০১:৫৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঝুঁকিতে ইসরায়েল

ফিলিস্তিনকে ইউরোপীয় দেশগুলোর স্বীকৃতি

➤নেতানিয়াহুর গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় বিভক্ত পশ্চিমা বিশ্ব
➤ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিরোধিতা হোয়াইট হাউসের
➤ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে নেতানিয়াহুকে অনুরোধ বিরোধীদলীয় নেতার
➤ ফিলিস্তিনকে মুক্ত করার প্রতিশ্রুতি পূরণ হবে : আয়াতুল্লাহ খামেনি
➤আমরা একসঙ্গেই ইসরায়েলের ধ্বংস দেখব -খামেনিকে হানিয়াহ

 

 

গাজা যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান ফিলিস্তিনি হতাহত নিয়ে এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে রয়েছে দখলদার ইসরায়েল। ফলে দেশটি বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে এমন আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। তবে এবার যেন সে আশঙ্কাকে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেলো ইউরোপের তিন দেশ- স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও নরওয়ে। গত বুধবার ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে তারা। ইতোমধ্যেই দেশগুলো থেকে রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করেছে ইসরায়েল। তবে কি বিশ্ব থেকে ইসরায়েল ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্ন হতে চলেছেÑ এমন প্রশ্নই সবার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।

 

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় তিন দেশের এমন সিদ্ধান্তকে ‘জঘন্য’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন ইসরায়েলি সরকারের এক মুখপাত্র। তিনি বলেছেন, এই পদক্ষেপ গাজা বা অধিকৃত পশ্চিম তীরের ধ্বংসাবস্থা ঠেকাতে সামান্যই ভূমিকা রাখবে। কেননা, পশ্চিম তীরে তারল্য সংকটে ভোগা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বেসামরিক কর্মচারীদের বেতন দিতেই হিমশিম খাচ্ছে।

 

গাজায় যুদ্ধ অব্যাহত থাকলে ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র আটকে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল ওয়াশিংটন। এর আগে দেশটির বসতি স্থাপনকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল একাধিক দেশ। এরপর সাম্প্রতিক দিনে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এবং দেশটির প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে সম্ভাব্য গ্রেফতারি পরোয়ানার আবেদন পর্যন্ত করা হয়েছে। এতে করে দেশটি বিশ্ব থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
এদিকে, ইউরোপীয় তিনটি দেশের এই সিদ্ধান্তকে ‘সন্ত্রাসবাদের পুরস্কার’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন নেতানিয়াহু। একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ‘৭ অক্টোবরের গণহত্যা পুনরাবৃত্তি করার চেষ্টা করবে’ বলে সতর্ক করেছেন তিনি। নেতানিয়াহুর এমন মন্তব্য গাজা যুদ্ধকে ঘিরে এই অঞ্চলের পরিস্থিতি কতটা তিক্ত হয়ে উঠেছে তারই বহিঃপ্রকাশ। একইসঙ্গে ইসরায়েলের পাশাপাশি একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ওপর ভিত্তি করে এই অঞ্চলে একটি রাজনৈতিক মীমাংসার সম্ভাবনা কতটা ক্ষীণ এবং একটি শান্তিচুক্তির আলোচনা যে আপাতদৃষ্টিতে সম্ভব নয়। অসলো, মাদ্রিদ এবং ডাবলিন থেকে নিজ দেশের রাষ্ট্রদূতদের প্রত্যাহার করেছে ইসরায়েল। পাশাপাশি ইসরায়েলে নরওয়েজিয়ান, আইরিশ এবং স্প্যানিশ রাষ্ট্রদূতদের তলব করে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাদেরকে ৭ অক্টোবর হামাসের দ্বারা ইসরায়েলে হামলার ভিডিও ফুটেজ দেখাতে বলা হয়েছে।

