০৮:৪৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

গাজীপুরের শ্রীপুরে তেলিহাটি উচ্চ  বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলী মনসুর মালিকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাৎসহ, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে  গত ১৪ মার্চ বিভিন্ন অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের একাধিক অভিভাবক সদস্য বৃন্দ। অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে,বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মানিকের  নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে নিয়মিত  ম্যানেজিং কমিটি গঠন করা সম্ভব হচ্ছে না। যার কারণে স্কুলের  শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে।আরও জানা যায়,বিদ্যালয়ের আয়ের প্রায় ৩০লক্ষ টাকা বিদ্যালয়ের কোষাগারে জমা না দিয়ে তিনি নিজের ইচ্ছেমতো ব্যবহার করছেন এ প্রধান শিক্ষক। এছাড়াও বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে থাকলেও তিনি বিধি মোতাবেক খসরা ভোটার তালিকা প্রকাশ না করে নিজের লোকদের দিয়ে গোপনের কমিটি করার পায়তারা করছেন বলে জানা গেছে।

আলী মনসুর মানিক ২০১০ সালে তিনি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। বিধি অনুযায়ী প্রধান শিক্ষক হওয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতার কলামে একটি তৃতীয় বিভাগ গ্রহনযোগ্য হলেও আলী মনসুর মানিকের তৃতীয় বিভাগ রয়েছে দুটি। অভিযোগ ছিল সেসময় স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই তিনি নিয়োগ লাভ করেন। বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সদস্য, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শ্রীপুরের অন্যতম প্রাচীণ এ বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক ও কারিগরি শিক্ষাক্রম চলমান রয়েছে । বর্তমানে শিক্ষার্থী রয়েছে আট  শতাধিক। বিদ্যালয়টিতে আলী মনসুর মানিক প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেয়ার পর শিক্ষার মান নিম্নগামী । তিনি প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদিয়েই সেচ্ছাচারিতা শুরু করেন। তিনি সরকারী কোন নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা করেন না । প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বপালন অবস্থায় তার স্ত্রী আয়েশা খাতুনকে সহকারী প্রধান শিক্ষক ও স্বজন ইশরাক আহমেদ শাওনকে অফিস সহায়ক, সাহাদাৎ আলম দিপুকে কম্পিউটার অপারেটর, ভাগনী সাথী আক্তার, সুমি আক্তারকে অতিথি শিক্ষক হিসেবে বিদ্যালয়ে নিয়োগ দেয়া হয়।

২০১৪সালের পর থেকে বিদ্যালয়ের আয়ের প্রায় ত্রিশ লাখ টাকা বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসেবে জমা না দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তিনি হস্তমজুত করে রেখেছেন। বিদ্যালয়ে অডিট কমিটি, ক্রয় কমিটি ও নির্মাণ কমিটি না থাকায় প্রধান শিক্ষক নিজের ইচ্ছেমতো বিল ভাউচার করে টাকা পয়সা আত্নসাত করে আসছে। তার নানা অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করায় ইতিপূর্বে বেশ কয়েকজন শিক্ষককে হেনস্থাও করেছেন তিনি।বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সদস্য রিয়াজউদ্দিন বলেন, গত দুই বছর ধরে বর্তমান কমিটির কাছে তিনি কোন হিসাব দিচ্ছেন না। বারবার নির্দেশ দেয়ার পরও তিনি এ বিষয়ে এড়িয়ে যাচ্ছেন। এখন বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষের দিকে থাকলেও তিনি বিধি অনুযায়ী কমিটি করার উদ্যোগ নিচ্ছেন না। উপরোন্ত তিনি গোপনে তার পছন্দের লোক দিয়ে কমিটি করার প্রক্রিয়া করছেন।অপর সদস্য আকরাম হোসেন অভিযোগ করেন, গত ১০ মাস ধরে সাধারণ শিক্ষকরা বিদ্যালয় থেকে কোন বেতন ভাতা পাচ্ছেন না। অথচ আয়ের সব টাকা প্রধান শিক্ষক একাই নিয়ে যাচ্ছেন। আমরা পুরো বিষয়ে তদন্ত দাবী করছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সহকারী শিক্ষক অভিযোগ করেন, এ বিদ্যালয়টি কোন সিস্টেমে চলছে না। প্রধান শিক্ষকের সেচ্ছাচারিতায় একক ব্যক্তির প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। শিক্ষকের বেতন না দিলেও প্রধান শিক্ষক তার আত্নীয় স্বজনদের নামে ঠিকই টাকা তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিবাদ করলে নানাভাবে হেনস্থা করা হয়। এ বিষয়ে আলী মনসুর মানিক বলেন, তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। একটি পক্ষ তারা কোন সুযোগ নিতে না পারায় নানা ধরনের অপবাদ দিচ্ছে তার বিরুদ্ধে। বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি তেলিহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বাতেন সরকার বলেন, প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের অনেক টাকা তার হাতে রেখেছেন।

সম্প্রতি চাপ দেয়া হলে তিনি বিদ্যালয়ের কোষাগারে ৮লাখ টাকা জমা দেন। পুরো হিসাব দিয়ে বাকী টাকা জমা দেয়ার জন্য কয়েকবার বলা হলেও তিনি এড়িয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও নতুন কমিটি করারও তিনি গোপনে প্রক্রিয়া করছেন। এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, তিনি অভিযোগ পেয়েছেন। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শোভন রাংসা বলেন,এখনো আমি  অভিযোগ পাইনি। পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

