১০:০৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন ও সিআরবি এলাকা মাদক কারবারীদের দখলে

নতুন কৌশলে চট্টগ্রামে ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন ধরনের মাদক। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবা কক্সবাজারের টেকনাফ হয়ে চট্টগ্রাম মাধ্যমে সারা দেশে সরবরাহ হচ্ছে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার তৎপরতা বাড়লেও মাদক কারবারিরা প্রতিনিয়ত রুট পরিবর্তন করে এখন নৌ ও রেলপথকে ব্যবহার করছে মাদক পরিবহনের প্রধান মাধ্যম হিসেবে।

এই সুযোগে চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানাধীন নতুন ও পুরাতন রেলস্টেশন এবং সিআরবি এলাকা এখন মাদক, জুয়া ও ছিনতাইকারীদের নিয়ন্ত্রণে পরিণত হয়েছে। এলাকাবাসী বলছেন, এখানে প্রকাশ্যে চলছে জুয়া, মাদক ও অশালীন ব্যবসা। উঠতি বয়সী তরুণরাও দিন দিন এই সর্বনাশা নেশায় জড়িয়ে পড়ছে। ফলে বেড়ে গেছে চুরি, ছিনতাই ও অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, নগরীর ১৬টি থানায় সক্রিয় রয়েছে মাদক গডফাদারদের একটি বড় সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের অধীনে প্রায় ৩৫৯ জন মাদক কারবারি কাজ করছে। তাদের সাথে স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ি ও কথিত ‘ক্যাশিয়ারদের’ সমন্বয় রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

চট্টগ্রামের ৫০টি স্থানে মাদকের কেনাবেচা হয়, যার মধ্যে সবচেয়ে বড় আখড়া হলো নতুন রেলস্টেশন, পুরাতন রেলস্টেশন ও সিআরবি চৌদ্দ জামতলা বস্তি। এসব এলাকার মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে আলো আক্তার প্রকাশ খাল্লাম্মা নামের এক নারী। তিনি শুধু মাদক নয়, ছিনতাই ও চোরচক্রেরও মূল নিয়ন্ত্রক হিসেবে পরিচিত।

খাল্লাম্মার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে নতুন ও পুরাতন রেলস্টেশন, সিআরবি, টাইগারপাস, কদমতলী, বিআরটিসি, নিউমার্কেট, কাজীরদেউড়ি, ওয়াসা মোড়, লালখান বাজার, চৌদ্দ জামতলা বস্তি, এনায়েতবাজার, গোয়ালপাড়া, তুলাতলী বস্তি, বাটালী রোড ও চৈতন্য গলি। তার সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে কাজ করছে মো. জুয়েল প্রকাশ কাঙ্গাল জুয়েল, যিনি পুলিশের সোর্স হিসেবেও পরিচিত। জুয়েলের অধীনে শতাধিক পুরুষ ও নারী কাজ করছে, যাদের দেখাশোনা করে জনি ও শফিউল্লাহ নামে দুই ব্যক্তি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এ এলাকায় আরও কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী আলতাফ, বাবু, আলম, মানিক, তোহিদ, অলি, খলিল, শেফালী, মিলন, রাজু, আজাদ, রুবেল, তাজু, শুকতারা ও মুন্নীসহ অনেকে সক্রিয় রয়েছে। খাল্লাম্মার পুরো নেটওয়ার্ক তদারক করেন তার বড় বোন আয়শা, পালিত পিতা সালে আহমেদ ও আত্মীয়া রোকেয়া।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ছয় মাস আগেও নিয়মিত পুলিশ অভিযান চললেও এখন তা প্রায় বন্ধ। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় কিছু পুলিশ সদস্য মাসোহারা নিয়ে এই চক্রকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন। স্টেশন রোডের কয়েকটি হোটেল থেকেও নিয়মিত মাসোহারা নেওয়া হয় বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা।

গোয়ালপাড়ার বাসিন্দা আনিছ বলেন, “সিআরবি ফাঁড়ির ইনচার্জকে এখন আর পাওয়া যায় না। এর সুযোগে মাদকসেবী ও ছিনতাইকারীরা এলাকা দখল করে ফেলেছে।” স্থানীয়দের দাবি, প্রশাসনের অভিযান না থাকায় প্রতিদিন বাড়ছে অপরাধ, আর যুবসমাজ ডুবে যাচ্ছে মাদকের অন্ধকারে।

এলাকাবাসী প্রশাসনের প্রতি দাবি জানিয়েছেন, আলো আক্তার প্রকাশ খাল্লাম্মা ও তার সহযোগীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার। তাদের মতে, এখনই পদক্ষেপ না নিলে চট্টগ্রামের এই গুরুত্বপূর্ণ এলাকা পুরোপুরি মাদকের কালো থাবায় গ্রাসিত হবে।

