০৭:২৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাঁয়ের পথে আঁখের রস বিক্রি করে সংসার চলে মজনু মিয়ার

  • সবুজ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৪:৩৬:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৩
  • 88

সোহাগ রহমান, ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি 

গাঁয়ের পথে পথে আঁখের রস বিক্রি করে সংসার চালিয়ে আসছেন মজনু মিয়া (৪৫) নামের এক হতদরিদ্র ব্যক্তি। মজনু মিয়ার বাড়ি ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার ডাকাতিয়া ইউনিয়নের পাঁচগাঁও গ্রামে। তার পিতার নাম চাঁন মিয়া। পড়ালেখার দৌড় ওই প্রাইমারি পর্যন্ত। উঠতি বয়সেই বিয়ে করিয়ে দেয় তাকে। তখন সংসারেও ছিল তার দারুন অভাব। কৃষি কাজে তেমন উপার্জন হতোনা। তাছাড়া তৎকালে গ্রামে তেমন রাস্তাঘাটের উন্নতি না হওয়ায় কৃষিপণ্য বাজারে বিক্রি করতেও কষ্ট হতো তাদের। এক সময় জীবিকার সন্ধানে দিশেহারা হয়ে পড়েন মজনু মিয়া। এক পর্যায়ে শহরে গিয়ে কিছু করার চিন্তাও করেন তিনি। শহরে আঁখ মাড়াই কল দেখে মনে মনে ইচ্ছে পোষণ করেন নিজেও কল দিয়ে রস বিক্রি করবেন। সেই থেকে কল দিয়ে আঁখের রস বিক্রি শুরু। স্থানীয় ভাষায় আঁখ মাড়াই কলকে তারা বলে ‘কেরহি’। ভালুকার মাস্টারবাড়ি, ত্রিশালের কাশিগঞ্জ এলাকায় বহুদিন রস বিক্রি করেছেন তিনি। গত পাঁচ বছর ধরে নিজ এলাকা পাঁচগাঁও, কাতলামারী ও চামিয়াদী গ্রামে আঁখের রস বিক্রি করছেন। আঁখ নিজ এলাকা থেকেই তিনি সংগ্রহ করে থাকেন। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দামে আঁখের ক্ষেত ও আখ ক্রয় করেন। সেটি
আবার ক্ষেত থেকে কেটে ভ্যানগাড়িতে উঠিয়ে কেরহি দিয়ে রস করে বিক্রি করেন। প্রতিদিন ৪ থেকে ৫শ টাকা এখান থেকে উপার্জন করতে পারেন তিনি।
তার সংসারে বাবা-মা, স্ত্রী ও তিন ছেলে রয়েছে। বড় দুই ছেলে ৭ম ও ৮ম শ্রেণিতে পড়ছে।

রস বিক্রিতা মজনু মিয়া বলেন, ১৫ বছর ধরে তিনি আখের রস বিক্রি করছি। ফাগুন থেকে বৈশাখ পর্যন্ত রসের ব্যবসা থাকে জমজমাট। পরে ধান কাটার সময়
হলে ধান মাড়াই ও সবজি চাষ করি। তিনি দুঃখ করে বলেন, আগে আঁখের রস বিক্রি করে সংসার চালানো যেতো। বর্তমানে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় খুব কষ্ট হচ্ছে। ছেলেদের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে পারিনা। পরিবারের লোকজনদের নিয়ে মানবেতর জীবন ধারণ করছি।
তিনি আরও বলেন, আঁখের রসে জীবনটা বাধা পড়ে গেছে। পড়াশুনা করতে পারিনি। তাই চাকরিও জোটেনি। আমার মতো যারা পড়ালেখা করতে পারেনি
তারাও এ পেশায় আত্মনিয়োগ করতে পারেন। কাজে কোনো লজ্জা নেই। এতে বরং বেকারত্ব গুচাবে। কিছু করতে পারলে পরিবার, সমাজ ও দেশ এগিয়ে যাবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

