ধরার কেউ না থাকায় বৃদ্ধ তার স্ত্রী ও প্রতিবন্ধী কন্যাকে নিয়ে দিন রাত তৈরি করেন দাঁত খিলাল। দু-মুঠো ভাতের একমাত্র ভরসা এখন বাঁশের তৈরি দাঁত খিলাল। আব্দুল লতিফ এর বাড়ী রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার প্রামাণিকপাড়া গ্রামে। স্ত্রী ও প্রতিবন্ধী কন্যার সহযোগিতা নিয়ে বাড়ির উঠানে বসে বাঁশ দিয়ে দাঁত খিলাল তৈরি করতে ব্যস্ত থাকেন তিনি। একটি বাঁশ ১৫০ টাকায় ক্রয় করে তা দিয়ে দাঁত খিলাল তৈরি করে ৪০০ টাকা বিক্রয় করেন তিনি। জানা যায়, ১৯৯৪ সালে নিজ বাসা সংলগ্ন ইকরচালী হাট থেকে নিখোঁজ হয়েছিল তার একমাত্র ছেলে এরশাদ উদ্দিন। তাকে ফিরে পেতে শেষ করেন গোয়াল ভরা গরু, দুই একর ফসলি জমি, এমনকি মাথা গোঁজার ঠাঁই টুকু। নিঃস্ব হয়েও ছেলে এরশাদকে ফিরে পেতে দেশের বিভিন্ন স্থানে খুঁজেছেন তিনি। দু-মুঠো ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন দাঁত খিলাল উল্লেখ করে আব্দুল লতিফ বলেন, সংসারে হাল ধরার মত এখন কেউ নাই। ৩০ বছর আগেও সংসার ছিল সব কিছু। ছেলেকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি। ছেলেকে ফিরে পাইনি। এখন বয়সের ভারে আর ভারী কাজ করতেও পারি না। বাঁশ দিয়ে দাঁত খিলাল তৈরি করে দোকানে দোকানে বিক্রয় করা হয়। এটাই এখন জীবিকা ও দু-মুঠো ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল। অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে ছিদ্দিকা বেগম বলেন, মোর বুকের ধন হারায়া কপাল পুড়ি গেইচে। মানিকধনোক খুঁজিয়া আইজ হামার সউক শ্যাষ তাও পাই নাই ছইলোক। আইজ আর হামাক দেকার মত কাইয়ো নাই। এল্যা বাঁশ দিয়া দাঁত খিলাল বানায়া দুইটা ভাত জোটে কপালে।
শিরোনাম
দাঁত খিলাল তৈরিই তার জীবিকা
-
রংপুর ব্যুরো - আপডেট সময় : ০৫:৩৯:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫
- ।
- 103
জনপ্রিয় সংবাদ


























