০৪:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কৃষকদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে গতি নেই

❖ দক্ষ জনবলের অভাবে বিঘ্ন প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা
❖ প্রয়োজনীয় তথ্য-জ্ঞানের অভাবে পিছিয়ে পড়ছেন কৃষকরা
❖ এক বছরে পেশা ছেড়েছেন ১৬ লাখ কৃষক
❖ যন্ত্রপাতি ও পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে দিশাহারা কৃষক
❖ দেশে ডিপ্লোমা কোর্সধারী জনবলের সংখ্যা বাড়ছে

⮞দেশের বাইরেও বাংলাদেশের দক্ষ কৃষকের চাহিদা রয়েছে- কৃষিবিদ বাদল চন্দ্র বিশ্বাস, মহাপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর

বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। এ দেশে কৃষির সম্ভাবনা অনেক বেশি। তবে দিনদিন এই পেশা থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। বর্তমান সরকার কৃষির প্রতি জোর দিচ্ছে। কিন্তু এই পেশার সঙ্গে জড়িত প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকের সঠিক শিক্ষা, দক্ষ জনবলের অভাব ও আধুনিক কৃষির আদ্যোপান্ত না জানায় ভেস্তে যায় উৎপাদন পরিকল্পনা। বর্তমানে কৃষি যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে সকল পণ্যের দাম বেশি যার কারণে কৃষকরা হিমশিম খাচ্ছে এর সঙ্গে মানিয়ে নিতে। যার ফলে কৃষকদের প্রত্যাশিত আয় না আসায় হতাশ হয়ে পেশা ছাড়ছেন অনেকে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী গত এক বছরে কৃষি পেশা ছেড়েছেন প্রায় ১৬ লাখ কৃষক। বাংলাদেশের দক্ষ কৃষকের চাহিদা উন্নত দেশগুলোতেও। কিন্তু যথাযথ প্রশিক্ষণ না থাকায় পাঠানো যায় না প্রশিক্ষিত কৃষক। এমন পরিস্থিতিতে দেশের অল্পশিক্ষিত কৃষকদের শিক্ষিত করতে দেশের তিন উপজেলায় তিনটি কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (এটিআই) করার প্রস্তাব করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। ন্যূনতম মাধ্যমিক পাস কৃষকরা এতে ডিপ্লোমা করার সুযোগ পাবেন।