নেতানিয়াহুর গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় বিভক্ত পশ্চিমা বিশ্ব:
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টসহ হামাসের তিনজন শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিভক্ত হয়ে পড়েছে পশ্চিমা বিশ্ব। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য আইসিসির এই আবেদনে সমালোচনা করেছে। অন্যদিকে নরওয়ে, ডেনমার্ক, সুইজারল্যান্ডসহ বেশ কিছু পশ্চিমা দেশ এই উদ্যোগকে সমর্থন দিয়েছে। গত সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ইসরায়েল ও হামাসের পাঁচজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন জানান আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি করিম খান। তারা হলেন- ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট, গাজা উপত্যকার হামাস প্রধান ইয়াহিয়া সিনাওয়ার, আল ক্বাসাম ব্রিগেডের প্রধান মোহাম্মদ দাইফ এবং হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়াহ।

 

ইসরায়েলের ঐতিহাসিক মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও অনুমিতভাবে আইসিসির এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন। বাইডেনের মতে, আইসিসির এই আবেদন রীতিমতো লজ্জাজনক। আইসিসির সব সদস্য রাষ্ট্র পুতিনকে গ্রেপ্তারের আবেদন কার্যকর করার আহ্বান জানান অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আবেদনের সমালোচনা করে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকও বলেছেন, এতে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘর্ষ, জিম্মি পরিস্থিতি ও মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর অবস্থার কোনো সমাধান হবে না। আইসিসির স্বাধীনতা এবং কার্যকারিতার প্রতি সম্মান প্রকাশ করেছে জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সামাজিক প্ল্যাটফরম এক্সে দেওয়া এক বিবৃতিতে স্পেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইসিসির স্বাধীনতা এবং নিরপেক্ষতার প্রতি তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। জাতিসংঘে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের প্রতিনিধি প্যাস্কেল বেইরিসউইল নিরাপত্তা পরিষদে দেওয়া বক্তৃতায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানার অনুরোধের উল্লেখ করে আইসিসিকে সমর্থন করা এবং আদালতের স্বাধীনতাকে সম্মান করার ওপর জোর দিয়েছে। ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স লোককে রাসমুসেন গ্রেপ্তারি পরোয়ানার অনুরোধের প্রতি সমর্থন জানিয়ে আইসিসির স্বাধীনতার প্রতি গুরুত্ব সহকারে সম্মান জানানোর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন।

 

নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসপেন বার্থ ইডে স্থানীয় গণমাধ্যমের কাছে নেতানিয়াহু ও গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার জন্য আইসিসির অনুরোধের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা আইসিসি এবং এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রতি সম্মান প্রকাশ করেছেন। স্লোভেনিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক্সে দেওয়া পোস্টে নেতানিয়াহু ও গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার অনুরোধকে স্বাগত জানিয়েছে। চিলির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি লিখিত বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, চিলি আইসিসির এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানাকে স্বীকৃতি দেয় এবং এর বিচার প্রক্রিয়ায় সহায়তার জন্য সব রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা। কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রো আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি করিম খানের অনুরোধকে সঠিক পদক্ষেপ বলে বর্ণনা করেছেন এবং আস্থা প্রকাশ করেছেন যে, আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানার জন্য খানের অনুরোধ গ্রহণ করবে।

 

মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু নেতানিয়াহু এবং গ্যালান্টের বিরুদ্ধে আইসিসির উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর বিন হামাদ আল-বুসাইদি করিম খানের অনুরোধকে স্বাগত জানিয়েছেন। জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি আইসিসির প্রচেষ্টাকে সম্মান করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন। আফ্রিকান ইউনিয়ন কমিশনের চেয়ারপারসন মুসা ফাকি মাহামত ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনুরোধটিকে অত্যন্ত যুক্তিসংগত বলে মনে করেন। তবে এ নিয়ে বিলম্বের সমালোচনা করে তিনি বলেন যে, এটি আরও আগে করা উচিত ছিল।

 

এবার ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে নেতানিয়াহুর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ। নির্দিষ্ট কিছু ‘শর্তের অধীনে’ এই পদক্ষেপ নিতে বলেছেন তিনি। গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানিয়ে লাপিদ বলেন, নেতানিয়াহুর ঘোষণা করা উচিত, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যোগদানসহ কিছু শর্ত এবং নির্দিষ্ট গ্যারান্টির অধীনে তিনি একটি ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র মেনে নিতে ইচ্ছুক। তবে এই শর্তাবলী এবং গ্যারান্টি বা প্রস্তাবিত ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতার প্রকৃতি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে কিছু বলেননি তিনি।

