১০:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

৪ বছর বন্ধ ভেড়ামারা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র, ব্যয় ৪০ কোটি টাকা!

ডিজেলে চলা কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা ৬০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় দুটি ইউনিট বন্ধ করা হয় প্রায় চার বছর আগে। বাকি যে একটি ইউনিট সচল রাখা হয়েছে সেই ইউনিট থেকে কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় না। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলি করা হয়েছে অন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রে। অবকাঠামো এবং যন্ত্রাংশও বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে। খসে পড়ছে ভবনের পলেস্তারা। তারপরও প্লান্ট ব্যয় নির্বাহ করতে খরচ হয়ে গেছে ৪০ কোটি টাকা।
বিদ্যুৎকেন্দ্রটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৭৬ সালের ২৭ এপ্রিল জার্মানির এজি কার্নিস কোম্পানির প্রযুক্তিতে একটি জিট ইউনিট নিয়ে প্রথম উৎপাদনে আসে ভেড়ামারার ঐতিহ্যবাহী তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটি। একই বছর ২৮ জুলাই দ্বিতীয় ইউনিট চালু হয়। সে সময় ২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিট থেকে মোট ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো। চাহিদার কারণে ১৯৮০ সালের ১৯ জানুয়ারি জাপানের হিটাসি কোম্পানির প্রযুক্তিতে ২০ মেগাওয়াটের আরেকটি ইউনিট চালু হয়। তখন মোট সক্ষমতা দাঁড়ায় ৬০ মেগাওয়াট।
কেন্দ্রসংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জানা যায়, ইউনিটগুলোর মেয়াদকাল ধরা হয় ১৫ বছর। অথচ ১ ও ২ নম্বর ইউনিট ৪৪ বছর ধরে চলার পর বন্ধ করে দেওয়া হয় ২০২০ সালে। আর ৩ নম্বর ইউনিটটি সচল আছে ৪৪ বছর ধরে৷ মেয়াদোত্তীর্ণ, জরাজীর্ণ আর অত্যন্ত ব্যয়বহুল প্লান্টটি ৪ বছর আগে বন্ধ করে দেয় সরকার। জরুরি মুহূর্তে উৎপাদনে যাওয়া লাগতে পারে—এই বিবেচনায় ৩ নম্বর ইউনিটটি এখনো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঘণ্টায় সাড়ে ৬ হাজার লিটার ডিজেল লাগা ইউনিটটি ৬ ঘণ্টা চালানো হলে ১৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে। ইউনিটটি ৯১ দিন চালানোর সক্ষমতা নিয়ে ৩৩ লাখ লিটার ডিজেল মজুত করে রাখা হয়েছে।
জানা গেছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ থাকলেও রক্ষণাবেক্ষণ, পরিচালনা এবং অনান্য ব্যয় পরিচালনা করতে প্রতি বছরই ব্যয় করতে হচ্ছে মোটা অংকের টাকা। বিশ্লেষকরা বলছেন, যে টাকা এখন ব্যয় করা হচ্ছে, সেই টাকা দিয়ে একটি নতুন প্লান্ট পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণ সম্ভব। সূত্র জানায়, ২০২০ সালে ১৩ কোটি, ২০২১ সালে ১২ কোটি, ২০২২ সালে সাড়ে ৮ কোটি, ২০২৩ সালে সাড়ে ৬ কোটি টাকাসহ মোট ৪০ কোটি টাকা ব্যয় হয়ে গেছে।
তবে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) ১৯৩৪তম বোর্ড সভায় ভেড়ামারা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভেতরেই নতুন আরেকটি ডুয়েল ফুয়েল কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয় ২০২২ সালের ৭ জুন। পিজিসিবি এবং পেট্রোবাংলার সমন্বয়ে একটি সম্ভাব্যতা যাচাই কমিটি গঠন করা হয়। ওই বছর ৮ সদস্যের প্রতিনিধিদল এ নিয়ে একটি প্রতিবেদনও দিয়েছে। তবে ১৫০ মেগাওয়াট ডুয়েল ফুয়েল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের আর কোনো অগ্রগতি হয়নি।
ভেড়ামারা বিদ্যুৎকেন্দ্রের উপ-ব্যবস্থাপক (নির্বাহী প্রকৌশলী) মো. আসাদুজ্জামান সবুজ বাংলাকে বলেন, ‘২৭০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী দিয়ে চালানো হতো এ প্লান্টটি। ৭০ জন রেখে প্রায় ২শ’ জনকে বদলি করে অন্য প্লান্টে দেয়া হয়েছে। ৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল দিয়ে জরিপ চালিয়ে কেন্দ্রের অভ্যন্তরেই ১৫০ মেগাওয়াট ডুয়েল ফুয়েল প্লান্ট বাস্তবায়নের জন্য প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এটি দ্রুত বাস্তবায়িত হলে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুতের যোগান বাড়বে।’
বিদ্যুৎকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম সবুজ বাংলাকে বলেন, ‘২০২৫ সাল নাগাদ ৩ নম্বর ইউনিটটিও বন্ধ হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তবে এর আগেই ডুয়েল ফুয়েল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা সম্ভব হলে উৎপাদন ছাড়া সচল রাখা ৩ নম্বর ইউনিটের পেছনে যে ব্যয় হচ্ছে, তা হবে না। বরং একই খরচে নতুন কেন্দ্রের পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণ সম্ভব হবে। কেননা, নতুন কেন্দ্র নির্মাণ এবং পরিচালনার জন্য জায়গা, পানিসহ যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি প্রয়োজন, তার সবটাই এখানে রয়েছে।’
বিদ্যুৎকেন্দ্রে’র সিবিএ সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক সবুজ বাংলাকে বলেন, ‘বিদ্যুৎকেন্দ্রের বহু পরিত্যক্ত জমি রয়েছে। নতুন একটি প্লান্ট নির্মাণ এবং পরিচালনার জন্য জায়গা এবং পানিসহ যে সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি প্রয়োজন, তার সবগুলোই এখানে রয়েছে। এক্ষেত্রে দ্রুত ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হলে বর্তমান জনবল দিয়েই নতুন প্লান্ট পরিচালনা করা সম্ভব হবে। সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত কোনো অর্থ ব্যয় হওয়ার সম্ভাবনা নেই।’
জনপ্রিয় সংবাদ

