ফিরোজ আহম্মেদ, রাজবাড়ী
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার পদ্মা চরাঞ্চলের কৃষি সমৃদ্ধ এলাকার কৃষকরা নানা জাতের শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রতিবছর এই উপজেলার দৌলতদিয়া, দেবগ্রাম, উজানচর ও ছোটভাকলা ইউনিয়নের কৃষকরা অগ্রিম সবজি চাষ করে বছরের অন্যান্য সময়ের ঘাটতি পুষিয়ে নেন। এই উপজেলায় এ বছরে ১ হাজার ৮০০ হেক্টর সবজি আবাদি জমিতে নানা জাতের কপি, টমেটো, আলু, বেগুন, পটল, উচ্ছে, করলা,গাজর, মুলা, সীম, ঢেঁরস, নানা ধরনের শাক, বরবটি, পিঁয়াজ, রসুন, মরিচসহ নানাবিধ শাক-সবজি চাষাবাদ করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এইসব আগাম জাতের শাকসবজি চাষাবাদ করে বেশি দামে বিক্রি করে লাভবান হওয়ার আশাবাদী কৃষকদের। মুখে আনন্দের হাসি ফুটবে তাদের।
গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের তথ্যমতে, উপজেলায় চারটি ইউনিয়নের প্রায় সব অঞ্চলে সারা বছরই কমবেশি শাকসবজি আবাদ হয়ে থাকে। তবে প্রতিবছর শীত মৌসুমে শীতকালীন সবজি চাষ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়। কৃষকরা গতানুগতিক ভাবে নানা জাতের কপি, বেগুন ও মসলা জাতীয় পিঁয়াজ রসুন ও অন্যান্য ফসল আবাদ করে থাকেন। তবে এ বছর উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের তৎপরতায় উপজেলার পদ্মা পাড়ের কৃষকরা আধুনিক পদ্ধতিতে নানা জাতের উচ্চ ফলনশীল শাকসবজি আবাদ করায় বেশী লাভবান হওয়ার আশা তাদের।

বুধবার (২২ নভেম্বর) উপজেলার দৌলতদিয়া উজানচর, দেবগ্রাম ও ছোটভাকলা ইউনিয়নের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে কৃষকদের বেগুন, আলু, মরিচ, পিঁয়াজ রসুন লালশাক, ডাটাশাক, পালং শাক, পুঁই শাক, বিভিন্ন জাতের কচুসহ নানা জাতের সবজির পরিচর্যা ও জমি প্রস্তুতের কাজ করতে দেখা যায়।
সরেজমিন দৌলতদিয়া ইউনিয়নের চরাঞ্চল ছাত্তার মেম্বর পাড়া ঘুরে দেখা যায়, কৃষক শাজাহান শেখ,জামাল শেখ, আদু শেখসহ অসংখ্য কৃষক টমেটো ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যাস্ত সময় পার করছেন।
কৃষক জামাল শেখকে তার ক্ষেতে লোকজন নিয়ে উচ্চ ফলনশীল বারি জাতের উচ্ছে তুলতে দেখা যায়। তিনি জানান প্রতি বিঘায় সপ্তাহে ৭-৮ মন উচ্ছে তোলা হয়। প্রতি কেজি উচ্ছে ৬০-৭০ টাকা কেজি দরে ক্ষেত থেকেই ব্যাপারীরা কিনে নিয়ে যায়।
দেবগ্রাম ইউনিয়নের কৃষক মসিয়ার রহমান বলেন, তিনি ২ বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করেছেন। রোপণের ৬০ দিন পরে ফুলকপি বাজারে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। চলতি মৌসুমে তিনি বিঘা প্রতি দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার ফুলকপি বিক্রি করবেন বলে তিনি জানান।
অপর এক কৃষক মতিয়ার শেখ বলেন, আমি চার বিঘা জমিতে আগাম ফুলকপি চাষ করেছি। জমি প্রস্তুত, বীজ রোপণ, সেচ, আগাছা নিধন, জৈব সার প্রয়োগ, ফসল উঠানো ও বিক্রি করতে নেওয়াসহ সব মিলিয়ে ৫০ হাজার টাকার মত খরচ হয়েছে। এই পর্যন্ত আমি দেড় লাখ টাকার ফুলকপি বিক্রি করেছে বলে তিনি জানান।
ছোটভাকলা ইউনিয়নের চর বালিয়াকান্দী গ্রামের কৃষক সুদেব বিশ্বাসকে মাচান পদ্ধতিতে চাষ করা পটল ক্ষেত পরিচর্যা করতে দেখা যায়। এ সময় তিনি জানান, তিনি ২৫ শতক জমিতে পটল চাষ করেছেন। একদিন পর পর তিনি এক থেকে দেড় মন পটল তোলেন। ৫০-৬০ টাকা কেজি পাইকারী দরে তিনি বিক্রি করেন।
গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো মাহফুজুর রহমান বলেন, আমরা শীতকালীন সবজি চাষে কৃষকদের নিয়মিত নানাবিধ প্রশিক্ষণ ও সুপরামর্শ দিয়ে আসছি। অন্যান্য সময়ের চেয়ে আগাম সবজি চাষাবাদে ভালো ফলন ও দাম পেয়ে কৃষকেরা অধিক লাভবান হচ্ছে। ভবিষ্যতে আগাম জাতের শীতকালীন সবজির চাষাবাদ বাড়বে।
গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ খোকন উজ্জামান জানান, রাজবাড়ী জেলার মধ্যে গোয়ালন্দ উপজেলা একটি কৃষি সমৃদ্ধ অঞ্চল। এই উপজেলায় নিরাপদ ও বিষমুক্ত ফসল, শাক সবজি চাষাবাদে কৃষকদের সব সময় পরামর্শ ও দিক নির্দেশনাসহ বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ করা হচ্ছে। উপ সহকারী কৃষি অফিসারদের মাধ্যমে এসব এলাকায় ফসলের উৎপাদন বাড়াতে নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, গোয়ালন্দ উপজেলায় এ শীত মৌসুমে ৪টি ইউনিয়নের মোট ১ হাজার ৮০০ হেক্টর আবাদি জমিতে শীতকালীন সবজি চাষের লক্ষ্য মাত্রা রয়েছে।






















