০১:০৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কক্সবাজারের ইসলামপুরে বৈধ ইজারাদাররা টোল আদায়ে চরম সমস্যায়

oplus_2

কক্সবাজারের একমাত্র শিল্পনগরী ইসলামপুরের বৈধ ইজারাদাররা গত সাত মাস ধরে টোল আদায় করতে পারছেন না। প্রশাসনিক সহযোগিতার অভাবে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দোসরদের লেলিয়ে দেওয়া কিছু বখাটে উশৃঙ্খল হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে ইজারাদাররা জানিয়েছেন, আগামী তিন দিনের মধ্যে শান্তিপূর্ণ উপায়ে বৈধ টোল আদায় না করতে পারলে, তারা ইউনিয়নের প্রতিবাদী জনগণকে সাথে নিয়ে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

১২ নভেম্বর বুধবার বিকেলে ঈদগাঁওয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ইজারাদাররা অভিযোগ করেন, নীরব চাঁদাবাজির ট্রান্সপোর্ট সিন্ডিকেটের আওয়ামী দোসররা তাদের লেলিয়ে দিয়ে টোল আদায়ে বাধা সৃষ্টি করছে। তারা জানান, গত ১লা মে ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক নির্ধারিত লবণ রপ্তানি শুল্কের ডাক পাওয়ার পর থেকে প্রায় ৭ মাস ধরে তারা বারবার আক্রমণাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন।

সংবাদ সম্মেলনে ইজারাদাররা সাতটি মূল কারণ তুলে ধরেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

৫ আগস্ট ২০২৪-এর পূর্বে নীরব চাঁদাবাজির ট্রান্সপোর্ট সিন্ডিকেট ছলে ডাক নিজেদের মধ্যে রাখা হতো।

৫ আগস্ট বিপ্লবের পরে, নামে মাত্র কিছু ইজারার টাকা দিয়ে ডাক নিতে না পারায় সিন্ডিকেট ক্ষুব্ধ হয়ে তা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে।

ইউএনওর নির্দেশ অনুযায়ী, লোডিং পয়েন্টে টোল আদায় করতে গেলে ট্রাকগুলো বেপরোয়া আচরণ করে চলে যাচ্ছে।

রপ্তানিকারকরা ট্রান্সপোর্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশে টোল পরিশোধ না করে গাড়ি নিয়ে চলে যাচ্ছে।

স্থানীয় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ভুলভাবে অভিযোগ তুলে মব সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে।

নির্দিষ্ট অফিস না থাকার কারণে ইজারাদাররা রাস্তা থেকে টোল আদায় করতে গিয়ে চাঁদাবাজি এবং দুষ্কৃতকারীদের হামলার মুখে পড়ছেন।

ট্রান্সপোর্ট সিন্ডিকেট সারাদেশে জামায়াতে ইসলামী চাঁদাবাজি করছে বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

ইজারাদাররা আরও অভিযোগ করেন, মিল মালিকরাও সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি। ফলে তারা গাড়ি ভাড়া, লেবার খরচ, ট্রান্সপোর্ট সমিতির চাঁদা আদায় করলেও, নির্ধারিত টোল পরিশোধে সহায়তা করছে না। বৈধভাবে টোল আদায়ের চেষ্টা করলেও প্রশাসনিক সহযোগিতা না পাওয়ায় লেলিয়ে দেওয়া বখাটেদের উশৃঙ্খল আচরণের কারণে ইজারাদাররা বারবার বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন।

সংবাদ সম্মেলনে ইজারাদারদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য দেন নুরুল আমিন। সেখানে উল্লেখ করা হয়, ইসলামপুর ইউনিয়ন একটি শান্তিপ্রিয় জনপদ, লবণ শিল্পে সমৃদ্ধ এবং দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। ইউনিয়নের লবণ মিলগুলোতে হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। বিগত ৩০ বছর ধরে ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা লবণ গুদি, চিংড়িঘের এবং রপ্তানি শুল্কের আওতাধীন আভ্যন্তরীণ রাস্তা থেকে টোল আদায়ের মাধ্যমে স্থানীয় সরকারের আয় বৃদ্ধি করার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।

তবে বর্তমানে স্থানীয় আওয়ামী দোসরদের লেলিয়ে দেওয়া বখাটেদের কারণে বৈধ ইজারাদাররা তাদের অধিকার পূর্ণভাবে কার্যকর করতে পারছেন না। উল্টো নিজেরা জানমালের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।

ইজারাদাররা প্রশাসনের কাছে হস্তক্ষেপের জন্য আবেদন জানান। তারা চেয়েছেন, নীরব চাঁদাবাজি ট্রান্সপোর্ট সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে তদন্ত পরিচালনা করা হোক এবং ইজারাদারদের জন্য একটি নির্দিষ্ট অফিসের ব্যবস্থা করে, নিরাপদ ও নিয়মিত টোল আদায়ের সুযোগ নিশ্চিত করা হোক।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নুরুন্নবী, রশিদুল ইসলাম ও মনির আহমদ প্রকাশ মনু। তারা ইজারাদারদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য তুলে, প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান, যাতে ইসলামপুরের লবণ শিল্পে বৈধ টোল আদায়ে কোনো বাধা না থাকে এবং শিল্পাঞ্চলের শান্তি বজায় থাকে।

