১২:২৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কুড়িগ্রামে এলজিইডি কর্তৃপক্ষের অবহেলায় দিনমজুরের মৃত্যু, জীবনের মূল্য ৩ লাখ টাকা

কুড়িগ্রামের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কার্যালয়ের অবহেলার কারণে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন এক দিনমজুর শাহাবুদ্দিন ওরফে রহিম বকশ (৭০)। ভুয়া পরিচয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং মৃত্যুর পরে ঘটনাটি ধামাচাপা দিয়ে দরকষাকষির মাধ্যমে তার জীবনের মূল্য মাত্র তিন লাখ টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে। নিহত শাহাবুদ্দিন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন, ফলে তার মৃত্যুতে পরিবার সম্পূর্ণ নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।

সূত্র জানায়, সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী হাসান আলী ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সালে অফিস বন্ধ থাকার সময় এলজিইডি কার্যালয়ের গাছের ডাল কাটার জন্য শাহাবুদ্দিন ও যুবরাজ নামের দুই দিনমজুরকে কাজে নিয়োগ দেন। ৩৩ হাজার ভোল্টের বৈদ্যুতিক লাইনের পাশে কাজ করানো হলেও পল্লী বিদ্যুৎ অফিসকে অবহিত করা হয়নি। দুপুর আড়াইটার দিকে শাহাবুদ্দিন বৈদ্যুতিক লাইনের সংস্পর্শে আসলে গুরুতর আহত হন। ঘটনার খবর পেয়ে অফিসের স্টাফরা বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে তাকে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে পাঠায়।

হাসপাতালের ভর্তি রেজিস্টারে নিহতের নাম পরিবর্তন করে ‘সাজু মিয়া’ লেখা হয় এবং মৃত্যু ‘বিদ্যুৎস্পৃষ্ট’ উল্লেখ বাদ দিয়ে দ্রুত লাশ তার বাড়িতে পাঠানো হয়। স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা ও এলজিইডি কর্মকর্তাদের সমঝোতায় কুলখানি হিসেবে ১০ হাজার টাকা এবং ব্যাংকে ৩ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে।

নিহতের স্ত্রী ও ছোট ভাই অভিযোগ করেছেন, মৃত্যুর পরও পরিবারের জন্য প্রতিশ্রুতির কাজ বা সহযোগিতা বাস্তবায়িত হয়নি। পরিবারের বড় মেয়ে প্রতিবন্ধী, স্ত্রী অসুস্থ, ফলে সংসারের চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকুর রহমান জানান, গাছ কাটার আগে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করা জরুরি ছিল। এলজিইডি কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে দুর্ঘটনা ঘটে এবং পরবর্তীতে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।

এলজিইডির সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী হাসান আলী ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। ততকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুজ্জমান বিষয়টি সমাধান হওয়া দাবি করেন এবং পরিবারকে ভবিষ্যতে কিছু সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দেন।

স্থানীয়রা বলছেন, নিহত দিনমজুরের মৃত্যুতে পরিবারের কর্মক্ষম লোক না থাকায় তারা এখন অচল হয়ে পড়েছে। এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন যাতে ভবিষ্যতে এমন দুঃখজনক ঘটনা না ঘটে।

এমআর/সবা

জনপ্রিয় সংবাদ

সব রেকর্ড ভেঙে স্বর্ণের দামে নতুন ইতিহাস, ভরি ছাড়াল দুই লাখ ২৭ হাজার

কুড়িগ্রামে এলজিইডি কর্তৃপক্ষের অবহেলায় দিনমজুরের মৃত্যু, জীবনের মূল্য ৩ লাখ টাকা

আপডেট সময় : ০৭:১৪:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫

কুড়িগ্রামের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কার্যালয়ের অবহেলার কারণে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন এক দিনমজুর শাহাবুদ্দিন ওরফে রহিম বকশ (৭০)। ভুয়া পরিচয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং মৃত্যুর পরে ঘটনাটি ধামাচাপা দিয়ে দরকষাকষির মাধ্যমে তার জীবনের মূল্য মাত্র তিন লাখ টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে। নিহত শাহাবুদ্দিন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন, ফলে তার মৃত্যুতে পরিবার সম্পূর্ণ নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।

সূত্র জানায়, সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী হাসান আলী ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সালে অফিস বন্ধ থাকার সময় এলজিইডি কার্যালয়ের গাছের ডাল কাটার জন্য শাহাবুদ্দিন ও যুবরাজ নামের দুই দিনমজুরকে কাজে নিয়োগ দেন। ৩৩ হাজার ভোল্টের বৈদ্যুতিক লাইনের পাশে কাজ করানো হলেও পল্লী বিদ্যুৎ অফিসকে অবহিত করা হয়নি। দুপুর আড়াইটার দিকে শাহাবুদ্দিন বৈদ্যুতিক লাইনের সংস্পর্শে আসলে গুরুতর আহত হন। ঘটনার খবর পেয়ে অফিসের স্টাফরা বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে তাকে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে পাঠায়।

হাসপাতালের ভর্তি রেজিস্টারে নিহতের নাম পরিবর্তন করে ‘সাজু মিয়া’ লেখা হয় এবং মৃত্যু ‘বিদ্যুৎস্পৃষ্ট’ উল্লেখ বাদ দিয়ে দ্রুত লাশ তার বাড়িতে পাঠানো হয়। স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা ও এলজিইডি কর্মকর্তাদের সমঝোতায় কুলখানি হিসেবে ১০ হাজার টাকা এবং ব্যাংকে ৩ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে।

নিহতের স্ত্রী ও ছোট ভাই অভিযোগ করেছেন, মৃত্যুর পরও পরিবারের জন্য প্রতিশ্রুতির কাজ বা সহযোগিতা বাস্তবায়িত হয়নি। পরিবারের বড় মেয়ে প্রতিবন্ধী, স্ত্রী অসুস্থ, ফলে সংসারের চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকুর রহমান জানান, গাছ কাটার আগে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করা জরুরি ছিল। এলজিইডি কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে দুর্ঘটনা ঘটে এবং পরবর্তীতে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।

এলজিইডির সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী হাসান আলী ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। ততকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুজ্জমান বিষয়টি সমাধান হওয়া দাবি করেন এবং পরিবারকে ভবিষ্যতে কিছু সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দেন।

স্থানীয়রা বলছেন, নিহত দিনমজুরের মৃত্যুতে পরিবারের কর্মক্ষম লোক না থাকায় তারা এখন অচল হয়ে পড়েছে। এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন যাতে ভবিষ্যতে এমন দুঃখজনক ঘটনা না ঘটে।

এমআর/সবা