০৪:০৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আবারও অটোরিকশাচালকদের সড়ক অবরোধ-বিক্ষোভ

▶ মিরপুর-পল্লবী-কাফরুলে ৪ মামলায় আসামি ২৭শ’, কারাগারে ৪২
▶ ২৭ মে সারাদেশে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি
▶ নির্দেশনার পর ব্যবস্থা: ডিএমপি
▶ ২২টি মহাসড়কে চলাচল নিষিদ্ধ বহাল
▶ বিধিমালা করে অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

অটোরিকশা চালানোর দাবিতে রাজধানীর মিরপুর বিভাগে আন্দোলনের রেশ না কাটতেই দ্বিতীয় দিনের মতো এবার রামপুরা এলাকায় একই দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে অটোরিকশা চালকরা। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন অফিসগামী কর্মজীবি নারী-পুরুষ ও শিক্ষার্থীরা। ঘটনার পরপরই অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনসহ সর্বোচ্চ সতর্ক প্রহরা ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে নগরীর বিভিন্ন স্থানে। সরকারি নির্দেশনার প্রতিবাদে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ করেছে ‘রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা-ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদ’। এসময় তারা দাবি আদায় না হলে আগামী ২৭ মে সারাদেশে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারী দিয়েছেন সংগঠনের নেতারা।

ডিএমপি জানায়, ব্যাটারিচালিত রিকশা ঢাকার কোথায় কীভাবে চলবে সে বিষয়ে সরকারের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা আসার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিল্পসচিব বলেছেন, ব্যাটারিচালিত রিকশার স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মানুষের কষ্টের কথা বিবেচনা করে শুধু ঢাকা শহরে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলের অনুমতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে ২২টি মহাসড়কে আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ থাকবে। অপরদিকে মন্ত্রীপরিষদ সচিব জানিয়েছেন, একটি বিধিমালা করে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে মিরপুর-পল্লবী ও কাফরুল এলাকায় পুলিশ বক্সে আগুন, গাড়ি ভাঙচুর ও পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ঘটনায় ৪২ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গতকাল বিজ্ঞ আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর এ আদেশ দেন। গতকাল সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসমব তথ্য পাওয়া গেছে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, অটোরিকশা চালানোর দাবিতে রাজধানীর মিরপুর-পল্লবী ও কাফরুল এলাকায় একযোগে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করে আন্দোলনের রেশ না কাটতেই দ্বিতীয় দিনের মতো একই দাবিতে গতকাল সোমবার রাজধানীর রামপুরা এলাকায় বেটার লাইফ হাসপাতালের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে অটোরিকশা ও ইজিবাইক চালকরা। সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে দুই পাশের সড়ক অবরোধ করে রাখে বিক্ষোভকারীরা। এতে দেখা দেয় তীব্র যানজট। বিপাকে পড়েন স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থী, অফিসগামী ও কর্মমুখী লোকজন। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি শান্ত রাখেন। একই সঙ্গে নৈরাজ্য-বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে সর্বোচ্চ সতর্ক প্রহরায় থেকে বিক্ষোভকারীদের নজরদারিতে রাখে পোশাকে-সাদা পোশাকে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। বেলা ১১টার দিকে সড়ক থেকে বিক্সোভকারীরা সরে গেলে নিরসন হয় যানজটের।

তবে দীর্ঘক্ষণ যানজট থাকায় বিকল্প সড়কে চলাচল শুরু করে এ রুটের গাড়িগুলো। ফলে বাড্ডা থেকে রামপুরাগামী বাস না থাকায় যাত্রীরা পড়েন ভোগান্তিতে। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়েও বাসের দেখা পায়নি সাধারণ যাত্রীরা। নিরুপায় হয়ে অনেকেই পায়ে হেঁটে কেউ আবার রাইড শেয়ারিংয়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। বেলা ১১টা ২০ মিনিটের দিকে ভুক্তভোগী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী আসাদ জানান, সকাল থেকে যানজট ছিল। অবরোধ থাকায় যাওয়ার সুযোগ ছিল না। এখন অবরোধ নেই। তবে বাসের দেখা মিলছে না। ওই রুটের বেশকিছু গণপরিবহনের চালক ও হেলপাররা জানান, অবরোধের কারণে তীব্র যানজট তৈরি হয়। ভাঙচুর আতঙ্কে ও ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় ট্রাফিক পুলিশের নির্দেশনায় ওই সড়ক পরিহার করে বিকল্প পথে গন্তব্যে চলে যায় অনেক পরিবহন।

