রংপুরে কৃষি জমির পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে কমছে। শিল্পায়ন, নগরায়ণ ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে গত পাঁচ বছরে অন্তত দেড় হাজার হেক্টর কৃষিজমি অকৃষি খাতে ব্যবহার করা হয়েছে। এতে তিন ও চার ফসলি জমিও অন্তর্ভুক্ত। কৃষি কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা এতে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
এক সময় রংপুরের উদ্বৃত্ত ফসল দিয়ে দেশের অন্যান্য জেলার চাহিদা মেটানো হতো। বর্তমানে, যে ফসল উৎপাদন হয়, তা দিয়ে জেলার ৩২ লক্ষ মানুষের চাহিদা মেটলেও প্রতিবছরই ফসলি জমির পরিমাণ কমছে। অকৃষি খাতে চলে যাওয়া জমিতে গড়ে উঠছে আবাসন, শিল্পকলকারখানা, হোটেল-মোটেল, ফিলিং স্টেশনসহ নানা প্রতিষ্ঠান।
উদাহরণস্বরূপ, রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের পীরগঞ্জ থেকে মডার্ন মোড়, রংপুর-কুড়িগ্রাম সড়কের কাউনিয়া, রংপুর-পীরগাছা সড়ক, রংপুর-বদরগঞ্জ সড়ক ও রংপুর-দিনাজপুর সড়কের বিভিন্ন স্থানে কৃষিজমির জায়গায় এসব স্থাপনা গড়ে উঠেছে। গঙ্গাচড়া উপজেলার খারুভাজ এলাকায় ফসলি জমিতে সম্প্রতি একটি অটো রাইস মিল তৈরি হয়েছে, যার কারণে পরিবেশ দূষণের অভিযোগ উঠেছে।
জমির মালিক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, “জমি কৃষিতে পোষায় না, তাই অটো রাইস মিল দিচ্ছি। নিজেকে বাঁচাতে হবে।” স্থানীয়রা জানান, রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য অনেক ফসলি জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে এবং সেগুলোর পাশে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিল্পকারখানা ও বসতবাড়ি গড়ে উঠেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুরের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, “শতভাগ জমি পতিত নয়। বছরের বিভিন্ন সময়ে এগুলোতে ফসল চাষ করা হয়। তবে অকৃষি খাতের জন্য ফসলি জমি ব্যবহার না হওয়া নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর। তাই কৃষিজমি রক্ষায় অগ্রাধিকার দিতে হবে।”
রংপুরের বসতভিটা ও আবাদি জমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট পলাশ কান্তি নাগ বলেন, “শিল্পায়ন ও নগরায়ণের নামে কৃষিজমি ধ্বংস হচ্ছে। এই প্রবণতা আগামী প্রজন্মের জন্য অশনিসংকেত। কৃষকের জীবনে অনিশ্চয়তা থাকলেও তারা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে দিন-রাত পরিশ্রম করছে। কৃষিজমি নষ্ট করে স্থাপনা গড়ে ওঠার কারণে অচিরেই খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।”
পরিবেশ অধিদপ্তর রংপুরের উপপরিচালক আব্দুস সালাম বলেন, “ইটভাটাসহ কোনো প্রতিষ্ঠান পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায় কিনা তা আমরা দেখব। তবে কৃষিজমিতে স্থাপনা গড়ে ওঠার বিষয়টি কৃষি বিভাগ পর্যবেক্ষণ করবে।”
এমআর/সবা


























