১০:১৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ডাকসু নির্বাচন ২০২৫: ডাকসুতে ফের উত্তপ্ত রাজনীতি

দলীয় আধিপত্যে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনী মাঠ

প্রার্থীদের মুখে প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি

পরীক্ষা না নির্বাচন? শিক্ষার্থীরা বিভ্রান্ত

আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে সরগরম ক্যাম্পাস

‘পড়াশোনা ও রাজনৈতিক অধিকারের মধ্যে বেছে নিতে বাধ্য করা যায় না’- সাদিক কায়েম, শিবির সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী

‘আমরা ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়েও ক্যাম্পাসে চরম বৈষম্যের শিকার। রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে আমাদের বিরুদ্ধে। নারীদের নিয়েও কুৎসা রটানো হচ্ছে’- আবিদুল ইসলাম খান, ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী

‘নির্বাচনে প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হোক। মাদকাসক্ত কেউ যাতে নেতৃত্বে না আসে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে’- এবি জুবায়ের, মোসাদ্দেক-জুবায়ের প্যানেলের সমাজসেবা সম্পাদক প্রার্থী

 

দীর্ঘদিন পর আবারো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর এই ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে বিরাজ করছে একধরনের রাজনৈতিক উন্মাদনা, উত্তেজনা আর আলোচনার ঝড়। নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, বামপন্থী জোট, স্বতন্ত্র ছাত্র সংগঠন এবং নতুন নতুন প¬্যাটফর্ম। প্রতিটি পক্ষই নিজেদের মত করে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে চেষ্টা করছে। চলছে ইশতেহার ঘোষণা, প্রতিশ্রুতি, সংবাদ সম্মেলন, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ এবং হুমকি-ধমকি। র্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হলেও এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নানা আশঙ্কা, অনিয়ম এবং নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ। কেউ দাবি তুলছে পরীক্ষার সময় পেছানোর, কেউ বলছে আচরণবিধি লঙ্ঘনের কথা। আবার কেউ কেউ প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করারও প্রস্তাব দিয়েছেন। সব মিলিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখন এক নতুন রাজনৈতিক আবহে প্রবেশ করেছে।
ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেন, আমরা বর্তী সময়েও ক্যাম্পাসে চরম বৈষম্যের শিকার। রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে আমাবিরুদ্ধে। নারীদের নিয়েও কুৎসা রটানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে, ছাত্রলীগের এক নারী নেত্রীকে যেভাবে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে, ছাত্রদলের নারী নেত্রীদেরও নাকি তেমনি করা হবে। তাদের জিএস প্রার্থী তানভীর বারী হামিম বলেন, তারা সব নিয়ম মেনে চললেও অন্যান্য সংগঠন আচরণবিধি ভঙ্গ করছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ টিএসসিতে স্ট্যান্ড আপ কমেডি করেছে, যা আচরণবিধির পরিপন্থী।
এদিকে, ছাত্রশিবিরের সমর্থনে ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ থেকে ভিপি প্রার্থী আবু সাদিক কায়েম বলেন, তারা একটি গবেষণা ও ন্যায়ভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় চান। যেখানে রাজনৈতিক সহনশীলতা থাকবে। কারো ওপর দমন-পীড়ন চলবে না। সবার মত প্রকাশের অধিকার থাকবে। জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদ বলেন, তারা সবসময় শিক্ষার্থীদের চাহিদা বুঝে কাজ করেন। রাজনৈতিক জাঁকজমক না করে, সরাসরি শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগই তাদের লক্ষ্য। তিনি আরও বলেন, আচরণবিধি কেউ ভাঙলে নির্বাচন কমিশনকে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে হবে, কারো লিখিত অভিযোগের জন্য বসে থাকা উচিত নয়।
অন্যদিকিএ, ‘সম্মিলিত ছাত্র ঐক্য’ নামে স্বতন্ত্র ও ভিন্নমতের প্রার্থীদের নিয়ে গঠিত একটি প্যানেল মধুর ক্যান্টিনে তাদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে। প্যানেলে ভিপি পদে আছেন জান্নাতি বুলবুল, জিএস পদে মাহমুদুল হাসান এবং সদস্য পদে তালহা নেগাবান। তারা একটি ৭ দফা অঙ্গীকার ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়কে সত্যিকার অর্থে স্বায়ত্তশাসিত করা, নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা, গেস্টরুম নির্যাতন ও বৈষম্যহীন পরিবেশ গড়া, সবার জন্য স্বাস্থ্যসম্মত আবাসন ও খাবার নিশ্চিত করা এবং প্রথম বর্ষ থেকেই সিট বরাদ্দ নিশ্চিত করা। তারা বলেন, সংখ্যার চেয়ে বিশ্বাস ও কমিটমেন্ট বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য স্মরণ করিয়ে তারা জানান, স্বাধীনতা সংগ্রামের বীজ এই ক্যাম্পাসেই বপিত হয়েছিল।
