০৮:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

লোকসভা নির্বাচন পশ্চিমবঙ্গে বিচ্ছিন্ন সহিংসতা, উত্তপ্ত মুর্শিদাবাদ

◉ ভুয়া ভোটার ধরে পুলিশে দিলেন সেলিম
◉ লোকসভা নির্বাচনে ভোট দিলেন মোদি
◉ আমি মুসলিম ও ইসলামবিরোধী নই : মোদি

ভারতের লোকসভার তৃতীয় দফার ভোটগ্রহণ হয়েছে গতকাল। এই পর্বে লোকসভার ৯৩ আসনে ভোট হচ্ছে। এর মধ্যে গোটা গুজরাট রাজ্য রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের চার আসনে ভোট হয়েছে। মালদা উত্তর, মালদা দক্ষিণ, মুর্শিদাবাদ ও জঙ্গিপুর- এই চার আসনে সকালের দিকে দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে। গতকাল সকাল ভোট শুরু হতেই মুর্শিদাবাদে কংগ্রেস কর্মীর বাড়িতে ‘বোমা-গুলি’র ঘটনা ঘটেছে।

 

 

এদিন সকালে গুজরাটের আহমেদাবাদ শহরের একটি ভোটকেন্দ্রে লোকসভা নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভোটকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে তিনি অমোচনীয় কালি লাগানো হাতের আঙুল তুলে ধরেন। এ সময় তার সমর্থকেরা উল্লাস প্রকাশ করেন। ভোট দেওয়ার পর এক্সে একটি পোস্টে মোদি লিখেছেন, ‘২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভোট দিয়েছি।’ সবাইকে ভোট দিতে অনুরোধ জানান মোদি। ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে ভারতের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য আহ্বান জানান তিনি।

 

 

একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে দেশের সংখ্যালঘুদের উন্নয়নের বিজেপি সরকার কোনও ভেদাভেদ করে না বলে জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সাক্ষাৎকারে মোদি বলেন, আমি ইসলাম ও মুসলিমবিরোধী নই। বিরোধীরা আমার সম্পর্কে অপপ্রচার চালাচ্ছে। মুসলিম সম্প্রদায়কে আমি আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা আত্মসমীক্ষা করুন এবং উপলব্ধি করার চেষ্টা করুন কারা আপনাদের ভাল চায়। দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী নেহরুর আমল থেকেই নিজেদের মুসলিম মিত্র বলে তুলে ধরে বাকিদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করে আসছে কংগ্রেস। তবে মুসলিম মা বোনেরা এটি উপলব্ধি করেছেন যখন আমি তিন তালাক বিরোধী আইন করে তাদের ভোগান্তি থেকে মুক্তি দিয়েছি। তারা ভালোভাবেই বুঝেছেন কে তাদের ভালো চান। দেশ এগোচ্ছে। আপনারা যদি পিছিয়ে থাকেন, তবে তার কারণ অনুসন্ধান করুন। কংগ্রেসের আমল থেকেই মুসলিমদের প্রতি সবচেয়ে বেশি অবিচারের ঘটনা ঘটেছে। মুসলিম ভাই-বোনেরা জানেন আমি একজন সাচ্চা ব্যক্তি। কোনও ভেদাভেদ আমি করিনি। আমি কখনও বলিনি মুসলিমরা সংরক্ষণের সুবিধা পাবেন না। বরং আমি বলেছি, ধর্মের ভিত্তিতে তা দেওয়া যায় না। মুসলিম, খ্রিস্টান, হিন্দু, পার্সি নির্বিশেষে সব ধর্মের গরিব মানুষ সংরক্ষণের সুবিধা প্রাপ্য। মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষরাও এখন বুঝে গেছেন, এই ভোটব্যাংক রাজনীতিবিদদের থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়।

 

 

মুর্শিদাবাদে হরিহরপাড়ায় আরেক কংগ্রেস নেতার বাড়িতে ‘বোমা’ হামলা, রানিনগরে সিপিএম এজেন্টকে ‘মারধর’, সুতিতে তৃণমূল নেতা-বিজেপি প্রার্থীর ধাক্কাধাক্কি, খড়গ্রামে বুথের ১০০ মিটারের মধ্যে অবৈধ জমায়েত, ইংরেজ বাজার বুথ থেকে বিজেপি এজেন্টকে বের করে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। সব মিলিয়ে প্রথম দুই ঘণ্টায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে ১৮২টি। জানা যায়, মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ায় অঞ্চল কংগ্রেস সভাপতি বাড়িতে ‘বোমা’ বিস্ফোরণের অভিযোগ ওঠে তৃণমূল আশ্রিত দুর্বৃত্তের বিরুদ্ধে। কংগ্রেসের অভিযোগ, ভোটারদের ভয় দেখানোর উদ্দেশে কংগ্রেসের অঞ্চল সভাপতির বাড়িতে বোমা হামলা চালানো হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে হরিহরপাড়া থানার পুলিশ।

 

 

মুর্শিদাবাদের বিজেপির প্রার্থী গৌরী শঙ্কর ঘোষ অভিযোগ করেছেন, আজিমগঞ্জের বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে তৃণমূল ভুয়া প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, সকালে রানীনগর, ডোমকল ও হরিহর পাড়া ভোটকেন্দ্রে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করতে বোমা ফাটিয়েছেন তৃণমূলের সমর্থকেরা। কংগ্রেস নেতার বাড়িতেও বোমা হামলা হয়েছে। গুঠিয়া ভোটকেন্দ্রে সিপিএম এজেন্টকে মারধর করা হয়। মালদহের হাবিবপুর এলাকার একটি ভোটকেন্দ্রের ভোটার এলাকায় উন্নয়ন না হওয়ায় ভোট বর্জন করেছেন ভোটাররা। রতুয়ায় কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দিয়েছেন তৃণমূলের সমর্থকরা। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, মক পোলের সময় দুইজন এজেন্ট থাকতে চেয়েছিলেন। নিয়ম মেনে একজনকে বের করে দেন সেক্টর অফিসার।

 

 

পশ্চিমবঙ্গে বেলা ১১টা পর্যন্ত ভোটদানের হার ছিল মালদহ উত্তর ৩২ শতাংশ, মালদহ দক্ষিণ ৩৩ শতাংশ, মুর্শিদাবাদ ৩৩ শতাংশ ও জঙ্গিপুরে ৩৩ শতাংশ। তবে এই চার আসনের মধ্যে সবার দৃষ্টি মুর্শিদাবাদ আসনের দিকে। এই আসনে লড়ছেন কংগ্রেস-বাম দলের প্রার্থী ও সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মুহাম্মদ সেলিম। কংগ্রেস-সিপিএমের অভিযোগ, তৃণমূল এই চার আসনে কংগ্রেস-বাম দলের প্রার্থীদের ভোটদানে বাধা দিচ্ছে। কারণ, তৃণমূল মনে কর, এই চার আসনে কংগ্রেস-বাম জোট যত বেশি ভোট পাবে, তত ক্ষতি হবে তৃণমূল প্রার্থীদের। কংগ্রেস-সিপিএম জোটের অভিযোগ, মুর্শিদাবাদ আসনে সেলিমকে ঠেকাতে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে বাধা দিচ্ছেন তৃণমূল সমর্থকরা। বের করে দিচ্ছেন বাম দলের পোলিং এজেন্টদের। ভোটকেন্দ্রের বাইরে সন্ত্রাস সৃষ্টি করা হচ্ছে ও বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে। এরই মধ্যে সেলিম মুর্শিদাবাদের একটি ভোটকেন্দ্রে ঢুকে এক ভুয়া ভোটারকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেন।

