০১:৫৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

১৭ পেরিয়ে ১৮: বেরোবি শিক্ষার্থীদের চোখে সংকট, আশা ও প্রাপ্তি

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) তার প্রতিষ্ঠার ১৭ বছর পেরিয়ে ১৮তম বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছে। ২০০৮ সালে উত্তরাঞ্চলের উচ্চশিক্ষার দ্বার উন্মোচনকারী এই প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কেবল একটি উৎসব নয়; এটি একই সঙ্গে আত্ম-অনুসন্ধান, দীর্ঘদিনের অপূর্ণতার সমালোচনা এবং ন্যায় ও গবেষণার মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকারের দিন। এই বিশেষ প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আটজন শিক্ষার্থীর প্রত্যাশা, প্রাপ্তি এবং সংকটের কথা তুলে ধরা হলো।

পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের আকাঙ্ক্ষা: মেহেদী হাসান (অর্থনীতি) বলেন, “প্রায় দুই দশকের পথচলায় বিশ্ববিদ্যালয়টি এখনও পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি, যা চিন্তার বিষয়। কৃষি ও আইন অনুষদ এখনও চালু হয়নি। এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রাম চালুর উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়নের অপেক্ষায়।”

আশ্বাসের বেড়াজাল ও নেতৃত্বের ঘাটতি: মোঃ তুহিন রানা (পদার্থবিজ্ঞান) বলেন, “১৭ বছর পেরিয়ে ১৮ বছরে পদার্পণ, তবুও প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে বিস্তর ফারাক। স্বৈরাচারী আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত ভিসিদের স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঙ্খিত উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করেছে। প্রশাসনের স্বদিচ্ছা থাকলেও উপর মহলের গুরুত্বহীনতা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে বাধা দিয়েছে।”

 

উত্তরবঙ্গের স্বপ্ন ও ন্যায়ের অঙ্গীকার: রিফাত ইসলাম রাফি (ইইই) বলেন, “প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় উত্তরবঙ্গের মানুষের আশা। কিন্তু নানা উন্নয়ন প্রকল্প ও একাডেমিক উদ্যোগ দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে অবকাঠামো, গবেষণা ও শিক্ষার মানোন্নয়নে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় হতাশাও জন্মেছে।”

বেগম রোকেয়া—এক অনুপ্রেরণা: কামরুন নাহার জুঁই (ইংরেজি) বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় দিবস আমাদের ‘অস্তিত্বের প্রতীক’ এবং এতে লুকিয়ে আছে পরিবর্তনের শক্তি। বেগম রোকেয়া নারী জাগরণের অগ্রদূত, শিক্ষার আলোকবর্তিকা। এই দিবস আমাদের শেখায় ঐক্য, উদ্দীপনা ও দায়িত্ববোধ।”

অবাসন সংকট চরমে: ওয়াহিদুজ্জামান ওয়াহিদ (ইইই) জানান, “১৭ বছর পেরোতে চললেও মাত্র ১০ শতাংশ শিক্ষার্থীই হল সুবিধা পাচ্ছে। নতুন হল নির্মাণের কাজ শুরু হলেও দুর্নীতির কারণে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য স্থবিরতা। মেডিকেল সেন্টারে পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই, ফলে পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্যসেবা থেকে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত।”

গবেষণা ও নতুন প্রত্যাশা: শামীমা আক্তার শিমু (লোকপ্রশাসন) বলেন, “সংকটের মাঝেও শিক্ষার্থীরা গবেষণায় সামান্য অগ্রগতির উদ্যোগ দেখে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছে। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাক গবেষণা, সংস্কৃতি এবং মানবিক মূল্যবোধে।”

অনুপ্রেরণার আশ্রয়স্থল: আনিকা তাসকিন (জিডিএস) বলেন, “বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় আমার গর্ব। এটি কেবল পাঠ্যপুস্তকের জ্ঞান নয়, মানুষ হতে এবং সমাজের জন্য ভাবতে শেখায়। এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রার্থনা করি, বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিক প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।”

অনিশ্চয়তার মধ্যে সম্ভাবনার খোঁজ: মোঃ মারুফ হোসেন বাপ্পী (ইংরেজি) বলেন, “১৭ বছর পেরিয়েও পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা শিক্ষার্থীদের কাছে পূর্ণ হয়নি। আমরা সমস্যার মধ্যেই রয়েছি। সম্ভাবনাগুলো হারিয়ে যাচ্ছে অতল গহীনে।”

বেরোবি শিক্ষার্থীদের এই অভিজ্ঞতা ও প্রত্যাশা প্রমাণ করে, বিশ্ববিদ্যালয় এখনও অনেক চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, তবে শিক্ষার্থীদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও আশার আলোই আগামী প্রজন্মের জন্য পথ প্রদর্শক হবে।

