০২:৫৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শতবর্ষের সাক্ষী বিবির পুকুর

বরিশাল নগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত সদর রোডের পূর্বপাশে শতবর্ষের সাক্ষী হয়ে আছে বিবির পুকুর নামের ঐতিহ্যবাহী এই কৃত্রিম জলাশয়টি।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, খ্রিষ্টধর্ম প্রচারক ডা. উইলিয়াম কেরির নাতি উইলিয়াম কেরি জুনিয়র তৎকালীন বাকেরগঞ্জ (বরিশালের পূর্ব নাম) এসে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয় ভূস্বামিনী জিন্নাত বিবির শুশ্রƒষায় তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। পরে জিন্নাত বিবিকে তিনি বিবি জেনেট নাম দিয়ে পালিত কন্যার মর্যাদা দেন।

ওই সময় স্থানীয়দের জলকষ্ট নিরসনের জন্য জিন্নাত বিবি একটি পুকুর খননের জন্য উইলিয়াম কেরি জুনিয়রের সহায়তা চান। সে অনুসারে নগরীর সদর রোডের পূর্বপাশে ১৮৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ৪০০ ফুট প্রস্থ একটি পুকুর খনন শুরু হয়। ১৯০৮ সালে পুকুরটির খনন কাজ শেষ হয়।

নিঃসন্তান জিন্নাত বিবি পুকুরটির পশ্চিমপাড়ে বসবাস করতেন। ওই এলাকার নাম ছিল বিবির মহল্লা। তাই পুকুরটিও কালক্রমে বিবির পুকুর হিসেবে খ্যাতি ও পরিচিত লাভ করতে থাকে।

বরিশালের প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরন ২০০৮ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর এই পুকুরটি রক্ষা ও এর সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্যোগ নেন। পুকুরের পাশেই করা হয় উন্মুক্ত বিনোদন কেন্দ্র যা মেয়র হিরনের মৃত্যুর পর তা ‘হিরন স্কয়ার’ নামে পরিচিতি পায়। বর্তমানে এটি নগরীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। প্রতিদিন বিকাল হলেই নগরবাসী অবসর সময় কাটানোর জন্য পুকুরপাড়ে ও তৎসংলগ্ন হিরন স্কয়ারে জড়ো হন।

পুকুরটি শহরের কেন্দ্রস্থলে হওয়ায় ও যাতায়াত সুবিধা ভালো থাকার দরুন অনেক রাত পর্যন্ত এখানে মানুষ ভিড় করে। পুকুরের পাশে বাহারি রকমের মুখরোচক খাবারও পাওয়া যায়। এরমধ্যে চটপটি ও ফুচকার জুড়ি নেই।

২০১২ সালের ২৭ মে বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) উদ্যোগে ও গ্রামীণফোনের অর্থায়নে বিবির পুকুরের সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়। প্রকল্পের আওতায় রয়েছে পুকুরের চারপাশে ঝুলন্ত পার্ক, বসার বেঞ্চ, অত্যাধুনিক গ্রিল ও পুকুরের শোভা বৃদ্ধির জন্য লাইটিংকরণ, পুকুরটির ইতিহাসসংবলিত বিলবোর্ড, পুকুর ঘিরে বৃক্ষরোপণ, উন্নত ওয়াকওয়ে ও রঙিন ফোয়ারা স্থাপন।

এক কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে পুকুরটির সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও প্রকল্পের অনেক কিছুই এখনও বাস্তবায়ন করা হয়নি। যেটুকুও করা হয়েছে তার অনেকটাই এরই মধ্যে নষ্ট হয়ে যাওয়ার পথে। বহুদিন ধরেই পুকুরের মধ্যকার রঙিন আলোর ফোয়ারাটি অচল হয়ে পড়ে আছে। যাচ্ছেতাই বিলবোর্ড স্থাপনের কারণে পুকুরটির সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে।

বরিশাল নাগরিক পরিষদের সম্পাদক এনায়েত হোসেন বলেন, বিসিসি পুকুরসংলগ্ন এলাকায় ওয়াই-ফাই জোনের ব্যবস্থা করায় তরুণদের ভিড় বেড়েছে। একসময় এ পুকুরের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী কীর্তনখোলা নদীর যোগাযোগ থাকায় নিয়মিত জোয়ার-ভাটায় এর পানি ভালো থাকত। ব্যবস্থাটি আবারও চালু করা উচিত বলে তিনি মনে করেন।

