০৮:০৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুকুরের খামার করে সফল হয়েছে সোহাগ

বিদেশি কুকুরে খামার গড়ে তুলেছেন জাহিদ ইসলাম সোহাগ নামে এক যুবক। শখ করে একটি কুকুর পালন করতে গিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন বড় ধরনের একটি বাণিজ্যিক কুকুরের খামার। খামার থেকে প্রতি বছর আয় করছে ১৫ লক্ষাধিক টাকা। কুকুর প্রেমী খামারের মালিক জাহিদ ইসলাম সোহাগের বাড়ী দিনাজপুর শহরের বালুবাড়ি এলাকায়। দিনাজপুর শহরের উত্তর নয়নপুরে প্রতিষ্ঠিত “ডগ হাউজ” নামে গড়ে তোলা খামারে রয়েছে ১৩ প্রজাতির ছোট বড় প্রায় ৭০টি কুকুর। প্রায় ৯ বছর আগে শখের বশে জাহিদ ইসলাম সোহাগ প্রথমে একটি ও পরে দুটি বিদেশি কুকুর নিয়ে শুরু করেন খামার। অনলাইন মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে তিনি শুরু করেন কুকুর বিক্রয়। অধিক লাভে তিনি শুরু করেন বিভিন্ন জাতের বিদেশি কুকুর সংগ্রহ ও প্রজনন প্রক্রিয়া। দেশ-বিদেশের কুকুর প্রেমীরা ব্যতিক্রমী এ খামার থেকে ক্রয় করে নিয়ে যান পছন্দের কুকুর। খামারে কুকুরগুলোর পরিচর্যায় থাকা সাকিব বলেন, এ খামারের কুকুরগুলোর নিয়মিত পরিচর্যা করতে হয়। প্রতিদিন গোসল ও খাওয়া করানোর পাশাপাশি নানা ধননের যত্ন নিতে হয়। কুকুরগুলো খুবই বন্ধু সুলভ। এদের সাথে দিনে ৬ বার খাঁচা থেকে বের করতে হয়। ডগ হাউজ থেকে ¯িপস জাতের কুকুর ক্রয করা শুভ নামে এক কুকুর প্রেমী বলেন, ¯িপস জাতের কুকুরটি অ্যাডভান্সড লেবেলের ডগ। খুবই মিশুক ও গার্ড ডগ। আমার পরিবার এ কুকুর পেয়ে আনন্দিত। সাথে বাড়ি ও গোডাউন সুরক্ষিত বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি। দিনাজপুরের প্রথম ডগ হাউজের মালিক জাহিদ ইসলাম সোহাগ বলেন, শখের বশে কয়েক বছর আগে ড্যানী নামে একটি কুকুর আমার বন্ধুর কাছ থেকে ক্রয় করা হয়। এর কিছুদিন পর জার্মান শেফার্ড জাতের আরও একটি কুকুর ক্রয় করে নিয়ে আসি। পরবর্তীতে লাসা জাতের আরও দুটি কুকুর ক্রয় করা হয়। তাদের পরিচর্যা করলে সেই সব কুকুর ৭টি বাচ্চা জন্ম দেয়। বাচ্চাগুলো দেখে প্রতিবেশীরা ক্রয় করা আগ্রহ দেখায়।

এতে বাচ্চাগুলোর কয়েকটি বিক্রয় করে ভালো দাম পাওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে কুকুর পোষা শুরু হয়। এরপর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সাফল্য পেতে থাকি। দিনাজপুর শহরের উত্তর নয়নপুরে ডগ হাউজ নামে একটি কুকুরের খামার গড়ে তুলি। আমার ইউটিউব চ্যানেল, ফেসবুকের মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে এ ডগ হাউজ থেকে দেশ-বিদেশের ক্রেতারা বিভিন্ন জাতের কুকুর ক্রয় করে থাকে। বিশেষ করে সৌদি আরব, ভারত, নেপাল ও আমেরিকা থেকেও কল আসে। যারা দেশে থাকে তাদের বাসা-বাড়ি বা খামারের জন্য আমার খামার থেকে কুকুর নিয়ে যায়। খামারে বর্তমানে ১৩ প্রজাতির ছোট বড় মিলে রয়েছে ৬৫ থেকে ৭০টি বিদেশি কুকুর। ভালো প্রজাতির কুকুরের মধ্যে রয়েছে ব্লাক শেফার্ড, শিব জুবরী, কুল শেফার্ডসহ আরও কিছু প্রজাতি।