 

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ‘একতরফা স্বীকৃতির’ বিরোধিতা করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ফিলিস্তিনের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে স্পেন, আয়ারল্যান্ড এবং নরওয়ের সাম্প্রতিক পদক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে হোয়াইট হাউস বুধবার এ কথা বলেছে। জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের নারী মুখপাত্র অ্যাড্রিয়েন ওয়াটসন বলেছেন, বাইডেন তার দীর্ঘ ক্যারিয়ার জুড়ে ‘দুই-রাষ্ট্রীয় সমাধানের শক্তিশালী সমর্থক’। তবে বাইডেন মনে করেন, দলগুলোর মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে বাস্তবে রূপ দেয়া সম্ভব, একতরফা স্বীকৃতির মাধ্যমে নয়। মুখপাত্র তার মন্তব্যে তিনটি ইউরোপীয় দেশের ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা সরাসরি উল্লেখ করেননি। ইউরোপের এই তিনটি দেশই যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে বিবেচিত।

 

এদিকে ফিলিস্তিনকে ইসরাইলের হাত থেকে মুক্ত করার ঐশ্বরিক প্রতিশ্রুতি পূরণ হবে বলে জানিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। তিনি বলেন, গাজার জনগণের তাদের প্রতিরোধ বিশ্বকে অবাক করেছে। কে বিশ্বাস করবে যে একদিন মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের সমর্থনে স্লোগান উঠবে এবং ফিলিস্তিনের পতাকা উঠবে। কিন্তু সেটা আজ ঘটেছে। কে বিশ্বাস করবে যে, একদিন জাপানে ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিক্ষোভে ফার্সি ভাষায় ‘ইসরাইলের মৃত্যু’ স্লোগান দেওয়া হবে? সেটি আজ হচ্ছে। যে ফিলিস্তিন সম্পর্কিত ভবিষ্যতে এমন ঘটনা ঘটতে পারে, যা বর্তমানে অকল্পনীয় বলে মনে হতে পারে। আল্লাহর ঐশ্বরিক ক্ষমতায় সেই দিন আসবে যখন ফিলিস্তিন মুক্ত হবে এবং একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে।

 

গত বুধবার ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি এবং তার সফরসঙ্গীর মৃত্যুর পর ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান ইসমাইল হানিয়াহসহ একটি প্রতিনিধিদল খামেনির সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকে আয়াতুল্লাহ খামেনিকে হামাস প্রধান হানিয়াহ বলেন, ইনশাআল্লাহ আমরা একসঙ্গেই সেই দিনটি দেখব। হামাসপ্রধান ইরানের সদ্যপ্রয়াত প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন এবং ফিলিস্তিনের পক্ষ থেকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতাকে সান্ত্বনা জানান। তারা ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও গাজায় ইসরায়েলের চলমান হামলার নিয়ে কথা বলেন। এ সময় খামেনি যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ইসরায়েলি আগ্রাসনবিরোধী আন্দোলন নিয়েও মন্তব্য করেন। বৈঠকের আগে হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া ও লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর উপনেতা নাঈম কাশেম ও ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের প্রতিনিধিরা প্রয়াত প্রেসিডেন্টের জানাজায় অংশ নেন।

 

 

ফিলিস্তিনপন্থিদের তোপের মুখে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী:

গত বুধবার প্রতিনিধি পরিষদের এক কমিটির সভায় হাউস অ্যাপ্রোপ্রিয়েশন কমিটির আইন প্রণেতাদের সামনে বক্তব্য দেওয়ার সময় ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীদের তোপের মুখে পড়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। এ সময় এক ব্যক্তি চিৎকার করতে থাকেন। তিনি বলছিলেন, আমাদের সবাইকে মুক্তি দেওয়ার জন্য ফিলিস্তিনকে মুক্ত করুন। সব মুক্তির সংগ্রামের পক্ষে আমরা।’ এ সময় পুলিশ চেম্বার থেকে ওই ব্যক্তিকে সরিয়ে দেয়। তখন তিনি বলতে থাকেন, ‘আমাকে নয়; আপনাদের উচিত ব্লিঙ্কেনকে গ্রেপ্তার করা।’ এর আগে মঙ্গলবার কংগ্রেসের এক শুনানিতে ব্লিঙ্কেন ডান ও বামপন্থিদের উভয়পক্ষের সমালোচনার মুখে পড়েন। এ সময় তারা সেখানে চিৎকার করে বলতে থাকেন, ব্লিঙ্কেনের হাতে রক্ত লেগে আছে। এছাড়া এক প্রতিবাদকারী ব্লিঙ্কেনের ওপর আক্রমণের চেষ্টা করেন। তিনি তাকে অপরাধী বলে আখ্যা দেন। পরে ওই বিক্ষোভকারীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বের করে নিয়ে যান।

