দীর্ঘ ৩ যুগ পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) আবারও অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন। পুরো ক্যাম্পাস এখন নির্বাচনী উৎসবে মুখর। প্রার্থীদের পোস্টার, ইশতেহার ও স্লোগানের ভিড়ে বিশেষ আলোচনায় উঠে এসেছে এক অনন্য দৃষ্টান্ত—আটজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীও এবার প্রার্থী হিসেবে অংশ নিচ্ছেন।
চোখে আলো না থাকলেও তাদের স্বপ্নে কোনো অন্ধকার নেই। দৃঢ়তা, আত্মবিশ্বাস আর অটল ইচ্ছাশক্তিতেই তারা প্রমাণ করছেন—প্রতিবন্ধকতা নেতৃত্বের পথে বাধা নয়, বরং এগিয়ে যাওয়ার শক্তি।
চাকসু নির্বাচনে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন—ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী মিজান মিয়া, ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট থেকে সমাজতত্ত্ব বিভাগের আকাশ দাস, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ইতিহাস বিভাগের মো. সুরত আলম, ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ) ও ছাত্রফ্রন্ট (বাসদ) সমর্থিত ‘দ্রোহ পর্ষদ’ থেকে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের মোহাম্মদ সোহেল রানা, ‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’ থেকে আইন বিভাগের মেহেদী হাসান এবং ‘বিনির্মাণ শিক্ষার্থী ঐক্য’ থেকে আবিদুর রহমান।
এছাড়া হল সংসদেও লড়ছেন বিজয় ২৪ হলের আয়েশা খাতুন ও এ এফ রহমান হলের মো. নাদিম হোসেন—দুজনই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী।
চাকসু প্রার্থী সোহেল রানা বলেন, “সত্যিকারের বিশ্ববিদ্যালয় হলো যেখানে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণের সমান সুযোগ থাকে। আমি চাই চবি হয়ে উঠুক মানবিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বিশ্ববিদ্যালয়—যেখানে মানুষ ও প্রকৃতির সহাবস্থান রক্ষা পাবে।”
স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বী সুরত আলম বলেন, “চবি মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা সুবিধা সীমিত। আমি নির্বাচিত হলে এটিকে ৫০ শয্যার হাসপাতালে রূপ দিতে কাজ করব। প্রতিবন্ধকতা কখনোই নেতৃত্বের পথে বাধা হতে পারে না—এটা প্রমাণ করতেই আমি লড়ছি।”
হল প্রার্থী আয়েশা খাতুন বলেন, “আমি দেখাতে চাই, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরাও পারে—সমান দক্ষতায়, সমান অধিকার নিয়ে। নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাই আমার অঙ্গীকার।”
সহপাঠীরাও এই প্রার্থীদের অংশগ্রহণকে দেখছেন অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে। শিক্ষার্থী সাদিয়া রহমান বলেন, “ওরা যেভাবে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছে, তাতে বোঝা যায় আত্মবিশ্বাস কীভাবে এক মানুষকে আলোকিত করে তুলতে পারে।”
একজন শিক্ষক, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সাখাওয়াত হুসাইন বলেন, “এরা দেখিয়ে দিয়েছে—নেতৃত্ব মানে ক্ষমতা নয়; নেতৃত্ব মানে সাহস, আত্মবিশ্বাস আর সমাজে নিজের জায়গা তৈরি করার গল্প।”
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এই শিক্ষার্থীরা যেন জীবন্ত প্রমাণ—চোখে না দেখলেও মন দিয়ে দেখা যায়, আর দৃঢ়তায় গড়া ইচ্ছাশক্তিই পারে পুরো সমাজকে আলো দেখাতে। তাদের কারণে আজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আরও আলোকিত, আরও মানবিক।
আগামী ১৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে চাকসুর সপ্তম নির্বাচন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার এই ভোট উৎসবে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী প্রার্থীদের অংশগ্রহণ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় রচনা করবে।
এমআর/সবা

























