১০:৪৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সোনারগাঁয়ে নওয়াব আলীর শখের মিনি চিড়িয়াখানা 

নওয়াব আলী পেশায় একজন দলিল লিখক ও শিক্ষানবীশ আইনজীবি। কিন্তু তাতে কি, তার ছেলের শখ ময়ূর দেখবে । সেই শখ পূরণ করতে ছেলেকে নিয়ে চিড়িয়াখানা গেলেন। সেখানে তার ছেলে সবকিছু দেখলেও ময়ুর দেখে তার পছন্দ হয়ে গেছে। এরপর থেকে ছেলেটি তার বাবার নিকট বার বার চিড়িয়াখানায় ময়ুর দেখতে যাওয়ার বায়না করতো। কিন্তু বারে বারে তো আর চিড়িয়াখানায় যাওয়া যায় না বা সম্ভব হয় না। তাই ছেলের শখ মেটাতে বাবা নওয়াব আলী সিদ্ধান্ত নিলেন ময়ূরের ফার্ম করবেন।
সেই সিদ্ধান্তনুযায়ী তিনি ২০২০ সালে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে উপজেলার গজারিয়াপাড়ায় ২০ শতক জায়গায় গড়ে তোলেন ময়ূরের খামার। ২০২১ সালে ইন্ডিয়ান ভুলু জাতের ১ জোড়া ময়ূর দিয়ে শুরু করেন তার ফার্মের যাত্রা। ময়মনসিংহ থেকে তিনি এ ময়ূর জোড়া সংগ্রহ করেন প্রায় লাখ টাকা দিয়ে। এখন তার ফার্মে রয়েছে ৪ জোড়া ময়ূর। ময়ূরের পাশা-পাশি রয়েছে টার্কি ৮ জোড়া, ব্রাহাম মুরগি ৫ জোড়া, সিল্কী মুরগী ৪ জোড়া, জাপানের জাতীয় পাখি রিংরেন্ট ফিজেন্ট রয়েছে ১০ জোড়া। আর খাবার হিসেবে শাক-সবজি, ঘাস, দানা জাতীয় খাবার, গম, ভুট্টা ইত্যাদি খেয়ে থাকে। এগুলো পালন করার জন্য রয়েছে ছোট ভাই আরিফ, টুটুলসহ ২ জন কর্মচারীও।
এছাড়াও নওয়াব আলীর শখের ময়ূরের খামারে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের গাছ-পালা। এলাকায় তার আশে-পাশের মানুষ এটাকে খামার বাড়ি বলে চিনে। ময়ূর দেখতে ভীড় জমায় অনেক এলাকার মানুষ। তবে সব সময় বা যখন তখন ফার্মের ভিতরে ঢোকার অনুমতি নেই। শুধুমাত্র পূর্বানুমতি নিয়ে দেখতে পাওয়া যায় এ ময়ূর খামার। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের বায়না পূরণ করতে তাদের অভিভাবকরা অনেকেই এখানে নিয়ে আসেন।
পাশের গ্রামের লিমা আক্তার নামের এক গৃহিনী তার ছেলে-মেয়েদের নিয়ে দেখতে আসে নওয়াব আলীর এই ময়ূর খামার।
তার এই খামারের বিষয়ে কিছু জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছোট ছোট বাচ্চাদের বিনোদনের তেমন কোন জায়গা না থাকায় এই ময়ূরের খামারে প্রায়ই ঘুরতে আসে। এতে করে ছোট বাচ্চাদের বায়না পুরণ হয়। এখানকার পরিবেশও খুব ভালো। এই ফার্মে ময়ূর দেখতে আসলে কোন টিকিটও লাগে না।