জনপ্রিয় সংবাদ

শতবর্ষের সাক্ষী বিবির পুকুর

আপডেট সময় : ০৯:২৩:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ জানুয়ারী ২০২৪

বরিশাল নগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত সদর রোডের পূর্বপাশে শতবর্ষের সাক্ষী হয়ে আছে বিবির পুকুর নামের ঐতিহ্যবাহী এই কৃত্রিম জলাশয়টি।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, খ্রিষ্টধর্ম প্রচারক ডা. উইলিয়াম কেরির নাতি উইলিয়াম কেরি জুনিয়র তৎকালীন বাকেরগঞ্জ (বরিশালের পূর্ব নাম) এসে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয় ভূস্বামিনী জিন্নাত বিবির শুশ্রƒষায় তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। পরে জিন্নাত বিবিকে তিনি বিবি জেনেট নাম দিয়ে পালিত কন্যার মর্যাদা দেন।

ওই সময় স্থানীয়দের জলকষ্ট নিরসনের জন্য জিন্নাত বিবি একটি পুকুর খননের জন্য উইলিয়াম কেরি জুনিয়রের সহায়তা চান। সে অনুসারে নগরীর সদর রোডের পূর্বপাশে ১৮৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ৪০০ ফুট প্রস্থ একটি পুকুর খনন শুরু হয়। ১৯০৮ সালে পুকুরটির খনন কাজ শেষ হয়।

নিঃসন্তান জিন্নাত বিবি পুকুরটির পশ্চিমপাড়ে বসবাস করতেন। ওই এলাকার নাম ছিল বিবির মহল্লা। তাই পুকুরটিও কালক্রমে বিবির পুকুর হিসেবে খ্যাতি ও পরিচিত লাভ করতে থাকে।

বরিশালের প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরন ২০০৮ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর এই পুকুরটি রক্ষা ও এর সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্যোগ নেন। পুকুরের পাশেই করা হয় উন্মুক্ত বিনোদন কেন্দ্র যা মেয়র হিরনের মৃত্যুর পর তা ‘হিরন স্কয়ার’ নামে পরিচিতি পায়। বর্তমানে এটি নগরীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। প্রতিদিন বিকাল হলেই নগরবাসী অবসর সময় কাটানোর জন্য পুকুরপাড়ে ও তৎসংলগ্ন হিরন স্কয়ারে জড়ো হন।

পুকুরটি শহরের কেন্দ্রস্থলে হওয়ায় ও যাতায়াত সুবিধা ভালো থাকার দরুন অনেক রাত পর্যন্ত এখানে মানুষ ভিড় করে। পুকুরের পাশে বাহারি রকমের মুখরোচক খাবারও পাওয়া যায়। এরমধ্যে চটপটি ও ফুচকার জুড়ি নেই।

২০১২ সালের ২৭ মে বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) উদ্যোগে ও গ্রামীণফোনের অর্থায়নে বিবির পুকুরের সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়। প্রকল্পের আওতায় রয়েছে পুকুরের চারপাশে ঝুলন্ত পার্ক, বসার বেঞ্চ, অত্যাধুনিক গ্রিল ও পুকুরের শোভা বৃদ্ধির জন্য লাইটিংকরণ, পুকুরটির ইতিহাসসংবলিত বিলবোর্ড, পুকুর ঘিরে বৃক্ষরোপণ, উন্নত ওয়াকওয়ে ও রঙিন ফোয়ারা স্থাপন।

এক কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে পুকুরটির সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও প্রকল্পের অনেক কিছুই এখনও বাস্তবায়ন করা হয়নি। যেটুকুও করা হয়েছে তার অনেকটাই এরই মধ্যে নষ্ট হয়ে যাওয়ার পথে। বহুদিন ধরেই পুকুরের মধ্যকার রঙিন আলোর ফোয়ারাটি অচল হয়ে পড়ে আছে। যাচ্ছেতাই বিলবোর্ড স্থাপনের কারণে পুকুরটির সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে।

বরিশাল নাগরিক পরিষদের সম্পাদক এনায়েত হোসেন বলেন, বিসিসি পুকুরসংলগ্ন এলাকায় ওয়াই-ফাই জোনের ব্যবস্থা করায় তরুণদের ভিড় বেড়েছে। একসময় এ পুকুরের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী কীর্তনখোলা নদীর যোগাযোগ থাকায় নিয়মিত জোয়ার-ভাটায় এর পানি ভালো থাকত। ব্যবস্থাটি আবারও চালু করা উচিত বলে তিনি মনে করেন।