এ কারণে ওই সড়কের যাত্রীরা দুপুর পর্যন্ত বাস পায়নি। অটোরিকশা চালকদের আন্দোলনের আগেই সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকার অটোরিকশা ও ইজিবাইক চালকরা মিছিল নিয়ে জড়ো হয় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে। ঢাকা মহানগরে ইজিবাইক, রিকশাসহ ব্যাটারিচালিত যানবাহন চলাচলের দাবিতে বেলা ১১টার দিকে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ‘রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা-ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদ’। সংগঠনটির নেতারা বলেন, থ্রি-হুইলার ও সমজাতীয় মোটরযান নীতিমালা চূড়ান্ত ও কার্যকর করে ইজিবাইক, রিকশাসহ ব্যাটারিচালিত যানবাহনের দ্রুত নিবন্ধন, লাইসেন্স প্রদান ও রুট পারমিটের ব্যবস্থা করতে হবে। ইজিবাইক, রিকশাসহ ব্যাটারিচালিত যানবাহন ঢাকা মহানগরের প্রধান সড়কে চলাচল করে না। এটা মূলত মহানগরের অলি গলিতে চলে।

কারণ সেখানে কোনো গণপরিবহন নেই। সংগঠনটির নেতারা বলেন, ঢাকা মহানগরের প্রায় ৬০ ভাগ মানুষ এ ধরনের যানবাহনে চলাচল করে। আর মাত্র ৬ ভাগ যাত্রী নিয়ে ঢাকা মহানগরের প্রায় ৮০ ভাগ রাস্তা দখল করে যানজট সৃষ্টি করে প্রাইভেট গাড়ি। তারপরেও কেন এই বাহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা। তাদের অভিযোগ, এই বাহনের সঙ্গে প্রায় ৬০ লাখ মানুষ জড়িত। ঢাকা মহানগরে এ সংখ্যা আনুমানিক ৫ লাখের ওপরে। বিকল্প ব্যবস্থা না করে রাস্তা থেকে উচ্ছেদ করে এ গণপরিবহন বন্ধ করা হলে আÍকর্মসংস্থানের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহকারী লাখ লাখ মানুষের ও তাদের পরিবারের দায়-দায়িত্ব কে নেবে?। সমাবেশে সংগঠনটির নেতারা পুলিশী হয়রানি এবং চাঁদাবাজি বন্ধসহ মিরপুর এলাকায় আন্দোলনরত রিকশা শ্রমিকদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিকল্প ব্যবস্থা না করে এ ধরনের সিদ্ধান্ত বাতিল চান তারা। দাবি না মানলে লাখ লাখ কর্মহীন ও বেকার চালকসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে আগামী ২৭ মে সারাদেশে ৬৪ জেলায় তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন সংগঠনটির নেতারা। রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা-ইজি বাইক সংগ্রাম পরিষদের ঢাকা মহানগর শাখার সহ-সভাপতি জালাল আহমেদ, অর্থ সম্পাদক রোখশানা আফরোজ আশা, সংগঠনের আহ্বায়ক ও সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেকুজ্জামান লিপন, অর্থ সম্পাদক জুলফিকার আলী, সংগ্রাম পরিষদ কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদ সদস্য আবু নাঈম খান বিপ¬ব, রাহাত আহমেদ, এস এম কাদির, ঢাকা মহানগরের যুগ্ম সম্পাদক দাউদ আলী মামুন, সদস্য সেকান্দার আলী, আবদুস সালামসহ আরও অনেকে অংশ নেন এতে।

 

