০১:১০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এভাবেও ফিরে আসা যায়!

আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রথমবারের মতো ২০১৫ সালের বিশ^কাপে নিজেকে প্রমাণের সুযোগ পেয়েছিলেন সৌম্য সরকার। সেই বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে ফরম্যাটে প্রথম অর্ধশতক দিয়ে শুরু। বড় মঞ্চে এমন পারফরম্যান্স তাকে কোটি বাঙালির মনে জায়গা করে দিয়েছিল। অবশ্য আগের বছর ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের সঙ্গে পেরিস্কোপ শর্টে তাকে প্রথমবার আবিষ্কার করেছিল বিসিবি।

২০১৫ সালের বিশ^কাপ শেষে দেশে ফিরেও ফর্ম ধরে রেখেছিলেন বাঁহাতি মারকুটে এই ব্যাটার। পাকিস্তানের সাথে এক সেঞ্চুরি ও এক ফিফটি তুলে নিয়ে দেশবাসীর মনে নতুন আশার সঞ্চার করেন। ততদিনে দেশের ক্রিকেটে সংবাদ রটে গেছে তামিম ইকবালের যোগ্য সঙ্গী পেয়েছে বাংলাদেশ দল। তবে সেই সুর পাল্টাতে কিংবা ক্রীড়াপ্রেমীদের বিশ^াস ভাঙতে বেশি সময় লাগেনি। যে আলো ২০১৫ সালে সৌম্য ছড়িয়েছিলেন তার ছিটেফোঁটাও আর কখনো দেখা যায়নি তার ব্যাটে। অনেকবার দল থেকে ব্রাত্য হয়েছেন, কখনো পারফর্ম করে দলে ঢুকেছেন আবার কোচের চাহিদায় দলে ফিরেছেন। কিন্তু আশাতীত খেলা উপহার দিতে পানেননি। তবুও বাংলাদেশ দল, টিম ম্যানেজম্যান্ট বারবার তার প্রতি ভরসা রাখতে চেয়েছে। বিশেষ করে বিদেশের মাটিতে তার মতো ব্যাটারের কাছ থেকে প্রত্যাশাটা ছিল অনেক। তবে সৌম্য সরকার বিনিময় হিসেবে অধিকাংশ সময় হতাশাই করেছেন।

২০১৯ সালে ওয়ানডেতে সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমের পর বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ রান ছিল তার। ২০১৯ সালের জুলাই মাসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৬৯ রান করার পর তিনি ওয়ানডেতে সুযোগ পান ২০২১ সালে। ওই বছর ৬ ম্যাচে একাদশে থেকে ব্যাটিং পান চার ম্যাচে। ৭, ০, ৩২ ও ১ করার পর আরো দুই বছর বাইরে চলে যেতে হয়। চলতি বছর সেপ্টেম্বরে বিশ্বকাপের ঠিক আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে দুই ম্যাচে একাদশে থেকে এক ম্যাচে ব্যাটিং পেয়ে শূন্য রানে আউট হন, এরপর বাদ পড়েন। এই ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ড সফরে আবার দলে ফিরে একাদশেও জায়গা পান। মাঝের এই সময়টায় দলে আসা যাওয়ার মধ্যে সৌম্যর ব্যাটিং পজিশনও ছিল এলোমেলো। ৭, ৩, ৪ ও ১ Ñআলাদা এই চার পজিশনে খেলানো হয়েছে তাকে। ওয়ানডে ফরম্যাটে নিজের শেষ অর্ধশতকের দেখা পেয়েছিলেন ২০১৯ সালে। প্রায় সাড়ে চার বছর আগে। তবুও সময়ে-অসময়ে এই ব্যাটারের ওপর ভরসা রাখতে চেয়েছে বাংলাদেশ দল। এর মাঝেও নয়টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন তিনি। তবে সেই সুযোগ সদ্বব্যবহার কখনোই করতে পারেননি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচেও ফিরেছিলেন শূন্য করেই। এর আগের দুই ইনিংসের মোট রান মিলে মাত্র এক। প্রথম ম্যাচে বোলিংয়ে নির্বিষ ও হতশ্রী পারফরম্যান্স করায় দ্বিতীয় ম্যাচের একাদশে থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকেও। কিন্তু প্রতিবারের মতো এবারও প্রিয় শিষ্যকে আগলে রেখেছেন। বাংলাদেশ দল আরো একবার সৌম্যের ওপর বিশ্বাস রাখল। ওপেনিংয়ে নেমে শুরু থেকেই বেশ আগ্রাসী ভূমিকায় ছিলেন সৌম্য। অন্য প্রান্তে বাকিরা উইকেটের মূল্য দিতে না পারলেও রান তোলায় তিনি ছিলেন অবিচল। নিজেকে ফিরে পাওয়ার যে মঞ্চটা তৈরি হয়েছে সেটার পুরোটাই ব্যবহার করলেন। সেই নিউজিল্যান্ডের মাটিতেই আরেকবার নতুন করে চেনালেন নিজেকে। যে ক্যারিয়ারটা প্রায় হারিয়েই ফেলেছিলেন, সেই ক্যারিয়ারের যেন পুনর্জন্ম হলো সেই নিউজিল্যান্ডেই। সৌম্য আরেকবার নিজেকে ফিরে পেলেন সেই ২০১৫ সালের মতো করে। প্রত্যাবর্তনের এমন দিনটা রাঙিয়ে রাখতে তাকে ছুঁতে হতো তিন অংকের ম্যাজিক্যাল ফিগারটা। যেটা তিনি শেষবার করতে পেরেছিলেন ২০১৮ সালে। পাঁচ বছর আগে। নিজের অস্তিত্ব নতুন করে জানান দেওয়ার জন্য সৌম্য আরেকবার ঠিক সেটাই করলেন। সেঞ্চুরি করলেন, বাতাসে একটা উড়ন্ত ঘুষি মারলেন, এরপর হেলমেটটা খুলে একটা স্মিত হাসি। এই দিনটার অপেক্ষাতেই তো সৌম্য ছিলেন। এই সৌম্যের অপেক্ষাতেই তো বাংলাদেশ ছিল। নিজের তৃতীয় শতকের দিনে দলীয় ৫০ ওভারের মাথায় আউট হওয়ার আগে ১৫১ বল থেকে করেছেন ১৬৯ রান। যা বাংলাদেশি ব্যাটারদের ব্যক্তিগত ইনিংসের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এশিয়ার ব্যাটারদের মধ্যে কিউইদের বিপক্ষে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। ভেঙেছেন ক্রিকেট ঈশ^র শচিনের ১৬২ রানের রেকর্ড। তাছাড়া বাংলাদেশি ব্যাটারদের মধ্যে তার ইনিংসটি তাসমান পাড়ের দেশটির বিপক্ষে সর্বোচ্চ।

