ইসরায়েলের তেল আবিবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামনে সড়কে আগুন জ্বালিয়ে হাজারো মানুষের প্রতিবাদ-বিক্ষোভ। ইসরায়েলের পার্লামেন্টের সামনে হাজারো মানুষ জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেছেন।
➤ হিরোশিমার মতো গাজায় বোমা ফেলার আহ্বান
➤ নেতানিয়াহুর পদত্যাগ দাবিতে উত্তাল ইসরায়েল
➤ শপথ নিল ফিলিস্তিনের নতুন সরকার
➤ লন্ডনে হাজারো ফিলিস্তিনপন্থী সমাবেশে
গাজা ও পশ্চিম তীরে মোতায়েন করা হবে আরব দেশগুলোকে নিয়ে গঠিত একটি আন্তর্জাতিক বাহিনী। আরব বিশ্বের কয়েকটি দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে এমন একটি প্রস্তাব দিয়েছে। গাজা উপত্যকায় জাপানের ‘হিরোশিমা ও নাগাসাকির মতো বোমা ফেলার’ আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান দলের কংগ্রেস সদস্য টিম ওয়ালবার্গ।
লেবাননের সম্প্রচারমাধ্যম আল-মায়েদিন ও ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কেএএন নিউজের পৃথক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে জেরুসালেম পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রসহ আরব দেশগুলো গাজার বর্তমান পরিস্থিতি পেয়েছে তা থেকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষাবাহিনীকে উদ্ধারের চেষ্টা করছে। তারা এমন একটি ব্যবস্থা কার্যকর করতে চাইছে যাতে—ফিলিস্তিনি জনগণ তাদের নেতা ও একটি প্রতিষ্ঠা নিক কাঠামো বেছে নিতে পারে যা উপত্যকার শাসনভার সামলাবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসরায়েলি এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, এ ধরনের পদক্ষেপ হামাসকে বাদ দিয়ে অঞ্চলটি শাসনের একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবে ও গাজায় মানবিক সংকট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইসরায়েলের যে সমস্যা তার সমাধান করবে। আরব দেশগুলোর সমন্বয়ে গঠিত সেই বহুজাতিক বাহিনী গাজায় খুব অল্প সময়ের জন্য অবস্থান করবে। এ বাহিনী মূলত গাজা উপকূলে যুক্তরাষ্ট্র যে অস্থায়ী জেটি তৈরি করতে চায় তার সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। এছাড়া এ বাহিনী মানবিক সহায়তা কনভয়গুলোকেও নিরাপত্তা দেবে। তবে বহুজাতিক এ বাহিনীতে কোনো মার্কিন সেনা থাকবে না।
জেরুসালেম পোস্ট জানিয়েছে, আরব দেশগুলোর কর্মকর্তারা কেবল গাজার জন্য বহুজাতিক বাহিনী নয়, পশ্চিম তীরের জন্যও একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছে। গত সপ্তাহে কায়রোতে মিসর, সৌদি আরব, জর্ডান, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে প্রস্তাবটি উত্থাপিত হয়েছিল।
সেই বৈঠকের বিষয়ে অবগত এক আরব কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, আরব নেতারা নিজ থেকেই পশ্চিম তীরে বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েনের কথা উত্থাপন করেছিলেন। যাতে দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান বাস্তবায়নে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে একটি শান্তি প্রক্রিয়ার শুরু করা যায়। আরব রাষ্ট্রগুলোর আশঙ্কা- ইসরায়েল এ সমাধানকে কৌশলগত ও অস্থায়ী হিসেবে বিবেচনা করতে পারে। যেমন ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে মানবিক সহায়তা বিতরণ, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের একটি ব্যাপক ও কৌশলগত সমাধান হিসেবে এটিকে বিবেচনা করতে পারে।
এদিকে গত ২৫ মার্চ নিজের নির্বাচনী এলাকার একটি টাউন হলে ভোটারদের সামনে দেওয়া ভাষণে জাপানের শহর দুটিতে মার্কিন বাহিনীর আণবিক বোমা ফেলার প্রসঙ্গ টেনে টিম গাজায় একই পন্থা অবলম্বনের কথা বলেন মিশিগানের দক্ষিণাঞ্চল থেকে নির্বাচিত কংগ্রেস সদস্য টিম ওয়ালবার্গ। সেই সঙ্গে গাজায় মার্কিন সহায়তা বন্ধ করারও আহ্বান জানান তিনি। টিমের ওই বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ওই আয়োজনে গাজাবাসীকে মানবিক সহায়তা দিতে মার্কিন প্রশাসনের ডলার খরচ করা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন টিম ওয়ালবার্গ বলেন, আমার মনে হয়, গাজাবাসীর জন্য আমাদের একটি অর্থও খরচ করা উচিত হবে না। নাগাসাকি আর হিরোশিমার মতো করা দরকার। তাহলে দ্রুত এটি (যুদ্ধ) শেষ হবে।