জামালপুরে একই রোগীর দুই ধরনের মেডিকেল রিপোর্ট দিয়েছে চিকিৎসকেরা। এতে বিপাকে পড়েছেন ভুক্তভোগীরা। আর এই ঘটনায় জেলা সিভিল সার্জনসহ স্বাস্থ্য বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগীর পরিবার। জেলার সিভিল সার্জন বলছেন, বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন তারা।
ভুক্তভোগীরা হলেন, জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার দুরমুট ইউনিয়নের সরুলিয়া গ্রামের মৃত নুর মোহাম্মদের স্ত্রী নাজমা বেগম ও কন্যা এডভোকেট নাসরিন সুলতানা। আর স্বাস্থ্য বিভাগে অভিযোগ করেছেন নাজমা বেগমের বড় ছেলে মো. নাজমুল হুদা শাকিল।
লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেড়ে চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি প্রতিবেশীদের হামলার শিকার হয়ে গুরুত্বর আহত হয় নাজমা বেগম ও নাসরিন সুলতানা। এতে নাজমা বেগমের সারা শরীরে মারাত্মক জখম হয় এবং নাসরিন সুলতানার মাথায় দুইটি আঘাত, ডান হাতের তিন জায়গা ও বাম হাতের এক জায়গায় ভেঙ্গে যায়। চিকিৎসা নিতে মেলান্দহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে সেখানে চিকিৎসা না দিয়ে দুইজনকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করে কর্তব্যরত চিকিৎসক। পরে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে পাঁচ দিন ও সাত দিন করে চিকিৎসা নেন তারা।

জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল এই দুই রোগীর মেডিকেল রিপোর্ট প্রদান করেন চলতি বছরের ০৯ ফেব্রুয়ারি এবং চলতি বছরের ৩ জুন মেডিকেল রিপোর্ট প্রদান করে মেলান্দহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, নাজমা বেগম ও নাসরিন সুলতানা’র এতো আঘাত থাকার পরেও মেলান্দহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. ফৌজিয়া আবিদা ইতু মেডিকেল প্রতিবেদনে আঘাতকে Simple Injury হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যেখানে জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার পর আঘাতগুলোকে “Grievous Hurt” Ges “By Sharp & Blunt Weapon” উল্লেখ করেছেন।
এবিষয়ে ভুক্তভোগী এডভোকেট নাসরিন সুলতানা বলেন, ‘ঘটনার এতোদিন পর মেলান্দহ হাসপাতাল আমাদের যে মেডিকেল রিপোর্ট দিয়েছে। তা বাস্তবতার সঙ্গে সম্পূর্ণ অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং সঠিক চিকিৎসার রিপোর্টের তথ্য গোপন করে আদালতকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে তৈরি। এমন প্রতিবেদনে আমরা বিপাকে আছি। প্রতিপক্ষ মেলান্দহ হাসপাতালের মেডিকেল রিপোর্ট আদালতে জমা দিয়েছে। সেটির কারনে আজ আমরা ন্যায় বিচার পাবো কিনা, সেই বিষয়ে সন্দেহে আছি। এই ঘটনায় আমরা দোষীদের বিচার চাই।’
অভিযোগের বিষয়ে মেলান্দহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. ফৌজিয়া আবিদা ইতু মোবাইল ফোনে জানান, ‘আমাদের প্রতিদিন এমন প্রতিবেদন দিতে হয়। রোগীরা প্রাথমিকভাবে যে তথ্য দেয় বা আমরা তাদের যে ক্ষত দেখতে পাই। সেটি দেখে প্রতিবেদন প্রদান করি। আর এসব বিষয়ে আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কথা বলবে। এই বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।’
মেলান্দহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা.
সাইফুন্নাহার সানি বলেন- ‘রোগী আসার পর তাদের চিকিৎসা দেয়া হয়। তারপর রোগীর অবস্থা দেখে আমরা জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করি। রোগীর প্রাথমিক আঘাত এবং চিহ্ন দেখা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার আগে আঘাতের ক্ষত অনুমান করা যায় না। প্রাথমিক অবস্থায় যে আঘাত উল্লেখ করা হয়েছিলো, সেই অনুযায়ি প্রতিবেদন দেয়া হয়েছিলো।’
জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মো. মাহফুজুর রহমান সোহান বলেন-‘আমার তিনজন চিকিৎসক এই মেডিকেল রিপোর্টটি দিয়েছে। ভুক্তভোগী এখানে চিকিৎসা নিয়েছে, ভর্তি ছিলো। চিকিৎসকেরা এক্সরে রিপোর্টসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও রোগীকে দেখে প্রতিবেদন দিয়েছে। এখানে আমাদের কোনো ভুল নেই।’
এসব বিষয়ে জামালপুরের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আজিজুল হক বলেন, ‘এমন ঘটনা সচরাচর ঘটে না। আমি বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।’





















