১০:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এবারও উপজেলা নির্বাচন ঘিরে সহিংসতার আশঙ্কা

◉ দলীয় কোন্দল-এলাকার আধিপত্য চরমে
◉ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে প্রস্তুত পুলিশ সদর দপ্তর
◉ বিশেষ নজরদারিতে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলো
◉ নিরাপত্তা নিশ্চিতে কঠোর নির্দেশনা ইসির

এবারও আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে। এবারের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক না থাকায় দলের তৃণমূল পর্যায়ের অনেকেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসেবে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। একই সঙ্গে জামায়াত-বিএনপি এবারও ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত নিলেও অনেকেই প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা শুরু করেছেন। প্রার্থীরা ভোটারদের আকৃষ্ট করতে দিচ্ছেন নানান প্রতিশ্রুতি। নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে গিয়ে অনেক প্রার্থীই বিভিন্নভাবে প্রতিপক্ষের রোষানলে পড়ছেন, হয়রানি ও হুমকি-ধামকি পাচ্ছেন। এরই মধ্যেই উপজেলা নির্বাচনকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে ক্ষমতাসীন প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপিদের ছত্রছায়ায় থাকা প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বী এক প্রার্থীকে জোরপূর্বক তুলে নেওয়া ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ উঠেছে। যার ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। এবারের উপজেলা নির্বাচন অবাধ-সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে কি না তা নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে নানান গুঞ্জন শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ বলছেন, সদ্য সমাপ্ত জাতীয় নির্বাচনের মতো আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপি-জামায়াত অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মী প্রার্থী হতে প্রচারণায় নেমেছে। অপরদিকে বিএনপি-জামায়াতের কিছু বিদ্রোহী নেতাকর্মীও মাঠে নামছে। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনে দ্বন্দ্ব-বিরোধ ও সহিংসতার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দলীয় প্রতীক না থাকায় এবারের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীর সংখ্যা বাড়বে কয়েকগুণ। এতে প্রচারণা চালাতে গিয়ে আধিপত্য বিস্তারে সংঘাত-সহিংসতা বাড়তে পারে। তবে ইসি সচিব বলছেন, এবারের নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও গ্রহণযোগ্যতা বেশি হবে গোয়েন্দা তথ্যানুযায়ী সহিংসতার কোনো আশঙ্কা নেই বলে। বরাবরের মতো এবারের উপজেলা নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী সব বিষয়কে মাথায় রেখেই মাঠ প্রশাসনকে প্রস্তুত থাকতে বিশেষ বার্তা দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। গতকাল মঙ্গলবার ইসিসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

 

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এবার চার ধাপে অনুষ্ঠিত হবে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। প্রথম দফায় ১৫০টি উপজেলার ভোট হবে আগামী ৮ মে। ২১ মে দ্বিতীয় ধাপে ১৬০টি উপজেলার ভোট হওয়ার কথা রয়েছে। তৃতীয় ধাপে ১১২টির ভোট ২৯ মে এবং চতুর্থ ধাপে ৫০টির ভোট হবে ৫ জুন। প্রথম ধাপের ১৫০ পরিষদে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে গতকাল। এর মধ্যে কোনো প্রার্থী না থাকায় গতকাল রাত ৯টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এককভাবে সেই দেলোয়ারসহ ২৬ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। গতকাল নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী প্রার্থীদের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেওয়া হয়। গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন প্রথম ধাপে নির্বাচনী প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার পরই প্রার্থীরা প্রচারণায় নেমেছেন।

 

 

 

জানা গেছে, আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রীদের সন্তান ও স্বজনদের ভোটের মাঠে নামিয়েছেন। তাদের অনেকে বলেছেন, দল আসলে কতটা কঠোর হবে, সেটা তারা বোঝার চেষ্টা করছেন। সম্প্রতি নোয়াখালীর সুবর্ণচরে স্থানীয় এমপি একরামুল করিম চৌধুরী তার ছেলেকে ভোট না দিলে উন্নয়নকাজ না করার হুমকি দিয়েছেন। নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় এমপি মোহাম্মদ আলী তার স্ত্রী ও ছেলে আশিক আলীকে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী করেছেন। নীলফামারীর ডিমলায় এমপি আফতাব উদ্দিন সরকারের চাচাতো ভাই আনোয়ারুল সরকার ও ভাতিজা ফেরদৌস পারভেজ উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। মাদারীপুর-২ আসনের এমপি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খানের বড় ছেলে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সদস্য আসিবুর রহমান খান এবং এমপির চাচাত ভাই পাভেলুর রহমান (শফিক) খান নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়া ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক নাটোরে লুৎফুল হাবিবের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষ প্রার্থীকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে। তৃণমূল পর্যায় থেকে এমন আরো অনেক অভিযোগ নজরে এসেছে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। এতে তিনি ক্ষুব্ধ হন। এ পরিপ্রেক্ষিতে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে ডেকে উপজেলা নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রীদের সন্তান ও স্বজনদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু কঠোর এ নির্দেশনা উপেক্ষা করেই অনেকেই এলাকার আধিপত্য বিস্তারে দলীয় কোন্দলের জেরে প্রার্থী হয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন।