এমআর/সবা

জনপ্রিয় সংবাদ

চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন ও সিআরবি এলাকা মাদক কারবারীদের দখলে

আপডেট সময় : ০৪:৪২:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫

নতুন কৌশলে চট্টগ্রামে ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন ধরনের মাদক। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবা কক্সবাজারের টেকনাফ হয়ে চট্টগ্রাম মাধ্যমে সারা দেশে সরবরাহ হচ্ছে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার তৎপরতা বাড়লেও মাদক কারবারিরা প্রতিনিয়ত রুট পরিবর্তন করে এখন নৌ ও রেলপথকে ব্যবহার করছে মাদক পরিবহনের প্রধান মাধ্যম হিসেবে।

এই সুযোগে চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানাধীন নতুন ও পুরাতন রেলস্টেশন এবং সিআরবি এলাকা এখন মাদক, জুয়া ও ছিনতাইকারীদের নিয়ন্ত্রণে পরিণত হয়েছে। এলাকাবাসী বলছেন, এখানে প্রকাশ্যে চলছে জুয়া, মাদক ও অশালীন ব্যবসা। উঠতি বয়সী তরুণরাও দিন দিন এই সর্বনাশা নেশায় জড়িয়ে পড়ছে। ফলে বেড়ে গেছে চুরি, ছিনতাই ও অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, নগরীর ১৬টি থানায় সক্রিয় রয়েছে মাদক গডফাদারদের একটি বড় সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের অধীনে প্রায় ৩৫৯ জন মাদক কারবারি কাজ করছে। তাদের সাথে স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ি ও কথিত ‘ক্যাশিয়ারদের’ সমন্বয় রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

চট্টগ্রামের ৫০টি স্থানে মাদকের কেনাবেচা হয়, যার মধ্যে সবচেয়ে বড় আখড়া হলো নতুন রেলস্টেশন, পুরাতন রেলস্টেশন ও সিআরবি চৌদ্দ জামতলা বস্তি। এসব এলাকার মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে আলো আক্তার প্রকাশ খাল্লাম্মা নামের এক নারী। তিনি শুধু মাদক নয়, ছিনতাই ও চোরচক্রেরও মূল নিয়ন্ত্রক হিসেবে পরিচিত।

খাল্লাম্মার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে নতুন ও পুরাতন রেলস্টেশন, সিআরবি, টাইগারপাস, কদমতলী, বিআরটিসি, নিউমার্কেট, কাজীরদেউড়ি, ওয়াসা মোড়, লালখান বাজার, চৌদ্দ জামতলা বস্তি, এনায়েতবাজার, গোয়ালপাড়া, তুলাতলী বস্তি, বাটালী রোড ও চৈতন্য গলি। তার সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে কাজ করছে মো. জুয়েল প্রকাশ কাঙ্গাল জুয়েল, যিনি পুলিশের সোর্স হিসেবেও পরিচিত। জুয়েলের অধীনে শতাধিক পুরুষ ও নারী কাজ করছে, যাদের দেখাশোনা করে জনি ও শফিউল্লাহ নামে দুই ব্যক্তি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এ এলাকায় আরও কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী আলতাফ, বাবু, আলম, মানিক, তোহিদ, অলি, খলিল, শেফালী, মিলন, রাজু, আজাদ, রুবেল, তাজু, শুকতারা ও মুন্নীসহ অনেকে সক্রিয় রয়েছে। খাল্লাম্মার পুরো নেটওয়ার্ক তদারক করেন তার বড় বোন আয়শা, পালিত পিতা সালে আহমেদ ও আত্মীয়া রোকেয়া।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ছয় মাস আগেও নিয়মিত পুলিশ অভিযান চললেও এখন তা প্রায় বন্ধ। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় কিছু পুলিশ সদস্য মাসোহারা নিয়ে এই চক্রকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন। স্টেশন রোডের কয়েকটি হোটেল থেকেও নিয়মিত মাসোহারা নেওয়া হয় বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা।

গোয়ালপাড়ার বাসিন্দা আনিছ বলেন, “সিআরবি ফাঁড়ির ইনচার্জকে এখন আর পাওয়া যায় না। এর সুযোগে মাদকসেবী ও ছিনতাইকারীরা এলাকা দখল করে ফেলেছে।” স্থানীয়দের দাবি, প্রশাসনের অভিযান না থাকায় প্রতিদিন বাড়ছে অপরাধ, আর যুবসমাজ ডুবে যাচ্ছে মাদকের অন্ধকারে।

এলাকাবাসী প্রশাসনের প্রতি দাবি জানিয়েছেন, আলো আক্তার প্রকাশ খাল্লাম্মা ও তার সহযোগীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার। তাদের মতে, এখনই পদক্ষেপ না নিলে চট্টগ্রামের এই গুরুত্বপূর্ণ এলাকা পুরোপুরি মাদকের কালো থাবায় গ্রাসিত হবে।

এমআর/সবা