এদিকে গতকাল সোমবার বিকেলে অটোরিকশা-ইজিবাইক চলাচলের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থা থেকে আমরা এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা পাইনি। আপাতত মূল সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধ থাকবে। ব্যাটারিচালিত রিকশা ঢাকা মহানগরের কোথায় কীভাবে চলবে সরকারি সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনার পর আমরা ব্যবস্থা নেবো এসব বাহন কোথায় চলবে আর কোথায় চলবে না। তিনি বলেন, সরকারের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সরকার যে সিদ্ধান্ত বা নির্দেশনা দেবে সেটিই প্রতিপালন করা হবে।

এর আগে গতকাল সোমবার দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ওলামা লীগের প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিশ্ব পরিস্থিতি ও দ্রব্যমূল্যের কারণে স্বল্প আয়ের মানুষের কষ্টের কথা বিবেচনা করে শুধু ঢাকা শহরে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলের অনুমতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে দেশের ২২টি মহাসড়কে আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ থাকবে। এদিকে গতকাল সোমবার বিশ্ব মেট্রোলজি দিবস উপলক্ষে বিএসটিআইয়ের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে কিছু সমস্যা হচ্ছে, কিন্তু এটার একটা স্ট্যান্ডার্ড থাকা দরকার ছিল। প্রধানমন্ত্রী একটা স্ট্যান্ডার্ড সেট করে দিতে বলেছেন। তাহলে হয়তো এ সমস্যার সমাধান হবে। তিনি বলেন, এটা (ব্যাটারিচালিত রিকশা) এক্সিডেন্ট বেশি হয়, এটা সমস্যা। ভারসাম্য কম। সে বিষয়টি নিয়ে বিএসটিআই কাজ করতে পারে কি না সেটা দেখা হবে। এই বাহন এখন দেশের ২০ লাখ মানুষ চালাচ্ছে। বড় কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। অনেক দেশে এটা চলছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক শেষে গতকাল বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের জানান, একটি বিধিমালা করে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কোনো অবস্থাতেই মহাসড়ক কিংবা বড় সড়কে তারা (অটোরিকশা) যেতে পারবেন না, সে বিষয়গুলো নিশ্চিত করে সংশি¬ষ্ট আইন-বিধিমালা যথাযথভাবে সংশোধন কিংবা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারপ্রধান সড়ক বিভাগ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছেন। অটোরিকশা বন্ধের সিদ্ধান্তের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী জানতেন না জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, তোমরা আমাকে জানাওনি। তাদের জীবিকার কী ব্যবস্থা করা হয়েছে, সে প্রশ্ন রেখেছেন তিনি। তাদের জীবিকার ব্যবস্থা না করে তাদের সম্পর্কে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া যৌক্তিক মনে করেননি প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, আমার সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি। আমি জানিনি। আমার সঙ্গে তোমাদের কথা বলা উচিত ছিল। তিনি এভাবেই বলেছেন। তাদের জীবিকার ব্যবস্থা না করে এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া যৌক্তিক হয়নি।

অপরদিকে অটোরিকশা বন্ধের প্রতিবাদে গত রোববার রাজধানীর মিরপুর, পল্লবী ও কাফরুল এলাকায় আন্দোলনকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেফতার ৪২ জন অটোরিকশা শ্রমিককে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল সোমবার তাদের ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর তাদের মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। আবেদনের প্রেক্ষিতে মিরপুরের মামলায় ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মইনুল ইসলাম ও পল্লবীর মামলায় মো. শাকিল আহাম্মদ তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। মিরপুর থানার মামলায় কারাগারে যাওয়া আসামিরা হলেন- অনিক, মো. আবু বক্কর, মো. আলী হোসেন, মো. সাগর মৃধা, মো. সাহর শেখ, মো. বকুল হোসেন, মো. নুরুল ইসলাম, মো. মাজেদ আলী, মো. মোতাহার হোসেন, মো. দুলু মিয়া ওরফে বুলু, নবী হোসেন, মো. সাহাবুদ্দিন, রুহুল আমিন, মো. জুনায়েদ ও মো. জাকির হোসেন। এছাড়া পল্লবী থানার মামলায় কারাগারে যাওয়া আসামিরা হলেন- রানা চৌধুরী, রাসেল, জাকির হোসেন, মেহেদী হাসান, জালাল শরীফ, মো. আব্দুল মোতালেব, মোরসালিন মিয়া, মো. শাহাজাহান মিয়া, মো. রাসেল, মো. ওয়াজিব, আনোয়ার হোসেন, মো. আতাউর রহমান, মো. সুমন, নূর মোহাম্মদ ও শরিফ।