এমআর/সবা

জনপ্রিয় সংবাদ

সপরিবারে হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছেছেন তারেক রহমান

১৭ পেরিয়ে ১৮: বেরোবি শিক্ষার্থীদের চোখে সংকট, আশা ও প্রাপ্তি

আপডেট সময় : ০৬:০৪:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) তার প্রতিষ্ঠার ১৭ বছর পেরিয়ে ১৮তম বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছে। ২০০৮ সালে উত্তরাঞ্চলের উচ্চশিক্ষার দ্বার উন্মোচনকারী এই প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কেবল একটি উৎসব নয়; এটি একই সঙ্গে আত্ম-অনুসন্ধান, দীর্ঘদিনের অপূর্ণতার সমালোচনা এবং ন্যায় ও গবেষণার মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকারের দিন। এই বিশেষ প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আটজন শিক্ষার্থীর প্রত্যাশা, প্রাপ্তি এবং সংকটের কথা তুলে ধরা হলো।

পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের আকাঙ্ক্ষা: মেহেদী হাসান (অর্থনীতি) বলেন, “প্রায় দুই দশকের পথচলায় বিশ্ববিদ্যালয়টি এখনও পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি, যা চিন্তার বিষয়। কৃষি ও আইন অনুষদ এখনও চালু হয়নি। এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রাম চালুর উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়নের অপেক্ষায়।”

আশ্বাসের বেড়াজাল ও নেতৃত্বের ঘাটতি: মোঃ তুহিন রানা (পদার্থবিজ্ঞান) বলেন, “১৭ বছর পেরিয়ে ১৮ বছরে পদার্পণ, তবুও প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে বিস্তর ফারাক। স্বৈরাচারী আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত ভিসিদের স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঙ্খিত উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করেছে। প্রশাসনের স্বদিচ্ছা থাকলেও উপর মহলের গুরুত্বহীনতা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে বাধা দিয়েছে।”

 

উত্তরবঙ্গের স্বপ্ন ও ন্যায়ের অঙ্গীকার: রিফাত ইসলাম রাফি (ইইই) বলেন, “প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় উত্তরবঙ্গের মানুষের আশা। কিন্তু নানা উন্নয়ন প্রকল্প ও একাডেমিক উদ্যোগ দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে অবকাঠামো, গবেষণা ও শিক্ষার মানোন্নয়নে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় হতাশাও জন্মেছে।”

বেগম রোকেয়া—এক অনুপ্রেরণা: কামরুন নাহার জুঁই (ইংরেজি) বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় দিবস আমাদের ‘অস্তিত্বের প্রতীক’ এবং এতে লুকিয়ে আছে পরিবর্তনের শক্তি। বেগম রোকেয়া নারী জাগরণের অগ্রদূত, শিক্ষার আলোকবর্তিকা। এই দিবস আমাদের শেখায় ঐক্য, উদ্দীপনা ও দায়িত্ববোধ।”

অবাসন সংকট চরমে: ওয়াহিদুজ্জামান ওয়াহিদ (ইইই) জানান, “১৭ বছর পেরোতে চললেও মাত্র ১০ শতাংশ শিক্ষার্থীই হল সুবিধা পাচ্ছে। নতুন হল নির্মাণের কাজ শুরু হলেও দুর্নীতির কারণে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য স্থবিরতা। মেডিকেল সেন্টারে পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই, ফলে পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্যসেবা থেকে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত।”

গবেষণা ও নতুন প্রত্যাশা: শামীমা আক্তার শিমু (লোকপ্রশাসন) বলেন, “সংকটের মাঝেও শিক্ষার্থীরা গবেষণায় সামান্য অগ্রগতির উদ্যোগ দেখে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছে। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাক গবেষণা, সংস্কৃতি এবং মানবিক মূল্যবোধে।”

অনুপ্রেরণার আশ্রয়স্থল: আনিকা তাসকিন (জিডিএস) বলেন, “বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় আমার গর্ব। এটি কেবল পাঠ্যপুস্তকের জ্ঞান নয়, মানুষ হতে এবং সমাজের জন্য ভাবতে শেখায়। এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রার্থনা করি, বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিক প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।”

অনিশ্চয়তার মধ্যে সম্ভাবনার খোঁজ: মোঃ মারুফ হোসেন বাপ্পী (ইংরেজি) বলেন, “১৭ বছর পেরিয়েও পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা শিক্ষার্থীদের কাছে পূর্ণ হয়নি। আমরা সমস্যার মধ্যেই রয়েছি। সম্ভাবনাগুলো হারিয়ে যাচ্ছে অতল গহীনে।”

বেরোবি শিক্ষার্থীদের এই অভিজ্ঞতা ও প্রত্যাশা প্রমাণ করে, বিশ্ববিদ্যালয় এখনও অনেক চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, তবে শিক্ষার্থীদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও আশার আলোই আগামী প্রজন্মের জন্য পথ প্রদর্শক হবে।

এমআর/সবা