০৫:০৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রংপুরের মর্ডান মোড়ে চোখ জুড়ানো চড়ুই পাখির মেলা

সিদ্দিকুর রহমান,বেরোবি প্রতিনিধি 
দলবেঁধে বসে আছে হাজার হাজার চড়ুই পাখি। দেখলেই যেন মনে হয় গাছের ডালে বসেছে চড়ুই পাখির মেলা। গাছের প্রতিটি শাখা-প্রশাখা ভরে ওঠে চড়ুই পাখির কিচিরমিচির শব্দে। আমাদের গ্রাম-বাংলার ঘর-বাড়ি ও শহুরে ইমারতে অতি সহজেই দেখা যায় চড়ুই পাখির।
রংপুরের মডার্ন মোড় সংলগ্ন চাঁদ পেট্রোলিয়ামের যাত্রী ছাউনির কাছে বেশ পুরোনো একটি কৃষ্ণচূড়া গাছে প্রায় ৫-৬ হাজার চড়ুই পাখির বসবাস। প্রতিদিন গোধূলিলগ্নে সারাদিনের আহার শেষে কিচিরমিচির শব্দে চড়ুই পাখিগুলো এক ডাল থেকে অন্য ডালে উড়ে বসে। যেন তাদের আনন্দের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। মনে হয় যেন তারা সুখ-দুঃখের গল্প করছে একে অপরের সঙ্গে।
এমন দৃশ্য দেখে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকেন সবাই। কেউ কেউ ক্যামেরা কিংবা অন্য মাধ্যমে ফ্রেমবন্দি করে রাখতে দেরি করেন না। চড়ুই পাখির এই মিলনমেলা দেখে তারা আবেগ-অনুভূতি প্রকাশ করে থাকেন।
প্রতিদিন যখন পূর্ব আকাশে সূর্য ওঠে, দিনের আলো ফোটে ঠিক তখনই চড়ুই পাখিগুলো কিচিরমিচির শব্দে গান করতে করতে খাবার সন্ধানে ছুটতে থাকে। সারাদিন বিভিন্ন জায়গায় উড়ে উড়ে হাজারো বিপদকে অতিক্রান্ত করে খাবার সংগ্রহ করতে থাকে। অনেক পাখি মাইলের পর মাইল ছুটে চলে খাবারের সন্ধানে। খাবার সন্ধানের এই যুদ্ধের পরে একে একে ছুটে আসতে শুরু করে নিরাপদ আশ্রয়ে।
স্থানীয় ফল ব্যবসায়ী মো. সজীব মিয়া বলেন, ‘গত ৫ বছর আগে হঠাৎ করেই একদিন কৃষ্ণচূড়া গাছে চড়ুই পাখিরা ভিড় করে। তারপর থেকে দৈনিক পাখির মেলা বসে। শুধু রাতের বেলায় থাকে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে কোথায় যেন চলে যায়। আবার কোথা থেকে আসে। ভোর হলে কোথায় চলে যায়, কেউ জানে না।
তিনি আরো বলেন, ‘যানবাহনের উচ্চ আওয়াজ মনের মধ্যে বিরক্তি নিয়ে আসে কিন্তু পাখিদের কিচিরমিচির বিরক্তি অনেকটা দূর করে দেয়। অনেকেই আসেন পাখিগুলো দেখতে, দেখে চলে যান। পাখিগুলোর খাবার ও নিরাপদ বাসস্থান নিয়ে কারো কোনো মাথা ব্যথা নেই। এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয় না। যদি কেউ খাবারের দায়িত্ব নিতো তাহলে অনেক ভালো হতো।’
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী জামান বলেন, ‘চড়ুই পাখির এই মিলনমেলা সত্যি আমার কাছে দারুণ লেগেছে। পাখিগুলোর কিচিরমিচির ও নেচে বেড়ানো আমাকে সত্যিই মুগ্ধ করেছে। এই অপরূপ দৃশ্য পরিবারকে দেখানোর জন্য ভিডিও করে নিয়েছি। ছোট বোন পাখি অনেক পছন্দ করে। সে এই দৃশ্য দেখে অনেক আনন্দিত হবে।’
আরেক দর্শনার্থী রবিউল বলেন, ‘কৃষ্ণচূড়া গাছে বসে থাকা হাজার হাজার চড়ুই পাখির এই মিলনমেলা আমার মনে দাগ কেটেছে। সত্যি পাখিগুলো দেখে মুগ্ধ হয়েছি। পাখিগুলোর কিচিরমিচির শব্দ শুনতে সত্যি অনেক ভালো লাগে। দিনটি আমার জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। সচরাচর এরকম পাখির মেলা খুব একটা দেখা যায় না।’
উল্লেখ্য যে, বিপন্ন চড়ুইদের রক্ষায় এবং যথাযথ পরিবেশ ফিরিয়ে দিতেই বিশ্ব চড়ুই দিবসের শুরু হয় ২০১০ সাল থেকে। একই সালে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে প্রথম চড়ুই দিবস পালন করতে দেখা যায়। চড়ুই পাখি সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে ও এদের বিলুপ্তি রুখতে যৌথ উদ্যোগ নেয় হয় এই দিবসে । এ পর্যন্ত ৪০টির বেশি দেশ বিশ্ব চড়ুই দিবস পালনে এবং চড়ুই রক্ষায় এগিয়ে এসেছে।
জনপ্রিয় সংবাদ