সব রেকর্ড ভেঙে স্বর্ণের দামে নতুন ইতিহাস, ভরি ছাড়াল দুই লাখ ২৭ হাজার

গাঁয়ের পথে আঁখের রস বিক্রি করে সংসার চলে মজনু মিয়ার

আপডেট সময় : ০৪:৩৬:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৩

সোহাগ রহমান, ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি 

গাঁয়ের পথে পথে আঁখের রস বিক্রি করে সংসার চালিয়ে আসছেন মজনু মিয়া (৪৫) নামের এক হতদরিদ্র ব্যক্তি। মজনু মিয়ার বাড়ি ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার ডাকাতিয়া ইউনিয়নের পাঁচগাঁও গ্রামে। তার পিতার নাম চাঁন মিয়া। পড়ালেখার দৌড় ওই প্রাইমারি পর্যন্ত। উঠতি বয়সেই বিয়ে করিয়ে দেয় তাকে। তখন সংসারেও ছিল তার দারুন অভাব। কৃষি কাজে তেমন উপার্জন হতোনা। তাছাড়া তৎকালে গ্রামে তেমন রাস্তাঘাটের উন্নতি না হওয়ায় কৃষিপণ্য বাজারে বিক্রি করতেও কষ্ট হতো তাদের। এক সময় জীবিকার সন্ধানে দিশেহারা হয়ে পড়েন মজনু মিয়া। এক পর্যায়ে শহরে গিয়ে কিছু করার চিন্তাও করেন তিনি। শহরে আঁখ মাড়াই কল দেখে মনে মনে ইচ্ছে পোষণ করেন নিজেও কল দিয়ে রস বিক্রি করবেন। সেই থেকে কল দিয়ে আঁখের রস বিক্রি শুরু। স্থানীয় ভাষায় আঁখ মাড়াই কলকে তারা বলে ‘কেরহি’। ভালুকার মাস্টারবাড়ি, ত্রিশালের কাশিগঞ্জ এলাকায় বহুদিন রস বিক্রি করেছেন তিনি। গত পাঁচ বছর ধরে নিজ এলাকা পাঁচগাঁও, কাতলামারী ও চামিয়াদী গ্রামে আঁখের রস বিক্রি করছেন। আঁখ নিজ এলাকা থেকেই তিনি সংগ্রহ করে থাকেন। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দামে আঁখের ক্ষেত ও আখ ক্রয় করেন। সেটি
আবার ক্ষেত থেকে কেটে ভ্যানগাড়িতে উঠিয়ে কেরহি দিয়ে রস করে বিক্রি করেন। প্রতিদিন ৪ থেকে ৫শ টাকা এখান থেকে উপার্জন করতে পারেন তিনি।
তার সংসারে বাবা-মা, স্ত্রী ও তিন ছেলে রয়েছে। বড় দুই ছেলে ৭ম ও ৮ম শ্রেণিতে পড়ছে।

রস বিক্রিতা মজনু মিয়া বলেন, ১৫ বছর ধরে তিনি আখের রস বিক্রি করছি। ফাগুন থেকে বৈশাখ পর্যন্ত রসের ব্যবসা থাকে জমজমাট। পরে ধান কাটার সময়
হলে ধান মাড়াই ও সবজি চাষ করি। তিনি দুঃখ করে বলেন, আগে আঁখের রস বিক্রি করে সংসার চালানো যেতো। বর্তমানে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় খুব কষ্ট হচ্ছে। ছেলেদের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে পারিনা। পরিবারের লোকজনদের নিয়ে মানবেতর জীবন ধারণ করছি।
তিনি আরও বলেন, আঁখের রসে জীবনটা বাধা পড়ে গেছে। পড়াশুনা করতে পারিনি। তাই চাকরিও জোটেনি। আমার মতো যারা পড়ালেখা করতে পারেনি
তারাও এ পেশায় আত্মনিয়োগ করতে পারেন। কাজে কোনো লজ্জা নেই। এতে বরং বেকারত্ব গুচাবে। কিছু করতে পারলে পরিবার, সমাজ ও দেশ এগিয়ে যাবে।