০১:০৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ডেমু ট্রেনে গচ্চা ৬০০ কোটি টাকা: দুদকের মামলা

  • আসামি রেলের সাবেক মহাপরিচালক তোহিদুলসহ ৭ কর্মকর্তা
  • বাস্তবায়নযোগ্যতা যাচাই না করেই ডেমু ট্রেন ক্রয় প্রকল্পের অনুমোদন

অকার্যকর ও অনুপযোগী ডেমু ট্রেন ক্রয় প্রকল্পে প্রায় ৫৯৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকার রাষ্ট্রীয় ক্ষতির অভিযোগে বাংলাদেশ রেলওয়ের সাবেক মহাপরিচালক মো. তোহিদুল আনোয়ার চৌধুরীসহ সাত সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত মঙ্গলবার দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির সহকারী পরিচালক রাজু আহমেদ বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। আজ বুধবার দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার আসামিরা হলেন- বাংলাদেশ রেলওয়ের সাবেক মহাপরিচালক মো. তোহিদুল আনোয়ার চৌধুরী, প্রকল্প পরিচালক ও সাবেক প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী (উন্নয়ন) মো. ইফতিখার হোসেন, সাবেক প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী (পূর্ব) মো. আক্তারুজ্জামান হায়দার, পরিকল্পনা বিভাগের সাবেক উপসচিব বেনজামিন হেমক্রম, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপপ্রধান অঞ্জন কুমার বিশ্বাস, মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপসচিব আশরাফুজ্জামান এবং বাস্তবায়ন, নিরীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সাবেক উপ-পরিচালক মো. মুমিতুর রহমান। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা সরকারি দায়িত্ব পালনের সময় পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নেন। কোনো ধরনের সঠিক সম্ভাব্যতা সমীক্ষা বা বাস্তবায়নযোগ্যতা যাচাই না করেই ডেমু ট্রেন ক্রয় প্রকল্পের অনুমোদন নেন। যেখানে অকার্যকর, লোকসানি এবং বাংলাদেশের রেল অবকাঠামো ও প্রযুক্তিতে অনুপযোগী ট্রেন ক্রয় করে নিজেদের আর্থিকভাবে লাভবান এবং অন্যদের সুবিধা দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রীয় অর্থের অপব্যবহার করা হয়। এর মাধ্যমে রাষ্ট্রের ৫৯৮ কোটি ৮৪ লাখ ১৭ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ৪০৯, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১, ১০৯ এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ ধারা ৫(২) এর আওতায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
এদিকে, কুমিল্লার লাকসাম জংশনের লোকোশেডে পড়ে আছে মরিচা ধরা একটি ডেমু ট্রেন। ট্রেনটির আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নয়, বরং কেবল অচলতা ও অবহেলার নিদর্শন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দাম প্রায় ৩০ কোটি টাকা। আর এভাবে পড়ে থাকা ট্রেন শুধু একটি নয়, রেলের পূর্বাঞ্চলে আনা ২০টি ডেমু ট্রেনের প্রায় সবটিরই একই দশা। চীনের তৈরি এসব ট্রেন ২০১২ সালে আমদানি করেছিল বাংলাদেশ রেলওয়ে। খরচ হয়েছিল প্রায় সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা। পরিকল্পনা ছিল, কুমিল্লা-নোয়াখালী, কুমিল্লা-চাঁদপুর এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে স্বল্প দূরত্বে যাতায়াতকারী নিম্নআয়ের মানুষ যেন দ্রুত ও কম খরচে চলাচল করতে পারেন। কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে উল্টোটা। পূর্বাঞ্চলের চালু হওয়া সব ডেমু ট্রেনই এখন বিকল হয়ে পড়ে আছে। রেলওয়ে সূত্র বলছে, এই অঞ্চলে এক সময় চলত ৫৪ জোড়া ট্রেন। এখন সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ জোড়ায়। ডেমু ট্রেন বন্ধ হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। কুমিল্লা রেলস্টেশনে টিকিটের জন্য লম্বা লাইন। অনেকে টিকিট না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন খালি হাতে। ব্যর্থতার দায়ভার কেউ নিতে না চাইলেও দেশীয় প্রযুক্তিতে ডেমু মেরামতের কথা ভাবছে রেল। এ বিষয়ে রেলওয়ে মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী বলেন, এ মুহূর্তে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে একটা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আরেকটি পরিকল্পনার কথা ভাবা হচ্ছে। যদি সম্ভব হয়, তবে চালু করা হবে। না হলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