দুই আসনের মনোনয়পত্রে স্বাক্ষর করলেন তারেক রহমান

প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

আপডেট সময় : ০৫:০৫:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ মার্চ ২০২৪

গাজীপুরের শ্রীপুরে তেলিহাটি উচ্চ  বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলী মনসুর মালিকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাৎসহ, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে  গত ১৪ মার্চ বিভিন্ন অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের একাধিক অভিভাবক সদস্য বৃন্দ। অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে,বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মানিকের  নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে নিয়মিত  ম্যানেজিং কমিটি গঠন করা সম্ভব হচ্ছে না। যার কারণে স্কুলের  শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে।আরও জানা যায়,বিদ্যালয়ের আয়ের প্রায় ৩০লক্ষ টাকা বিদ্যালয়ের কোষাগারে জমা না দিয়ে তিনি নিজের ইচ্ছেমতো ব্যবহার করছেন এ প্রধান শিক্ষক। এছাড়াও বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে থাকলেও তিনি বিধি মোতাবেক খসরা ভোটার তালিকা প্রকাশ না করে নিজের লোকদের দিয়ে গোপনের কমিটি করার পায়তারা করছেন বলে জানা গেছে।

আলী মনসুর মানিক ২০১০ সালে তিনি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। বিধি অনুযায়ী প্রধান শিক্ষক হওয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতার কলামে একটি তৃতীয় বিভাগ গ্রহনযোগ্য হলেও আলী মনসুর মানিকের তৃতীয় বিভাগ রয়েছে দুটি। অভিযোগ ছিল সেসময় স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই তিনি নিয়োগ লাভ করেন। বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সদস্য, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শ্রীপুরের অন্যতম প্রাচীণ এ বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক ও কারিগরি শিক্ষাক্রম চলমান রয়েছে । বর্তমানে শিক্ষার্থী রয়েছে আট  শতাধিক। বিদ্যালয়টিতে আলী মনসুর মানিক প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেয়ার পর শিক্ষার মান নিম্নগামী । তিনি প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদিয়েই সেচ্ছাচারিতা শুরু করেন। তিনি সরকারী কোন নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা করেন না । প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বপালন অবস্থায় তার স্ত্রী আয়েশা খাতুনকে সহকারী প্রধান শিক্ষক ও স্বজন ইশরাক আহমেদ শাওনকে অফিস সহায়ক, সাহাদাৎ আলম দিপুকে কম্পিউটার অপারেটর, ভাগনী সাথী আক্তার, সুমি আক্তারকে অতিথি শিক্ষক হিসেবে বিদ্যালয়ে নিয়োগ দেয়া হয়।

২০১৪সালের পর থেকে বিদ্যালয়ের আয়ের প্রায় ত্রিশ লাখ টাকা বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসেবে জমা না দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তিনি হস্তমজুত করে রেখেছেন। বিদ্যালয়ে অডিট কমিটি, ক্রয় কমিটি ও নির্মাণ কমিটি না থাকায় প্রধান শিক্ষক নিজের ইচ্ছেমতো বিল ভাউচার করে টাকা পয়সা আত্নসাত করে আসছে। তার নানা অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করায় ইতিপূর্বে বেশ কয়েকজন শিক্ষককে হেনস্থাও করেছেন তিনি।বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সদস্য রিয়াজউদ্দিন বলেন, গত দুই বছর ধরে বর্তমান কমিটির কাছে তিনি কোন হিসাব দিচ্ছেন না। বারবার নির্দেশ দেয়ার পরও তিনি এ বিষয়ে এড়িয়ে যাচ্ছেন। এখন বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষের দিকে থাকলেও তিনি বিধি অনুযায়ী কমিটি করার উদ্যোগ নিচ্ছেন না। উপরোন্ত তিনি গোপনে তার পছন্দের লোক দিয়ে কমিটি করার প্রক্রিয়া করছেন।অপর সদস্য আকরাম হোসেন অভিযোগ করেন, গত ১০ মাস ধরে সাধারণ শিক্ষকরা বিদ্যালয় থেকে কোন বেতন ভাতা পাচ্ছেন না। অথচ আয়ের সব টাকা প্রধান শিক্ষক একাই নিয়ে যাচ্ছেন। আমরা পুরো বিষয়ে তদন্ত দাবী করছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সহকারী শিক্ষক অভিযোগ করেন, এ বিদ্যালয়টি কোন সিস্টেমে চলছে না। প্রধান শিক্ষকের সেচ্ছাচারিতায় একক ব্যক্তির প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। শিক্ষকের বেতন না দিলেও প্রধান শিক্ষক তার আত্নীয় স্বজনদের নামে ঠিকই টাকা তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিবাদ করলে নানাভাবে হেনস্থা করা হয়। এ বিষয়ে আলী মনসুর মানিক বলেন, তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। একটি পক্ষ তারা কোন সুযোগ নিতে না পারায় নানা ধরনের অপবাদ দিচ্ছে তার বিরুদ্ধে। বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি তেলিহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বাতেন সরকার বলেন, প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের অনেক টাকা তার হাতে রেখেছেন।

সম্প্রতি চাপ দেয়া হলে তিনি বিদ্যালয়ের কোষাগারে ৮লাখ টাকা জমা দেন। পুরো হিসাব দিয়ে বাকী টাকা জমা দেয়ার জন্য কয়েকবার বলা হলেও তিনি এড়িয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও নতুন কমিটি করারও তিনি গোপনে প্রক্রিয়া করছেন। এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, তিনি অভিযোগ পেয়েছেন। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শোভন রাংসা বলেন,এখনো আমি  অভিযোগ পাইনি। পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।