 

 

নিরাপত্তার অভাবে রাফাহতে ত্রাণ বিতরণ স্থগিত জাতিসংঘের:
গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় নগরী রাফার পূর্বাংশে হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান আরো তীব্র হয়েছে। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ সতর্ক করে বলেছে, চলমান পরিস্থিতিতে তারা তাদের ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র এবং বিশ্ব খাদ্য প্রকল্পের-ডব্লিউএফপি গুদামে যেতে পারছে না। এমনকি তাদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে গত ১০ দিনে কোনো ওষুধ সরবরাহ করা হয়নি বলে দাবি করেছে ইউএনআরডব্লিউএ। এমন একটি সময়ে ইউএনআরডব্লিউএ থেকে ত্রাণ স্বল্পতার কথা জানানো হয়েছে যখন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, গাজায় ত্রাণ পৌঁছানোর জন্য ভূমধ্যসাগরে তাদের তৈরি নতুন ভাসমান ঘাট দিয়ে যে ৫৬৯ টন খাবার ও অন্যান্য ত্রাণ প্রবেশ করেছে সেগুলো নানা দাতব্য সংস্থা দ্বারা গাজার ফিলিস্তিনিদের মধ্যে বিতরণ করা হয়ে গেছে বলে তারা বিশ্বাস করে না।

 

 

পশ্চিম তীরে দূতাবাস চালুর ঘোষণা কলম্বিয়ার:
এবার পশ্চিম তীরের রামাল্লায় দূতাবাস চালু করার ঘোষণা দিয়েছে লাতিন আমেরিকার দেশ কলম্বিয়া। দেশটির প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রো গাজায় চালানো হামলাকে গণহত্যার সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি গত বুধবার এক ঘোষণায় জানিয়েছেন, তার দেশ রামাল্লায় একটি দূতাবাস চালু করবে। এর আগে প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রো ঘোষণা দেন, তার সরকার ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করবে। গাজায় চালানো ধ্বংসযজ্ঞের কারণেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গুস্তাভো পেট্রো ইসরায়েলের কট্টর সমালোচক হিসেবে বেশ পরিচিত। কলম্বিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী লুইস মুরিলো বলেন, পশ্চিম তীরের রামাল্লায় কলম্বিয়ার দূতাবাস স্থাপন করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রো।

 

 

যুদ্ধবিরতি ইস্যুতে মধ্যস্থতা না করার হুমকি মিসরের:
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি বিষয়ক আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী দেশ হিসেবে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করার হুমকি দিয়েছে মিসর। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর একটি প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় গত বুধবার এই হুমকি দিয়েছে দেশটি। মিসরীয় গোয়েন্দারা সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের শর্তাবলি পরিবর্তন এবং একটি চুক্তি বাতিল করেছে এমন অভিযোগ এনেছিল সিএনএন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে মিসরের স্টেট ইনফরমেশন সার্ভিসের প্রধান দিয়া রাশওয়ান বলেছেন, ‘মিসরের মধ্যস্থতা প্রচেষ্টায় সন্দেহ প্রকাশ এবং তা বিধ্বস্ত করার প্রচেষ্টা গাজা ও এই অঞ্চলের সামগ্রিক পরিস্থিতিকে শুধু আরও জটিলতার দিকেই নিয়ে যাবে। এমনকি তা মিসরকে চলমান সংঘাতে মধ্যস্থতা করা থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকতেও প্রভাবিত করতে পারে।’