সব রেকর্ড ভেঙে স্বর্ণের দামে নতুন ইতিহাস, ভরি ছাড়াল দুই লাখ ২৭ হাজার

৪ বছর বন্ধ ভেড়ামারা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র, ব্যয় ৪০ কোটি টাকা!

আপডেট সময় : ০১:১৫:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৪
ডিজেলে চলা কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা ৬০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় দুটি ইউনিট বন্ধ করা হয় প্রায় চার বছর আগে। বাকি যে একটি ইউনিট সচল রাখা হয়েছে সেই ইউনিট থেকে কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় না। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলি করা হয়েছে অন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রে। অবকাঠামো এবং যন্ত্রাংশও বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে। খসে পড়ছে ভবনের পলেস্তারা। তারপরও প্লান্ট ব্যয় নির্বাহ করতে খরচ হয়ে গেছে ৪০ কোটি টাকা।
বিদ্যুৎকেন্দ্রটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৭৬ সালের ২৭ এপ্রিল জার্মানির এজি কার্নিস কোম্পানির প্রযুক্তিতে একটি জিট ইউনিট নিয়ে প্রথম উৎপাদনে আসে ভেড়ামারার ঐতিহ্যবাহী তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটি। একই বছর ২৮ জুলাই দ্বিতীয় ইউনিট চালু হয়। সে সময় ২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিট থেকে মোট ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো। চাহিদার কারণে ১৯৮০ সালের ১৯ জানুয়ারি জাপানের হিটাসি কোম্পানির প্রযুক্তিতে ২০ মেগাওয়াটের আরেকটি ইউনিট চালু হয়। তখন মোট সক্ষমতা দাঁড়ায় ৬০ মেগাওয়াট।
কেন্দ্রসংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জানা যায়, ইউনিটগুলোর মেয়াদকাল ধরা হয় ১৫ বছর। অথচ ১ ও ২ নম্বর ইউনিট ৪৪ বছর ধরে চলার পর বন্ধ করে দেওয়া হয় ২০২০ সালে। আর ৩ নম্বর ইউনিটটি সচল আছে ৪৪ বছর ধরে৷ মেয়াদোত্তীর্ণ, জরাজীর্ণ আর অত্যন্ত ব্যয়বহুল প্লান্টটি ৪ বছর আগে বন্ধ করে দেয় সরকার। জরুরি মুহূর্তে উৎপাদনে যাওয়া লাগতে পারে—এই বিবেচনায় ৩ নম্বর ইউনিটটি এখনো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঘণ্টায় সাড়ে ৬ হাজার লিটার ডিজেল লাগা ইউনিটটি ৬ ঘণ্টা চালানো হলে ১৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে। ইউনিটটি ৯১ দিন চালানোর সক্ষমতা নিয়ে ৩৩ লাখ লিটার ডিজেল মজুত করে রাখা হয়েছে।
জানা গেছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ থাকলেও রক্ষণাবেক্ষণ, পরিচালনা এবং অনান্য ব্যয় পরিচালনা করতে প্রতি বছরই ব্যয় করতে হচ্ছে মোটা অংকের টাকা। বিশ্লেষকরা বলছেন, যে টাকা এখন ব্যয় করা হচ্ছে, সেই টাকা দিয়ে একটি নতুন প্লান্ট পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণ সম্ভব। সূত্র জানায়, ২০২০ সালে ১৩ কোটি, ২০২১ সালে ১২ কোটি, ২০২২ সালে সাড়ে ৮ কোটি, ২০২৩ সালে সাড়ে ৬ কোটি টাকাসহ মোট ৪০ কোটি টাকা ব্যয় হয়ে গেছে।
