০২:১০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পশ্চিমাদের দমনে একজোট ইরান-উত্তর কোরিয়া

চীন ও রাশিয়ার মতো পরাশক্তির বাইরে বর্তমানে আমেরিকার সবচেয়ে বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে পরমাণু শক্তিধর দেশ উত্তর কোরিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের সম্ভাব্য পরমাণু শক্তিধর দেশ ইরান। চলমান ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তেহরান ও পিয়ংইয়ং উভয়ই যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী নীতি নিয়ে চলছে। এমন পরিস্থিতিতে দুই দেশের জোট নিয়ে বেশ শঙ্কিত ন্যাটো। শুধু তাই নয় এ দুই দেশের পরমাণু কৌশল নিয়েও বিস্তর আলোচনা চলছে পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে।

 

জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ব রাজনীতিতে মার্কিন প্রভাব মোকাবিলায় নিজেদের মধ্যে পরমাণু ও ড্রোনবিষয়ক তথ্য বিনিময় করতে পারে ইরান ও উত্তর কোরিয়া। পাশাপাশি বিশ্ব রাজনীতিতে নিজেকে প্রাসঙ্গিক করে তুলতে রাশিয়া ও চীনের বাইরে নতুন মিত্র খুঁজছে উত্তর কোরিয়া। ফলে মধ্যপ্রাচ্যের প্রবল মার্কিনবিরোধী দেশ ইরানের ওপর আস্থা রাখতে চাইছেন কিম জং উন।

 

সিওলে ইউনিভার্সিটি অব নর্থ কোরিয়া স্টাডিস-এর অধ্যাপক কিম সুং কিয়ুং জানান, উত্তর কোরিয়া মনে করছে, আমেরিকার বিরোধিতা ও ইরানের পাশে দাঁড়ানোর একটা ভালো সুযোগ তাদের সামনে এসেছে। পাশাপাশি তেহরানের কাছে অস্ত্র ও সামরিক প্রযুক্তি বিক্রি করার একটা সুযোগও পাওয়া গেছে বলে মনে করছে পিয়ংইয়ং। দুই দেশের ওপরই পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, যার মধ্যেই কিছুটা আর্থিক সুবিধা পেতে চাইছে উত্তর কোরিয়া।

 

 

গত এপ্রিলে ইরানে একটি উচ্চ পর্যায়ের বাণিজ্য ও আর্থিক প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছিল উত্তর কোরিয়া। এর আগে ২০১৯ সালে একই ধরনের প্রতিনিধিদল পাঠায় পিয়ংইয়ং। এসব সফরে দুই দেশের মধ্যে কোনো সমঝোতা হয়েছে কি না, তা নিয়ে দুই দেশই মুখ বন্ধ রেখেছে। তবে সামরিক প্রযুক্তি, পরমাণু অস্ত্র ও ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে কথা হয়েছে বলে জল্পনা চলছে।

 

ট্রয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিওল ক্যাম্পাসের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক ড্যানিয়েল পিংকস্টন জানান, তেহরান ও পিয়ংইয়ং-এর মধ্যে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক আছে। এদের মধ্যে একটি ধর্মতান্ত্রিক ইসলামিক দেশ এবং অপরটি এক নেতা-ভিত্তিক কমিউনিস্ট দেশ হলেও দুই জায়গাতেই কর্তৃত্ববাদী শাসন রয়েছে। দুই দেশই যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী।

 

 

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, উত্তর কোরিয়া বর্তমানে সেসব দেশকে গুরুত্ব দিচ্ছে, যারা সামরিক ও আর্থিক দিক দিয়ে তাদের সাহায্য করবে। অধ্যাপক পিংকস্টন মনে করেন, ইরান ও কোরিয়া আরো কাছাকাছি আসবে। তারা একে অন্যকে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সাহায্য দেবে। তিনি জানান, অতীতে উত্তর কোরিয়া ইরানকে পরমাণু প্রযুক্তি দিয়েছে।

 

 

অনেকের মতে, এখন উত্তর কোরিয়া নিজেরা যেসব অস্ত্র তৈরি করেছে, তা ইরানকে দিতে পারে। পরমাণু পরীক্ষা থেকে পাওয়া তথ্য তারা ইরানকে দিতে পারে। তারা মহাকাশ প্রযুক্তিও দিতে পারে। এছাড়া দুই দেশই ড্রোন প্রযুক্তি নিয়ে উৎসাহী। এর বাহিরে উত্তর কোরিয়ার কাছে ইরান থেকে তেল পাওয়াটাও খুব জরুরি। ইরান রাশিয়ার মাধ্যমে এই তেল উত্তর কোরিয়ার কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে।