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন ইসরায়েলিরা। এতে অংশ নিচ্ছেন লাখো মানুষ। নেতানিয়াহুকে ক্ষমতাচ্যুত না করা পর্যন্ত বিক্ষোভ অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তারা। শনিবার শুরু হওয়া বিক্ষোভ তেল আবিব, জেরুজালেম, হাইফা, বেয়ার শেভা, সিজারিয়াসহ অন্যান্য শহরে ছড়িয়েছে। বিক্ষোভে নেতানিয়াহুর পদত্যাগ এবং আগাম নির্বাচনের দাবিতে স্লোগান উঠেছে। একইসঙ্গে গাজায় এখনও বন্দি ১৩৪ ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্ত করার দাবিও জানান হয়েছে। সংসদের বাইরে বিক্ষোভ শুরু হয় এবং পরে জেরুজালেমের একটি প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভকারীরা। যদিও পরবর্তীতে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে গেলে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের সাথে ধাক্কাধাক্কি হয়। সে সময় পুলিশ লাঠিচার্জ ও জলকামান ব্যবহার করে। এ সময় বিক্ষোভকারীরা নেতানিয়াহুকে যেতে হবে বলে স্লোগান দিচ্ছিলেন। নেতানিয়াহুর দাবি, তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি কিনা ইসরায়েলকে নিরাপদ রাখতে পারেন। অসংখ্য ইসরায়েলিরা তা বিশ্বাসও করেছিলেন; কিন্তু ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি সীমান্তে হামাসের আক্রমণ সব চিত্র পাল্টে দিয়েছে। নিরাপত্তা প্রধানরা প্রতিবার বিবৃতি জারি করে ব্যর্থতা স্বীকার করলেও নেতানিয়াহু কখনো দায় স্বীকার করেননি। মূলত গাজায় বন্দি জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে না পারাসহ নেতানিয়াহুর একের পর এক ব্যর্থতাই অসংখ্য মানুষকে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করতে বাধ্য করেছে।
এদিকে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সংস্কারের তীব্র আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে নতুন সরকার শপথ গ্রহণ করেছে। গত রবিবার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লায় প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সামনে প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মোস্তফার নেতৃত্বে মন্ত্রিসভা। মোস্তফাকে চলতি মাসের শুরুতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শাতায়েহের স্থলাভিষিক্ত করার জন্য নিয়োগ করা হয়েছিল। তিনি ফেব্রুয়ারিতে তার সরকারের সঙ্গে পদত্যাগ করেছিলেন। শপথের পর নতুন সরকারের সভায় প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেন, গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ করতে আরব ও আন্তর্জাতিক পক্ষগুলোর সঙ্গে কাজ চলছে। আমাদের রাজনৈতিক লক্ষ্য স্বাধীনতা ও দখলদারিত্ব থেকে মুক্তি অর্জন করা ও আমরা জাতিসংঘে পূর্ণ সদস্যপদ পেতে সংশ্লিষ্ট আরব ও আন্তর্জাতিক দলগুলোর সঙ্গে কাজ করছি। নতুন সরকারকে গাজায় মানবিক ত্রাণ প্রচেষ্টা ও ফিলিস্তিনি অর্থনীতির পুনরুজ্জীবনের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। ফিলিস্তিনি জনগণকে উন্নত পরিষেবা প্রদানের জন্য সুদূরপ্রসারী প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন তিনি।
অন্যদিকে ফিলিস্তিনপন্থী হাজার হাজার মানুষ শনিবার লন্ডনে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে। গাজায় যুদ্ধবিরতি ও যুদ্ধবিধ্বস্ত এ অঞ্চলের জন্য আরো সাহায্যের দাবিতে যুক্তরাজ্যের রাজধানীতে এটি ছিল সর্বশেষ বিক্ষোভ-সমাবেশ। ফিলিস্তিন সলিডারিটি ক্যাম্পেইন আয়োজিত এ বিক্ষোভ-সমাবেশ শহরের কেন্দ্রস্থলে রাসেল স্কোয়ারে শুরু হয় ও পরে তারা মধ্য দুপুরের সমাবেশের জন্য ট্রাফালগার স্কোয়ারে যায়। এদিকে ইসরায়েলকে সমর্থন জানিয়ে অল্প সংখ্যক বিক্ষোভকারী সেখানে পাল্টা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এ সময় পুলিশ সদস্যরা দুই সমাবেশের মাঝখানে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভকারীদের পৃথক করে রাখে। ৭ অক্টোবর ইসরাইলি ভূখণ্ডে হামাসের নজিরবিহীন হামলার জবাবে ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় ব্যাপক অভিযান শুরুর পর থেকে লন্ডনে বারবার বড় আকারের ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ করতে দেখা যায়।

