এদিকে, মোসাদ্দেক-জুবায়ের প্যানেলের সমাজসেবা সম্পাদক প্রার্থী এবি জুবায়ের এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নির্বাচনে প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হোক। তার মতে, মাদকাসক্ত কেউ যাতে নেতৃত্বে না আসে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি আরও কিছু দাবি তুলে ধরেন ভোটকেন্দ্র পুনর্বিন্যাস, ব্যালটে প্রার্থীর ছবি সংযুক্ত করা, নামের পাশাপাশি ডাকনাম ব্যবহারের অনুমতি, সামাজিক মাধ্যমে নারী প্রার্থীদের সাইবার বুলিং থেকে সুরক্ষা এবং ভোটদানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো বৈধ আইডি গ্রহণযোগ্য করা। এই প্যানেলের সদস্য প্রার্থী আশিক খান বলেন, ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের অবাধ বিচরণ চলছে। প্রশাসন কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। নির্বাচনের সময় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করার দাবি জানান তিনি।
এদিকে, বামপন্থী সাতটি ছাত্র সংগঠনের প্যানেল প্রতিরোধ পর্ষদও এক সংবাদ সম্মেলনে বেশ কিছু দাবি উপস্থাপন করে। তাদের অন্যতম দাবি হচ্ছে, ৫ থেকে ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সব পরীক্ষা স্থগিত রাখা হোক। এতে করে প্রার্থীরা এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন। তারা আরও বলেন, অতীতে যারা ছাত্র নিপীড়নে জড়িত, তাদের প্রার্থিতা বাতিল করতে হবে। ভোটকেন্দ্র সংখ্যা বাড়ানো, আচরণবিধি কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা, ব্যালটে ছবি সংযুক্ত করা এবং যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় আইডি দিয়ে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান তারা। প্রতিরোধ পর্ষদের পক্ষ থেকে জাবির আহমেদ জুবেল অভিযোগ করেন, ছাত্রশিবিরের প্যানেলের একজন প্রার্থী জাতির বীর সন্তানকে ‘ফ্লাইট চোর’ বলে কটাক্ষ করেছেন। যদিও তাকে পরে প্যানেল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু নির্বাচন কমিশন তার প্রার্থিতা বাতিল করেনি।
অন্যদিকে, ভোটার তালিকায় নারী শিক্ষার্থীদের ছবি প্রকাশের বিরুদ্ধে পাঁচজন শিক্ষার্থী হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছেন। তাদের বক্তব্য, এটি ব্যক্তিগত গোপনীয়তার চরম লঙ্ঘন। বিশেষ করে যারা নিকাব পরেন বা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ছবি প্রকাশে আপত্তি জানান, তাদের জন্য এটি অত্যন্ত বিব্রতকর। তারা দাবি করেন, অবিলম্বে এই তালিকা ওয়েবসাইট থেকে সরাতে হবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের তথ্য ব্যবস্থাপনার বিকল্প ব্যবস্থা নিতে হবে। যেমন ছাত্র সেবার রেজিস্ট্রেশন নম্বর ব্যবহার করে পরিচয় যাচাইয়ের ব্যবস্থা।
এদিকে, প্রায় সব পক্ষ থেকেই নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কেউ বলছে কমিশন পক্ষপাতিত্ব করছে, কেউ বলছে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আচরণবিধি লঙ্ঘনের অনেক উদাহরণ দিলেও কমিশনের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে প্যানেল ঘোষণার সময় মাইক ব্যবহার, মসজিদে প্রচারণা, অনুমোদন ছাড়া ব্যানার, মিছিলের মাধ্যমে ফর্ম তোলা ইত্যাদি আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলেও কমিশন নিরব থেকেছে বলে জানান একাধিক প্রার্থী। এছাড়াও, এই মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বিভাগের পরীক্ষা, প্রেজেন্টেশন ও অ্যাসাইনমেন্ট ডাকসু নির্বাচনের সময়ের মধ্যেই নির্ধারিত রয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীরা পড়ছেন বিপাকে। কেউই ঠিকভাবে পড়াশোনা ও নির্বাচন একসাথে সামলাতে পারছেন না। এই অবস্থায় প্রায় সব সংগঠনই পরীক্ষার সময় পেছানোর দাবি জানিয়েছে।
শিবির সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম বলেন, এটি শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি। পড়াশোনা ও রাজনৈতিক অধিকারের মধ্যে বেছে নিতে বাধ্য করা যায় না।
অন্যদিকে, ডাকসু নির্বাচন মানে কেবল একটি সংগঠন বা পদ নয়, এটি ভবিষ্যতের নেতৃত্ব তৈরির একটি মঞ্চ। অতীতে অনেক জাতীয় নেতা এই ডাকসু থেকেই উঠে এসেছেন। তাই শিক্ষার্থীরা চায়, এই নির্বাচন হোক সুষ্ঠু, অবাধ, সহনশীল ও অংশগ্রহণমূলক। তবে এর পাশাপাশি সচেতন শিক্ষার্থীরা চাইছেনÍডাকসু যেন দখলদারিত্ব, মারামারি, গেস্টরুমের নামে নির্যাতন, হল দখল, দলীয় দাপট মুক্ত একটি প¬্যাটফর্ম হয়। যেখানে রাজনৈতিক মতভেদ থাকবে, কিন্তু সহিংসতা থাকবে না।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