সৌম্যের টানা ব্যর্থতায় অনেক কটূক্তি ধেয়ে এসেছে, তুমুল ট্রল ও সমালোচনার শিকার হয়েছেন। তিনি ফুরিয়ে গেছেন, এমন কথাও অহরহ বলেছে নিন্দুকেরা। কিন্তু আবারও যেন রূপকথার গল্প রচনা করলেন। না বলেও যেন বললেন, এভাবেও ফিরে আসা যায়…।

জনপ্রিয় সংবাদ

স্মৃতিসৌধে তারেক রহমান

এভাবেও ফিরে আসা যায়!

আপডেট সময় : ০৭:৫০:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৩

আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রথমবারের মতো ২০১৫ সালের বিশ^কাপে নিজেকে প্রমাণের সুযোগ পেয়েছিলেন সৌম্য সরকার। সেই বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে ফরম্যাটে প্রথম অর্ধশতক দিয়ে শুরু। বড় মঞ্চে এমন পারফরম্যান্স তাকে কোটি বাঙালির মনে জায়গা করে দিয়েছিল। অবশ্য আগের বছর ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের সঙ্গে পেরিস্কোপ শর্টে তাকে প্রথমবার আবিষ্কার করেছিল বিসিবি।

২০১৫ সালের বিশ^কাপ শেষে দেশে ফিরেও ফর্ম ধরে রেখেছিলেন বাঁহাতি মারকুটে এই ব্যাটার। পাকিস্তানের সাথে এক সেঞ্চুরি ও এক ফিফটি তুলে নিয়ে দেশবাসীর মনে নতুন আশার সঞ্চার করেন। ততদিনে দেশের ক্রিকেটে সংবাদ রটে গেছে তামিম ইকবালের যোগ্য সঙ্গী পেয়েছে বাংলাদেশ দল। তবে সেই সুর পাল্টাতে কিংবা ক্রীড়াপ্রেমীদের বিশ^াস ভাঙতে বেশি সময় লাগেনি। যে আলো ২০১৫ সালে সৌম্য ছড়িয়েছিলেন তার ছিটেফোঁটাও আর কখনো দেখা যায়নি তার ব্যাটে। অনেকবার দল থেকে ব্রাত্য হয়েছেন, কখনো পারফর্ম করে দলে ঢুকেছেন আবার কোচের চাহিদায় দলে ফিরেছেন। কিন্তু আশাতীত খেলা উপহার দিতে পানেননি। তবুও বাংলাদেশ দল, টিম ম্যানেজম্যান্ট বারবার তার প্রতি ভরসা রাখতে চেয়েছে। বিশেষ করে বিদেশের মাটিতে তার মতো ব্যাটারের কাছ থেকে প্রত্যাশাটা ছিল অনেক। তবে সৌম্য সরকার বিনিময় হিসেবে অধিকাংশ সময় হতাশাই করেছেন।