এর আগে গত রোববার দিনভর সড়কে অটোরিকশা চালানোর দাবিতে মিরপুর, পল্লবী ও কাফরুল এলাকায় ব্যাপক বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ গাড়ি ভাঙচুর ও পুলিশ বক্সে আগুন দেয় অটোরিকশাচালকরা। এতে পল্লবীতে পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ঘটনায় বেশ কয়েকজন পুলিশ আহত ও শর্টগানের গুলিতে পথচারী দর্জিশ্রমিক আহত হন। মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) জসীম উদ্দীন মোল্ল্যা দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, গত রোববার মিরপুর, পল্লবী ও কাফরুল এলাকায় অটোরিকশা চালকদের দিনভর তাণ্ডব চালানোয় মিরপুর মডেল থানায় একটি, পল্লবী থানায় দুটি, ও কাফরুল থানায় একটি মামলা করেছে পুলিশ। মামলায় কয়েকজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামাসহ ২৭০০ জনকে আসামি করা হয়। ওইসব মামলায় ৪২ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর গতকাল দুপুরের দিকে আদালতের নির্দেশে তাদেরকে কারাগারে পাঠানো হয়। তিনি আরও বলেন, এছাড়াও কাফরুল ও মিরপুর মডেল থানায় পৃথক আরো দুটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। পুলিশের কাজে বাধা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, নাশকতা ও পুলিশের উপর হামলায় জন্য বিভিন্ন ধারায় এসব মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় কয়েকজনের নাম উল্লেখ করা হলেও বেশিরভাগই অজ্ঞাত আসামি। ঘটনার দিনের বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগ্রহ করা সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আসামিদের গ্রেপ্তার করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে কাজ করছে বলেও জানান মিরপুর বিভাগের পুলিশের এই শীর্ষ কর্মকর্তা।

জনপ্রিয় সংবাদ

শেরপুরে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে গাফিলতির অভিযোগ, উদ্বেগ প্রকাশ

আবারও অটোরিকশাচালকদের সড়ক অবরোধ-বিক্ষোভ

আপডেট সময় : ০৭:১৩:০৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪

▶ মিরপুর-পল্লবী-কাফরুলে ৪ মামলায় আসামি ২৭শ’, কারাগারে ৪২
▶ ২৭ মে সারাদেশে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি
▶ নির্দেশনার পর ব্যবস্থা: ডিএমপি
▶ ২২টি মহাসড়কে চলাচল নিষিদ্ধ বহাল
▶ বিধিমালা করে অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

অটোরিকশা চালানোর দাবিতে রাজধানীর মিরপুর বিভাগে আন্দোলনের রেশ না কাটতেই দ্বিতীয় দিনের মতো এবার রামপুরা এলাকায় একই দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে অটোরিকশা চালকরা। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন অফিসগামী কর্মজীবি নারী-পুরুষ ও শিক্ষার্থীরা। ঘটনার পরপরই অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনসহ সর্বোচ্চ সতর্ক প্রহরা ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে নগরীর বিভিন্ন স্থানে। সরকারি নির্দেশনার প্রতিবাদে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ করেছে ‘রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা-ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদ’। এসময় তারা দাবি আদায় না হলে আগামী ২৭ মে সারাদেশে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারী দিয়েছেন সংগঠনের নেতারা।