সব রেকর্ড ভেঙে স্বর্ণের দামে নতুন ইতিহাস, ভরি ছাড়াল দুই লাখ ২৭ হাজার

ডেমু ট্রেনে গচ্চা ৬০০ কোটি টাকা: দুদকের মামলা

আপডেট সময় : ০৭:১১:২২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আসামি রেলের সাবেক মহাপরিচালক তোহিদুলসহ ৭ কর্মকর্তা
  • বাস্তবায়নযোগ্যতা যাচাই না করেই ডেমু ট্রেন ক্রয় প্রকল্পের অনুমোদন

অকার্যকর ও অনুপযোগী ডেমু ট্রেন ক্রয় প্রকল্পে প্রায় ৫৯৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকার রাষ্ট্রীয় ক্ষতির অভিযোগে বাংলাদেশ রেলওয়ের সাবেক মহাপরিচালক মো. তোহিদুল আনোয়ার চৌধুরীসহ সাত সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত মঙ্গলবার দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির সহকারী পরিচালক রাজু আহমেদ বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। আজ বুধবার দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার আসামিরা হলেন- বাংলাদেশ রেলওয়ের সাবেক মহাপরিচালক মো. তোহিদুল আনোয়ার চৌধুরী, প্রকল্প পরিচালক ও সাবেক প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী (উন্নয়ন) মো. ইফতিখার হোসেন, সাবেক প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী (পূর্ব) মো. আক্তারুজ্জামান হায়দার, পরিকল্পনা বিভাগের সাবেক উপসচিব বেনজামিন হেমক্রম, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপপ্রধান অঞ্জন কুমার বিশ্বাস, মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপসচিব আশরাফুজ্জামান এবং বাস্তবায়ন, নিরীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সাবেক উপ-পরিচালক মো. মুমিতুর রহমান। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা সরকারি দায়িত্ব পালনের সময় পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নেন। কোনো ধরনের সঠিক সম্ভাব্যতা সমীক্ষা বা বাস্তবায়নযোগ্যতা যাচাই না করেই ডেমু ট্রেন ক্রয় প্রকল্পের অনুমোদন নেন। যেখানে অকার্যকর, লোকসানি এবং বাংলাদেশের রেল অবকাঠামো ও প্রযুক্তিতে অনুপযোগী ট্রেন ক্রয় করে নিজেদের আর্থিকভাবে লাভবান এবং অন্যদের সুবিধা দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রীয় অর্থের অপব্যবহার করা হয়। এর মাধ্যমে রাষ্ট্রের ৫৯৮ কোটি ৮৪ লাখ ১৭ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ৪০৯, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১, ১০৯ এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ ধারা ৫(২) এর আওতায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
এদিকে, কুমিল্লার লাকসাম জংশনের লোকোশেডে পড়ে আছে মরিচা ধরা একটি ডেমু ট্রেন। ট্রেনটির আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নয়, বরং কেবল অচলতা ও অবহেলার নিদর্শন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দাম প্রায় ৩০ কোটি টাকা। আর এভাবে পড়ে থাকা ট্রেন শুধু একটি নয়, রেলের পূর্বাঞ্চলে আনা ২০টি ডেমু ট্রেনের প্রায় সবটিরই একই দশা। চীনের তৈরি এসব ট্রেন ২০১২ সালে আমদানি করেছিল বাংলাদেশ রেলওয়ে। খরচ হয়েছিল প্রায় সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা। পরিকল্পনা ছিল, কুমিল্লা-নোয়াখালী, কুমিল্লা-চাঁদপুর এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে স্বল্প দূরত্বে যাতায়াতকারী নিম্নআয়ের মানুষ যেন দ্রুত ও কম খরচে চলাচল করতে পারেন। কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে উল্টোটা। পূর্বাঞ্চলের চালু হওয়া সব ডেমু ট্রেনই এখন বিকল হয়ে পড়ে আছে। রেলওয়ে সূত্র বলছে, এই অঞ্চলে এক সময় চলত ৫৪ জোড়া ট্রেন। এখন সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ জোড়ায়। ডেমু ট্রেন বন্ধ হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। কুমিল্লা রেলস্টেশনে টিকিটের জন্য লম্বা লাইন। অনেকে টিকিট না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন খালি হাতে। ব্যর্থতার দায়ভার কেউ নিতে না চাইলেও দেশীয় প্রযুক্তিতে ডেমু মেরামতের কথা ভাবছে রেল। এ বিষয়ে রেলওয়ে মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী বলেন, এ মুহূর্তে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে একটা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আরেকটি পরিকল্পনার কথা ভাবা হচ্ছে। যদি সম্ভব হয়, তবে চালু করা হবে। না হলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।