বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাষ্টমীতে চট্টগ্রামের পাথরঘাটায় শ্রী শ্রী রাধাগোবিন্দ ও শান্তনেশ্বরী মাতৃমন্দিরে কুমারীপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে দেবী মহামায়ার পাঁচ রূপে ছয় শিশু কুমারী সজ্জিত হয়েছেন।
পূজার শুরুতে কুমারীদের ফুল, চন্দন, বেলপাতা ও তুলসীপাতে মন্ত্রপাঠ ও স্তুতির মাধ্যমে দেবীবন্দনা করা হয়। দুপুরে পূজা শেষে ভক্তরা অঞ্জলি প্রদান করেন। অনুষ্ঠানটি হাজারো ভক্তের উপস্থিতিতে উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হয়।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস অনুযায়ী, দুর্গার বিভিন্ন রূপের মধ্যে ছয় কুমারীকে এইভাবে সজ্জিত করা হয়েছে-
উমা রূপে: রাধেশ্রী দত্ত (৬)
রুদ্রাণী রূপে: সুভদ্রা বিশ্বাস প্রতীক্ষা (১১)
কালসন্দর্ভা রূপে: আদ্রিজা বিশ্বাস (৯) ও নিভৃত দত্ত (৯)
মালিনী রূপে: জুলি দাশ (৭)
কুজ্জিকা রূপে: প্রীতি ধর (৮)
পূজামণ্ডপের প্রচার বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দীপ্ত দত্ত সবুজ বাংলাকে জানান, রাধেশ্রী দত্ত নগরীর সেন্ট স্কলাসটিকাস স্কুলের নার্সারীর ছাত্রী, সুভদ্রা বিশ্বাস প্রতীক্ষা মেরনসান স্কুলের পঞ্চম শ্রেণি, আদ্রিজা বিশ্বাস সেন্ট স্কলাস্টিকার দ্বিতীয় শ্রণি, নিভৃত দত্ত একই স্কুলের পঞ্চম শ্রেণি, প্রীতি ধর ওই স্কুলের চতুর্থ শ্রেণি এবং বৃন্দা দাশ তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী।
শ্যামল সাধু মোহন্ত আরো জানান, হিন্দু শাস্ত্রমতে এক থেকে ষোল বছরের অজাতপুষ্প কুমারী যে কোনো বর্ণ বা গোত্রের হোক পূজিত হতে পারে। প্রতিটি রূপের অর্থ ভিন্ন-
উমা: ফললাভ ও শত্রুবিনাশ
মালিনী: ধনৈশ্চর্য বৃদ্ধি
কুজ্জিকা: শত্রুদের মোহিত করা
কালসন্দর্ভা: দারিদ্র্য ও শত্রু বিনাশ
শ্যামল সাধু আরও বলেন, “কুমারী আদ্যাশক্তি মহামায়ার প্রতীক। নারীকে যথাযথ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করতে কুমারীপূজা করা হয়। কুমারী প্রতীকে সমগ্র জাতির শ্রেষ্ঠ শক্তি, পবিত্রতা, সৃজনী ও পালনী শক্তি সুক্ষরূপে বিরাজমান। এক হাতে অভয় ও অন্য হাতে বর প্রদান করেন। মূলত নারীকে সম্মানিত ও প্রেরণাদায়ী শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়।”
পাথরঘাটায় শান্তনেশ্বরী মাতৃমন্দিরে কুমারীপূজা ২০০৪ সাল থেকে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এ ছাড়া নগরীর রাজাপুকুর লেইনের শ্রীশ্রী পঞ্চমাতা বিগ্রহ বাড়ি এবং বিভিন্ন সেবাশ্রমেও কুমারীপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উৎসবটি শুধুমাত্র ধর্মীয় আচার নয়, এটি চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে শিশু কুমারীদের মাধ্যমে জীবন্ত রূপ পেয়েছে। ভক্তরা আনন্দের সঙ্গে দেবীর এই রূপে পূজা করতে এসে উৎসবকে আরও প্রাণবন্ত করেছেন।
সম্পাদনা: এমআর/সবা

























