ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সমার্বতন : বাবার মরণোত্তর ডক্টর অব ল’জ গ্রহণ করলেন কন্যা
রুবাইয়া আক্তার
চিরচায়িত সমাবর্তন নয়, হয়েছে বিশেষ সমাবর্তন। সাধারণত বিশে^র সব বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করার পর দেওয়া হয় বিদায়ি সংবর্ধনা এবং সার্টিফিকেট। সবাই শিক্ষাজীবনের শেষ মুহূতে মিলিত হয়ে বিদায় উৎযাপন করে বলে একে সমাবর্তন বলা হয়, তবে কখনো কখনো বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে সাধারণ নিয়মনীতির বাইরে গিয়ে আয়োজন করা হয় বিশেষ সমার্বতন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রচলিত আছে এমন বিশেষ সমার্বতনের। যেমনÑভারতের কেআইইটি, জাম্মু বিশ^বিদ্যালয়, ইস্ট লন্ডন বিশ^বিদ্যালয়সহ অনেক বিশ^বিদ্যালয় আয়োজন করেছে বিশেষ সমার্বতনের। সর্বশেষ বাংলাদেশের প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হলো এই বিশেষ সমাবর্তন। গেল ২৯ অক্টোবর ২০২৩, রবিবার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ডক্টর অব ল’জ ( মরণোত্তর) ডিগ্রি প্রদানের উদ্দেশ্যে ঢাকা বিম্ববিদ্যালয় আয়োজন করে এই বিশেষ সমাবর্তনের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে ভূমিকা রেখেছে প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পড়াশোনা সম্পন্ন করেছেন বহু প্রথিতযশা ব্যক্তি। কিন্তু পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি বাংলাদেশের পতাকা স¦াধীনভাবে উড্ডয়নের স্বাধীনতা আদায়ের কান্ডারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। কলকাতার ইসলামিয়া কলেজের পাঠ চুকিয়ে ১৯৪৭ সালে তিনি ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে, ছিলেন সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের আবাসিক ছাত্র। তখন থেকেই ভাষাসংগ্রামসহ বিভিন্ন অরাজকতা চলছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সংগ্রামী মুজিব হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারেননি এ অবস্থায়। চতুর্থ শ্রেণির কর্মকর্তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ে রাস্তায় নামেন তিনি, সোচ্চার হন অন্যায়ের বিরুদ্ধে কিন্তু দাম দিতে হয় তাকে। ১৯৪৮ সালে তৎকালীন ভিসি ড. মোয়াজ্জেম হোসেনের বাসভবনের সামনে ধর্মঘট করার সময় গ্রেপ্তার হন পুলিশের হাতে। ১৫ টাকা জরিমানা ও মুচলেকা দিয়ে মুক্তি পাওয়ার সুযোগ থাকলেও অনড় থাকেন তার সিদ্ধান্তে। অবশেষে ১৯৪৯ সালের ২৬ মার্চ বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের সভার সিন্ধান্ত অনুযায়ী বহিষ্কার করা হয়। শেষ করতে পারেননি আইন বিভাগ থেকে তার কাক্সিক্ষত স্নাতক।
এরপর দেশ স্বাধীন হওয়ার ৪০ বছর পর ২০১০ সালে তৎকালীন ভিসি আ ফ ম আরেফিন সিদ্দিকির প্রচেষ্টায় ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে সিন্ধান্ত হয় বঙ্গবন্ধুর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের। সে বছরের ১৪ আগস্ট সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয় বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, পুনরায় পেলেন ঢাবির ছাত্রত্ব।
এবার ঢাকা বিশ্ববদ্যালয়ের উদ্যোগ নেয় জাতির জনককে তার প্রাপ্য ডিগ্রি প্রদানের। ৫৩তম সাধারণ সমাবর্তনের পর ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১০০ বছর পর বিশেষ সমাবর্তন আয়োজনের মাধ্যমে এই উদ্যোগ নেয় প্রতিষ্ঠানটি। ওই সমাবতর্নে প্রধান সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ তনয়া বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পিতার পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আক্তারুজ্জামানের কাছ থেকে ডক্টর অব ল’জ ডিগ্রি গ্রহণ করেন তিনি। এ ছাড়া এই সমাবর্তনে উপস্থিত ছিলেন ১২ হাজার সাধারণ শির্ক্ষাথীসহ প্রায় ১৮ হাজার ব্যক্তি।
বিশেষ এই সমাবর্তনে সাধারণ সমাবর্তনের মতো বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েটদের ডিগ্রি ও সম্মাননা বা গাউন, ক্যাপ দেওয়া হয়নি। আগত অতিথিদের দেওয়া হয়েছে শুভেচ্ছা ক্রেস্ট ও কোট পিন।


