পশ্চিমাদের দমনে একজোট ইরান-উত্তর কোরিয়া

আপডেট সময় : ০৭:০৩:৩৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪

চীন ও রাশিয়ার মতো পরাশক্তির বাইরে বর্তমানে আমেরিকার সবচেয়ে বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে পরমাণু শক্তিধর দেশ উত্তর কোরিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের সম্ভাব্য পরমাণু শক্তিধর দেশ ইরান। চলমান ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তেহরান ও পিয়ংইয়ং উভয়ই যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী নীতি নিয়ে চলছে। এমন পরিস্থিতিতে দুই দেশের জোট নিয়ে বেশ শঙ্কিত ন্যাটো। শুধু তাই নয় এ দুই দেশের পরমাণু কৌশল নিয়েও বিস্তর আলোচনা চলছে পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে।

 

জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ব রাজনীতিতে মার্কিন প্রভাব মোকাবিলায় নিজেদের মধ্যে পরমাণু ও ড্রোনবিষয়ক তথ্য বিনিময় করতে পারে ইরান ও উত্তর কোরিয়া। পাশাপাশি বিশ্ব রাজনীতিতে নিজেকে প্রাসঙ্গিক করে তুলতে রাশিয়া ও চীনের বাইরে নতুন মিত্র খুঁজছে উত্তর কোরিয়া। ফলে মধ্যপ্রাচ্যের প্রবল মার্কিনবিরোধী দেশ ইরানের ওপর আস্থা রাখতে চাইছেন কিম জং উন।

 

সিওলে ইউনিভার্সিটি অব নর্থ কোরিয়া স্টাডিস-এর অধ্যাপক কিম সুং কিয়ুং জানান, উত্তর কোরিয়া মনে করছে, আমেরিকার বিরোধিতা ও ইরানের পাশে দাঁড়ানোর একটা ভালো সুযোগ তাদের সামনে এসেছে। পাশাপাশি তেহরানের কাছে অস্ত্র ও সামরিক প্রযুক্তি বিক্রি করার একটা সুযোগও পাওয়া গেছে বলে মনে করছে পিয়ংইয়ং। দুই দেশের ওপরই পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, যার মধ্যেই কিছুটা আর্থিক সুবিধা পেতে চাইছে উত্তর কোরিয়া।

 

 

গত এপ্রিলে ইরানে একটি উচ্চ পর্যায়ের বাণিজ্য ও আর্থিক প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছিল উত্তর কোরিয়া। এর আগে ২০১৯ সালে একই ধরনের প্রতিনিধিদল পাঠায় পিয়ংইয়ং। এসব সফরে দুই দেশের মধ্যে কোনো সমঝোতা হয়েছে কি না, তা নিয়ে দুই দেশই মুখ বন্ধ রেখেছে। তবে সামরিক প্রযুক্তি, পরমাণু অস্ত্র ও ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে কথা হয়েছে বলে জল্পনা চলছে।

 

ট্রয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিওল ক্যাম্পাসের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক ড্যানিয়েল পিংকস্টন জানান, তেহরান ও পিয়ংইয়ং-এর মধ্যে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক আছে। এদের মধ্যে একটি ধর্মতান্ত্রিক ইসলামিক দেশ এবং অপরটি এক নেতা-ভিত্তিক কমিউনিস্ট দেশ হলেও দুই জায়গাতেই কর্তৃত্ববাদী শাসন রয়েছে। দুই দেশই যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী।

 

 

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, উত্তর কোরিয়া বর্তমানে সেসব দেশকে গুরুত্ব দিচ্ছে, যারা সামরিক ও আর্থিক দিক দিয়ে তাদের সাহায্য করবে। অধ্যাপক পিংকস্টন মনে করেন, ইরান ও কোরিয়া আরো কাছাকাছি আসবে। তারা একে অন্যকে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সাহায্য দেবে। তিনি জানান, অতীতে উত্তর কোরিয়া ইরানকে পরমাণু প্রযুক্তি দিয়েছে।

 

 

অনেকের মতে, এখন উত্তর কোরিয়া নিজেরা যেসব অস্ত্র তৈরি করেছে, তা ইরানকে দিতে পারে। পরমাণু পরীক্ষা থেকে পাওয়া তথ্য তারা ইরানকে দিতে পারে। তারা মহাকাশ প্রযুক্তিও দিতে পারে। এছাড়া দুই দেশই ড্রোন প্রযুক্তি নিয়ে উৎসাহী। এর বাহিরে উত্তর কোরিয়ার কাছে ইরান থেকে তেল পাওয়াটাও খুব জরুরি। ইরান রাশিয়ার মাধ্যমে এই তেল উত্তর কোরিয়ার কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে।