০৪:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
অ্যাপের ফাঁদে নিঃস্ব জীবন

দেশজুড়ে অ্যাপ ও অনলাইন গেমের আসক্তি: তরুণদের জীবন ঝুঁকিতে

দেশজুড়ে মোবাইল ও অনলাইন গেমের আসক্তি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এক সময় শিশু-কিশোরদের বিনোদনের মাধ্যম ছিল খেলাধুলা, বই বা গল্পের আসর। এখন সেই স্থান দখল করেছে মোবাইল এবং অনলাইন গেম। দ্রুতগতির ইন্টারনেট, সস্তা স্মার্টফোন এবং সহজ লেনদেনের সুবিধার কারণে এই গেমগুলো ব্যবহারকারীদের আর্থিক ঝুঁকির ফাঁদে ফেলছে।

গেম কোম্পানিগুলো খেলোয়াড়দের প্রাথমিকভাবে বিনামূল্যে খেলার সুযোগ দিয়ে আসক্ত করে, পরে নতুন লেভেল বা জিততে হলে অর্থ খরচ বাধ্যতামূলক হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চমকপ্রদ বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা লোভে পড়ে টাকা খরচ করতে শুরু করে। এতে শিশু-কিশোর, শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন পেশার মানুষ অর্থনৈতিক ও মানসিক ক্ষতির মুখে পড়ছে।

 

মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, গেমগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা হয় যাতে খেলোয়াড় আসক্ত হয়ে পড়ে। ছোট পুরস্কার দিয়ে বড় পুরস্কারের লোভ দেখানো হয়, যা ‘জুয়া মনস্তত্ত্ব’ তৈরি করে। দীর্ঘ সময় ব্যবহারে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস, মানসিক চাপ বৃদ্ধি এবং আর্থিক নিরাপত্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মাহফুজুর রহমান বলেন, “অনলাইন গেমে টাকা খরচ মানে দেশের অর্থ বিদেশে চলে যাচ্ছে এবং অনেক পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে।” কুমিল্লা সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. আবুল কাশেম বলেন, “গেম আসক্তি এক সময় মাদকাসক্তির মতোই সামাজিক সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। স্কুল-কলেজ পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের সময় ব্যবস্থাপনা ও অনলাইন ব্যবহারের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া জরুরি।”

 

ইন্টারনেট ও অনলাইন ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, তরুণদের গেম আসক্তি থেকে রক্ষা করতে পারিবারিক নজরদারি, সঠিক সময় ব্যবস্থাপনা এবং বৈধ অনলাইন কার্যক্রমে মনোযোগী করা জরুরি। শিক্ষার্থী ও যুবসমাজকে সামাজিক ও নৈতিক দিক থেকে সচেতন করা এবং অনলাইন জুয়ার ঝুঁকি থেকে দূরে রাখাই এই সময়ের প্রধান দায়িত্ব।

সরকারও অনলাইন জুয়া ও গেমিং প্ল্যাটফর্মের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। অবৈধ জুয়ার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ কার্যক্রমে যারা জড়িত তাদের অর্থনৈতিক ও আইনগত ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে।

অবশেষে বিশেষজ্ঞরা মনে করান, ইন্টারনেট একটি বড় নিয়ামত হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে—শিক্ষা, জ্ঞান অর্জন এবং বৈধ বিনোদনের মাধ্যমে তরুণদের সঠিক পথে পরিচালিত করা সম্ভব। কিন্তু অনলাইন গেমে অতিরিক্ত আসক্তি সামাজিক, মানসিক ও আর্থিক দিক থেকে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

এমআর/সবা

জনপ্রিয় সংবাদ

অ্যাপের ফাঁদে নিঃস্ব জীবন

দেশজুড়ে অ্যাপ ও অনলাইন গেমের আসক্তি: তরুণদের জীবন ঝুঁকিতে

আপডেট সময় : ০৬:১৪:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৫

দেশজুড়ে মোবাইল ও অনলাইন গেমের আসক্তি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এক সময় শিশু-কিশোরদের বিনোদনের মাধ্যম ছিল খেলাধুলা, বই বা গল্পের আসর। এখন সেই স্থান দখল করেছে মোবাইল এবং অনলাইন গেম। দ্রুতগতির ইন্টারনেট, সস্তা স্মার্টফোন এবং সহজ লেনদেনের সুবিধার কারণে এই গেমগুলো ব্যবহারকারীদের আর্থিক ঝুঁকির ফাঁদে ফেলছে।

গেম কোম্পানিগুলো খেলোয়াড়দের প্রাথমিকভাবে বিনামূল্যে খেলার সুযোগ দিয়ে আসক্ত করে, পরে নতুন লেভেল বা জিততে হলে অর্থ খরচ বাধ্যতামূলক হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চমকপ্রদ বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা লোভে পড়ে টাকা খরচ করতে শুরু করে। এতে শিশু-কিশোর, শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন পেশার মানুষ অর্থনৈতিক ও মানসিক ক্ষতির মুখে পড়ছে।

 

মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, গেমগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা হয় যাতে খেলোয়াড় আসক্ত হয়ে পড়ে। ছোট পুরস্কার দিয়ে বড় পুরস্কারের লোভ দেখানো হয়, যা ‘জুয়া মনস্তত্ত্ব’ তৈরি করে। দীর্ঘ সময় ব্যবহারে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস, মানসিক চাপ বৃদ্ধি এবং আর্থিক নিরাপত্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মাহফুজুর রহমান বলেন, “অনলাইন গেমে টাকা খরচ মানে দেশের অর্থ বিদেশে চলে যাচ্ছে এবং অনেক পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে।” কুমিল্লা সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. আবুল কাশেম বলেন, “গেম আসক্তি এক সময় মাদকাসক্তির মতোই সামাজিক সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। স্কুল-কলেজ পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের সময় ব্যবস্থাপনা ও অনলাইন ব্যবহারের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া জরুরি।”

 

ইন্টারনেট ও অনলাইন ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, তরুণদের গেম আসক্তি থেকে রক্ষা করতে পারিবারিক নজরদারি, সঠিক সময় ব্যবস্থাপনা এবং বৈধ অনলাইন কার্যক্রমে মনোযোগী করা জরুরি। শিক্ষার্থী ও যুবসমাজকে সামাজিক ও নৈতিক দিক থেকে সচেতন করা এবং অনলাইন জুয়ার ঝুঁকি থেকে দূরে রাখাই এই সময়ের প্রধান দায়িত্ব।

সরকারও অনলাইন জুয়া ও গেমিং প্ল্যাটফর্মের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। অবৈধ জুয়ার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ কার্যক্রমে যারা জড়িত তাদের অর্থনৈতিক ও আইনগত ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে।

অবশেষে বিশেষজ্ঞরা মনে করান, ইন্টারনেট একটি বড় নিয়ামত হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে—শিক্ষা, জ্ঞান অর্জন এবং বৈধ বিনোদনের মাধ্যমে তরুণদের সঠিক পথে পরিচালিত করা সম্ভব। কিন্তু অনলাইন গেমে অতিরিক্ত আসক্তি সামাজিক, মানসিক ও আর্থিক দিক থেকে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

এমআর/সবা