মূল্যস্ফীতি এখনো ঊর্ধ্বমুখী

ডাকসু নির্বাচন ২০২৫: ডাকসুতে ফের উত্তপ্ত রাজনীতি

আপডেট সময় : ০৭:৩০:৩৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৫

দলীয় আধিপত্যে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনী মাঠ

প্রার্থীদের মুখে প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি

পরীক্ষা না নির্বাচন? শিক্ষার্থীরা বিভ্রান্ত

আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে সরগরম ক্যাম্পাস

‘পড়াশোনা ও রাজনৈতিক অধিকারের মধ্যে বেছে নিতে বাধ্য করা যায় না’- সাদিক কায়েম, শিবির সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী

‘আমরা ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়েও ক্যাম্পাসে চরম বৈষম্যের শিকার। রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে আমাদের বিরুদ্ধে। নারীদের নিয়েও কুৎসা রটানো হচ্ছে’- আবিদুল ইসলাম খান, ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী

‘নির্বাচনে প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হোক। মাদকাসক্ত কেউ যাতে নেতৃত্বে না আসে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে’- এবি জুবায়ের, মোসাদ্দেক-জুবায়ের প্যানেলের সমাজসেবা সম্পাদক প্রার্থী

 

দীর্ঘদিন পর আবারো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর এই ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে বিরাজ করছে একধরনের রাজনৈতিক উন্মাদনা, উত্তেজনা আর আলোচনার ঝড়। নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, বামপন্থী জোট, স্বতন্ত্র ছাত্র সংগঠন এবং নতুন নতুন প¬্যাটফর্ম। প্রতিটি পক্ষই নিজেদের মত করে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে চেষ্টা করছে। চলছে ইশতেহার ঘোষণা, প্রতিশ্রুতি, সংবাদ সম্মেলন, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ এবং হুমকি-ধমকি। র্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হলেও এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নানা আশঙ্কা, অনিয়ম এবং নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ। কেউ দাবি তুলছে পরীক্ষার সময় পেছানোর, কেউ বলছে আচরণবিধি লঙ্ঘনের কথা। আবার কেউ কেউ প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করারও প্রস্তাব দিয়েছেন। সব মিলিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখন এক নতুন রাজনৈতিক আবহে প্রবেশ করেছে।
ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেন, আমরা বর্তী সময়েও ক্যাম্পাসে চরম বৈষম্যের শিকার। রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে আমাবিরুদ্ধে। নারীদের নিয়েও কুৎসা রটানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে, ছাত্রলীগের এক নারী নেত্রীকে যেভাবে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে, ছাত্রদলের নারী নেত্রীদেরও নাকি তেমনি করা হবে। তাদের জিএস প্রার্থী তানভীর বারী হামিম বলেন, তারা সব নিয়ম মেনে চললেও অন্যান্য সংগঠন আচরণবিধি ভঙ্গ করছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ টিএসসিতে স্ট্যান্ড আপ কমেডি করেছে, যা আচরণবিধির পরিপন্থী।