জনপ্রিয় সংবাদ

সপরিবারে হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছেছেন তারেক রহমান

বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঝুঁকিতে ইসরায়েল

ফিলিস্তিনকে ইউরোপীয় দেশগুলোর স্বীকৃতি

আপডেট সময় : ০৬:৫৭:৩৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ মে ২০২৪

➤নেতানিয়াহুর গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় বিভক্ত পশ্চিমা বিশ্ব
➤ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিরোধিতা হোয়াইট হাউসের
➤ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে নেতানিয়াহুকে অনুরোধ বিরোধীদলীয় নেতার
➤ ফিলিস্তিনকে মুক্ত করার প্রতিশ্রুতি পূরণ হবে : আয়াতুল্লাহ খামেনি
➤আমরা একসঙ্গেই ইসরায়েলের ধ্বংস দেখব -খামেনিকে হানিয়াহ

 

 

গাজা যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান ফিলিস্তিনি হতাহত নিয়ে এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে রয়েছে দখলদার ইসরায়েল। ফলে দেশটি বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে এমন আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। তবে এবার যেন সে আশঙ্কাকে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেলো ইউরোপের তিন দেশ- স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও নরওয়ে। গত বুধবার ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে তারা। ইতোমধ্যেই দেশগুলো থেকে রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করেছে ইসরায়েল। তবে কি বিশ্ব থেকে ইসরায়েল ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্ন হতে চলেছেÑ এমন প্রশ্নই সবার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।

 

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় তিন দেশের এমন সিদ্ধান্তকে ‘জঘন্য’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন ইসরায়েলি সরকারের এক মুখপাত্র। তিনি বলেছেন, এই পদক্ষেপ গাজা বা অধিকৃত পশ্চিম তীরের ধ্বংসাবস্থা ঠেকাতে সামান্যই ভূমিকা রাখবে। কেননা, পশ্চিম তীরে তারল্য সংকটে ভোগা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বেসামরিক কর্মচারীদের বেতন দিতেই হিমশিম খাচ্ছে।

 

গাজায় যুদ্ধ অব্যাহত থাকলে ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র আটকে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল ওয়াশিংটন। এর আগে দেশটির বসতি স্থাপনকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল একাধিক দেশ। এরপর সাম্প্রতিক দিনে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এবং দেশটির প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে সম্ভাব্য গ্রেফতারি পরোয়ানার আবেদন পর্যন্ত করা হয়েছে। এতে করে দেশটি বিশ্ব থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
এদিকে, ইউরোপীয় তিনটি দেশের এই সিদ্ধান্তকে ‘সন্ত্রাসবাদের পুরস্কার’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন নেতানিয়াহু। একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ‘৭ অক্টোবরের গণহত্যা পুনরাবৃত্তি করার চেষ্টা করবে’ বলে সতর্ক করেছেন তিনি। নেতানিয়াহুর এমন মন্তব্য গাজা যুদ্ধকে ঘিরে এই অঞ্চলের পরিস্থিতি কতটা তিক্ত হয়ে উঠেছে তারই বহিঃপ্রকাশ। একইসঙ্গে ইসরায়েলের পাশাপাশি একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ওপর ভিত্তি করে এই অঞ্চলে একটি রাজনৈতিক মীমাংসার সম্ভাবনা কতটা ক্ষীণ এবং একটি শান্তিচুক্তির আলোচনা যে আপাতদৃষ্টিতে সম্ভব নয়। অসলো, মাদ্রিদ এবং ডাবলিন থেকে নিজ দেশের রাষ্ট্রদূতদের প্রত্যাহার করেছে ইসরায়েল। পাশাপাশি ইসরায়েলে নরওয়েজিয়ান, আইরিশ এবং স্প্যানিশ রাষ্ট্রদূতদের তলব করে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাদেরকে ৭ অক্টোবর হামাসের দ্বারা ইসরায়েলে হামলার ভিডিও ফুটেজ দেখাতে বলা হয়েছে।

