➤ইসরায়েলি হামলায় এক পরিবারের ৭ জন নিহত
➤যুদ্ধবিরতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে দুষছে ইসরায়েল
➤ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিল বাহামাস
➤এবার হতে পারে যুদ্ধবিরতি!
গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মেনে নিতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর প্রতি আহ্বান জানিয়ে ইসরায়েলজুড়ে বিক্ষোভ করেছেন লাখো মানুষ। গত মঙ্গলবার ইসরায়েলের অন্যতম বড় শহর তেল আবিবে প্রতিরক্ষা সদর দপ্তরের সামনে সমবেত হয় কয়েক হাজার মানুষ। এছাড়া, জেরুসালেমে অবস্থিত নেতানিয়াহুর বাসভবনের দিকেও পদযাত্রা করে অন্তত ১০০ বিক্ষোভকারী। এ সময় তারা নেতানিয়াহুকে ইঙ্গিত করে স্লোগান দেয়, ‘তোমার হাতে রক্ত লেগে আছে’। এছাড়া ইসরায়েলের অন্যান্য শহর যেমন- হাইফা, বিরশেবা এবং রানানায়ও হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নামেন। তাদের দাবি, ইসরায়েল সরকারকে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মেনে নিতে হবে। তবে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয় তেল আবিবের আয়ালুন মহাসড়কে। এখানে আন্দোলনকারীরা ড্রাম বাজিয়ে, গান গেয়ে এবং চিৎকার করে স্লোগান দিয়ে নেতানিয়াহুকে যুদ্ধবিরতি মেনে নেওয়ার দাবি তোলেন। তারা স্লোগান দেন, ‘বিবি (নেতানিয়াহু) চান না, জিম্মিরা ফিরে আসুক।’
গতকাল ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার গাজা নগরীর পূর্ব দিকের জেইতুন এলাকায় অবস্থিত একটি অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এই হামলায় সাতজন নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনের বার্তা সংস্থা ওয়াফা নিউজে বলা হয়, হামলায় একটি পরিবারের সাত সদস্য নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন স্বামী, স্ত্রী ও তাদের পাঁচ সন্তান। এদিকে দক্ষিণ গাজার রাফা শহরে একটি মোটরসাইকেল নিশানা করে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এই হামলায় দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কয়েকজন। হামলার ঘটনাটি ঘটেছে সালাহ আল-দিন গেট এলাকায়। বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়, রাফাহতে স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল। এর আগে, গত মঙ্গলবার মিসর সীমান্তবর্তী রাফা ক্রসিংয়ের ফিলিস্তিনি অংশ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
এদিকে গাজায় যুদ্ধবরিতির যে প্রস্তাবে হামাস রাজি হয়েছে, তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে দোষারোপ করছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের কর্মকর্তারা বলছেন, কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতাকারীরা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে পরিবর্তন এনে এরপর তা হামাসকে দিয়েছেন। বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রও জানত। কিন্ত এই পরিবর্তনের বিষয়ে ইসরায়েলকে কিছু জানানো হয়নি। মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওসকে ইসরায়েলের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সোমবার সন্ধ্যায় হামাসের পক্ষ থেকে হঠাৎ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হওয়ার ঘোষণায় ‘বিস্মিত’ হয়েছে ইসরায়েল। গত মঙ্গলবার টাইমস অব ইসরায়েলকে ইসরায়েলের এক কর্মকর্তা বলেন, হামাসের ঘোষণা আসার আগে ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতির এ প্রস্তাব সম্পর্কে কিছুই জানানো হয়নি। হামাস যে প্রস্তাবে রাজি হয়েছে তাতে কী কী বিষয় ছিল তা-ও দেখেনি ইসরায়েল।
বিগত সাত মাস ধরে ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলায় গাজায় প্রায় ৩৫ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে যুদ্ধবিরতিতে যেতে ইসরায়েলের ওপর ব্যাপকভাবে আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি হয়েছে। এতদিন ইসরায়েলকে একচেটিয়া সমর্থন দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনও চাপের মুখে পড়েছে। ইসরায়েলের ফিলিস্তিনিদের হত্যার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের দেড় শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলছে। পুলিশ ব্যাপক ধরপাকড় চালালেও বিক্ষোভ দমন করতে পারছে না বাইডেন প্রশাসন। তাই যুদ্ধবিরতির চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা বেড়েছে।
অন্যদিকে ফিলিস্তিনকে একটি রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে উত্তর আমেরিকার দেশ বাহামাস। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বেশ কিছু রাষ্ট্র ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। শেষ রাষ্ট্র হিসেবে তারাও এই তালিকায় যোগ দিল। গতকাল কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বাহামাসের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে, তারা ‘এই বিষয়ে ক্যারিবিয়ান সম্প্রদায়ের ঐকমত্যে’ যোগ দিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বাহামা ১৯৭৩ সালে স্ব-নিয়ন্ত্রণের একটি আইনের মাধ্যমে একটি স্বাধীন জাতি হয়ে ওঠে। তাই, বাহামা ফিলিস্তিনি জনগণের স্ব-নিয়ন্ত্রণের আইনি অধিকারকে সমর্থন করে।
গত সপ্তাহে, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো সরকার ঘোষণা করেছে, তারা আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিচ্ছে। অপরদিকে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের দেওয়া সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে ইসরায়েল-হামাসের মধ্যকার অবশিষ্ট মতভেদ দূর করা যেতে পারে বলে মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল কায়রোতে এই বিষয়ক আলোচনা পুনরায় শুরু হবে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরপরই এই কথা বলেছেন হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র জন কিরবি। তিনি বলেছেন, হামাসের পুনর্মূল্যায়ন করা প্রস্তাবটিতে যে প্রস্তাবগুলো রাখা হয়েছে তা নিয়ে নতুন করে আলোচনার মাধ্যমে চুক্তিটির ঘাটতিগুলো ‘একেবারে ঠিক’ করা যাবে। তবে প্রস্তাবে উল্লেখিত সেসব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।
গতকালের আলোচনাকে সামনে রেখেই গত মঙ্গলবার মিসরের সঙ্গে গাজার প্রধান দুটি ক্রসিং বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল।