উত্তরাঞ্চলে দিন দিন সবজি চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাজারদর ভালো পাওয়ায় কৃষকরা এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি সবজি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। রংপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও নীলফামারীসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন উপজেলায় সারা বছরই কোনো না কোনো সবজি উৎপাদন হচ্ছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে এসব সবজি। শুধু তাই নয়, রংপুর বিভাগের উৎপাদিত সবজি বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।
চলতি রবি মৌসুমে রংপুর কৃষি অঞ্চলের পাঁচ জেলায় ৪২ হাজার ১৩০ হেক্টর জমিতে ১১ লাখ ১৯ হাজার ৮৯৩ টন শীতকালীন সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই)। নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে আমন ধান কাটার সময় পুরোদমে শীতকালীন সবজি চাষ শুরু হবে।
গত বছর রবি মৌসুমে রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলায় ৩৯ হাজার ৭৪২ হেক্টর জমিতে ১০ লাখ ৩৯ হাজার ৬৯৯ টন শীতকালীন সবজি উৎপাদন হয়েছিল। এ বছর উৎপাদন ও চাষের পরিমাণ আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।
চলতি মৌসুমে শীতকালীন সবজি চাষে কৃষকদের উৎসাহ দিতে সরকার বিশেষ প্রণোদনা, উচ্চফলনশীল বীজ ও সার বিতরণসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো কৃষকদের মানসম্মত বীজ, কৃষি উপকরণ ও কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে।
এ ছাড়া রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব), বাণিজ্যিক ব্যাংক ও কয়েকটি এনজিও সহজ শর্তে কৃষিঋণ বিতরণ শুরু করেছে, যাতে শীতকালীন সবজি চাষ কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়ন হয়।
কৃষিবিদ ড. মো. মামুনুর রশিদ বলেন, চলতি মৌসুমে কৃষকরা আগের তুলনায় আরও বেশি জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি জানান, সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের কৃষকরা আগাম জাতের শীতকালীন সবজি চাষ শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে এসব আগাম জাতের সবজি বাজারে আসতে শুরু করেছে, যা পরিবর্তিত জলবায়ুর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার একটি সফল উদ্যোগ।
রংপুরের রাণীপুকুর গ্রামের কৃষক আজিজুর রহমান বলেন, স্বল্পমেয়াদি আমন ধান কাটার পর আগাম শীতকালীন সবজির বীজ বপন করেছেন তিনি। কুড়িগ্রামের সাতভিটা গ্রামের সাইফুল ইসলাম ও নয়াগ্রামের মাহবুবুর রহমান জানান, বন্যার পানি নামার পর তারা আগাম জাতের সবজি চাষ শুরু করেছেন। কৃষকরা আশা করছেন, নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ থেকেই আগাম মৌসুমি সবজি তুলতে পারবেন, এতে অধিক মুনাফা অর্জন সম্ভব হবে।
রংপুর অঞ্চলের ডিএই অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভালো উৎপাদন ও ন্যায্য মূল্য পাওয়ায় কৃষকরা শীতকালীন সবজি চাষে আরও উৎসাহী হয়েছেন। তিনি জানান, ইতোমধ্যে ৫ হাজার ৫৬৫ হেক্টর জমিতে সবজির বীজ বপন সম্পন্ন হয়েছে। আগামী মাস থেকেই আগাম জাতের সবজি তোলা শুরু হবে।
তিনি আরও বলেন, নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে রংপুর অঞ্চলে আমন ধান কাটার সময় পূর্ণমাত্রায় শীতকালীন সবজি চাষ শুরু হবে। এতে কৃষকরা আরও বেশি লাভবান হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
এমআর/সবা


