নেতানিয়াহুর গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় বিভক্ত পশ্চিমা বিশ্ব:
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টসহ হামাসের তিনজন শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিভক্ত হয়ে পড়েছে পশ্চিমা বিশ্ব। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য আইসিসির এই আবেদনে সমালোচনা করেছে। অন্যদিকে নরওয়ে, ডেনমার্ক, সুইজারল্যান্ডসহ বেশ কিছু পশ্চিমা দেশ এই উদ্যোগকে সমর্থন দিয়েছে। গত সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ইসরায়েল ও হামাসের পাঁচজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন জানান আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি করিম খান। তারা হলেন- ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট, গাজা উপত্যকার হামাস প্রধান ইয়াহিয়া সিনাওয়ার, আল ক্বাসাম ব্রিগেডের প্রধান মোহাম্মদ দাইফ এবং হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়াহ।

 

ইসরায়েলের ঐতিহাসিক মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও অনুমিতভাবে আইসিসির এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন। বাইডেনের মতে, আইসিসির এই আবেদন রীতিমতো লজ্জাজনক। আইসিসির সব সদস্য রাষ্ট্র পুতিনকে গ্রেপ্তারের আবেদন কার্যকর করার আহ্বান জানান অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আবেদনের সমালোচনা করে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকও বলেছেন, এতে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘর্ষ, জিম্মি পরিস্থিতি ও মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর অবস্থার কোনো সমাধান হবে না। আইসিসির স্বাধীনতা এবং কার্যকারিতার প্রতি সম্মান প্রকাশ করেছে জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সামাজিক প্ল্যাটফরম এক্সে দেওয়া এক বিবৃতিতে স্পেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইসিসির স্বাধীনতা এবং নিরপেক্ষতার প্রতি তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। জাতিসংঘে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের প্রতিনিধি প্যাস্কেল বেইরিসউইল নিরাপত্তা পরিষদে দেওয়া বক্তৃতায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানার অনুরোধের উল্লেখ করে আইসিসিকে সমর্থন করা এবং আদালতের স্বাধীনতাকে সম্মান করার ওপর জোর দিয়েছে। ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স লোককে রাসমুসেন গ্রেপ্তারি পরোয়ানার অনুরোধের প্রতি সমর্থন জানিয়ে আইসিসির স্বাধীনতার প্রতি গুরুত্ব সহকারে সম্মান জানানোর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন।

 

নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসপেন বার্থ ইডে স্থানীয় গণমাধ্যমের কাছে নেতানিয়াহু ও গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার জন্য আইসিসির অনুরোধের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা আইসিসি এবং এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রতি সম্মান প্রকাশ করেছেন। স্লোভেনিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক্সে দেওয়া পোস্টে নেতানিয়াহু ও গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার অনুরোধকে স্বাগত জানিয়েছে। চিলির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি লিখিত বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, চিলি আইসিসির এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানাকে স্বীকৃতি দেয় এবং এর বিচার প্রক্রিয়ায় সহায়তার জন্য সব রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা। কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রো আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি করিম খানের অনুরোধকে সঠিক পদক্ষেপ বলে বর্ণনা করেছেন এবং আস্থা প্রকাশ করেছেন যে, আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানার জন্য খানের অনুরোধ গ্রহণ করবে।

 

মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু নেতানিয়াহু এবং গ্যালান্টের বিরুদ্ধে আইসিসির উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর বিন হামাদ আল-বুসাইদি করিম খানের অনুরোধকে স্বাগত জানিয়েছেন। জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি আইসিসির প্রচেষ্টাকে সম্মান করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন। আফ্রিকান ইউনিয়ন কমিশনের চেয়ারপারসন মুসা ফাকি মাহামত ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনুরোধটিকে অত্যন্ত যুক্তিসংগত বলে মনে করেন। তবে এ নিয়ে বিলম্বের সমালোচনা করে তিনি বলেন যে, এটি আরও আগে করা উচিত ছিল।

 

এবার ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে নেতানিয়াহুর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ। নির্দিষ্ট কিছু ‘শর্তের অধীনে’ এই পদক্ষেপ নিতে বলেছেন তিনি। গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানিয়ে লাপিদ বলেন, নেতানিয়াহুর ঘোষণা করা উচিত, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যোগদানসহ কিছু শর্ত এবং নির্দিষ্ট গ্যারান্টির অধীনে তিনি একটি ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র মেনে নিতে ইচ্ছুক। তবে এই শর্তাবলী এবং গ্যারান্টি বা প্রস্তাবিত ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতার প্রকৃতি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে কিছু বলেননি তিনি।

