মাগুরায় আইনের তোয়াক্কা না করে ইটভাটাগুলোতে অবাধে কাঠ ও লাকড়ি পোড়ানো হচ্ছে। জেলায় মোট ১০২টি ইটভাটা রয়েছে। যার মধ্যে মাত্র ৮ টির পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন রয়েছে। এর মধ্যে তিন ফসলি জমিতে বেশকিছু ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। হাতেগোনা কয়েকটি ভাটায় কয়লা পোড়ানো হলেও সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এসব ভাটায় অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ফলে একদিকে কৃষিজমির পরিমাণ কমছে, অন্যদিকে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।
অন্যদিকে সদর উপজেলার বাগবাড়িয়া, খদ্দকুছুন্দি, হুলিনগন, পাতুড়িয়া এলাকার মধুমতি নদীর চর দখল করে একই জায়গায় গড়ে উঠেছে ২০ থেকে-২৫টি ইটভাটা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইটভাটা ম্যানেজার বলেন, জেলার বিভিন্ন এলাকার দরিদ্র মানুষের অসহায়ত্বকে কাজে লাগিয়ে ভাটা মালিকদের নিয়োগ করা লোক ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা মণ দরে কাঠ কিনে ভাটায় দেন। প্রতিদিন একটি ভাটায় ৫০০ মণ কাঠ পোড়ানো হয়। সে হিসাবে একটি ভাটায় ইট মৌসুমের ৬ মাসে ৯০ হাজার মণ কাঠ পোড়ানো হয়। উপজেলায় প্রায় ১০২ টি ভাটায় এক মৌসুমে ৪ লাখ ৩২ হাজার মেট্রিক টন কাঠ পোড়ানো হচ্ছে।
ভাটার মালিক সূত্র জানায়, নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে জুন মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত ইট পোড়ানোর মৌসুম। সাধারণত এক চিমনির ইটভাটায় মৌসুমে ২৫ থেকে ৩০ লাখ ইট পোড়ানো যায় আর দুই চিমনিতে ৫০ থেকে ৬০ লাখ ইট পোড়ানো যায়। গড়ে প্রতিবছর মাগুরায় প্রতিটি ভাটায় ৫০ লাখ করে ইট পোড়ানো হয়।
ইটভাটা স্থাপন ও ইট প্রস্তুত আইন ২০১৩-এর ৬ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি ইটভাটায় ইট পোড়ানোর কাজে কাঠ ব্যবহার করেন, তাহলে ওই ব্যক্তি তিন বছরের কারাদণ্ড অথবা তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
মাগুরা সদর ধোয়াইল এলাকায় অবস্থিত এনএসটি ব্রিকসের মালিক আবদুল কাইয়ূম বলেন, তাঁরা অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছে, যেগুলো এখনো তাঁরা পূরণ করতে পারেননি। এ কারণে অনুমোদন হয়নি।
কাঠ পোড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, খরচ বেশি হওয়ায় ব্যারেল চিমনির ইটভাটায় কয়লা পুড়িয়ে ইট তৈরি করলে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে এ কারণে কিছু কাঠ আর কিছু কয়লা দিয়ে ভাটা চালু রেখেছেন।
উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটা ঘুরে দেখা গেছে কাঠ পোড়ানোর মহোৎসব। জেলা শহরে যাতায়াতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মহম্মদপুর- মাগুরা সড়কের পাশে বেশ কয়েকটি ইটভাটা রয়েছে বেশির ভাগ ভাটাতেই পোড়ানো হচ্ছে কাঠ।
প্রয়োজন অনুযায়ী জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করলেও কাঠ পোড়ানোর চিত্র দেখেও না দেখার ভান করছেন। এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে প্রশাসনের তেমন তৎপরতাও নেই।
এসব ইটভাটার লাইসেন্স বা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র রয়েছে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। এছাড়া সিংহভাগ ভাটায় সিমেন্টের তৈরি ১২০ ফুট দৈর্ঘ্যের চিমনির বদলে ব্যবহৃত হচ্ছে স্বল্প উচ্চতার চিমনি। যা আইনত নিষিদ্ধ।
মাগুরা কৃষি সস্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক জাহিদুল আমিন বলেন, ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে রেজুলেশনের মাধ্যমে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। সেখানে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, তিন ফসলি জমিতে কোনো ইন্ডাস্ট্রি বা ইটভাটা করা যাবে না। বিষয়টি জেলার প্রতিটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান-মেম্বরদের জানানো হয়েছে। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের সহায়তায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


