সানজিদা তন্বীর বিয়ের খবর জানালেন ফেসবুকে নিজের হৃদয়গ্রাহী পোস্টে

রংপুরের মর্ডান মোড়ে চোখ জুড়ানো চড়ুই পাখির মেলা

আপডেট সময় : ০১:১৯:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৩
সিদ্দিকুর রহমান,বেরোবি প্রতিনিধি 
দলবেঁধে বসে আছে হাজার হাজার চড়ুই পাখি। দেখলেই যেন মনে হয় গাছের ডালে বসেছে চড়ুই পাখির মেলা। গাছের প্রতিটি শাখা-প্রশাখা ভরে ওঠে চড়ুই পাখির কিচিরমিচির শব্দে। আমাদের গ্রাম-বাংলার ঘর-বাড়ি ও শহুরে ইমারতে অতি সহজেই দেখা যায় চড়ুই পাখির।
রংপুরের মডার্ন মোড় সংলগ্ন চাঁদ পেট্রোলিয়ামের যাত্রী ছাউনির কাছে বেশ পুরোনো একটি কৃষ্ণচূড়া গাছে প্রায় ৫-৬ হাজার চড়ুই পাখির বসবাস। প্রতিদিন গোধূলিলগ্নে সারাদিনের আহার শেষে কিচিরমিচির শব্দে চড়ুই পাখিগুলো এক ডাল থেকে অন্য ডালে উড়ে বসে। যেন তাদের আনন্দের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। মনে হয় যেন তারা সুখ-দুঃখের গল্প করছে একে অপরের সঙ্গে।
এমন দৃশ্য দেখে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকেন সবাই। কেউ কেউ ক্যামেরা কিংবা অন্য মাধ্যমে ফ্রেমবন্দি করে রাখতে দেরি করেন না। চড়ুই পাখির এই মিলনমেলা দেখে তারা আবেগ-অনুভূতি প্রকাশ করে থাকেন।
প্রতিদিন যখন পূর্ব আকাশে সূর্য ওঠে, দিনের আলো ফোটে ঠিক তখনই চড়ুই পাখিগুলো কিচিরমিচির শব্দে গান করতে করতে খাবার সন্ধানে ছুটতে থাকে। সারাদিন বিভিন্ন জায়গায় উড়ে উড়ে হাজারো বিপদকে অতিক্রান্ত করে খাবার সংগ্রহ করতে থাকে। অনেক পাখি মাইলের পর মাইল ছুটে চলে খাবারের সন্ধানে। খাবার সন্ধানের এই যুদ্ধের পরে একে একে ছুটে আসতে শুরু করে নিরাপদ আশ্রয়ে।
স্থানীয় ফল ব্যবসায়ী মো. সজীব মিয়া বলেন, ‘গত ৫ বছর আগে হঠাৎ করেই একদিন কৃষ্ণচূড়া গাছে চড়ুই পাখিরা ভিড় করে। তারপর থেকে দৈনিক পাখির মেলা বসে। শুধু রাতের বেলায় থাকে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে কোথায় যেন চলে যায়। আবার কোথা থেকে আসে। ভোর হলে কোথায় চলে যায়, কেউ জানে না।
তিনি আরো বলেন, ‘যানবাহনের উচ্চ আওয়াজ মনের মধ্যে বিরক্তি নিয়ে আসে কিন্তু পাখিদের কিচিরমিচির বিরক্তি অনেকটা দূর করে দেয়। অনেকেই আসেন পাখিগুলো দেখতে, দেখে চলে যান। পাখিগুলোর খাবার ও নিরাপদ বাসস্থান নিয়ে কারো কোনো মাথা ব্যথা নেই। এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয় না। যদি কেউ খাবারের দায়িত্ব নিতো তাহলে অনেক ভালো হতো।’
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী জামান বলেন, ‘চড়ুই পাখির এই মিলনমেলা সত্যি আমার কাছে দারুণ লেগেছে। পাখিগুলোর কিচিরমিচির ও নেচে বেড়ানো আমাকে সত্যিই মুগ্ধ করেছে। এই অপরূপ দৃশ্য পরিবারকে দেখানোর জন্য ভিডিও করে নিয়েছি। ছোট বোন পাখি অনেক পছন্দ করে। সে এই দৃশ্য দেখে অনেক আনন্দিত হবে।’
আরেক দর্শনার্থী রবিউল বলেন, ‘কৃষ্ণচূড়া গাছে বসে থাকা হাজার হাজার চড়ুই পাখির এই মিলনমেলা আমার মনে দাগ কেটেছে। সত্যি পাখিগুলো দেখে মুগ্ধ হয়েছি। পাখিগুলোর কিচিরমিচির শব্দ শুনতে সত্যি অনেক ভালো লাগে। দিনটি আমার জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। সচরাচর এরকম পাখির মেলা খুব একটা দেখা যায় না।’
উল্লেখ্য যে, বিপন্ন চড়ুইদের রক্ষায় এবং যথাযথ পরিবেশ ফিরিয়ে দিতেই বিশ্ব চড়ুই দিবসের শুরু হয় ২০১০ সাল থেকে। একই সালে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে প্রথম চড়ুই দিবস পালন করতে দেখা যায়। চড়ুই পাখি সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে ও এদের বিলুপ্তি রুখতে যৌথ উদ্যোগ নেয় হয় এই দিবসে । এ পর্যন্ত ৪০টির বেশি দেশ বিশ্ব চড়ুই দিবস পালনে এবং চড়ুই রক্ষায় এগিয়ে এসেছে।