এদিকে, ছাত্রশিবিরের সমর্থনে ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ থেকে ভিপি প্রার্থী আবু সাদিক কায়েম বলেন, তারা একটি গবেষণা ও ন্যায়ভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় চান। যেখানে রাজনৈতিক সহনশীলতা থাকবে। কারো ওপর দমন-পীড়ন চলবে না। সবার মত প্রকাশের অধিকার থাকবে। জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদ বলেন, তারা সবসময় শিক্ষার্থীদের চাহিদা বুঝে কাজ করেন। রাজনৈতিক জাঁকজমক না করে, সরাসরি শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগই তাদের লক্ষ্য। তিনি আরও বলেন, আচরণবিধি কেউ ভাঙলে নির্বাচন কমিশনকে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে হবে, কারো লিখিত অভিযোগের জন্য বসে থাকা উচিত নয়।
অন্যদিকিএ, ‘সম্মিলিত ছাত্র ঐক্য’ নামে স্বতন্ত্র ও ভিন্নমতের প্রার্থীদের নিয়ে গঠিত একটি প্যানেল মধুর ক্যান্টিনে তাদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে। প্যানেলে ভিপি পদে আছেন জান্নাতি বুলবুল, জিএস পদে মাহমুদুল হাসান এবং সদস্য পদে তালহা নেগাবান। তারা একটি ৭ দফা অঙ্গীকার ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়কে সত্যিকার অর্থে স্বায়ত্তশাসিত করা, নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা, গেস্টরুম নির্যাতন ও বৈষম্যহীন পরিবেশ গড়া, সবার জন্য স্বাস্থ্যসম্মত আবাসন ও খাবার নিশ্চিত করা এবং প্রথম বর্ষ থেকেই সিট বরাদ্দ নিশ্চিত করা। তারা বলেন, সংখ্যার চেয়ে বিশ্বাস ও কমিটমেন্ট বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য স্মরণ করিয়ে তারা জানান, স্বাধীনতা সংগ্রামের বীজ এই ক্যাম্পাসেই বপিত হয়েছিল।
এদিকে, মোসাদ্দেক-জুবায়ের প্যানেলের সমাজসেবা সম্পাদক প্রার্থী এবি জুবায়ের এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নির্বাচনে প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হোক। তার মতে, মাদকাসক্ত কেউ যাতে নেতৃত্বে না আসে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি আরও কিছু দাবি তুলে ধরেন ভোটকেন্দ্র পুনর্বিন্যাস, ব্যালটে প্রার্থীর ছবি সংযুক্ত করা, নামের পাশাপাশি ডাকনাম ব্যবহারের অনুমতি, সামাজিক মাধ্যমে নারী প্রার্থীদের সাইবার বুলিং থেকে সুরক্ষা এবং ভোটদানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো বৈধ আইডি গ্রহণযোগ্য করা। এই প্যানেলের সদস্য প্রার্থী আশিক খান বলেন, ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের অবাধ বিচরণ চলছে। প্রশাসন কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। নির্বাচনের সময় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করার দাবি জানান তিনি।