বর্তমানে বিভিন্ন সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা থেকে শুরু করে জলবায়ু পরির্বতনের কারণে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে কৃষকরা। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য কৃষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু বিভিন্ন সময় নানা কর্মসূচি গ্রহণ করলেও তার বাস্তবমুখী কোনো সুফল ভোগ করতে পারছে না। এই অবস্থায় বর্তমান উন্নত বিশে^র সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হলে মাঠ পর্যায়ে কৃষির উপর আরও জোর দিতে হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) তথ্যমতে, চাঁদপুরের মতলব উত্তর, ফেনী সদর উপজেলা, টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায় তিনটি এটিআই স্থাপন করার প্রস্তাব করেছে অধিদপ্তরটি। এতে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৬৪৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এ ব্যয় সম্পূর্ণ সরকারি অনুদানে। প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০২৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এ প্রকল্পের মূল কার্যক্রমের একটি রয়েছে কৃষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। ১৫ দিনের এ প্রশিক্ষণে ১৫০টি ব্যাচের কৃষকদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে। এ ছাড়া অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ, কৃষক, এটিআই অফিসার প্রশিক্ষণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যয় বেশি, কম উৎপাদন, বাজার সুবিধার অপ্রতুলতাসহ বিভিন্ন কারণে কৃষিপণ্য তার ন্যায্যমূল্য হারাচ্ছে। ক্ষুদ্র কৃষক তাদের জীবিকা নির্বাহে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। বর্তমান কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থাকে অধিকতর টেকসই এবং বিজ্ঞানভিত্তিক করে গড়ে তোলার পাশাপাশি একটি টেকসই বাণিজ্যিক কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থার প্রচলন প্রয়োজন। এ প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, অল্পশিক্ষিত কৃষকদের শিক্ষিত করতে এবং গ্রামীণ উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে প্রয়োজনীয় কারিগরি জ্ঞান সরবরাহ নিশ্চিত করতে মাঠপর্যায়ে ডিপ্লোমা কৃষিবিদের সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। ডিপ্লোমা কৃষিবিদের সংখ্যা বৃদ্ধিতে, কৃষকদের জ্ঞানের পরিসীমা বৃদ্ধি এবং দক্ষ জনবল ও উদ্যোক্তা সৃষ্টির মাধ্যমে কৃষি বাণিজ্যিকীকরণে এটিআই অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বিবেচনায় এ প্রকল্পটির প্রস্তাব করা হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, দেশে কৃষির অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু দেশেই নয়, দেশের বাইরেও বাংলাদেশের দক্ষ কৃষকের চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বলছে, আপনারা কৃষির কারিগরি লোক দিন, যাতে আমাদের এলাকাগুলো চাষের আওতায় আনতে পারি। আমাদের রাষ্ট্রদূতরাও সেখানে যোগাযোগ করছেন কীভাবে এ টেকনিক্যাল জনবল নেয়া যায়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, দেশে ডিপ্লোমা কোর্সধারী জনবলের সংখ্যা বাড়ছে। দেশে বর্তমানে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৪৮৭ জন ডিপ্লোমা সনদধারী রয়েছেন। এক যুগে এ হার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে ডিপ্লোমাধারী বতর্মানে দশমিক ৮১ শতাংশ, যেটি ২০১১ সালেও ছিল দশমিক ৭১ শতাংশ। অন্যদিকে দেশে কৃষকের সংখ্যা এক বছরে কমেছে ১৫ লাখ ৮০ হাজার। কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের প্রভাব, জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণে এ হার আরো কমার শঙ্কা রয়েছে। তবে কৃষিবিদরা বলছেন, দেশে পেশাগত কৃষক কমলেও দক্ষ জনগোষ্ঠী বাণিজ্যিক কৃষিতে আসছেন বেশি হারে।

জনপ্রিয় সংবাদ

নোবিপ্রবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি আরিফুর রহমান, সেক্রেটারি আবদুর রহমান

কৃষকদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে গতি নেই

আপডেট সময় : ০৭:৩৩:২৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ জুলাই ২০২৪

❖ দক্ষ জনবলের অভাবে বিঘ্ন প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা
❖ প্রয়োজনীয় তথ্য-জ্ঞানের অভাবে পিছিয়ে পড়ছেন কৃষকরা
❖ এক বছরে পেশা ছেড়েছেন ১৬ লাখ কৃষক
❖ যন্ত্রপাতি ও পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে দিশাহারা কৃষক
❖ দেশে ডিপ্লোমা কোর্সধারী জনবলের সংখ্যা বাড়ছে

⮞দেশের বাইরেও বাংলাদেশের দক্ষ কৃষকের চাহিদা রয়েছে- কৃষিবিদ বাদল চন্দ্র বিশ্বাস, মহাপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর

বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। এ দেশে কৃষির সম্ভাবনা অনেক বেশি। তবে দিনদিন এই পেশা থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। বর্তমান সরকার কৃষির প্রতি জোর দিচ্ছে। কিন্তু এই পেশার সঙ্গে জড়িত প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকের সঠিক শিক্ষা, দক্ষ জনবলের অভাব ও আধুনিক কৃষির আদ্যোপান্ত না জানায় ভেস্তে যায় উৎপাদন পরিকল্পনা। বর্তমানে কৃষি যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে সকল পণ্যের দাম বেশি যার কারণে কৃষকরা হিমশিম খাচ্ছে এর সঙ্গে মানিয়ে নিতে। যার ফলে কৃষকদের প্রত্যাশিত আয় না আসায় হতাশ হয়ে পেশা ছাড়ছেন অনেকে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী গত এক বছরে কৃষি পেশা ছেড়েছেন প্রায় ১৬ লাখ কৃষক। বাংলাদেশের দক্ষ কৃষকের চাহিদা উন্নত দেশগুলোতেও। কিন্তু যথাযথ প্রশিক্ষণ না থাকায় পাঠানো যায় না প্রশিক্ষিত কৃষক। এমন পরিস্থিতিতে দেশের অল্পশিক্ষিত কৃষকদের শিক্ষিত করতে দেশের তিন উপজেলায় তিনটি কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (এটিআই) করার প্রস্তাব করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। ন্যূনতম মাধ্যমিক পাস কৃষকরা এতে ডিপ্লোমা করার সুযোগ পাবেন।

