আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের মূল লক্ষ্য চলমান অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও সংকট দূর এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা। সারাবিশ্বে অর্থনীতির সংকট কালে প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবসম্মত ও গণমুখী।
তিনি বলেন, ‘এই বাজেটর লক্ষ্য দেশের অর্থনীতিকে ধীরে ধীরে করোনা অতিমারি এবং বিশ্বে চলমান যুদ্ধ পূর্ববর্তী উচ্চ গতিশীল অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে ফিরিয়ে নেয়া। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অর্থনীতির সংকটকালে এ বাজেট বাস্তবসম্মত ও গণমুখী।’
ওবায়দুল কাদের আজ শনিবার (০৮ জুন)দুপুরে বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ সব কথা বলেন।
প্রস্তাবিত বাজেটকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ, উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’ এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ বাজেটকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে স্বাগত জানাচ্ছি। ভারসাম্যমূলক একটি বাজেট উপহার দেবার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।
গত ৬ জুন জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী “টেকসই উন্নয়নের পরিক্রমায় স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রা” শীর্ষক ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার জাতীয় বাজেট পেশ করেছেন। এই বাজেটের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মানের অঙ্গীকার।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী, বাংলাদেশ এখন শুধু ডাল-ভাতে নয়, পুষ্টি উৎপাদনেও স্বয়ংসম্পূর্ণ। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে সব কয়টি সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচকে। এ সময়ে মোট দেশজ উৎপাদন গড়ে ৬.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে যা সারা দুনিয়ায় উচ্চতম প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশকে অন্যতম করে তুলেছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ২০০৫ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার দেশের ৪০ শতাংশের বেশি মানুষকে দারিদ্র্যের মধ্যে রেখে গিয়েছিল। জনগণের ধারাবাহিক সমর্থন নিয়ে আমাদের সরকার মাত্র ১৪ বছরের মধ্যে সে দারিদ্র্য ১৮.৭ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। অতি দারিদ্র এখন মাত্র ৫.৬ শতাংশ।
তিনি বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক কম প্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি নিরুৎসাহিত করেছে। এতে আমদানি কমেছে বছরে ১৫ শতাংশের বেশি হারে যার ফলে সংকটকালেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী ৩ মাসের বেশি আমদানির জন্য ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে। তা সত্ত্বেও টাকার মান ধরে রাখতে রিজার্ভ থেকে ২২ বিলিয়ন ডলার খরচ করতে হয়েছে ফলে রিজার্ভ অনেক কমে গিয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, মুদ্রানীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এবারের বাজেটে রাজস্বনীতি নির্ধারন করা হয়েছে যাতে কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যয় নিরুৎসাহিত করা হয়েছে, রকারের কৃচ্ছ্রসাধন কর্মসূচী চলমান রাখা হয়েছে, কর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আমদানি বিকল্প উৎপাদন উৎসাহিত করা হয়েছে এবং কৃষি ও শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রণোদনা ও ভর্তুকি চলমানরেখে তার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। বাজেটের এ সকল উদ্যোগ একদিকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করবে অন্যদিকে রিজার্ভ বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এ বাজেটের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের মাধ্যমে আগামী অর্থ বছরে মূল্যস্ফীতির গড় ৬.৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য পূরণ হবে বলে আশা করি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ইতোমধ্যে সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ি শতভাগ জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। ২০০৯ সালের তুলনায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৬ গুনেরবেশি বৃদ্ধি করে বর্তমানে ৩০ হাজার ২৭৭ মেগাওয়াট করা হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এর বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে যার মধ্যে ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানী থেকে উৎপাদন করা হবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ২০০৯ সালে যখন আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে তখনও আমরা ১০ শতাংশ মূল্যস্ফীতির একটা অর্থনীতি পেয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার পরিচালনার দক্ষতার গুণে পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে আমরা সে মূল্যস্ফীতি দমন করে জাতিকে স্থিতিশীল অর্থনীতি উপহার দিয়েছিলাম।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের বিভিন্ন অংশের সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমে এবারের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেও আমরা সক্ষম হব বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। এই বাজেটে মানুষের মৌলিক অধিকার, কৃষি, দেশীয় শিল্প ও সামাজিক নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। যা দেশের মানুষের জীবনমান উন্নত করবে।
তিনি বলেন, বর্তমানের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ হওয়ায় প্রস্তাবিত বাজেটে বিদ্যুতের জন্য বরাদ্দ ৪ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা কম ধরা হয়েছে। জ্বালানীর আমদানি নির্ভরতা হ্রাস করার জন্য নিজস্ব গ্যাস উত্তোলনের নিমিত্তে ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৪৯টি কুপ খনন করা হয়েছে। ২০০৯ সালে আমাদের গ্যাসের উৎপাদন ছিল দৈনিক ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট যা বর্তমানে প্রায় ২ হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হয়েছে। অধিকতর গ্যাস উত্তোলনের জন্য অগভীর সমুদ্রের ২৪টি ব্লকের তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের জন্য এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে পিএসসি স্বাক্ষর করা সম্ভব হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ও ডা.মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক ও সুজিত রায় নন্দী, প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ, উপ দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।























