► সময় সাশ্রয় ও বিড়ম্বনা এড়াতে অনেকেই ঝুঁকছেন অনলাইন কেনাকাটায়
► বড় বিপণন প্রতিষ্ঠানগুলোও অনলাইনে যাচ্ছে
►তরুণ-তরুণী ও গৃহিনীরাই বেশি কিনছেন
►সোস্যাল মিডিয়াজুড়ে বিস্তৃত পোশাক মার্কেট
ঈদ সামনে রেখে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শপিংমল ও পোশাকের দোকানে বেচাকেনায় ধুম পড়েছে। পাশাপাশি অনলাইন মাধ্যমেও ঈদের কেনাকাটা চলছে বেশ। তবে অন্যবারের তুলনায় এবার বেড়েছে অনলাইনে কেনাবেচা। যানজটে সময় নষ্ট করে রোজায় ক্লান্ত শরীর নিয়ে অনেকেই মার্কেটে গিয়ে কেনাকাটা করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এছাড়া সীমাহীন ভিড় মাড়িয়ে স¦াভাবিকভাবে কেনাকাটাও দূরহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িছে। ফলে অনলাইনে ঝুঁকছে নানা শ্রেণিপেশার মানুষ। বিভিন্ন পোশাক ও বাহারি বিজ্ঞাপন আর অফারে অনলাইনে ঈদ কেনাকাটা জমে উঠেছে। বিক্রি বাড়াতে অনেকে মূল্যছাড়ের অফারও রাখছেন। অনলাইনে পোশাক ও প্রসাধনীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিক্রেতা, ক্রেতা ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
করোনা মহামারি শুরুর পর ই-কমার্সের ব্যবসা আর অনলাইনে পণ্য বিক্রি বেড়ে গিয়েছিল কয়েক গুণ। সেসময়ে অনেকেই অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করে কেনাকাটায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। তার ধারাবাহিকতায় এবারও অনলাইনে জোরেশোরে বেচাকেনা দেখা যাচ্ছে। তবে শেষ পর্যন্ত কি পরিমাণ বেচাকেনা করতে পারবেন এখনই বলতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা।
এদিকে ক্রেতারাও আছে নানামুখী চ্যালেঞ্জে। সঠিক বিক্রেতা নির্বাচন, সঠিক পণ্য পাওয়ার নিশ্চয়তা, পণ্যের গুণগতমান ঠিক থাকা ও সঠিক সময়ে পণ্য হাতে পাওয়া অনেক সময় একটা বিড়ম্বনার মতো। এছাড়া বেচাকেনার নামে অনলাইনে সক্রিয় প্রতারকচক্র। অগ্রিম টাকা নিয়ে লাপাত্তা অনেক প্রতারক। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় গ্রাহকদের।
অনলাইন বিক্রেতা বলেন, ঈদ সামনে রেখে পোশাক কেনাকাটায় মানুষের চাহিদা বেশি থাকে। বিষয়টি মাথায় রেখেই ঈদের আগেই আমাদের যাত্রা শুরু করা। ভালো সাড়া পাচ্ছি। এত অল্প সময়ে প্রফিটে যাব ভাবিনি।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর ইমাম হোসেন বলেন, এবার প্রায় সব পণ্যের দাম একটু বেশি। প্রতিষ্ঠিত ও ভোক্তাদের প্রতি দায়বদ্ধ অনেক অনলাইন প্রতিষ্ঠান আছে। সেসব জায়গা থেকে পণ্য কিনে ঠকার সম্ভাবনা অনেকটা কম। তবে অনলাইনে কেনাকাটায় সময় সাশ্রয় হয়। তিনি বলেন, ঢাকার এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যেতে দিন চলে যায়। সারা ঢাকাতেই যানজট থাকে। অনলাইনে এই ঝামেলা নেই। দাম একটু বেশি হলেও অনেকেই সময় সাশ্রয় করতে অনলাইন থেকেই কেনাকাটা করছেন।
দেশে অনলাইনকেন্দ্রিক উদ্যোক্তার পাশাপাশি অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও এখন অনলাইন ব্যবসায় ঝুঁকছেন। এ রকমই একটি প্রতিষ্ঠান সিলেট নগরের দাড়িয়াপাড়া এলাকার ‘ষড়ঋতু’। এটি মূলত দেশি কাপড়ের বিক্রয় প্রতিষ্ঠান। ষড়ঋতুর মালিক হুমায়ূন কবির জানান, আমরা দোকানে নানা ধরনের দেশি কাপড় বিক্রি করি। তবে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অনলাইনেও এখন আমরা কাপড় বিক্রি করছি। এবারের ঈদে অনলাইনে ক্রেতাদের ভালো সাড়াও পাচ্ছি।
ফেসবুক ঘেঁটে দেখা গেছে, অনলাইনে প্রায় সব ধরনের সামগ্রীরই বেচাকেনা চলছে। সিলেটের অনেক উদ্যোক্তা ফেসবুকে নিজেদের পেজে কাপড়সহ বিভিন্ন পণ্যের ছবি ও দাম আপলোড করে দিচ্ছেন। আগ্রহীরা সেসব পেজে গিয়ে পছন্দের সামগ্রী কিনতে দরদাম করছেন। অনেক উদ্যোক্তা আবার ফেসবুক পেজে মূল্যছাড়ও দিচ্ছেন। কেউ কেউ কেনাকাটা করার পর সংশ্লিষ্ট পেজগুলোয় গিয়ে সেবা এবং পণ্য নিয়ে ইতিবাচক রিভিউ দিচ্ছেন।
তরুণ-তরুণী ও গৃহিণী বেশি ঝুঁকছেন অনলাইন কেনাকাটায়। মধ্যবয়সি জোসনা আহমেদ এবার অনলাইনেই দুই মেয়ে ও তার জন্য কাপড় কেনাকাটা করবেন। যেহেতু বেশ কিছু ভালো মানের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান অনলাইনকেন্দ্রিক ব্যবসায় আছে, তাই সেসব প্রতিষ্ঠান থেকেই কাপড় কিনবেন।
সাকিব নামে কলেজ শিক্ষার্থী জানান, অনলাইনে কেনাকাটা করি কয়েক বছর ধরেই। তবে বিশ^স্ত মাধ্যম থেকে কেনা ভালো। ভালো ব্যবসায়ীদের ফাঁকে কিছু দুষ্ট লোক ব্যবসায় প্রতারণার ফাঁদ পেতে আছে। তাই কেনাকাটায় সতর্ক থাকা দরকার।
সময় বাঁচাতে ও বিপণিবিতানের ভিড় এড়াতে অনলাইনে পছন্দের পোশাক কিনতে মুঠোফোনে পণ্য দেখছেন অনেকে। অনলাইনে কেনাকাটায় স্বচ্ছন্দবোধ করেন বলে জানালেন রাজধানীর মুগদা এলাকার আলেয়া বেগম। তিনি নিজের সব প্রসাধনসামগ্রী অনলাইন থেকেই কেনেন। অনলাইনে কিনলে আসল জিনিসটাই পান। স্থানীয় বাজারেই অনেক সময় আসল প্রসাধনী পাওয়া যায় না।
অনলাইনে দীর্ঘদিনের কেনাকাটার অভিজ্ঞতা রয়েছে সানজিদার। তিনি বলেন, সাধারণত নিউমার্কেট বা গাউছিয়ায় গেলে অনেক ঘুরতে হয়। রমজানে শত শত দোকান ঘুরে পছন্দের পোশাকটি খুঁজে পাওয়া বেশ কষ্টের। তারপর আবার রোজা রেখে শরীরও দুর্বল লাগে। আমাদের দেশে এখন অনলাইনে অনেক কালেকশন আছে।
এবার পোশাকের দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলেন, বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। সেইসঙ্গে অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসায় তুমুল প্রতিযোগিতায় এবারের ঈদবাজারে তাদের বিক্রি কিছুটা কমেছে।
এক দশকের বেশি সময় ধরে ফেইসবুকে শাড়ি, থ্রি-পিসসহ মেয়েদের বিভিন্ন পোশাক বিক্রি করে আসছেন ‘কল্পতরু’র প্রতিষ্ঠাতা আফসানা শর্মী।
এবারের ঈদবাজারে ক্রেতার চাহিদা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দাম বেশি হওয়ায় ক্রেতা আগের মতো আগ্রহ দেখাচ্ছে না। ভারত, পাকিস্তান থেকে আমদানি করা পোশাক কিংবা দেশে তৈরি পোশাকগুলোর দাম অনেক বেড়ে গেছে। গত বছরের ৫০০ টাকার ড্রেস এবার আমাদের ৭০০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে।
এবারের ঈদবাজারের খবর জানতে চাইলে তিনি বলেন, সর্বোপরি বলতে গেলে এবারের ব্যবসা মন্দা। গত ঈদের সঙ্গে তুলনা করলে অর্ধেক।
পোশাক ছাড়াও হস্তশিল্প, কারুশিল্প, শুকনো খাবার, প্রসাধনী, খেলনাসহ নানা ধরনের পণ্য বিক্রি হয় ফেইসবুক ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে। অনেকেই ফেইসবুকে ভালো সাড়া পেয়ে ওয়েবসাইট ও বিভিন্ন মার্কেটে দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা বিস্তৃত করেছেন। বর্তমানে প্রচলিত অনেক ফ্যাশন ব্র্যান্ডও ফেইসবুকে পেইজ খুলে ক্রেতা ধরার চেষ্টা করছে।
বড় বড় বিপণন কোম্পানিগুলো শো-রুমের পাশাপাশি অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করে পণ্য বিক্রি করছে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে পরিচালিত লা রোজা ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী সানজিদা আক্তার বলেন, পাকিস্তানি ও ভারতীয় পোশাকের তুলনায় এবার দেশীয় ব্র্যান্ডগুলোর পোশাকপণ্যের দাম তুলনামূলক বেশি। ফলে আমাদের মতো ক্রেতাদের একটি ড্রেস কিনতে বেশ চিন্তাভাবনা করতে হচ্ছে।
অফলাইনের তুলনায় ফেইসবুকে অপেক্ষাকৃত কম দামে ভালো পোশাক পাওয়া যেত। কিন্তু এবার দামটা একটু বেশি।


