বর্তমানে বিভিন্ন সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা থেকে শুরু করে জলবায়ু পরির্বতনের কারণে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে কৃষকরা। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য কৃষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু বিভিন্ন সময় নানা কর্মসূচি গ্রহণ করলেও তার বাস্তবমুখী কোনো সুফল ভোগ করতে পারছে না। এই অবস্থায় বর্তমান উন্নত বিশে^র সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হলে মাঠ পর্যায়ে কৃষির উপর আরও জোর দিতে হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) তথ্যমতে, চাঁদপুরের মতলব উত্তর, ফেনী সদর উপজেলা, টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায় তিনটি এটিআই স্থাপন করার প্রস্তাব করেছে অধিদপ্তরটি। এতে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৬৪৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এ ব্যয় সম্পূর্ণ সরকারি অনুদানে। প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০২৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এ প্রকল্পের মূল কার্যক্রমের একটি রয়েছে কৃষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। ১৫ দিনের এ প্রশিক্ষণে ১৫০টি ব্যাচের কৃষকদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে। এ ছাড়া অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ, কৃষক, এটিআই অফিসার প্রশিক্ষণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যয় বেশি, কম উৎপাদন, বাজার সুবিধার অপ্রতুলতাসহ বিভিন্ন কারণে কৃষিপণ্য তার ন্যায্যমূল্য হারাচ্ছে। ক্ষুদ্র কৃষক তাদের জীবিকা নির্বাহে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। বর্তমান কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থাকে অধিকতর টেকসই এবং বিজ্ঞানভিত্তিক করে গড়ে তোলার পাশাপাশি একটি টেকসই বাণিজ্যিক কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থার প্রচলন প্রয়োজন। এ প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, অল্পশিক্ষিত কৃষকদের শিক্ষিত করতে এবং গ্রামীণ উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে প্রয়োজনীয় কারিগরি জ্ঞান সরবরাহ নিশ্চিত করতে মাঠপর্যায়ে ডিপ্লোমা কৃষিবিদের সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। ডিপ্লোমা কৃষিবিদের সংখ্যা বৃদ্ধিতে, কৃষকদের জ্ঞানের পরিসীমা বৃদ্ধি এবং দক্ষ জনবল ও উদ্যোক্তা সৃষ্টির মাধ্যমে কৃষি বাণিজ্যিকীকরণে এটিআই অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বিবেচনায় এ প্রকল্পটির প্রস্তাব করা হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, দেশে কৃষির অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু দেশেই নয়, দেশের বাইরেও বাংলাদেশের দক্ষ কৃষকের চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বলছে, আপনারা কৃষির কারিগরি লোক দিন, যাতে আমাদের এলাকাগুলো চাষের আওতায় আনতে পারি। আমাদের রাষ্ট্রদূতরাও সেখানে যোগাযোগ করছেন কীভাবে এ টেকনিক্যাল জনবল নেয়া যায়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, দেশে ডিপ্লোমা কোর্সধারী জনবলের সংখ্যা বাড়ছে। দেশে বর্তমানে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৪৮৭ জন ডিপ্লোমা সনদধারী রয়েছেন। এক যুগে এ হার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে ডিপ্লোমাধারী বতর্মানে দশমিক ৮১ শতাংশ, যেটি ২০১১ সালেও ছিল দশমিক ৭১ শতাংশ। অন্যদিকে দেশে কৃষকের সংখ্যা এক বছরে কমেছে ১৫ লাখ ৮০ হাজার। কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের প্রভাব, জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণে এ হার আরো কমার শঙ্কা রয়েছে। তবে কৃষিবিদরা বলছেন, দেশে পেশাগত কৃষক কমলেও দক্ষ জনগোষ্ঠী বাণিজ্যিক কৃষিতে আসছেন বেশি হারে।