➤স্বাক্ষরিত হবে ১১ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক
➤ ঢাকায় হচ্ছে আমিরের নামে সড়ক
দু’দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকা এসে পৌঁছেছেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এটিই কোনো রাষ্ট্রপ্রধান পর্যায়ের প্রথম কোনো কূটনৈতিক সফর। বাংলাদেশের সঙ্গে কাতারের সম্পর্ক স্বাধীনতার সময় থেকেই। এই সফরের মধ্য দিয়ে দুদেশের সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হবে বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
গতকাল সোমবার বিকাল ৫টার দিকে একটি বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় এসে পৌঁছান কাতারের আমির। এসময় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আমিরকে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। রাষ্ট্রপতির সহকারী প্রেস সচিব এস এম রাহাত হাসনাত বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বন্ধুপ্রতিম দেশ কাতারের আমিরের বাংলাদেশ সফর ঘিরে রাজধানী ঢাকাকে সাজানো হয়েছে নতুন সাজে। রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে কাতারের আমীর, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি শোভা পাচ্ছে। পাশাপাশি, উভয় দেশের জাতীয় পতাকায় সজ্জিত করা হয়েছে নগরীর পথগুলো। কাতার বাংলাদেশ সম্পর্ক দীর্ঘজীবী হোক এমন পোস্টার শোভা পাচ্ছে নগরীর রাস্তাজুড়ে। আজ মঙ্গলবার কাতারের আমির সকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করবেন এবং তার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাবেন। এর পাশাপাশি তিনি সাভারে অবস্থিত জাতীয় স্মৃতিসৌধে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন এবং সেখানে একটি বৃক্ষরোপণ করবেন। সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাতারের আমিরের সঙ্গে প্রথমে একান্ত বৈঠক এবং পরে আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। বিকালে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বঙ্গভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন কাতারের আমির। এর আগে তিনি তার সম্মানে রাষ্ট্রপতির দেওয়া মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন। এবার আমিরের সম্মানে রাজধানীর মিরপুরের কালশী এলাকার বালুর মাঠের নির্মিতব্য পার্ক ও মিরপুর ইসিবি চত্বর থেকে কালশী উড়ালসড়ক পর্যন্ত সড়কটি কাতারের আমিরের নামে নামকরণ করা হবে।
কাতারের আমিরের সফর প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, এই সফরে ১১টি চুক্তি স্বাক্ষর হবে। এরমধ্যে ছয়টি চুক্তি ও পাঁচটি সমঝোতা স্মারক সই হবে। চুক্তিগুলো হচ্ছে, দ্বৈতকর পরিহার, আইনগত বিষয়ে সহযোগিতা, সাগরপথে পণ্য পরিবহন, বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সুরক্ষা, দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের হস্তান্তর ও যৌথ ব্যবসা পরিষদ গঠন সংক্রান্ত চুক্তি। সমঝোতা স্মারকের মধ্যে রয়েছে শ্রমশক্তি বিষয়ে সমঝোতা স্মারক, বন্দর পরিচালনা, উচ্চশিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা, যুব ও ক্রীড়া সহযোগিতা এবং কূটনৈতিক প্রশিক্ষণ সহযোগিতা।
আমিরের সফরের তাৎপর্য জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কাতার মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজার, সেখানে প্রায় চার লাখ বাংলাদেশি কর্মরত আছেন। এছাড়া, বিপুল পরিমাণ সার্বভৌম তহবিল রয়েছে কাতারের। বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনাময় বিনিয়োগের উৎস হতে পারে ওই তহবিল। একইসঙ্গে বাংলাদেশের জন্য জ্বালানি আমদানির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎস কাতার।
আমিরের সফরে মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে আলোচনার প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাত ও গাজায় মানবতাবিরোধী অপরাধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ফিলিস্তিনিদের পক্ষে। কাতার এ বিষয়ে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছে। হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কাতারের আমিরের বাংলাদেশ সফরে স্বাভাবিকভাবে এ বিষয়ে আলোচনা আসতে পারে।
জানুয়ারিতে নতুন সরকার গঠনের পর মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশ থেকে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে উচ্চ পর্যায়ের সফরে ঢাকায় এসেছেন কাতারের আমির। কাতারের আমির তার সফর সঙ্গীদের নিয়ে ‘ল্যা ম্যারিডিয়ান’ হোটেলে অবস্থান করেন।
২০০৫ সালে কাতারের তখনকার আমির হামাদ বিন খলিফা আল থানি বাংলাদেশে এসেছিলেন। প্রায় ২০ বছর পর বর্তমান আমির বাংলাদেশে এলেন। বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর, বন্ধুত্বপূর্ণ ও বহুমুখী উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, কাতার বঙ্গবন্ধুর সরকারের সময়ে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানকারী অন্যতম মুসলিম রাষ্ট্র। বিগত ২০২৩ সালের মার্চ ও মে মাসে দুইবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাতার সফরের মাধ্যমে উভয় দেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সুদৃঢ় অবস্থানে উপনীত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় কাতারের আমির বাংলাদেশ সফর করবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কাতারের আমিরের এই সফর বাংলাদেশ এবং কাতারের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে পরিগণিত হবে। প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশের সহযোগিতার সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হবে। কাতারের সঙ্গে বাকিতে তেল কেনার বিষয়ে কোনো আলোচনা হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, যেহেতু সৌদি আরবের সঙ্গে আমাদের রেফার্ড পেমেন্টে (এক বছরের বাকিতে) তেল কেনার চুক্তি রয়েছে, কাতারের আমিরের সফরে এ বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, কাতার চাইলে দেশের কোনো একটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে তাদের বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
আজ সন্ধ্যায় ঢাকা ছেড়ে যাবেন কাতারের আমির।





