ঢাকার মিরপুর ১২ থেকে দুবাই প্রবাসী কালাম সাহেব তার পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসেন পেরাবোর তাজমহল । আশে -পাশের লোকজনদের কাছ থেকে শুনতে পেয়ে এই ময়ূর খামার দেখতে আসেন তার পরিবার নিয়ে। তিনি এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন গ্রামীন পরিবেশে এমন একটি সুন্দর ময়ূরের খামার দেখতে পেয়ে আমরা অভিভূত। ভবিষ্যতে বন্ধু-বান্ধর ও আত্মীয় স্বজন নিয়ে পিকনিক করতে এ খামারে আসবেন বলেও তিনি জানান।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নওয়াব আলীর ময়ূর খামারের কথা বললে সবাই একনামে চিনে ফেলে। মোঃ আব্দুল সাত্তার নামের এক রিকসা চালক বলেন, আমাদের এই গজারিয়াপাড়া গ্রামে ময়ূরের খামারের জন্য অনেক এলাকার মানুষকে ভীড় করতে দেখা যায়। এছাড়াও এই ময়ূরের খামারের জন্য এলাকার পরিচিতিও অনেকটা  বেড়ে গেছে।
খামারের মালিক নওয়াব আলী বলেন, সন্তানের আশা পূরণ করতেই এই খামার গড়ে তুলি। এখন অনেকেই এই খামার দেখতে আসে। বিষয়টা আমার কাছে খুব উপভোগ্য মনে হয়।
তিনি আরও জানান, খামারের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে মুন্সিগঞ্জ থেকে কারিগর এনে তৈরি করেছি মুন্সিগঞ্জের বিখ্যাত কাঠের তৈরি দ্বিতলা ঘর। সম্পূর্ণ লোহা কাঠ দিয়ে তৈরিকৃত এই ঘরটি দেখতে উৎসুখ জনতার ভীড় লেগেই থাকে। একসাথে মুন্সিগঞ্জের বিখ্যাত ঘর ও ময়ূরের খামার দেখতে অনেকেই এখানে আসেন পরিবার-পরিজন নিয়ে। তবে কেউ যদি এখানে পিকনিক করতে চায় তাহলে কিছু শর্ত সাপেক্ষে ভাড়া নিতে পারবেন। ভবিষতে এই খামারের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে আরও অনেক পদক্ষেপ নেয়া হবে।
জনপ্রিয় সংবাদ

সানজিদা তন্বীর বিয়ের খবর জানালেন ফেসবুকে নিজের হৃদয়গ্রাহী পোস্টে

সোনারগাঁয়ে নওয়াব আলীর শখের মিনি চিড়িয়াখানা 

আপডেট সময় : ০৪:২৯:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ জানুয়ারী ২০২৪
নওয়াব আলী পেশায় একজন দলিল লিখক ও শিক্ষানবীশ আইনজীবি। কিন্তু তাতে কি, তার ছেলের শখ ময়ূর দেখবে । সেই শখ পূরণ করতে ছেলেকে নিয়ে চিড়িয়াখানা গেলেন। সেখানে তার ছেলে সবকিছু দেখলেও ময়ুর দেখে তার পছন্দ হয়ে গেছে। এরপর থেকে ছেলেটি তার বাবার নিকট বার বার চিড়িয়াখানায় ময়ুর দেখতে যাওয়ার বায়না করতো। কিন্তু বারে বারে তো আর চিড়িয়াখানায় যাওয়া যায় না বা সম্ভব হয় না। তাই ছেলের শখ মেটাতে বাবা নওয়াব আলী সিদ্ধান্ত নিলেন ময়ূরের ফার্ম করবেন।
সেই সিদ্ধান্তনুযায়ী তিনি ২০২০ সালে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে উপজেলার গজারিয়াপাড়ায় ২০ শতক জায়গায় গড়ে তোলেন ময়ূরের খামার। ২০২১ সালে ইন্ডিয়ান ভুলু জাতের ১ জোড়া ময়ূর দিয়ে শুরু করেন তার ফার্মের যাত্রা। ময়মনসিংহ থেকে তিনি এ ময়ূর জোড়া সংগ্রহ করেন প্রায় লাখ টাকা দিয়ে। এখন তার ফার্মে রয়েছে ৪ জোড়া ময়ূর। ময়ূরের পাশা-পাশি রয়েছে টার্কি ৮ জোড়া, ব্রাহাম মুরগি ৫ জোড়া, সিল্কী মুরগী ৪ জোড়া, জাপানের জাতীয় পাখি রিংরেন্ট ফিজেন্ট রয়েছে ১০ জোড়া। আর খাবার হিসেবে শাক-সবজি, ঘাস, দানা জাতীয় খাবার, গম, ভুট্টা ইত্যাদি খেয়ে থাকে। এগুলো পালন করার জন্য রয়েছে ছোট ভাই আরিফ, টুটুলসহ ২ জন কর্মচারীও।