গার্ড ডগ হিসেবে জার্মান শেফার্ড বেশি বিক্রয় হয়। বেশির ভাগ ক্রেতা আসে ডিফেন্স থেকে। বিশেষ করে আর্মি, বিজিবি, র‌্যাব তাদের প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহারের জন্য জার্মান শেফার্ড জাতের কুকুরগুলি ক্রয় করে থাকে। আর বাসায় পোষার জন্য রয়েছে লাসা, লাসা অফসো, শিব জুবরী, লাসা ¯িপস। সোহাগ বলেন, কুকুর পালন হবে না, তাদের পরিচর্যার কিছু বিষয় আছে। খামারে কুকুরের পরিচর্যার জন্য তিনজন শ্রমক নিয়োগ করা হয়েছে। কুকুরদের তিন বেলা খাবার দেয়া হয়। সকালে ডগ ফুড অথবা ডিম, দুপুরে ও রাতে মাংস দিয়ে ভাত দেয়া হয়। তবে সপ্তাহে একদিন পাঙ্গাশ মাছ দেয়া হয় কুকুরদের।

একটি কুকুরে পিছনে বছরে খরচ হয় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। আর খামার থেকে বর্তমানে আয় হয় বছরে গড়ে ১৫ লক্ষ টাকা। বেকার যুবকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বেকার যুবকরা কুকুরের খামার করে ভালো আয় করতে পারেন। পরবর্তীতে আর চাকরির পিছনে ছুটতে হবে না। এতে শুরুতেই প্রতি বছর দুই থেকে আড়াই লক্ষ টাকা আয় করা সম্ভব। প্রথমে একটি বা দুটি কুকুর দিয়ে শুরু করতে পারেন। একটি খামার থেকে একই জাতের দুটি কুকুর ছানা নেয়া যাবে না। ভিন্ন ভিন্ন খামার থেকে বাচ্চা সংগ্রহ করতে হবে। নইলে এদের থেকে যে বাচ্চা গুলো হবে তারা অধিকাংশ সময় অসুস্থ থাকবে। এ ডগ হাউজে প্রতিদিন দর্শনার্থীরা আসে কুকুর দেখতে। অনেকে ৫০ টাকা দিয়ে টিকেট কেটে প্রবেশ করেন আবার কেউ নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী খাবার নিয়ে আসে। যারা আসে অনেকেই কুকুর ক্রয় করার উদ্দেশ্যেই আসে বলে জানান খামারে মালিক সোহাগ। দিনাজপুর জেলা ভেটেরিনারি কর্মকর্তা ডা. আশিকা আকবর তৃষা বলেন, দিনাজপুর শহরের নয়নপুরে একটি কুকুরের খামার হয়েছে। এটি ভালো উদ্যোগ। ইতিপূর্বে খামারটি পরিদর্শন করেছি। সেখানে বেশকিছু প্রজাতির কুকুর রয়েছে বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপনায়। যারা কুকুর ক্রয় করবেন তাদের অবশ্যই কুকুরের একটি প্রাণঘাতী রোগ র‌্যাবিশ সম্বন্ধে ধারণা নেয়া দরকার। এছাড়াও কুকুরের মধ্যে কৃমির সমস্যা আছে। বছরে চার মাস পর পর কৃমিনাশক ঔষধ খাওয়ানো দরকার। এর পাশাপাশি র‌্যাবিশ এর ভ্যাকসিন দেওয়া অতি জরুরি। কুকুর লালন পালনে রোগ না ছড়ানোর পরামর্শসহ সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