এমআর/সবা

জনপ্রিয় সংবাদ

সব রেকর্ড ভেঙে স্বর্ণের দামে নতুন ইতিহাস, ভরি ছাড়াল দুই লাখ ২৭ হাজার

কক্সবাজারের ইসলামপুরে বৈধ ইজারাদাররা টোল আদায়ে চরম সমস্যায়

আপডেট সময় : ০৮:২৭:০৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫

কক্সবাজারের একমাত্র শিল্পনগরী ইসলামপুরের বৈধ ইজারাদাররা গত সাত মাস ধরে টোল আদায় করতে পারছেন না। প্রশাসনিক সহযোগিতার অভাবে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দোসরদের লেলিয়ে দেওয়া কিছু বখাটে উশৃঙ্খল হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে ইজারাদাররা জানিয়েছেন, আগামী তিন দিনের মধ্যে শান্তিপূর্ণ উপায়ে বৈধ টোল আদায় না করতে পারলে, তারা ইউনিয়নের প্রতিবাদী জনগণকে সাথে নিয়ে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

১২ নভেম্বর বুধবার বিকেলে ঈদগাঁওয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ইজারাদাররা অভিযোগ করেন, নীরব চাঁদাবাজির ট্রান্সপোর্ট সিন্ডিকেটের আওয়ামী দোসররা তাদের লেলিয়ে দিয়ে টোল আদায়ে বাধা সৃষ্টি করছে। তারা জানান, গত ১লা মে ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক নির্ধারিত লবণ রপ্তানি শুল্কের ডাক পাওয়ার পর থেকে প্রায় ৭ মাস ধরে তারা বারবার আক্রমণাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন।

সংবাদ সম্মেলনে ইজারাদাররা সাতটি মূল কারণ তুলে ধরেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

৫ আগস্ট ২০২৪-এর পূর্বে নীরব চাঁদাবাজির ট্রান্সপোর্ট সিন্ডিকেট ছলে ডাক নিজেদের মধ্যে রাখা হতো।

৫ আগস্ট বিপ্লবের পরে, নামে মাত্র কিছু ইজারার টাকা দিয়ে ডাক নিতে না পারায় সিন্ডিকেট ক্ষুব্ধ হয়ে তা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে।

ইউএনওর নির্দেশ অনুযায়ী, লোডিং পয়েন্টে টোল আদায় করতে গেলে ট্রাকগুলো বেপরোয়া আচরণ করে চলে যাচ্ছে।

রপ্তানিকারকরা ট্রান্সপোর্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশে টোল পরিশোধ না করে গাড়ি নিয়ে চলে যাচ্ছে।

স্থানীয় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ভুলভাবে অভিযোগ তুলে মব সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে।

নির্দিষ্ট অফিস না থাকার কারণে ইজারাদাররা রাস্তা থেকে টোল আদায় করতে গিয়ে চাঁদাবাজি এবং দুষ্কৃতকারীদের হামলার মুখে পড়ছেন।

ট্রান্সপোর্ট সিন্ডিকেট সারাদেশে জামায়াতে ইসলামী চাঁদাবাজি করছে বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

ইজারাদাররা আরও অভিযোগ করেন, মিল মালিকরাও সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি। ফলে তারা গাড়ি ভাড়া, লেবার খরচ, ট্রান্সপোর্ট সমিতির চাঁদা আদায় করলেও, নির্ধারিত টোল পরিশোধে সহায়তা করছে না। বৈধভাবে টোল আদায়ের চেষ্টা করলেও প্রশাসনিক সহযোগিতা না পাওয়ায় লেলিয়ে দেওয়া বখাটেদের উশৃঙ্খল আচরণের কারণে ইজারাদাররা বারবার বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন।

সংবাদ সম্মেলনে ইজারাদারদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য দেন নুরুল আমিন। সেখানে উল্লেখ করা হয়, ইসলামপুর ইউনিয়ন একটি শান্তিপ্রিয় জনপদ, লবণ শিল্পে সমৃদ্ধ এবং দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। ইউনিয়নের লবণ মিলগুলোতে হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। বিগত ৩০ বছর ধরে ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা লবণ গুদি, চিংড়িঘের এবং রপ্তানি শুল্কের আওতাধীন আভ্যন্তরীণ রাস্তা থেকে টোল আদায়ের মাধ্যমে স্থানীয় সরকারের আয় বৃদ্ধি করার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।

তবে বর্তমানে স্থানীয় আওয়ামী দোসরদের লেলিয়ে দেওয়া বখাটেদের কারণে বৈধ ইজারাদাররা তাদের অধিকার পূর্ণভাবে কার্যকর করতে পারছেন না। উল্টো নিজেরা জানমালের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।

ইজারাদাররা প্রশাসনের কাছে হস্তক্ষেপের জন্য আবেদন জানান। তারা চেয়েছেন, নীরব চাঁদাবাজি ট্রান্সপোর্ট সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে তদন্ত পরিচালনা করা হোক এবং ইজারাদারদের জন্য একটি নির্দিষ্ট অফিসের ব্যবস্থা করে, নিরাপদ ও নিয়মিত টোল আদায়ের সুযোগ নিশ্চিত করা হোক।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নুরুন্নবী, রশিদুল ইসলাম ও মনির আহমদ প্রকাশ মনু। তারা ইজারাদারদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য তুলে, প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান, যাতে ইসলামপুরের লবণ শিল্পে বৈধ টোল আদায়ে কোনো বাধা না থাকে এবং শিল্পাঞ্চলের শান্তি বজায় থাকে।

এমআর/সবা