জনপ্রিয় সংবাদ

বিচার না হওয়া পর্যন্ত, আমরা রাজপথ ছাড়ব না: জুমা

লোকসভা নির্বাচন পশ্চিমবঙ্গে বিচ্ছিন্ন সহিংসতা, উত্তপ্ত মুর্শিদাবাদ

আপডেট সময় : ০৭:৪২:০১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ মে ২০২৪

◉ ভুয়া ভোটার ধরে পুলিশে দিলেন সেলিম
◉ লোকসভা নির্বাচনে ভোট দিলেন মোদি
◉ আমি মুসলিম ও ইসলামবিরোধী নই : মোদি

ভারতের লোকসভার তৃতীয় দফার ভোটগ্রহণ হয়েছে গতকাল। এই পর্বে লোকসভার ৯৩ আসনে ভোট হচ্ছে। এর মধ্যে গোটা গুজরাট রাজ্য রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের চার আসনে ভোট হয়েছে। মালদা উত্তর, মালদা দক্ষিণ, মুর্শিদাবাদ ও জঙ্গিপুর- এই চার আসনে সকালের দিকে দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে। গতকাল সকাল ভোট শুরু হতেই মুর্শিদাবাদে কংগ্রেস কর্মীর বাড়িতে ‘বোমা-গুলি’র ঘটনা ঘটেছে।

 

 

এদিন সকালে গুজরাটের আহমেদাবাদ শহরের একটি ভোটকেন্দ্রে লোকসভা নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভোটকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে তিনি অমোচনীয় কালি লাগানো হাতের আঙুল তুলে ধরেন। এ সময় তার সমর্থকেরা উল্লাস প্রকাশ করেন। ভোট দেওয়ার পর এক্সে একটি পোস্টে মোদি লিখেছেন, ‘২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভোট দিয়েছি।’ সবাইকে ভোট দিতে অনুরোধ জানান মোদি। ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে ভারতের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য আহ্বান জানান তিনি।

 

 

একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে দেশের সংখ্যালঘুদের উন্নয়নের বিজেপি সরকার কোনও ভেদাভেদ করে না বলে জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সাক্ষাৎকারে মোদি বলেন, আমি ইসলাম ও মুসলিমবিরোধী নই। বিরোধীরা আমার সম্পর্কে অপপ্রচার চালাচ্ছে। মুসলিম সম্প্রদায়কে আমি আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা আত্মসমীক্ষা করুন এবং উপলব্ধি করার চেষ্টা করুন কারা আপনাদের ভাল চায়। দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী নেহরুর আমল থেকেই নিজেদের মুসলিম মিত্র বলে তুলে ধরে বাকিদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করে আসছে কংগ্রেস। তবে মুসলিম মা বোনেরা এটি উপলব্ধি করেছেন যখন আমি তিন তালাক বিরোধী আইন করে তাদের ভোগান্তি থেকে মুক্তি দিয়েছি। তারা ভালোভাবেই বুঝেছেন কে তাদের ভালো চান। দেশ এগোচ্ছে। আপনারা যদি পিছিয়ে থাকেন, তবে তার কারণ অনুসন্ধান করুন। কংগ্রেসের আমল থেকেই মুসলিমদের প্রতি সবচেয়ে বেশি অবিচারের ঘটনা ঘটেছে। মুসলিম ভাই-বোনেরা জানেন আমি একজন সাচ্চা ব্যক্তি। কোনও ভেদাভেদ আমি করিনি। আমি কখনও বলিনি মুসলিমরা সংরক্ষণের সুবিধা পাবেন না। বরং আমি বলেছি, ধর্মের ভিত্তিতে তা দেওয়া যায় না। মুসলিম, খ্রিস্টান, হিন্দু, পার্সি নির্বিশেষে সব ধর্মের গরিব মানুষ সংরক্ষণের সুবিধা প্রাপ্য। মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষরাও এখন বুঝে গেছেন, এই ভোটব্যাংক রাজনীতিবিদদের থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়।

 

 