কুকুরের খামার করে সফল হয়েছে সোহাগ

আপডেট সময় : ০৫:৩৬:৪৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪

বিদেশি কুকুরে খামার গড়ে তুলেছেন জাহিদ ইসলাম সোহাগ নামে এক যুবক। শখ করে একটি কুকুর পালন করতে গিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন বড় ধরনের একটি বাণিজ্যিক কুকুরের খামার। খামার থেকে প্রতি বছর আয় করছে ১৫ লক্ষাধিক টাকা। কুকুর প্রেমী খামারের মালিক জাহিদ ইসলাম সোহাগের বাড়ী দিনাজপুর শহরের বালুবাড়ি এলাকায়। দিনাজপুর শহরের উত্তর নয়নপুরে প্রতিষ্ঠিত “ডগ হাউজ” নামে গড়ে তোলা খামারে রয়েছে ১৩ প্রজাতির ছোট বড় প্রায় ৭০টি কুকুর। প্রায় ৯ বছর আগে শখের বশে জাহিদ ইসলাম সোহাগ প্রথমে একটি ও পরে দুটি বিদেশি কুকুর নিয়ে শুরু করেন খামার। অনলাইন মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে তিনি শুরু করেন কুকুর বিক্রয়। অধিক লাভে তিনি শুরু করেন বিভিন্ন জাতের বিদেশি কুকুর সংগ্রহ ও প্রজনন প্রক্রিয়া। দেশ-বিদেশের কুকুর প্রেমীরা ব্যতিক্রমী এ খামার থেকে ক্রয় করে নিয়ে যান পছন্দের কুকুর। খামারে কুকুরগুলোর পরিচর্যায় থাকা সাকিব বলেন, এ খামারের কুকুরগুলোর নিয়মিত পরিচর্যা করতে হয়। প্রতিদিন গোসল ও খাওয়া করানোর পাশাপাশি নানা ধননের যত্ন নিতে হয়। কুকুরগুলো খুবই বন্ধু সুলভ। এদের সাথে দিনে ৬ বার খাঁচা থেকে বের করতে হয়। ডগ হাউজ থেকে ¯িপস জাতের কুকুর ক্রয করা শুভ নামে এক কুকুর প্রেমী বলেন, ¯িপস জাতের কুকুরটি অ্যাডভান্সড লেবেলের ডগ। খুবই মিশুক ও গার্ড ডগ। আমার পরিবার এ কুকুর পেয়ে আনন্দিত। সাথে বাড়ি ও গোডাউন সুরক্ষিত বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি। দিনাজপুরের প্রথম ডগ হাউজের মালিক জাহিদ ইসলাম সোহাগ বলেন, শখের বশে কয়েক বছর আগে ড্যানী নামে একটি কুকুর আমার বন্ধুর কাছ থেকে ক্রয় করা হয়। এর কিছুদিন পর জার্মান শেফার্ড জাতের আরও একটি কুকুর ক্রয় করে নিয়ে আসি। পরবর্তীতে লাসা জাতের আরও দুটি কুকুর ক্রয় করা হয়। তাদের পরিচর্যা করলে সেই সব কুকুর ৭টি বাচ্চা জন্ম দেয়। বাচ্চাগুলো দেখে প্রতিবেশীরা ক্রয় করা আগ্রহ দেখায়।

এতে বাচ্চাগুলোর কয়েকটি বিক্রয় করে ভালো দাম পাওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে কুকুর পোষা শুরু হয়। এরপর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সাফল্য পেতে থাকি। দিনাজপুর শহরের উত্তর নয়নপুরে ডগ হাউজ নামে একটি কুকুরের খামার গড়ে তুলি। আমার ইউটিউব চ্যানেল, ফেসবুকের মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে এ ডগ হাউজ থেকে দেশ-বিদেশের ক্রেতারা বিভিন্ন জাতের কুকুর ক্রয় করে থাকে। বিশেষ করে সৌদি আরব, ভারত, নেপাল ও আমেরিকা থেকেও কল আসে। যারা দেশে থাকে তাদের বাসা-বাড়ি বা খামারের জন্য আমার খামার থেকে কুকুর নিয়ে যায়। খামারে বর্তমানে ১৩ প্রজাতির ছোট বড় মিলে রয়েছে ৬৫ থেকে ৭০টি বিদেশি কুকুর। ভালো প্রজাতির কুকুরের মধ্যে রয়েছে ব্লাক শেফার্ড, শিব জুবরী, কুল শেফার্ডসহ আরও কিছু প্রজাতি।