 

 

আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, দলের তৃণমূল পর্যায়ে দ্বন্দ্ব, সংঘাত ও সহিংসতা বাড়ার আশঙ্কা করছেন খোদ দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী। তাই এমপি-মন্ত্রী ও তাদের স্বজনদের নিবৃত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তারা বলেন, এবারও বিএনপি-জামায়াত ভোট বর্জন করেছে। তবে তাদের কেউ কেউ বিদ্রোহী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেবেন। এ অবস্থায় এমপি-মন্ত্রীর স্বজনরা নির্বাচনে না থাকলে তারা প্রভাব খাটাতে পারবেন না। আর তারা প্রভাব খাটালে সংঘাতেরও আশঙ্কা রয়েছে। যা দেশে-বিদেশে সমালোচনার জন্ম দেবে। জাতীয় নির্বাচনের পরপরই এ ধরনের বদনাম নিতে চান না দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সুষ্ঠু নির্বাচন চান।

 

 

গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনে আন্তঃমন্ত্রণালয় অনুষ্ঠিত সভা শেষে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, গেল জাতীয় নির্বাচনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবারের উপজেলা নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে ইতোমধ্যেই ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের তালিকা করা হয়েছে। সেসব কেন্দ্রে বাড়তি নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনে এখন পর্যন্ত দেশের কোথাও সংঘাত-সহিংসতা বাড়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থার কোনো তথ্যও মেলেনি। তবে সবকিছুকে মাথায় রেখেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। এবারের নির্বাচনে অধিক সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হবে। উপজেলাভেদে দুই থেকে চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হবে।

 

এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, এমনিতেই নিরাপত্তা নিশ্চিতে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। তবে বরাবরের মতো এবারের উপজেলা নির্বাচনেও ইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নিরাপত্তা নিশ্চিতে যখন যা যা করা প্রয়োজন তাই করা হবে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে বিশেষ নজরদারির পাশাপাশি সহিংসতা এড়াতে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণে ইতোমধ্যেই মাঠ পর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সকল সংস্থাকে কঠোর দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

দীর্ঘ ১৭ বছর পর গুলশানের বাড়িতে তারেক রহমান

এবারও উপজেলা নির্বাচন ঘিরে সহিংসতার আশঙ্কা

আপডেট সময় : ০৪:৫৯:০৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

◉ দলীয় কোন্দল-এলাকার আধিপত্য চরমে
◉ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে প্রস্তুত পুলিশ সদর দপ্তর
◉ বিশেষ নজরদারিতে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলো
◉ নিরাপত্তা নিশ্চিতে কঠোর নির্দেশনা ইসির

এবারও আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে। এবারের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক না থাকায় দলের তৃণমূল পর্যায়ের অনেকেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসেবে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। একই সঙ্গে জামায়াত-বিএনপি এবারও ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত নিলেও অনেকেই প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা শুরু করেছেন। প্রার্থীরা ভোটারদের আকৃষ্ট করতে দিচ্ছেন নানান প্রতিশ্রুতি। নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে গিয়ে অনেক প্রার্থীই বিভিন্নভাবে প্রতিপক্ষের রোষানলে পড়ছেন, হয়রানি ও হুমকি-ধামকি পাচ্ছেন। এরই মধ্যেই উপজেলা নির্বাচনকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে ক্ষমতাসীন প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপিদের ছত্রছায়ায় থাকা প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বী এক প্রার্থীকে জোরপূর্বক তুলে নেওয়া ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ উঠেছে। যার ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। এবারের উপজেলা নির্বাচন অবাধ-সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে কি না তা নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে নানান গুঞ্জন শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ বলছেন, সদ্য সমাপ্ত জাতীয় নির্বাচনের মতো আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপি-জামায়াত অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মী প্রার্থী হতে প্রচারণায় নেমেছে। অপরদিকে বিএনপি-জামায়াতের কিছু বিদ্রোহী নেতাকর্মীও মাঠে নামছে। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনে দ্বন্দ্ব-বিরোধ ও সহিংসতার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দলীয় প্রতীক না থাকায় এবারের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীর সংখ্যা বাড়বে কয়েকগুণ। এতে প্রচারণা চালাতে গিয়ে আধিপত্য বিস্তারে সংঘাত-সহিংসতা বাড়তে পারে। তবে ইসি সচিব বলছেন, এবারের নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও গ্রহণযোগ্যতা বেশি হবে গোয়েন্দা তথ্যানুযায়ী সহিংসতার কোনো আশঙ্কা নেই বলে। বরাবরের মতো এবারের উপজেলা নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী সব বিষয়কে মাথায় রেখেই মাঠ প্রশাসনকে প্রস্তুত থাকতে বিশেষ বার্তা দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। গতকাল মঙ্গলবার ইসিসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

