লাল সবুজের দেশে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার খিয়ারমামুদপুর গ্রামে একটি বিলে সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ফুটেছে হাজারো সাদা রঙের শাপলা। দেখে মনে হবে ফুলের বিছানা। ৬০০ বিঘাজুড়ে বিস্তৃত বিলের যত দূর চোখ যায়, তত দূর দেখা যায় সাদা শাপলা। এটি শাপলার বিল হিসেবে পরিচিত। এর সৌন্দর্য দেখতে দূরদূরান্ত থেকে দর্শনার্থী আসছে।। নৌকায় চড়ে বিল ও ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন তারা। অনেকে ছবি তোলেন, কেউ কেউ ভিডিও ধারণ করেন। নৌকায় বসে একদিকে তাকালে বিল সংলগ্ন প্রতিবেশী ভারতের সীমান্ত। আর হাত বাড়ালেই জলে ভাসা শাপলা। আছে শালুকও। অনেকে বিলে থাকা সেই শালুক তুলে নিয়ে যান। তবে ফুল উঠানোর কারণে বিলের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। জানা যায়, বিশাল এ বিলের মাঝখানে রয়েছে দ্বীপসদৃশ সমতলভূমি। সেখানে স্থানীয় জেলেরা মাছ সংরক্ষণ ও বিশ্রাম নেওয়ার জন্য টিনের ছাউনির নিচে বাঁশের টং তৈরি করেছেন। বিলে শুধু শাপলা আর শালুক না, আছে কই, মাগুর, টাকি, পুঁটিসহ নানা জাতের মাছ। জেলেরা বিলে মাছ ধরে বিলের পাড়ে বিক্রি করে। বিলে শাপলা দেখতে আসা দর্শনার্থীরা কেউ কেউ পছন্দের ছোট মাছ ক্রয় করে বাড়ি নিয়ে যান। এলাকাবাসী বলেন, ৬০০ বিঘাজুড়ে এ বিলের পশ্চিম অংশের নাম আমরুল বিল। আর পূর্ব অংশের নাম কাটলা বিল। বর্ষায় পানি কমে গেলে বিলে আমন ধান চাষ করেন কৃষকরা। আমন ধান কাটার পর পরিত্যক্ত বিশাল আয়তনের পশ্চিম পাশের জমিতে আমরুল নামে প্রচুর পরিমাণে এক ধরনের আগাছা জন্মে। আর পূর্ব পাশের জমিতে কাটলা (হলদে মুথা) আগাছা জন্মে। এ কারণেই এমন নামকরণ হয়েছে। বর্ষাকালে বিল পাড়ের জেলেরা মাছ ধরার পাশাপাশি নৌকা চালিয়ে বাড়তি আয় করেন। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. মুরাদ বলেন, বিলে সকালে ও বিকালে নৌকা চালিয়ে অর্থ উপার্জন করে তিনি। প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে প্রায় ৯টা আর বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দর্শনার্থীরা শাপলা ফুল দেখতে আসে। নৌকায় দুজন বা চার জনকে নিয়ে পুরো বিল ঘুরে দেখায় তিনি। প্রতি ট্রিপে ১০০ থেকে ২০০ টাকা ভাড়া পান। কেউ বিলে বেশিক্ষণ ধরে ঘুরলে ৩০০ টাকাও ভাড়া দেয়। শাওন ইসলাম বলেন, বাড়ির পাশেই কাটলা বিল। বিলে প্রচুর সাদা শাপলা ফুটেছে। দেখতে খুব সুন্দর। আশপাশের কোথাও এমন শাপলা নেই। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক মানুষ সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসছেন। এত মানুষ আগে আমাদের এলাকায় দেখিনি। কিন্তু অনেকে দেখতে এসে শাপলা তুলে নিয়ে যাচ্ছে। এতে বিলের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। দর্থনার্থী নাজমা আক্তার বলেন, সাদা শাপলার কথা অনেক শুনেছি। কিন্তু কাছ থেকে দেখিনি। দেখে মনে হয় যেন ফুলের গালিচা। খুব সুন্দর। মনোরম পরিবেশ। দর্শনার্থীদের মন জুড়িয়ে যায়। বিলের নৌকার মাঝি আমিনুল হক বলেন, এবার বিলে প্রচুর শাপলা ফুটেছে। যা দেখতে দর্থনার্থীরা আসছেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মানুষ আসে। তারা নৌকায় করে বিলে ঘুরে বেড়ায়। তাদের বিলে ঘুরিয়ে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চলে। বিরামপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সালমা আক্তার বলেন, খিয়ারমামুদপুর গ্রামে শাপলার বিলের নাম শুনেছি। বিল ও শাপলা দেখতে আসা দর্শনার্থীরা যেন প্রকৃতির ক্ষতি না করে। সে বিষয়ে সকলকে সচেতন হতে হবে।
শিরোনাম
বিলের সাদা শাপলা দেখেই যেন দর্শনার্থীদের মন জুড়ে যায়
-
রংপুর ব্যুরো - আপডেট সময় : ০৭:৫৮:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- ।
- 206
জনপ্রিয় সংবাদ


























