ভারতের লোকসভায় এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। ১৯৪৬ সালের পর এবারই প্রথমবার স্পিকার পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে সরকার ও বিরোধী দল। ফলে এবার স্পিকার নির্বাচন অন্যবারের চেয়ে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। কারণ, ক্ষমতাসীন এনডিএ জোটের প্রধান অংশীদার বিজেপি এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। লোকসভার স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার পদ নিয়ে সহমত না হলে নির্বাচন অনিবার্য। স্পিকার পদে আজ পর্যন্ত কোনো দিন ভোটাভুটি হয়নি। স্বাধীনতার সময় থেকেই ভারতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভার স্পিকার সর্বসম্মতভাবে নির্বাচিত হয়ে আসছেন। সরকার ও বিরোধী পক্ষের মধ্যে সমঝোতা না হলে এই প্রথম স্পিকার নির্বাচিত হবেন ভোটাভুটির মাধ্যমে। সমঝোতার আশা এ মুহূর্তে ক্ষীণ।
স্পিকার পদে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন বিরোধী ইন্ডিয়া জোট মনোনয়ন দিয়েছে কোদিকুন্নিল সুরেশকে। তিনি কেরালা থেকে আটবারের এমপি। অন্যদিকে এনডিএ জোট মনোনয়ন দিয়েছে সাবেক স্পিকার ওম বিড়লাকে। এমপি সুরেশকে মনোনয়ন দেয়ার ফলে বিরোধী ইন্ডিয়া জোট ও ক্ষমতাসীন এনডিএ’র মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে বিজেপি দায়িত্ব দিয়েছে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ও পার্লামেন্ট বিষয়কমন্ত্রী কিরেন রিজিজুকে। কোটার এমপি ওম বিড়লাকে নতুন করে স্পিকার বানাতে অন্যদের সম্মত করানোর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাদেরকে।
শুরুতে ওম বিড়লাকে স্পিকার হিসেবে সমর্থন দিতে আগ্রহী ছিল ইন্ডিয়া ব্লক। তবে সেক্ষেত্রে তাদের দাবি ছিল ডেপুটি স্পিকার পদ দিতে হবে বিরোধী দলের একজন সদস্যকে। পার্লামেন্টের রীতি বজায় রাখার জন্য তারা এ দাবি তুলেছিল। স্পিকার পদে সহমতের চেষ্টায় বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব দায়িত্ব দিয়েছিল প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ও সংসদীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজুকে। তারা গতকাল কথা বলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের সঙ্গে। কংগ্রেস সভাপতি তাদের জানান, বিজেপি-মনোনীত প্রার্থীকে মেনে নিতে তাদের আপত্তি নেই, যদি সংসদীয় রীতি মেনে ডেপুটি স্পিকারের পদটি বিরোধীদের ছাড়া হয়। ইন্ডিয়া’র সব শরিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে তিনি সিদ্ধান্তের কথা জানাবেন। খাড়গে অখিলেশ যাদব, এম কে স্ট্যালিন ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেন। প্রত্যেকেই বলেন, ডেপুটি স্পিকার পদ পেলে স্পিকার পদে বিজেপি প্রার্থীকে সমর্থন জানাবেন। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও ওই এক শর্ত দেন। কিন্তু তারপর রাজনাথ সিং আর খাড়গের সঙ্গে কথা বলেননি বলে রাহুল জানান। এর আগে সরকার ও দেশ সবার সম্মতি নিয়ে চালানোর প্রয়োজনীয়তা জোর দিয়ে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার ২৪ ঘন্টা পরেই বিজেপি নেতৃত্বাধীন নতুন জোট ও বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের মধ্যে অচলাবস্থা দেখা দেয়। ভোটাভুটি হলে এনডিএ প্রার্থীর জয় হওয়ার কথা। সরকারপক্ষে রয়েছে ২৯৩ জনের সমর্থন, বিরোধীপক্ষে ২৩২। জয়ের জন্য প্রয়োজন সাধারণ গরিষ্ঠতা।
এ প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মুখে সহমতের কথা বলেন, অথচ কাজের সময় ওই পথে হাঁটেন না। সোমবারই তিনি বলেছিলেন, বিরোধীদের উচিত সরকারের সঙ্গে গঠনমূলক সহযোগিতা করা। বিরোধীরা তা করতে প্রস্তুত। তাই রাজনাথ সিংকে বলা হয়েছিল, রীতি অনুযায়ী সরকার ডেপুটি স্পিকার পদ বিরোধীদের ছেড়ে দিলে স্পিকার পদে সরকারি প্রার্থীকে মেনে নেওয়া হবে। রাজনাথ সিং বলেছিলেন, তিনি কংগ্রেস সভাপতিকে ফোন করবেন। কিন্তু তা করেননি। ফোন না করে সরকার খাড়গেজিকে অপমান করেছে।
সংবিধানের প্রতি ভালোবাসা দেখানোর অধিকার কংগ্রেসের নেই : মোদি
আবারও জরুরি অবস্থা নিয়ে কংগ্রেসকে কটাক্ষ করলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গতকাল ছিল জরুরি অবস্থার ৫০তম বর্ষপূর্তি। অষ্টাদশ লোকসভার দ্বিতীয় দিনের অধিবেশন শুরু হওয়ার আগে সকালে নিজের এক্স হ্যান্ডলে একাধিক টুইট করে জরুরি অবস্থার ‘কালো দিনের’ কথা মনে করিয়ে দেন মোদি। ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। এছাড়াও কংগ্রেসকে কটাক্ষ করে মোদি লেখেন, ‘যারা জরুরি অবস্থা জারি করেছিল, তাদের সংবিধানের প্রতি ভালোবাসা দেখানোর কোনো অধিকার নেই।’
গণমাধ্যমটির তথ্য অনুসারে, ১৯৭৫ সালের ২৫ জুন দেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর আমলে ভারতে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। সাময়িকভাবে সব নাগরিক অধিকার তুলে নেওয়া হয়। বিরোধী নেতাদের জেলবন্দি করা হয়। সংবাদমাধ্যমের ওপরও নজরদারি শুরু হয়। এই পরিস্থিতি চলেছিল টানা ২১ মাস, ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত। ১৯৭৭ সালের লোকসভা নির্বাচনে ইন্দিরার নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। সেই প্রসঙ্গ উত্থাপন করে মঙ্গলবার মোদি লেখেন, ‘জরুরি অবস্থার কালো দিন আমাদের মনে করিয়ে দেয়, কিভাবে কংগ্রেস মৌলিক স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিল এবং ভারতের সংবিধানকে পদদলিত করেছিল।’ ক্ষমতায় টিকে থাকতে কংগ্রেস সরকার সেই সময় সব গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে অস্বীকার করেছিল বলে দাবি করেন মোদি। সংসদ সদস্য হিসেবে শপথগ্রহণের আগে জরুরি অবস্থার প্রসঙ্গ তুলে সোমবারও কংগ্রেসকে আক্রমণ করেন মোদি। তিনি বলেন, ‘৫০ বছর আগে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিল। সেটা দেশের অন্ধকার অধ্যায়। গণতন্ত্রের ওপর কালো দাগ। আর কখনো সেই আঁধার নেমে আসবে না এই দেশে।’


























