ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার মেনজেনা গ্রামের আব্দুস সবুর ফকিরের একমাত্র
ছেলে সজিব (২৮)। এক ছেলে আর এক মেয়ের মাঝে সজিবই বড়। ২০১৭ সালের দিকে
জীবিকার সন্ধানে অল্প বয়সেই পাড়ি জমান মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে।
সেখানে এভার দ্যা ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানীতে ক্লিনার পদে চাকরি শুরু করেন
তিনি। সেখানে কাজ করেন দীর্ঘ ৯ মাস। একদিন কোম্পানীর গাড়িতে কাজ করার
সময় গাড়িতে বড়মিল উঠানোর সময় এসিডের বোতল ব্রাস্ট হয়ে তার মুখে লাগে।
তখনই তিনি অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যান। সেখান থেকে তাকে হাসপাতালে
নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলে দীর্ঘ ৬মাস। এরপর সেখান থেকে
তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এ অবস্থায় কোম্পানী আর তাকে চিকিৎসা করতে চায়না।
তখন কোম্পানীর অন্যান্য লোকজন তার ব্যাপারে কোম্পানীকে চাপ দিতে থাকে।
এরপর কোম্পানীর লোকজন তাকে রিয়াদ শহরে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠায়।
এরপর সেখানেও চিকিৎসা হয়। সেখানে আরও ৯মাস চিকিৎসা চলে তার। সেখানে
সার্জারি হয়, কিন্তু পুরোপুরি ভালো হয়নি। করোনার সময় তাকে দেশে ফিরে
আসতে হয়। আসার সময় কোম্পানী তাকে সাড়ে ১২ হাজার রিয়েল প্রদান করেন।
দেশে এসে শেখ হাসিনা বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসা করান তিনি। কোম্পানীর
কাছ থেকে যে টাকা পেয়েছিলেন সেটি ঢাকা আর হাসপাতালেই দৌড়ঝাপে শেষ
হয়ে যায়। বর্তমানে দগ্ধ মুখ নিয়ে অন্ধকার ঘরের ভেতরই কাটছে তার দিবারাত্রি।
এসিডে দগ্ধ সজিব মিয়া জানান, তার যে বর্তমান পরিস্থিতি তাতে সাধারণ
মানুষ তাকে দেখলে ভয় পায়। কেউ তার সাথে মিশতে চায় না। অনেক বন্ধু বান্ধব
আছে তারাও খুব কটু কথা বলে। আগের মতো মিশতে চায়না। সবাই খারাপ মন্তব্য
করে। সবচেয়ে সমস্যা হচ্ছে ডান চোখে দেখেন না। বাম চোখে দেখেন তবে কম।
চোখ দিয়ে পানি পড়ে। মুখ দিয়ে খেতে পারেন না ভাল করে। নাক দিয়ে শ^াস নিতে
কষ্ট হয় তার। কানেও সমস্যা হয়। পরে এলাকার লোকজনের সহায়তায় ভারতের বেলুর
গিয়ে ডাক্তার দেখান। সেখানকার ডাক্তার বলেছে প্রায় ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা হলে
চিকিৎসা করতে পারবেন তারা।
সজিবের বাবা আব্দুস সবুর ফকির বলেন, ছেলের দিকে তাকাতে পারিনা। ছেলেকে
দেখলে তার খুব খারাপ লাগে। আগে কি চেহারা ছিল আর এখন কি হয়েছে। তিনি
আরও বলেন, চা দোকান দিয়ে সংসারই তো চলেনা। মানুষের কাছ থেকে ঋণ করে
ছেলের চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি। অনেক মানুষ ঋণের টাকা পায় তার কাছে।
নিজের বলতে কোনো কিছুই নেই তার।
সজিবের মা জায়েদা খাতুন ছেলের কথা বলতেই চোখ দিয়ে গড় গড় করে পানি ঝরে
পড়তে থাকে। তিনি বলেন, আমার ছেলে দরজা লাগিয়ে সারাদিন ঘরে শুয়ে থাকে।
আছরের সময় ঘর থেকে বের হয়। আমার যে কেমন লাগে সেটা বলতে পারিনা।
প্রতিবেশী সজিবের এক চাচা বলেন, সজিবকে দেখলে আমার খুব খারাপ লাগে।
খুব কষ্ট করে চলতেছে তারা।
১নং উথুরা ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলেন, সজিবকে ইতোমধ্যে আমরা
কিছু সহায়তা করেছি। পরিষদের আগামী মিটিংয়ে তার ব্যাপারে আলোচনা আরও
করবো। তাছাড়া সমাজের বিত্তবানরা যদি এগিয়ে আসেন তাহলে তার উন্নত
চিকিৎসা করানো আরও সহজ হতো।
সজিব জানান, নারাঙ্গী চৌরাস্তায় তাদের একটি চা স্টল আছে। তার বাবা ভাল
থাকলে সেটি চালায়। সরকারি কার্ড দিছে তাদের, সেখান থেকে কিছু সহায়তা
পায় তারা। এ দিয়েই কোনোমতে সংসার চলছে তাদের। তবে তার যে অবস্থা তা ঠিক
করতে হলে কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা প্রয়োজন। যা তাদের পক্ষে অসম্ভব। তিনি
তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ দেশের বিত্তবানদের সহায়তা কামনা
করেছেন।


