 

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ‘একতরফা স্বীকৃতির’ বিরোধিতা করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ফিলিস্তিনের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে স্পেন, আয়ারল্যান্ড এবং নরওয়ের সাম্প্রতিক পদক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে হোয়াইট হাউস বুধবার এ কথা বলেছে। জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের নারী মুখপাত্র অ্যাড্রিয়েন ওয়াটসন বলেছেন, বাইডেন তার দীর্ঘ ক্যারিয়ার জুড়ে ‘দুই-রাষ্ট্রীয় সমাধানের শক্তিশালী সমর্থক’। তবে বাইডেন মনে করেন, দলগুলোর মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে বাস্তবে রূপ দেয়া সম্ভব, একতরফা স্বীকৃতির মাধ্যমে নয়। মুখপাত্র তার মন্তব্যে তিনটি ইউরোপীয় দেশের ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা সরাসরি উল্লেখ করেননি। ইউরোপের এই তিনটি দেশই যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে বিবেচিত।

 

এদিকে ফিলিস্তিনকে ইসরাইলের হাত থেকে মুক্ত করার ঐশ্বরিক প্রতিশ্রুতি পূরণ হবে বলে জানিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। তিনি বলেন, গাজার জনগণের তাদের প্রতিরোধ বিশ্বকে অবাক করেছে। কে বিশ্বাস করবে যে একদিন মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের সমর্থনে স্লোগান উঠবে এবং ফিলিস্তিনের পতাকা উঠবে। কিন্তু সেটা আজ ঘটেছে। কে বিশ্বাস করবে যে, একদিন জাপানে ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিক্ষোভে ফার্সি ভাষায় ‘ইসরাইলের মৃত্যু’ স্লোগান দেওয়া হবে? সেটি আজ হচ্ছে। যে ফিলিস্তিন সম্পর্কিত ভবিষ্যতে এমন ঘটনা ঘটতে পারে, যা বর্তমানে অকল্পনীয় বলে মনে হতে পারে। আল্লাহর ঐশ্বরিক ক্ষমতায় সেই দিন আসবে যখন ফিলিস্তিন মুক্ত হবে এবং একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে।

 

গত বুধবার ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি এবং তার সফরসঙ্গীর মৃত্যুর পর ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান ইসমাইল হানিয়াহসহ একটি প্রতিনিধিদল খামেনির সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকে আয়াতুল্লাহ খামেনিকে হামাস প্রধান হানিয়াহ বলেন, ইনশাআল্লাহ আমরা একসঙ্গেই সেই দিনটি দেখব। হামাসপ্রধান ইরানের সদ্যপ্রয়াত প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন এবং ফিলিস্তিনের পক্ষ থেকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতাকে সান্ত্বনা জানান। তারা ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও গাজায় ইসরায়েলের চলমান হামলার নিয়ে কথা বলেন। এ সময় খামেনি যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ইসরায়েলি আগ্রাসনবিরোধী আন্দোলন নিয়েও মন্তব্য করেন। বৈঠকের আগে হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া ও লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর উপনেতা নাঈম কাশেম ও ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের প্রতিনিধিরা প্রয়াত প্রেসিডেন্টের জানাজায় অংশ নেন।

 

 

ফিলিস্তিনপন্থিদের তোপের মুখে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী:

