সাংবিধানিকভাবে সমতার মর্যাদায় নারীকে অধিষ্ঠিত করতে ব্যবস্থা নিতে হবে : আলী রীয়াজ

জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন নিয়ে যে আলোচনা চলছে, সেখানে নতুন প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। নতুন এই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, উচ্চকক্ষের আসনসংখ্যা হতে পারে ৭৬ এবং এসব আসনের সদস্যরা নির্বাচিত হবেন জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে। গতকাল সোমবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার সংলাপের ১৩তম দিনের অধিবেশন এমন প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে। সংলাপে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের শীর্ষস্থানীয় নেতারা। এদিকে, সাংবিধানিকভাবে সমতার মর্যাদায় নারীকে অধিষ্ঠিত করতে ব্যবস্থা নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
গতকাল সোমবার উচ্চকক্ষের নতুন প্রস্তাবের বিষয়ে কমিশন বলেছে, প্রতিটি জেলা ও প্রতিটি সিটি করপোরেশন এলাকা উচ্চকক্ষের একেকটি একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকা হিসেবে বিবেচিত/চিহ্নিত হবে এবং প্রত্যেক নির্বাচনী এলাকা থেকে সাধারণ ভোটারদের প্রত্যক্ষ ভোটে একজন করে উচ্চকক্ষের প্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন। এতে আরও বলা হয়, বর্তমানে দেশে ৬৪টি প্রশাসনিক জেলা ও ১২টি সিটি করপোরেশন রয়েছে বিধায় উচ্চকক্ষের আসনসংখ্যা হবে ৭৬। জাতীয় সংসদ (নিম্নকক্ষ) এবং উচ্চকক্ষের নির্বাচন একই সময়ে অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশে দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট সংসদের উচ্চকক্ষের নাম প্রস্তাব করা হয় সিনেট। এই কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, ‘সংবিধান সংস্কার কমিশন সুপারিশ করে যে বাংলাদেশে নিম্নকক্ষ (জাতীয় সংসদ) এবং উচ্চকক্ষের (সিনেট) সমন্বয়ে দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট একটি আইনসভা থাকবে। উচ্চকক্ষ আইনি যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে এবং নির্বাহী ক্ষমতার ওপর একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবে।
এদিকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নারীদের অংশগ্রহণের কথা স্মরণ করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, ‘তাঁদের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার কারণে আন্দোলন যেভাবে বেগবান হয়েছে, সেটা স্মরণ করে বাংলাদেশের রাষ্ট্র পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে তাঁদের ভূমিকাকে যেন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারি, সে জন্য সাংবিধানিকভাবে সমতার মর্যাদায় নারীকে অধিষ্ঠিত করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ দরকার।
আলী রীয়াজ বলেন, আজকে ১৪ জুলাই সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ‘জুলাই নারী দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। নারীদের এ অবদান আমাদের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তারই প্রেক্ষাপটে আমরা সংসদে নারীদের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে আলোচনা করব। আমাদের সবার মনে রাখা দরকার, তাঁদের প্রচেষ্টার কারণে আজকে এখানে এসেছি। আপনাদের সবার মনে আছে, এক বছর আগে আমরা কোথায় ছিলাম। ফ্যাসিবাদ বিরোধী সংগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে যে আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল জুলাই মাসে, ১৪ জুলাই বড় ধরনের মোড় ঘোরার দিন।
আলোচনার দুটো বিষয়ে ঐকমত্য হওয়ার আশা প্রকাশ করে আলী রীয়াজ বলেন, বিশেষ করে রাজনীতিতে, রাষ্ট্র গঠনে, আইন প্রণয়নে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নারীকে মর্যাদার সঙ্গে অংশগ্রহণের পথ আমরা তৈরি করতে পারব। সে জায়গায় একমত হতে পারব, এক জায়গায় আসতে পারব।