২০১৯ সালে ওয়ানডেতে সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমের পর বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ রান ছিল তার। ২০১৯ সালের জুলাই মাসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৬৯ রান করার পর তিনি ওয়ানডেতে সুযোগ পান ২০২১ সালে। ওই বছর ৬ ম্যাচে একাদশে থেকে ব্যাটিং পান চার ম্যাচে। ৭, ০, ৩২ ও ১ করার পর আরো দুই বছর বাইরে চলে যেতে হয়। চলতি বছর সেপ্টেম্বরে বিশ্বকাপের ঠিক আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে দুই ম্যাচে একাদশে থেকে এক ম্যাচে ব্যাটিং পেয়ে শূন্য রানে আউট হন, এরপর বাদ পড়েন। এই ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ড সফরে আবার দলে ফিরে একাদশেও জায়গা পান। মাঝের এই সময়টায় দলে আসা যাওয়ার মধ্যে সৌম্যর ব্যাটিং পজিশনও ছিল এলোমেলো। ৭, ৩, ৪ ও ১ Ñআলাদা এই চার পজিশনে খেলানো হয়েছে তাকে। ওয়ানডে ফরম্যাটে নিজের শেষ অর্ধশতকের দেখা পেয়েছিলেন ২০১৯ সালে। প্রায় সাড়ে চার বছর আগে। তবুও সময়ে-অসময়ে এই ব্যাটারের ওপর ভরসা রাখতে চেয়েছে বাংলাদেশ দল। এর মাঝেও নয়টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন তিনি। তবে সেই সুযোগ সদ্বব্যবহার কখনোই করতে পারেননি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচেও ফিরেছিলেন শূন্য করেই। এর আগের দুই ইনিংসের মোট রান মিলে মাত্র এক। প্রথম ম্যাচে বোলিংয়ে নির্বিষ ও হতশ্রী পারফরম্যান্স করায় দ্বিতীয় ম্যাচের একাদশে থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকেও। কিন্তু প্রতিবারের মতো এবারও প্রিয় শিষ্যকে আগলে রেখেছেন। বাংলাদেশ দল আরো একবার সৌম্যের ওপর বিশ্বাস রাখল। ওপেনিংয়ে নেমে শুরু থেকেই বেশ আগ্রাসী ভূমিকায় ছিলেন সৌম্য। অন্য প্রান্তে বাকিরা উইকেটের মূল্য দিতে না পারলেও রান তোলায় তিনি ছিলেন অবিচল। নিজেকে ফিরে পাওয়ার যে মঞ্চটা তৈরি হয়েছে সেটার পুরোটাই ব্যবহার করলেন। সেই নিউজিল্যান্ডের মাটিতেই আরেকবার নতুন করে চেনালেন নিজেকে। যে ক্যারিয়ারটা প্রায় হারিয়েই ফেলেছিলেন, সেই ক্যারিয়ারের যেন পুনর্জন্ম হলো সেই নিউজিল্যান্ডেই। সৌম্য আরেকবার নিজেকে ফিরে পেলেন সেই ২০১৫ সালের মতো করে। প্রত্যাবর্তনের এমন দিনটা রাঙিয়ে রাখতে তাকে ছুঁতে হতো তিন অংকের ম্যাজিক্যাল ফিগারটা। যেটা তিনি শেষবার করতে পেরেছিলেন ২০১৮ সালে। পাঁচ বছর আগে। নিজের অস্তিত্ব নতুন করে জানান দেওয়ার জন্য সৌম্য আরেকবার ঠিক সেটাই করলেন। সেঞ্চুরি করলেন, বাতাসে একটা উড়ন্ত ঘুষি মারলেন, এরপর হেলমেটটা খুলে একটা স্মিত হাসি। এই দিনটার অপেক্ষাতেই তো সৌম্য ছিলেন। এই সৌম্যের অপেক্ষাতেই তো বাংলাদেশ ছিল। নিজের তৃতীয় শতকের দিনে দলীয় ৫০ ওভারের মাথায় আউট হওয়ার আগে ১৫১ বল থেকে করেছেন ১৬৯ রান। যা বাংলাদেশি ব্যাটারদের ব্যক্তিগত ইনিংসের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এশিয়ার ব্যাটারদের মধ্যে কিউইদের বিপক্ষে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। ভেঙেছেন ক্রিকেট ঈশ^র শচিনের ১৬২ রানের রেকর্ড। তাছাড়া বাংলাদেশি ব্যাটারদের মধ্যে তার ইনিংসটি তাসমান পাড়ের দেশটির বিপক্ষে সর্বোচ্চ।

সৌম্যের টানা ব্যর্থতায় অনেক কটূক্তি ধেয়ে এসেছে, তুমুল ট্রল ও সমালোচনার শিকার হয়েছেন। তিনি ফুরিয়ে গেছেন, এমন কথাও অহরহ বলেছে নিন্দুকেরা। কিন্তু আবারও যেন রূপকথার গল্প রচনা করলেন। না বলেও যেন বললেন, এভাবেও ফিরে আসা যায়…।