গত বুধবার প্রতিনিধি পরিষদের এক কমিটির সভায় হাউস অ্যাপ্রোপ্রিয়েশন কমিটির আইন প্রণেতাদের সামনে বক্তব্য দেওয়ার সময় ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীদের তোপের মুখে পড়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। এ সময় এক ব্যক্তি চিৎকার করতে থাকেন। তিনি বলছিলেন, আমাদের সবাইকে মুক্তি দেওয়ার জন্য ফিলিস্তিনকে মুক্ত করুন। সব মুক্তির সংগ্রামের পক্ষে আমরা।’ এ সময় পুলিশ চেম্বার থেকে ওই ব্যক্তিকে সরিয়ে দেয়। তখন তিনি বলতে থাকেন, ‘আমাকে নয়; আপনাদের উচিত ব্লিঙ্কেনকে গ্রেপ্তার করা।’ এর আগে মঙ্গলবার কংগ্রেসের এক শুনানিতে ব্লিঙ্কেন ডান ও বামপন্থিদের উভয়পক্ষের সমালোচনার মুখে পড়েন। এ সময় তারা সেখানে চিৎকার করে বলতে থাকেন, ব্লিঙ্কেনের হাতে রক্ত লেগে আছে। এছাড়া এক প্রতিবাদকারী ব্লিঙ্কেনের ওপর আক্রমণের চেষ্টা করেন। তিনি তাকে অপরাধী বলে আখ্যা দেন। পরে ওই বিক্ষোভকারীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বের করে নিয়ে যান।

 

 

নিরাপত্তার অভাবে রাফাহতে ত্রাণ বিতরণ স্থগিত জাতিসংঘের:
গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় নগরী রাফার পূর্বাংশে হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান আরো তীব্র হয়েছে। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ সতর্ক করে বলেছে, চলমান পরিস্থিতিতে তারা তাদের ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র এবং বিশ্ব খাদ্য প্রকল্পের-ডব্লিউএফপি গুদামে যেতে পারছে না। এমনকি তাদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে গত ১০ দিনে কোনো ওষুধ সরবরাহ করা হয়নি বলে দাবি করেছে ইউএনআরডব্লিউএ। এমন একটি সময়ে ইউএনআরডব্লিউএ থেকে ত্রাণ স্বল্পতার কথা জানানো হয়েছে যখন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, গাজায় ত্রাণ পৌঁছানোর জন্য ভূমধ্যসাগরে তাদের তৈরি নতুন ভাসমান ঘাট দিয়ে যে ৫৬৯ টন খাবার ও অন্যান্য ত্রাণ প্রবেশ করেছে সেগুলো নানা দাতব্য সংস্থা দ্বারা গাজার ফিলিস্তিনিদের মধ্যে বিতরণ করা হয়ে গেছে বলে তারা বিশ্বাস করে না।

 

 

পশ্চিম তীরে দূতাবাস চালুর ঘোষণা কলম্বিয়ার:
এবার পশ্চিম তীরের রামাল্লায় দূতাবাস চালু করার ঘোষণা দিয়েছে লাতিন আমেরিকার দেশ কলম্বিয়া। দেশটির প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রো গাজায় চালানো হামলাকে গণহত্যার সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি গত বুধবার এক ঘোষণায় জানিয়েছেন, তার দেশ রামাল্লায় একটি দূতাবাস চালু করবে। এর আগে প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রো ঘোষণা দেন, তার সরকার ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করবে। গাজায় চালানো ধ্বংসযজ্ঞের কারণেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গুস্তাভো পেট্রো ইসরায়েলের কট্টর সমালোচক হিসেবে বেশ পরিচিত। কলম্বিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী লুইস মুরিলো বলেন, পশ্চিম তীরের রামাল্লায় কলম্বিয়ার দূতাবাস স্থাপন করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রো।

 

 

যুদ্ধবিরতি ইস্যুতে মধ্যস্থতা না করার হুমকি মিসরের:
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি বিষয়ক আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী দেশ হিসেবে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করার হুমকি দিয়েছে মিসর। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর একটি প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় গত বুধবার এই হুমকি দিয়েছে দেশটি। মিসরীয় গোয়েন্দারা সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের শর্তাবলি পরিবর্তন এবং একটি চুক্তি বাতিল করেছে এমন অভিযোগ এনেছিল সিএনএন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে মিসরের স্টেট ইনফরমেশন সার্ভিসের প্রধান দিয়া রাশওয়ান বলেছেন, ‘মিসরের মধ্যস্থতা প্রচেষ্টায় সন্দেহ প্রকাশ এবং তা বিধ্বস্ত করার প্রচেষ্টা গাজা ও এই অঞ্চলের সামগ্রিক পরিস্থিতিকে শুধু আরও জটিলতার দিকেই নিয়ে যাবে। এমনকি তা মিসরকে চলমান সংঘাতে মধ্যস্থতা করা থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকতেও প্রভাবিত করতে পারে।’