আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতীয় পার্টির দীর্ঘদিনের প্রভাবশালী ঘাঁটি রংপুর-৪ (পীরগাছা–কাউনিয়া) আসনটিতে জমে উঠেছে নির্বাচনী উত্তাপ। জাতীয় পার্টি মাঠে না থাকলেও বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)—এই তিন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রচারণা ঘিরে নির্বাচনী এলাকায় সরব আলোচনা চলেছে।
রংপুর-৪ আসনটি ঐতিহ্যবাহী একটি আসন। স্বাধীনতার পর থেকে এখানে আওয়ামী লীগ জয় পেয়েছে ৬ বার, জাতীয় পার্টি ৪ বার এবং বিএনপি ১ বার। সেই একবারের বিজয়ী ছিলেন শিল্পপতি রহিম উদ্দিন ভরসা। এবার তার ছেলে এমদাদুল হক ভরসা বিএনপির হয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। কাউনিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও জেলা বিএনপির অন্যতম নেতা ভরসা বাবার জনসেবা ও সামাজিক কর্মকাণ্ডকে সামনে রেখে মানুষের সমর্থন প্রত্যাশা করছেন। তিনি বলেন, “বাবা-চাচার অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে চাই। জনগণ সুযোগ দিলে রংপুরকে এগিয়ে নেওয়াই হবে আমার প্রথম দায়িত্ব।”

জামায়াতে ইসলামী ইতোমধ্যেই এ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য মাওলানা এটিএম আজম খানকে। তিনি জানান, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, চরাঞ্চলের মানুষের নিরাপত্তা ও স্থায়ী কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বাস্তবমুখী শিক্ষা নিশ্চিত করা হবে তার প্রধান অঙ্গীকার। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর জামায়াত আবারো মাঠে সরব, এবং সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছে বলে দাবি তার।
এদিকে তরুণদের আলোচিত নাম এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেনও আছেন প্রচারণার কেন্দ্রবিন্দুতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা ও জুলাই আন্দোলনের অন্যতম মুখ আখতার জানান, উত্তরাঞ্চলের বৈষম্য দূর করা, প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের সমস্যা তুলে ধরা এবং নতুন প্রজন্মের রাজনীতিতে স্বচ্ছতা আনার লক্ষ্যেই তিনি নির্বাচনে লড়ছেন। তার বক্তব্য, “মানুষ পুরোনো রাজনীতির ক্লান্তিতে পরিবর্তন চায়। তরুণ নেতৃত্বই পারে রাজনীতিকে নতুন পথে নিতে।”
এ আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী মাওলানা জাহিদ হোসেনও নিজস্ব তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। শিক্ষার উন্নয়ন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও ধর্মীয় মূল্যবোধভিত্তিক সামাজিক স্থিতি নিশ্চিতকেই তিনি গুরুত্ব দিচ্ছেন।
রংপুর জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্য অনুযায়ী, রংপুর-৪ আসনে এবার ভোটার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ২৬ হাজার ২৪০ জন, যা গত নির্বাচনের তুলনায় ৪৭ হাজারের বেশি। ফলে নতুন ভোটারের অংশগ্রহণ নির্বাচনী ফলাফলে বড় ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এখনো জাতীয় পার্টি প্রচারণায় খুব একটা সরব না হলেও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে পীরগাছার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহ আবু নাসের মাহবুবের নাম আলোচনায় রয়েছে।
বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির সক্রিয় মাঠপর্যায়ের প্রচারণায় রংপুর-৪ আসনে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস স্পষ্টই। এখন শুধু অপেক্ষা—নির্বাচনের দিন ভোটাররা কাকে বেছে নেন।
এমআর/সবা





