ডিএমপি জানায়, ব্যাটারিচালিত রিকশা ঢাকার কোথায় কীভাবে চলবে সে বিষয়ে সরকারের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা আসার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিল্পসচিব বলেছেন, ব্যাটারিচালিত রিকশার স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মানুষের কষ্টের কথা বিবেচনা করে শুধু ঢাকা শহরে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলের অনুমতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে ২২টি মহাসড়কে আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ থাকবে। অপরদিকে মন্ত্রীপরিষদ সচিব জানিয়েছেন, একটি বিধিমালা করে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে মিরপুর-পল্লবী ও কাফরুল এলাকায় পুলিশ বক্সে আগুন, গাড়ি ভাঙচুর ও পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ঘটনায় ৪২ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গতকাল বিজ্ঞ আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর এ আদেশ দেন। গতকাল সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসমব তথ্য পাওয়া গেছে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, অটোরিকশা চালানোর দাবিতে রাজধানীর মিরপুর-পল্লবী ও কাফরুল এলাকায় একযোগে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করে আন্দোলনের রেশ না কাটতেই দ্বিতীয় দিনের মতো একই দাবিতে গতকাল সোমবার রাজধানীর রামপুরা এলাকায় বেটার লাইফ হাসপাতালের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে অটোরিকশা ও ইজিবাইক চালকরা। সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে দুই পাশের সড়ক অবরোধ করে রাখে বিক্ষোভকারীরা। এতে দেখা দেয় তীব্র যানজট। বিপাকে পড়েন স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থী, অফিসগামী ও কর্মমুখী লোকজন। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি শান্ত রাখেন। একই সঙ্গে নৈরাজ্য-বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে সর্বোচ্চ সতর্ক প্রহরায় থেকে বিক্ষোভকারীদের নজরদারিতে রাখে পোশাকে-সাদা পোশাকে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। বেলা ১১টার দিকে সড়ক থেকে বিক্সোভকারীরা সরে গেলে নিরসন হয় যানজটের।

তবে দীর্ঘক্ষণ যানজট থাকায় বিকল্প সড়কে চলাচল শুরু করে এ রুটের গাড়িগুলো। ফলে বাড্ডা থেকে রামপুরাগামী বাস না থাকায় যাত্রীরা পড়েন ভোগান্তিতে। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়েও বাসের দেখা পায়নি সাধারণ যাত্রীরা। নিরুপায় হয়ে অনেকেই পায়ে হেঁটে কেউ আবার রাইড শেয়ারিংয়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। বেলা ১১টা ২০ মিনিটের দিকে ভুক্তভোগী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী আসাদ জানান, সকাল থেকে যানজট ছিল। অবরোধ থাকায় যাওয়ার সুযোগ ছিল না। এখন অবরোধ নেই। তবে বাসের দেখা মিলছে না। ওই রুটের বেশকিছু গণপরিবহনের চালক ও হেলপাররা জানান, অবরোধের কারণে তীব্র যানজট তৈরি হয়। ভাঙচুর আতঙ্কে ও ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় ট্রাফিক পুলিশের নির্দেশনায় ওই সড়ক পরিহার করে বিকল্প পথে গন্তব্যে চলে যায় অনেক পরিবহন।

এ কারণে ওই সড়কের যাত্রীরা দুপুর পর্যন্ত বাস পায়নি। অটোরিকশা চালকদের আন্দোলনের আগেই সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকার অটোরিকশা ও ইজিবাইক চালকরা মিছিল নিয়ে জড়ো হয় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে। ঢাকা মহানগরে ইজিবাইক, রিকশাসহ ব্যাটারিচালিত যানবাহন চলাচলের দাবিতে বেলা ১১টার দিকে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ‘রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা-ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদ’। সংগঠনটির নেতারা বলেন, থ্রি-হুইলার ও সমজাতীয় মোটরযান নীতিমালা চূড়ান্ত ও কার্যকর করে ইজিবাইক, রিকশাসহ ব্যাটারিচালিত যানবাহনের দ্রুত নিবন্ধন, লাইসেন্স প্রদান ও রুট পারমিটের ব্যবস্থা করতে হবে। ইজিবাইক, রিকশাসহ ব্যাটারিচালিত যানবাহন ঢাকা মহানগরের প্রধান সড়কে চলাচল করে না। এটা মূলত মহানগরের অলি গলিতে চলে।

কারণ সেখানে কোনো গণপরিবহন নেই। সংগঠনটির নেতারা বলেন, ঢাকা মহানগরের প্রায় ৬০ ভাগ মানুষ এ ধরনের যানবাহনে চলাচল করে। আর মাত্র ৬ ভাগ যাত্রী নিয়ে ঢাকা মহানগরের প্রায় ৮০ ভাগ রাস্তা দখল করে যানজট সৃষ্টি করে প্রাইভেট গাড়ি। তারপরেও কেন এই বাহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা। তাদের অভিযোগ, এই বাহনের সঙ্গে প্রায় ৬০ লাখ মানুষ জড়িত। ঢাকা মহানগরে এ সংখ্যা আনুমানিক ৫ লাখের ওপরে। বিকল্প ব্যবস্থা না করে রাস্তা থেকে উচ্ছেদ করে এ গণপরিবহন বন্ধ করা হলে আÍকর্মসংস্থানের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহকারী লাখ লাখ মানুষের ও তাদের পরিবারের দায়-দায়িত্ব কে নেবে?। সমাবেশে সংগঠনটির নেতারা পুলিশী হয়রানি এবং চাঁদাবাজি বন্ধসহ মিরপুর এলাকায় আন্দোলনরত রিকশা শ্রমিকদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিকল্প ব্যবস্থা না করে এ ধরনের সিদ্ধান্ত বাতিল চান তারা। দাবি না মানলে লাখ লাখ কর্মহীন ও বেকার চালকসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে আগামী ২৭ মে সারাদেশে ৬৪ জেলায় তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন সংগঠনটির নেতারা। রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা-ইজি বাইক সংগ্রাম পরিষদের ঢাকা মহানগর শাখার সহ-সভাপতি জালাল আহমেদ, অর্থ সম্পাদক রোখশানা আফরোজ আশা, সংগঠনের আহ্বায়ক ও সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেকুজ্জামান লিপন, অর্থ সম্পাদক জুলফিকার আলী, সংগ্রাম পরিষদ কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদ সদস্য আবু নাঈম খান বিপ¬ব, রাহাত আহমেদ, এস এম কাদির, ঢাকা মহানগরের যুগ্ম সম্পাদক দাউদ আলী মামুন, সদস্য সেকান্দার আলী, আবদুস সালামসহ আরও অনেকে অংশ নেন এতে।

 

এদিকে গতকাল সোমবার বিকেলে অটোরিকশা-ইজিবাইক চলাচলের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থা থেকে আমরা এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা পাইনি। আপাতত মূল সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধ থাকবে। ব্যাটারিচালিত রিকশা ঢাকা মহানগরের কোথায় কীভাবে চলবে সরকারি সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনার পর আমরা ব্যবস্থা নেবো এসব বাহন কোথায় চলবে আর কোথায় চলবে না। তিনি বলেন, সরকারের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সরকার যে সিদ্ধান্ত বা নির্দেশনা দেবে সেটিই প্রতিপালন করা হবে।

এর আগে গতকাল সোমবার দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ওলামা লীগের প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিশ্ব পরিস্থিতি ও দ্রব্যমূল্যের কারণে স্বল্প আয়ের মানুষের কষ্টের কথা বিবেচনা করে শুধু ঢাকা শহরে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলের অনুমতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে দেশের ২২টি মহাসড়কে আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ থাকবে। এদিকে গতকাল সোমবার বিশ্ব মেট্রোলজি দিবস উপলক্ষে বিএসটিআইয়ের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে কিছু সমস্যা হচ্ছে, কিন্তু এটার একটা স্ট্যান্ডার্ড থাকা দরকার ছিল। প্রধানমন্ত্রী একটা স্ট্যান্ডার্ড সেট করে দিতে বলেছেন। তাহলে হয়তো এ সমস্যার সমাধান হবে। তিনি বলেন, এটা (ব্যাটারিচালিত রিকশা) এক্সিডেন্ট বেশি হয়, এটা সমস্যা। ভারসাম্য কম। সে বিষয়টি নিয়ে বিএসটিআই কাজ করতে পারে কি না সেটা দেখা হবে। এই বাহন এখন দেশের ২০ লাখ মানুষ চালাচ্ছে। বড় কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। অনেক দেশে এটা চলছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক শেষে গতকাল বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের জানান, একটি বিধিমালা করে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কোনো অবস্থাতেই মহাসড়ক কিংবা বড় সড়কে তারা (অটোরিকশা) যেতে পারবেন না, সে বিষয়গুলো নিশ্চিত করে সংশি¬ষ্ট আইন-বিধিমালা যথাযথভাবে সংশোধন কিংবা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারপ্রধান সড়ক বিভাগ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছেন। অটোরিকশা বন্ধের সিদ্ধান্তের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী জানতেন না জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, তোমরা আমাকে জানাওনি। তাদের জীবিকার কী ব্যবস্থা করা হয়েছে, সে প্রশ্ন রেখেছেন তিনি। তাদের জীবিকার ব্যবস্থা না করে তাদের সম্পর্কে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া যৌক্তিক মনে করেননি প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, আমার সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি। আমি জানিনি। আমার সঙ্গে তোমাদের কথা বলা উচিত ছিল। তিনি এভাবেই বলেছেন। তাদের জীবিকার ব্যবস্থা না করে এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া যৌক্তিক হয়নি।

