২০১৮ সালের বক্স অফিস কাঁপানো ‘এভেঞ্জারস : ইনফিনিটি ওয়্যার’ মুভির ক্লাইমেক্স দৃশ্যের কথা মনে আছে নিশ্চয়ই! মারভেল ইউনিভার্সের সর্বাধিক সাড়া জাগানিয়া ভিলেন থ্যানোসের কবল থেকে বিশ্বকে বাঁচাতে ধ্যানমগ্ন হলেন আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান এবং প্রাচীন জাদুবিদ্যায় পারদর্শী প্রাজ্ঞ ডক্টর স্ট্রেঞ্জ। ধ্যানের স্তরে মুহূর্তে থ্যানোসকে হারানোর ১৪ মিলিয়ন ৬০৫টি (!) উপায় বিশ্লেষণ করে সঠিক পথটি নির্ধারণ করে ফেললেন তিনি। ধ্যানের স্তরে সঠিক পথ নির্ধারণের এই প্রক্রিয়া প্রয়োগ করে ডক্টর স্ট্রেঞ্জ বিশ্বকে তো বাঁচালেন কিন্তু আমাদের মনের মহাবিশ্বে থ্যানোসরূপী অস্থিরতা, স্ট্রেস, নেতিবাচকতা, হীনম্মন্যতা ইত্যাদিকে পরাজিত করতে আমরা কী করব?
বর্তমান সময়ের মানুষের স্ট্রেস বা টেনশনের পর্যায় বোঝানোর জন্যে কোনো তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপনের প্রয়োজন নেই। ছেলে থেকে বুড়ো সবাই যেন টেনশন বা স্ট্রেস নামক শত্রুর চাপে পর্যুদস্ত। বিভিন্ন বয়সি, পেশার মানুষের কাছে এই শত্রু বাহ্যিক রূপ বদলে হাজির হচ্ছে খুবই নীরবে আর ঘুণপোকার মতো ক্ষতিগ্রস্ত করছে আমাদের মনোদৈহিক স্বাস্থ্যকে। যার প্রভাবে শারীরিক নানা ব্যাধি তৈরি হচ্ছে, কাজের পারফরম্যান্স কমছে, জীবন হয়ে উঠছে নিরানন্দ!
মানুষ চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হয়ে দেদারসে নানান রিলাক্সেশন ট্যাবলেট খাচ্ছে বটে! তবে এতে তথাকথিত শত্রুর স্থায়ী পরাজয় হচ্ছে না। বরং চিকিৎসকরাও শঙ্কিত, অতিরিক্ত ওষুধ সেবনের ক্ষতিকর প্রভাবে শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলো অচল হওয়ার আশঙ্কায়। তাই তারাও বিস্তর গবেষণা করেছেন, ওষুধের সাজা মুক্তির উপায় নিয়ে! গবেষণায় উঠে এসেছে, মেডিটেশন নামক এক মহা মুক্তির পথের কথা।
বিভিন্ন বয়সি ৩,৫১৫ জন আমেরিকানকে মেডিটেশন প্রশিক্ষণ দেওয়ার পর তাদের পর্যবেক্ষণ করা হয়। দেখা যায়, তাদের স্ট্রেস এবং অ্যাংজাইটি লেভেল শুধু কমেনি, জীবনযাপনের মানেরও উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। (তথ্যসূত্র : Meditation programs for psychological stress and well-being: a systematic reviwe and meta-analysis, পাবমেড, মার্চ ২০১৪ সালে প্রকাশিত)
বিভিন্ন পরিস্থিতি ও ঘটনার প্রেক্ষিতে মানুষের চিত্ত চাঞ্চল্য বাড়ে অর্থাৎ মন বর্তমান থেকে সরে অতীত এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে নানান রকম জল্পনা-কল্পনা করতে থাকে। বলাই বাহুল্য, এর অধিকাংশই নেতিবাচক, যা থেকে টেনশন ও স্ট্রেস নামক শত্রুর জন্ম। এই শত্রুদের পরাজিত করতে মনকে নিয়ে আসতে হবে বর্তমানে, হতে হবে সুস্থির। মনকে সুস্থির এবং বর্তমানমুখী করার এই প্রক্রিয়ার নামই মেডিটেশন। প্রসঙ্গত, এভেঞ্জারস সিনেমায় ড. স্ট্রেঞ্জ চরিত্রে অভিনয় করেন অভিনেতা বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ। ক্যারিয়ারের শুরুতে তিনি ভারতে এসে ধ্যানচর্চার প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন। অর্থাৎ রূপালি পর্দায়ই নয়, ব্যক্তিগত জীবনেও নিজের মনোবিশ্বের শত্রু বিনাশে ধ্যানের প্রয়োগ করেছিলেন যথাসময়েই।
গবেষকরা দেখেছেন, মেডিটেশন চর্চার ফলে মানুষ তার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে এবং পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে সঠিক কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে পারে। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও অটল থাকতে পারে। আরো চমকপ্রদ বিষয় হচ্ছে, ধ্যানীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কৃতজ্ঞচিত্ত হয়ে ওঠেন। যার ফলে সামগ্রিক জীবনমানের উন্নতি হয়।
নিয়মিত যারা মেডিটেশন চর্চা করেন, তাদের ব্রেন স্ক্যান করে দেখা গেছে, সাধারণ মানুষের তুলনায় সেখানে স্ট্রেস হরমোনের পরিমাণ বেশ কম। ডোপামিন, এনডোরফিন, সেরেটোনিন, অক্সিটোসিন অর্থাৎ আনন্দবর্ধক হরমোন প্রবাহের পরিমাণ অনেক বেশি। এ থেকে ধ্যানীদের সকল ধরনের পরিস্থিতিকে হাসিমুখে মোকাবেলা করার রহস্যটাও পরিষ্কার হয়ে ওঠে।
বর্তমান আধুনিক জীবনে আমাদের জন্যে আনন্দের খবর হচ্ছে, ধ্যানের এই শক্তি দিয়ে মনোবিশ্বে থ্যানোসদের পরাজিত করার জন্যে সাধু সন্ন্যাসীদের মতো বনে-জঙ্গলে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। বাসা-বাড়ি, পার্ক কিংবা কাজের ফাঁকে কর্মস্থলে বসেই ১৫ মিনিট থেকে আধা ঘণ্টার মেডিটেশন করে নেওয়া খুবই সহজ হয়ে গেছে।
বাংলাদেশে মেডিটেশন এবং কোয়ান্টাম মেথড প্রায় সমার্থক দুটি শব্দ। ১৯৯৩ সাল থেকে লাখো মানুষকে মেডিটেশন চর্চার মাধ্যমে মনোদৈহিক রোগমুক্তির পথ দেখিয়ে এরই মধ্যে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে কোয়ান্টাম। তাদের ওয়েবসাইট থেকে ফ্রি মেডিটেশন ডাউনলোড করে যে কেউ চর্চা শুরু করতে পারেন।
বিশ্ব মেডিটেশন দিবস ২১ মে। এই দিবস উপলক্ষেই শুরু হতে পারে মেডিটেশন চর্চা। মেডিটেশন চর্চার মাধ্যমে আপনার মনোরাজ্যের টেনশন, স্ট্রেসকে পরাস্ত করুন। ভালো ভাবুন, ভালো বলুন, অন্যের ভালো করুন, নিজে ভালো থাকুন। গড়ে উঠুক ভালো মানুষ, ভালো দেশ, স্বর্গভূমি বাংলাদেশ।

