তবে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) ১৯৩৪তম বোর্ড সভায় ভেড়ামারা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভেতরেই নতুন আরেকটি ডুয়েল ফুয়েল কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয় ২০২২ সালের ৭ জুন। পিজিসিবি এবং পেট্রোবাংলার সমন্বয়ে একটি সম্ভাব্যতা যাচাই কমিটি গঠন করা হয়। ওই বছর ৮ সদস্যের প্রতিনিধিদল এ নিয়ে একটি প্রতিবেদনও দিয়েছে। তবে ১৫০ মেগাওয়াট ডুয়েল ফুয়েল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের আর কোনো অগ্রগতি হয়নি।
ভেড়ামারা বিদ্যুৎকেন্দ্রের উপ-ব্যবস্থাপক (নির্বাহী প্রকৌশলী) মো. আসাদুজ্জামান সবুজ বাংলাকে বলেন, ‘২৭০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী দিয়ে চালানো হতো এ প্লান্টটি। ৭০ জন রেখে প্রায় ২শ’ জনকে বদলি করে অন্য প্লান্টে দেয়া হয়েছে। ৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল দিয়ে জরিপ চালিয়ে কেন্দ্রের অভ্যন্তরেই ১৫০ মেগাওয়াট ডুয়েল ফুয়েল প্লান্ট বাস্তবায়নের জন্য প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এটি দ্রুত বাস্তবায়িত হলে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুতের যোগান বাড়বে।’
বিদ্যুৎকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম সবুজ বাংলাকে বলেন, ‘২০২৫ সাল নাগাদ ৩ নম্বর ইউনিটটিও বন্ধ হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তবে এর আগেই ডুয়েল ফুয়েল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা সম্ভব হলে উৎপাদন ছাড়া সচল রাখা ৩ নম্বর ইউনিটের পেছনে যে ব্যয় হচ্ছে, তা হবে না। বরং একই খরচে নতুন কেন্দ্রের পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণ সম্ভব হবে। কেননা, নতুন কেন্দ্র নির্মাণ এবং পরিচালনার জন্য জায়গা, পানিসহ যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি প্রয়োজন, তার সবটাই এখানে রয়েছে।’
বিদ্যুৎকেন্দ্রে’র সিবিএ সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক সবুজ বাংলাকে বলেন, ‘বিদ্যুৎকেন্দ্রের বহু পরিত্যক্ত জমি রয়েছে। নতুন একটি প্লান্ট নির্মাণ এবং পরিচালনার জন্য জায়গা এবং পানিসহ যে সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি প্রয়োজন, তার সবগুলোই এখানে রয়েছে। এক্ষেত্রে দ্রুত ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হলে বর্তমান জনবল দিয়েই নতুন প্লান্ট পরিচালনা করা সম্ভব হবে। সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত কোনো অর্থ ব্যয় হওয়ার সম্ভাবনা নেই।’