অপরদিকে অটোরিকশা বন্ধের প্রতিবাদে গত রোববার রাজধানীর মিরপুর, পল্লবী ও কাফরুল এলাকায় আন্দোলনকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেফতার ৪২ জন অটোরিকশা শ্রমিককে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল সোমবার তাদের ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর তাদের মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। আবেদনের প্রেক্ষিতে মিরপুরের মামলায় ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মইনুল ইসলাম ও পল্লবীর মামলায় মো. শাকিল আহাম্মদ তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। মিরপুর থানার মামলায় কারাগারে যাওয়া আসামিরা হলেন- অনিক, মো. আবু বক্কর, মো. আলী হোসেন, মো. সাগর মৃধা, মো. সাহর শেখ, মো. বকুল হোসেন, মো. নুরুল ইসলাম, মো. মাজেদ আলী, মো. মোতাহার হোসেন, মো. দুলু মিয়া ওরফে বুলু, নবী হোসেন, মো. সাহাবুদ্দিন, রুহুল আমিন, মো. জুনায়েদ ও মো. জাকির হোসেন। এছাড়া পল্লবী থানার মামলায় কারাগারে যাওয়া আসামিরা হলেন- রানা চৌধুরী, রাসেল, জাকির হোসেন, মেহেদী হাসান, জালাল শরীফ, মো. আব্দুল মোতালেব, মোরসালিন মিয়া, মো. শাহাজাহান মিয়া, মো. রাসেল, মো. ওয়াজিব, আনোয়ার হোসেন, মো. আতাউর রহমান, মো. সুমন, নূর মোহাম্মদ ও শরিফ।

এর আগে গত রোববার দিনভর সড়কে অটোরিকশা চালানোর দাবিতে মিরপুর, পল্লবী ও কাফরুল এলাকায় ব্যাপক বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ গাড়ি ভাঙচুর ও পুলিশ বক্সে আগুন দেয় অটোরিকশাচালকরা। এতে পল্লবীতে পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ঘটনায় বেশ কয়েকজন পুলিশ আহত ও শর্টগানের গুলিতে পথচারী দর্জিশ্রমিক আহত হন। মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) জসীম উদ্দীন মোল্ল্যা দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, গত রোববার মিরপুর, পল্লবী ও কাফরুল এলাকায় অটোরিকশা চালকদের দিনভর তাণ্ডব চালানোয় মিরপুর মডেল থানায় একটি, পল্লবী থানায় দুটি, ও কাফরুল থানায় একটি মামলা করেছে পুলিশ। মামলায় কয়েকজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামাসহ ২৭০০ জনকে আসামি করা হয়। ওইসব মামলায় ৪২ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর গতকাল দুপুরের দিকে আদালতের নির্দেশে তাদেরকে কারাগারে পাঠানো হয়। তিনি আরও বলেন, এছাড়াও কাফরুল ও মিরপুর মডেল থানায় পৃথক আরো দুটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। পুলিশের কাজে বাধা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, নাশকতা ও পুলিশের উপর হামলায় জন্য বিভিন্ন ধারায় এসব মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় কয়েকজনের নাম উল্লেখ করা হলেও বেশিরভাগই অজ্ঞাত আসামি। ঘটনার দিনের বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগ্রহ করা সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আসামিদের গ্রেপ্তার করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে কাজ করছে বলেও জানান মিরপুর বিভাগের পুলিশের এই শীর্ষ কর্মকর্তা।