 

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এবার চার ধাপে অনুষ্ঠিত হবে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। প্রথম দফায় ১৫০টি উপজেলার ভোট হবে আগামী ৮ মে। ২১ মে দ্বিতীয় ধাপে ১৬০টি উপজেলার ভোট হওয়ার কথা রয়েছে। তৃতীয় ধাপে ১১২টির ভোট ২৯ মে এবং চতুর্থ ধাপে ৫০টির ভোট হবে ৫ জুন। প্রথম ধাপের ১৫০ পরিষদে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে গতকাল। এর মধ্যে কোনো প্রার্থী না থাকায় গতকাল রাত ৯টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এককভাবে সেই দেলোয়ারসহ ২৬ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। গতকাল নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী প্রার্থীদের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেওয়া হয়। গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন প্রথম ধাপে নির্বাচনী প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার পরই প্রার্থীরা প্রচারণায় নেমেছেন।

 

 

 

জানা গেছে, আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রীদের সন্তান ও স্বজনদের ভোটের মাঠে নামিয়েছেন। তাদের অনেকে বলেছেন, দল আসলে কতটা কঠোর হবে, সেটা তারা বোঝার চেষ্টা করছেন। সম্প্রতি নোয়াখালীর সুবর্ণচরে স্থানীয় এমপি একরামুল করিম চৌধুরী তার ছেলেকে ভোট না দিলে উন্নয়নকাজ না করার হুমকি দিয়েছেন। নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় এমপি মোহাম্মদ আলী তার স্ত্রী ও ছেলে আশিক আলীকে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী করেছেন। নীলফামারীর ডিমলায় এমপি আফতাব উদ্দিন সরকারের চাচাতো ভাই আনোয়ারুল সরকার ও ভাতিজা ফেরদৌস পারভেজ উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। মাদারীপুর-২ আসনের এমপি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খানের বড় ছেলে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সদস্য আসিবুর রহমান খান এবং এমপির চাচাত ভাই পাভেলুর রহমান (শফিক) খান নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়া ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক নাটোরে লুৎফুল হাবিবের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষ প্রার্থীকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে। তৃণমূল পর্যায় থেকে এমন আরো অনেক অভিযোগ নজরে এসেছে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। এতে তিনি ক্ষুব্ধ হন। এ পরিপ্রেক্ষিতে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে ডেকে উপজেলা নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রীদের সন্তান ও স্বজনদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু কঠোর এ নির্দেশনা উপেক্ষা করেই অনেকেই এলাকার আধিপত্য বিস্তারে দলীয় কোন্দলের জেরে প্রার্থী হয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন।

 

 

আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, দলের তৃণমূল পর্যায়ে দ্বন্দ্ব, সংঘাত ও সহিংসতা বাড়ার আশঙ্কা করছেন খোদ দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী। তাই এমপি-মন্ত্রী ও তাদের স্বজনদের নিবৃত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তারা বলেন, এবারও বিএনপি-জামায়াত ভোট বর্জন করেছে। তবে তাদের কেউ কেউ বিদ্রোহী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেবেন। এ অবস্থায় এমপি-মন্ত্রীর স্বজনরা নির্বাচনে না থাকলে তারা প্রভাব খাটাতে পারবেন না। আর তারা প্রভাব খাটালে সংঘাতেরও আশঙ্কা রয়েছে। যা দেশে-বিদেশে সমালোচনার জন্ম দেবে। জাতীয় নির্বাচনের পরপরই এ ধরনের বদনাম নিতে চান না দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সুষ্ঠু নির্বাচন চান।

 

 

গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনে আন্তঃমন্ত্রণালয় অনুষ্ঠিত সভা শেষে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, গেল জাতীয় নির্বাচনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবারের উপজেলা নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে ইতোমধ্যেই ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের তালিকা করা হয়েছে। সেসব কেন্দ্রে বাড়তি নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনে এখন পর্যন্ত দেশের কোথাও সংঘাত-সহিংসতা বাড়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থার কোনো তথ্যও মেলেনি। তবে সবকিছুকে মাথায় রেখেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। এবারের নির্বাচনে অধিক সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হবে। উপজেলাভেদে দুই থেকে চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হবে।

 

এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, এমনিতেই নিরাপত্তা নিশ্চিতে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। তবে বরাবরের মতো এবারের উপজেলা নির্বাচনেও ইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নিরাপত্তা নিশ্চিতে যখন যা যা করা প্রয়োজন তাই করা হবে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে বিশেষ নজরদারির পাশাপাশি সহিংসতা এড়াতে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণে ইতোমধ্যেই মাঠ পর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সকল সংস্থাকে কঠোর দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।