গার্ড ডগ হিসেবে জার্মান শেফার্ড বেশি বিক্রয় হয়। বেশির ভাগ ক্রেতা আসে ডিফেন্স থেকে। বিশেষ করে আর্মি, বিজিবি, র‌্যাব তাদের প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহারের জন্য জার্মান শেফার্ড জাতের কুকুরগুলি ক্রয় করে থাকে। আর বাসায় পোষার জন্য রয়েছে লাসা, লাসা অফসো, শিব জুবরী, লাসা ¯িপস। সোহাগ বলেন, কুকুর পালন হবে না, তাদের পরিচর্যার কিছু বিষয় আছে। খামারে কুকুরের পরিচর্যার জন্য তিনজন শ্রমক নিয়োগ করা হয়েছে। কুকুরদের তিন বেলা খাবার দেয়া হয়। সকালে ডগ ফুড অথবা ডিম, দুপুরে ও রাতে মাংস দিয়ে ভাত দেয়া হয়। তবে সপ্তাহে একদিন পাঙ্গাশ মাছ দেয়া হয় কুকুরদের।

একটি কুকুরে পিছনে বছরে খরচ হয় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। আর খামার থেকে বর্তমানে আয় হয় বছরে গড়ে ১৫ লক্ষ টাকা। বেকার যুবকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বেকার যুবকরা কুকুরের খামার করে ভালো আয় করতে পারেন। পরবর্তীতে আর চাকরির পিছনে ছুটতে হবে না। এতে শুরুতেই প্রতি বছর দুই থেকে আড়াই লক্ষ টাকা আয় করা সম্ভব। প্রথমে একটি বা দুটি কুকুর দিয়ে শুরু করতে পারেন। একটি খামার থেকে একই জাতের দুটি কুকুর ছানা নেয়া যাবে না। ভিন্ন ভিন্ন খামার থেকে বাচ্চা সংগ্রহ করতে হবে। নইলে এদের থেকে যে বাচ্চা গুলো হবে তারা অধিকাংশ সময় অসুস্থ থাকবে। এ ডগ হাউজে প্রতিদিন দর্শনার্থীরা আসে কুকুর দেখতে। অনেকে ৫০ টাকা দিয়ে টিকেট কেটে প্রবেশ করেন আবার কেউ নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী খাবার নিয়ে আসে। যারা আসে অনেকেই কুকুর ক্রয় করার উদ্দেশ্যেই আসে বলে জানান খামারে মালিক সোহাগ। দিনাজপুর জেলা ভেটেরিনারি কর্মকর্তা ডা. আশিকা আকবর তৃষা বলেন, দিনাজপুর শহরের নয়নপুরে একটি কুকুরের খামার হয়েছে। এটি ভালো উদ্যোগ। ইতিপূর্বে খামারটি পরিদর্শন করেছি। সেখানে বেশকিছু প্রজাতির কুকুর রয়েছে বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপনায়। যারা কুকুর ক্রয় করবেন তাদের অবশ্যই কুকুরের একটি প্রাণঘাতী রোগ র‌্যাবিশ সম্বন্ধে ধারণা নেয়া দরকার। এছাড়াও কুকুরের মধ্যে কৃমির সমস্যা আছে। বছরে চার মাস পর পর কৃমিনাশক ঔষধ খাওয়ানো দরকার। এর পাশাপাশি র‌্যাবিশ এর ভ্যাকসিন দেওয়া অতি জরুরি। কুকুর লালন পালনে রোগ না ছড়ানোর পরামর্শসহ সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।