মুর্শিদাবাদে হরিহরপাড়ায় আরেক কংগ্রেস নেতার বাড়িতে ‘বোমা’ হামলা, রানিনগরে সিপিএম এজেন্টকে ‘মারধর’, সুতিতে তৃণমূল নেতা-বিজেপি প্রার্থীর ধাক্কাধাক্কি, খড়গ্রামে বুথের ১০০ মিটারের মধ্যে অবৈধ জমায়েত, ইংরেজ বাজার বুথ থেকে বিজেপি এজেন্টকে বের করে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। সব মিলিয়ে প্রথম দুই ঘণ্টায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে ১৮২টি। জানা যায়, মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ায় অঞ্চল কংগ্রেস সভাপতি বাড়িতে ‘বোমা’ বিস্ফোরণের অভিযোগ ওঠে তৃণমূল আশ্রিত দুর্বৃত্তের বিরুদ্ধে। কংগ্রেসের অভিযোগ, ভোটারদের ভয় দেখানোর উদ্দেশে কংগ্রেসের অঞ্চল সভাপতির বাড়িতে বোমা হামলা চালানো হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে হরিহরপাড়া থানার পুলিশ।

 

 

মুর্শিদাবাদের বিজেপির প্রার্থী গৌরী শঙ্কর ঘোষ অভিযোগ করেছেন, আজিমগঞ্জের বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে তৃণমূল ভুয়া প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, সকালে রানীনগর, ডোমকল ও হরিহর পাড়া ভোটকেন্দ্রে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করতে বোমা ফাটিয়েছেন তৃণমূলের সমর্থকেরা। কংগ্রেস নেতার বাড়িতেও বোমা হামলা হয়েছে। গুঠিয়া ভোটকেন্দ্রে সিপিএম এজেন্টকে মারধর করা হয়। মালদহের হাবিবপুর এলাকার একটি ভোটকেন্দ্রের ভোটার এলাকায় উন্নয়ন না হওয়ায় ভোট বর্জন করেছেন ভোটাররা। রতুয়ায় কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দিয়েছেন তৃণমূলের সমর্থকরা। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, মক পোলের সময় দুইজন এজেন্ট থাকতে চেয়েছিলেন। নিয়ম মেনে একজনকে বের করে দেন সেক্টর অফিসার।

 

 

পশ্চিমবঙ্গে বেলা ১১টা পর্যন্ত ভোটদানের হার ছিল মালদহ উত্তর ৩২ শতাংশ, মালদহ দক্ষিণ ৩৩ শতাংশ, মুর্শিদাবাদ ৩৩ শতাংশ ও জঙ্গিপুরে ৩৩ শতাংশ। তবে এই চার আসনের মধ্যে সবার দৃষ্টি মুর্শিদাবাদ আসনের দিকে। এই আসনে লড়ছেন কংগ্রেস-বাম দলের প্রার্থী ও সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মুহাম্মদ সেলিম। কংগ্রেস-সিপিএমের অভিযোগ, তৃণমূল এই চার আসনে কংগ্রেস-বাম দলের প্রার্থীদের ভোটদানে বাধা দিচ্ছে। কারণ, তৃণমূল মনে কর, এই চার আসনে কংগ্রেস-বাম জোট যত বেশি ভোট পাবে, তত ক্ষতি হবে তৃণমূল প্রার্থীদের। কংগ্রেস-সিপিএম জোটের অভিযোগ, মুর্শিদাবাদ আসনে সেলিমকে ঠেকাতে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে বাধা দিচ্ছেন তৃণমূল সমর্থকরা। বের করে দিচ্ছেন বাম দলের পোলিং এজেন্টদের। ভোটকেন্দ্রের বাইরে সন্ত্রাস সৃষ্টি করা হচ্ছে ও বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে। এরই মধ্যে সেলিম মুর্শিদাবাদের একটি ভোটকেন্দ্রে ঢুকে এক ভুয়া ভোটারকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেন।