গাইবান্ধার চরা লে অনাবাদি জমিতে বাণিজ্যিকভাবে তরমুজ চাষ হয়েছে। একসময়ের ধু-ধু বালুচরের মাইলের পর মাইল যেদিকে চোখ যায় কেবল দেখা যায় তরমুজ আর তরমুজ। এ জমিগুলো একসময় পতিত পড়ে থাকত। এখন এসব জমিই সুখের স্বপ্ন দেখাচ্ছে চাষিদের। যেন ধু-ধু চরে কৃষকের সবুজ-স্বপ্ন। গাইবান্ধার এসব বালুচরে আগে ফসল ফলেনি, ছিল অনাবাদি।
কিন্তু এখন তা সবুজের সমারোহ। বিস্তীর্ণ বালুচরে সবুজ লতায় মোড়ানো গাছ। অনুকুল আবহাওয়া ও বালি মিশ্রিত মাটি হওয়ায় গাইবান্ধা সদর উপজেলার মোল্লাারচরে ৩০০ বিঘা, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার লালচামারে ২৫০ বিঘা ও ফুলছড়ি উপজেলার গুপ্তমনির চরে প্রায় ১৫০ বিঘা জমিতে চাষ হয়েছে তরমুজ। রবি মৌসুমে এসব চরের অধিকাংশ জমি খালি পড়ে থাকলেও চলতি বছর তরমুজ চাষ করে আশার আলো দেখছেন কৃষকরা। দাম ভালো পাচ্ছেন কৃষকরা। তরমুজেই চাঙা হয়ে উঠছেন চরের চাষিরা। গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় তরমুজ চাষ হয়েছে ১১৫ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৪৪ হেক্টর, সুন্দরগঞ্জে ৪১ হেক্টর, ফুলছড়িতে ২৯ হেক্টর এবং সাদুল্লাপুর উপজেলায় ১ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে।
প্রতি বছর জেলার চরা ল ও মূল ভূখন্ডের ফসলি জমিতে তরমুজের চাষ হলেও এ বছরই প্রথমবারের মতো চরের অনাবাদি জমিতে বাণিজ্যিকভাবে তরমুজ চাষ হয়েছে প্রায় ৯৪ হেক্টর জমিতে। জেলায় মোট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৫০০ টন। যার বাজারমূল্য প্রায় ৬ কোটি টাকা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় তরমুজ ফলন হয়েছে। দাম আরেক ভাল পাওয়ায় খুশি কৃষকগণ। ফুলছড়ি উপজেলার গুপ্তমনির চর দেখা যায়, ক্ষেত থেকে তরমুজ তুলে বিক্রয় করতে ব্যস্ত কৃষকরা। রংপুর, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা এসে তরমুজ নিয়ে যাচ্ছে।
লালমনিরহাট থেকে আসা তরমুজ আতিকুল ইসলাম বলেন, আট বছর ধরে তরমুজ চাষ করছেন। গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কি পাড়া ইউনিয়নের গুপ্তমনি চরের অনাবাদি জমি লিজ নিয়ে কয়েকজন কৃষক তরমুজ চাষ করেন। ১৫০ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করতে বীজ, সার, কীটনাশক, সেচ, পরিবহন ও শ্রমিকের মজুরিসহ খরচ হয়েছে প্রায় ৮ লক্ষ টাকা। ইতিমধ্যে দুই দফায় তরমুজ বিক্রয় করে ভালো দাম পেয়েছেন। তরমুজ বিক্রয় করে মৌসুম শেষে অন্তত ৭ লক্ষ টাকা আয় করতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে। গত ডিসেম্বরে জমি প্রস্তুত করে পাকিজা জাতের ৪০ হাজার বীজ বপন করেন। প্রায় ৪০ দিন পর ফলন পেতে শুরু করেন। ৫ মাস পর এপ্রিলে ফল পরিপক্ক হয়ে বিক্রয়ের উপযোগী হয়েছে। মূল ভূখন্ডের জমির তুলনায় চরে ফলন ভালো হয়েছে। তরমুজগুলো আকারেও বড়। দামও ভালো পাচ্ছে। ইতিমধ্যে ৫০০ মণ তরমুজ বিক্রয় করা হয়েছে। আরও অন্তত ৮০০ মণ ফল পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বর্তমানে প্রতি মণ তরমুজের বাজারদর ১ হাজার ১৫০ টাকা। সে হিসেবে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার তরমুজ বিক্রয় হতে পারে। কৃষিবিদ সাদেকুল ইসলাম গোলাপ বলেন, তরমুজ ক্ষেত পরিদর্শন করে সার ব্যবহার ও রোগ প্রতিরোধের জন্য চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ হচ্ছে। আবহাওয়া উপযোগী থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। তরমুজ চাষে পরিশ্রম বেশি হলেও অন্যান্য রবিশস্য থেকে এটিতে কয়েকগুণ বেশি লাভ হয়। গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. খোরশেদ আলম বলেন, গাইবান্ধায় আগে থেকে তরমুজ চাষ হয়ে আসছে। প্রতি বছর তরমুজ চাষির সংখ্যা বাড়ছে। জেলার চার উপজেলার ১৬৫ চর-দ্বীপচর এলাকায় তরমুজ চাষে কৃষকের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে।