এছাড়াও নওয়াব আলীর শখের ময়ূরের খামারে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের গাছ-পালা। এলাকায় তার আশে-পাশের মানুষ এটাকে খামার বাড়ি বলে চিনে। ময়ূর দেখতে ভীড় জমায় অনেক এলাকার মানুষ। তবে সব সময় বা যখন তখন ফার্মের ভিতরে ঢোকার অনুমতি নেই। শুধুমাত্র পূর্বানুমতি নিয়ে দেখতে পাওয়া যায় এ ময়ূর খামার। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের বায়না পূরণ করতে তাদের অভিভাবকরা অনেকেই এখানে নিয়ে আসেন।
পাশের গ্রামের লিমা আক্তার নামের এক গৃহিনী তার ছেলে-মেয়েদের নিয়ে দেখতে আসে নওয়াব আলীর এই ময়ূর খামার।
তার এই খামারের বিষয়ে কিছু জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছোট ছোট বাচ্চাদের বিনোদনের তেমন কোন জায়গা না থাকায় এই ময়ূরের খামারে প্রায়ই ঘুরতে আসে। এতে করে ছোট বাচ্চাদের বায়না পুরণ হয়। এখানকার পরিবেশও খুব ভালো। এই ফার্মে ময়ূর দেখতে আসলে কোন টিকিটও লাগে না।
ঢাকার মিরপুর ১২ থেকে দুবাই প্রবাসী কালাম সাহেব তার পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসেন পেরাবোর তাজমহল । আশে -পাশের লোকজনদের কাছ থেকে শুনতে পেয়ে এই ময়ূর খামার দেখতে আসেন তার পরিবার নিয়ে। তিনি এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন গ্রামীন পরিবেশে এমন একটি সুন্দর ময়ূরের খামার দেখতে পেয়ে আমরা অভিভূত। ভবিষ্যতে বন্ধু-বান্ধর ও আত্মীয় স্বজন নিয়ে পিকনিক করতে এ খামারে আসবেন বলেও তিনি জানান।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নওয়াব আলীর ময়ূর খামারের কথা বললে সবাই একনামে চিনে ফেলে। মোঃ আব্দুল সাত্তার নামের এক রিকসা চালক বলেন, আমাদের এই গজারিয়াপাড়া গ্রামে ময়ূরের খামারের জন্য অনেক এলাকার মানুষকে ভীড় করতে দেখা যায়। এছাড়াও এই ময়ূরের খামারের জন্য এলাকার পরিচিতিও অনেকটা  বেড়ে গেছে।
খামারের মালিক নওয়াব আলী বলেন, সন্তানের আশা পূরণ করতেই এই খামার গড়ে তুলি। এখন অনেকেই এই খামার দেখতে আসে। বিষয়টা আমার কাছে খুব উপভোগ্য মনে হয়।
তিনি আরও জানান, খামারের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে মুন্সিগঞ্জ থেকে কারিগর এনে তৈরি করেছি মুন্সিগঞ্জের বিখ্যাত কাঠের তৈরি দ্বিতলা ঘর। সম্পূর্ণ লোহা কাঠ দিয়ে তৈরিকৃত এই ঘরটি দেখতে উৎসুখ জনতার ভীড় লেগেই থাকে। একসাথে মুন্সিগঞ্জের বিখ্যাত ঘর ও ময়ূরের খামার দেখতে অনেকেই এখানে আসেন পরিবার-পরিজন নিয়ে। তবে কেউ যদি এখানে পিকনিক করতে চায় তাহলে কিছু শর্ত সাপেক্ষে ভাড়া নিতে পারবেন। ভবিষতে এই খামারের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে আরও অনেক পদক্ষেপ নেয়া হবে।