কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি
প্রতিবন্ধিতা কোনো রোগ নয়,তবুও এটি সমাজের মানুষেরা ব্যাধি মনে করি। দেশ এগিয়ে গেলেও সমাজ এগুচ্ছেনা। একজন প্রতিবন্ধি ব্যক্তি যতটা না শারীরিক ভাবে তার শরীরে ক্ষত বহন করে, তার চেয়ে অধিক ক্ষত দেখা যায় সমাজের চোখে। তাকে দেখলেই আড় চোখে তাকায়, আ হা, উ হু করে। অথচ তার সমস্যায় সাহায্য করতে কেউই এগিয়ে আসেনা ।
শিশু জন্মের পর থেকে তাকে ঘিরে পরিবার ও সমাজের মানুষের আগ্রহ বা আনন্দের কোনো অন্ত থাকে না। কিন্তু জন্মের পর যখন তার শারীরিক কোনো সমস্যা চোখে পড়ে, তখনই সবার উৎসাহে ভাটা পড়ে। কিন্তু সেই শিশুটির প্রাকৃতিক নিয়মে বেড়ে উঠা থেমে থাকে না। আর সকলের মতো সে স্বাভাবিকভাবেই বাঁচতে চায়। প্রতিবন্ধিতার সাথে যুদ্ধ করে বাঁচতে হয় তাকে আজীবন।

বলছি গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের উত্তর খৈকড়া এলাকার দশম শ্রেনী পড়ুয়া স্নেহা আক্তার উর্মীর (১৪) কথা। স্নেহার বাড়ির আশ-পাশের প্রতিবেশীদের সাথে কথা বললে তারা বলেন,শারীরিক প্রতিবন্ধি হলেও স্নেহা থেমে থাকেনি। পরিবারের সহযোগিতায় সে স্বাভাবিক মানুষের মতো বেড়ে উঠেছে। সমাজের যারা আগে স্নেহার প্রতি ভিন্ন দৃষ্টিতে তাকাতো, তারাই এখন তার প্রশংসা করে। স্নেহা শিখিয়েছে কিভাবে নিজেকে বদলে সমাজের দৃষ্টি ভঙ্গি বদলাতে হয়।
স্নেহার মা নাছরিন বেগম বলেন, জন্মের সময় তার শারীরিক কোন সমস্যা ছিলনা। বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার দু’পায়ে ত্রুটি দেখা দিলেও শরীরের অন্যান্য অংশ স্বাভাবিক ছিল। তাকে ছোট সময় থেকেইে ঢাকায় অনেক বড় বড় ডাক্তার দেখিয়েছি। কিন্তু তাতে কোন লাভ হয়নি। এতে পরিবারের সবাই খুব হতাশ হয়ে পরি। কিন্তু কিছুই করার ছিলনা। আল্লাহর ইচ্ছাতেই হয়েছে বলে সকলে মেনে নেই। একদিকে ‘খুতা’ সন্তান অন্যদিকে মেয়ে। এসবই ভাবেন তার মা। তিনি আরোও বলেন, সে বক্তারপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মাসিক ৭ শত ৫০ টাকা হিসেবে বাৎসরিক ৯ হাজার টাকা প্রতিবন্ধি ভাতা পেয়ে থাকে।
আশি উর্ধ্ব স্নেহার দাদি মোসাঃ শরীফা আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেন, নিজের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ সে নিজে করতে পারে না। সব সময় তার মা সাহায্য করে থাকেন। মেয়ে হয়ে জন্মেছে, ভাগ্যে থাকে তবে একদিন বিয়েও হবে। তখন তার সংসারের কাজ কে করে দিবে? স্কুলে যাওয়ার সময় স্কুল ড্রেস পরিধান, চুল আঁচড়ে দেয়াসহ যাবতীয় কাজ করে দিতে হয় তার মায়েরই।
সরেজমিনে জানা যায়, স্নেহা কালীগঞ্জ উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের মাস্টার কিন্ডারগার্টেন স্কুলের দশম শ্রেণীতে ব্যবসা শিক্ষা শাখায় অধ্যয়ন করছে। সে প্রাইমারী স্কুল থেকেই যথেষ্ট মেধাবী ও ক্লাসে মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করত। সে পিএসসি পরিক্ষায় জিপিএ-৫ সহ প্রাথমিকে বৃত্তি পেয়েছে।
মাস্টার কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মোঃ খালেদ হোসেন সরকার প্রতিবেদককে বলেন, স্নেহা ৬ষ্ঠ শ্রেনী হতে এই স্কুলে পড়তেছে। ছোট বেলা থেকেই সে অত্যন্ত মেধাবী। সকল শ্রেনীতে সে মেধা তালিকায় প্রথম স্থান দখল করে থাকে। স্কুলের সকল শিক্ষক শিক্ষিকাবৃন্দ তার প্রতি যথেষ্ট আন্তরিক।
স্নেহা প্রতিবেদককে বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধি বলে আমি থেমে থাকিনি। পরিবারের সহযোগিতায় ও নিজের চেস্টায় স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে চেষ্টা করছি। সরকারের সহযোগীতা ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করে আমি বড় হয়ে ব্যাংকার হতে চাই। স্কুলের সহপাঠীরা আমাকে খুবই আন্তরিকতার সাথে সহযোগীতা করে থাকে। তবে প্রতিবন্ধি হিসেবে উপজেলা শিক্ষা অফিস হতে এপর্যন্ত কোন সহায়তা পাইনি।






