এদিকে, বামপন্থী সাতটি ছাত্র সংগঠনের প্যানেল প্রতিরোধ পর্ষদও এক সংবাদ সম্মেলনে বেশ কিছু দাবি উপস্থাপন করে। তাদের অন্যতম দাবি হচ্ছে, ৫ থেকে ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সব পরীক্ষা স্থগিত রাখা হোক। এতে করে প্রার্থীরা এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন। তারা আরও বলেন, অতীতে যারা ছাত্র নিপীড়নে জড়িত, তাদের প্রার্থিতা বাতিল করতে হবে। ভোটকেন্দ্র সংখ্যা বাড়ানো, আচরণবিধি কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা, ব্যালটে ছবি সংযুক্ত করা এবং যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় আইডি দিয়ে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান তারা। প্রতিরোধ পর্ষদের পক্ষ থেকে জাবির আহমেদ জুবেল অভিযোগ করেন, ছাত্রশিবিরের প্যানেলের একজন প্রার্থী জাতির বীর সন্তানকে ‘ফ্লাইট চোর’ বলে কটাক্ষ করেছেন। যদিও তাকে পরে প্যানেল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু নির্বাচন কমিশন তার প্রার্থিতা বাতিল করেনি।
অন্যদিকে, ভোটার তালিকায় নারী শিক্ষার্থীদের ছবি প্রকাশের বিরুদ্ধে পাঁচজন শিক্ষার্থী হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছেন। তাদের বক্তব্য, এটি ব্যক্তিগত গোপনীয়তার চরম লঙ্ঘন। বিশেষ করে যারা নিকাব পরেন বা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ছবি প্রকাশে আপত্তি জানান, তাদের জন্য এটি অত্যন্ত বিব্রতকর। তারা দাবি করেন, অবিলম্বে এই তালিকা ওয়েবসাইট থেকে সরাতে হবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের তথ্য ব্যবস্থাপনার বিকল্প ব্যবস্থা নিতে হবে। যেমন ছাত্র সেবার রেজিস্ট্রেশন নম্বর ব্যবহার করে পরিচয় যাচাইয়ের ব্যবস্থা।
এদিকে, প্রায় সব পক্ষ থেকেই নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কেউ বলছে কমিশন পক্ষপাতিত্ব করছে, কেউ বলছে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আচরণবিধি লঙ্ঘনের অনেক উদাহরণ দিলেও কমিশনের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে প্যানেল ঘোষণার সময় মাইক ব্যবহার, মসজিদে প্রচারণা, অনুমোদন ছাড়া ব্যানার, মিছিলের মাধ্যমে ফর্ম তোলা ইত্যাদি আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলেও কমিশন নিরব থেকেছে বলে জানান একাধিক প্রার্থী। এছাড়াও, এই মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বিভাগের পরীক্ষা, প্রেজেন্টেশন ও অ্যাসাইনমেন্ট ডাকসু নির্বাচনের সময়ের মধ্যেই নির্ধারিত রয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীরা পড়ছেন বিপাকে। কেউই ঠিকভাবে পড়াশোনা ও নির্বাচন একসাথে সামলাতে পারছেন না। এই অবস্থায় প্রায় সব সংগঠনই পরীক্ষার সময় পেছানোর দাবি জানিয়েছে।
শিবির সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম বলেন, এটি শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি। পড়াশোনা ও রাজনৈতিক অধিকারের মধ্যে বেছে নিতে বাধ্য করা যায় না।
অন্যদিকে, ডাকসু নির্বাচন মানে কেবল একটি সংগঠন বা পদ নয়, এটি ভবিষ্যতের নেতৃত্ব তৈরির একটি মঞ্চ। অতীতে অনেক জাতীয় নেতা এই ডাকসু থেকেই উঠে এসেছেন। তাই শিক্ষার্থীরা চায়, এই নির্বাচন হোক সুষ্ঠু, অবাধ, সহনশীল ও অংশগ্রহণমূলক। তবে এর পাশাপাশি সচেতন শিক্ষার্থীরা চাইছেনÍডাকসু যেন দখলদারিত্ব, মারামারি, গেস্টরুমের নামে নির্যাতন, হল দখল, দলীয় দাপট মুক্ত একটি প¬্যাটফর্ম হয়। যেখানে রাজনৈতিক মতভেদ থাকবে, কিন্তু সহিংসতা থাকবে না।