০৪:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিজেপির হিন্দুত্ব নিয়ে রাহুল গান্ধীর মন্তব্যে উত্তাল লোকসভা

➤ ভারত থেকে বিদায় নিল ৪২০

ভারতের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) হিন্দুত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দেশটির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভার বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধী। গত সোমবার বিজেপিকে উদ্দেশ করে রাহুল গান্ধী বলেছেন, তারা প্রকৃত হিন্দুই নয়। সদ্য নির্বাচনের পর লোকসভার প্রথম অধিবেশনে অংশ নিয়ে প্রথমবারের মতো বক্তব্য দিতে গিয়ে রাহুল এই মন্তব্য করেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লোকসভা অধিবেশনে অংশ নিয়ে বিজেপির নেতৃত্বে জাতীয় গণতান্ত্রিক জোটের সরকারকে বিভিন্ন ইস্যুতে তীব্রভাবে আক্রমণ করেন রাহুল গান্ধী। এর মধ্যে দেশটির জাতীয় মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস, সশস্ত্র বাহিনীর অগ্নিবীর প্রকল্প, কৃষিসংক্রান্ত বিভিন্ন ইস্যু উল্লেখযোগ্য।

রাহুল গান্ধী বলেন, অভয়মুদ্রা হলো কংগ্রেসের প্রতীক…অভয়মুদ্রা হলো নির্ভীকতার প্রতীক, এটি আশ্বাস ও নিরাপত্তার প্রতীক, যা ভয়কে দূর করে এবং হিন্দু, ইসলাম, শিখ, বৌদ্ধ এবং অন্যান্য ভারতীয় ধর্মকে ঐশ্বরিক সুরক্ষা ও নিশ্চয়তা প্রদান করে। আমাদের সব মহাপুরুষই অহিংসার কথা বলেছেন, ভয়ের বিনাশের কথা বলেছেন…’ এ সময় হিন্দু ধর্মের দেবতা শিবের ছবি হাতে নিয়ে তিনি বিজেপিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘কিন্তু যারা নিজেদের হিন্দু বলে দাবি করে তারা শুধু হিংসা, বিদ্বেষ ও অসত্যের কথা বলে…আপ (বিজেপি) হিন্দু হো হি নেহি… (অর্থাৎ, আপনারা হিন্দুই না)।

হিন্দুধর্ম নিয়ে রাহুল গান্ধীর এই মন্তব্য লোকসভায় ব্যাপক হট্টগোলের সৃষ্টি করে। তার মন্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া জানানো হয় ট্রেজারি বেঞ্চ থেকে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও তার মন্তব্যের আপত্তি জানান। মোদি বলেন, পুরো হিন্দু সম্প্রদায়কে হিংস্র বলা একটি অত্যন্ত গুরুতর বিষয়। গণতন্ত্র এবং সংবিধান আমাকে শিখিয়েছে যে, আমাকে বিরোধীদলীয় নেতাকে গুরুত্বসহকারে নিতে হবে। রাহুল গান্ধীর মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তাকে ক্ষমা চাইতে বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও। তিনি বলেন, বিরোধী দলের নেতা স্পষ্টভাবে বলেছেন, যারা নিজেদের হিন্দু বলে দাবি করে, তারা হিংসার কথা বলে এবং সহিংসতা চালায়। তিনি জানেন না যে, কোটি কোটি মানুষ নিজেদের হিন্দু বলে গর্ব করে। যেকোনো ধর্মের সঙ্গে সহিংসতা যুক্ত করা ভুল। তার ক্ষমা চাওয়া উচিত।

গত সোমবার বিদায় হয়ে গেল ভারতের দণ্ডবিধির ‘ফোর টোয়েন্টি’ বা ‘৪২০’ ধারা। ফলে ব্রিটিশ যুগের ভারতের দণ্ডবিধি আইন বদলে গেল। জালিয়াতি বা প্রতারণার দণ্ড থাকলেও সেই দণ্ড আর দণ্ডবিধির ৪২০ ধারায় নেই। সেই ধারা বদলে গেছে নতুন করে কার্যকর হওয়া ভারতের ‘ন্যায় সংহিতা’ আইনে। ভারতে দণ্ডবিধি আইনকে আমূল পরিবর্তন করে চালু করা হয়েছে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা বা বিএনএস। এই বিএনএস অনুযায়ী, প্রতারণা ও জালিয়াতির ধারা বদলে হয়েছে ৩১৮ (৪) ধারা। আবার গৃহবধূ নির্যাতনের ধারা ছিল দণ্ডবিধির ৪৯৮ এ। নতুন কার্যকর হওয়া ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় সেই ধারা বদলে হয়েছে ৮৫। এ ছাড়া কিছু দণ্ডের ধারা বদলে গেছে ন্যায় সংহিতায়।

১৮৬০ সালে তৈরি হয় ‘ইন্ডিয়ান পেনাল কোড’ (ভারতীয় দণ্ডবিধি)। গত সোমবার ভারতে কার্যকর হয়েছে এই ন্যায় সংহিতা। তবে ৩০ জুন রাত ১২টার আগে সংগঠিত অপরাধের বিচার হবে ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুয়ায়ী, আর রাত ১২টা পর সংগঠিত অপরাধের জন্য এই আইন কার্যকর হবে নতুন ন্যায় সংহিতার ধারা অনুযায়ী। যদিও এই আইনের বদলকে একদল আইনজীবীও মেনে নেয়নি। আলিপুর, কলকাতার ব্যাঙ্কশাল কোর্ট ও শিয়ালদহের আদালতে আইনজীবীদের একাংশ এই আইনের প্রতিবাদ করে কালো ব্যাজ পরলেও আবার অনেকেই মামলায় শামিল হয়েছেন। তবে গতকাল বামফ্রন্ট, এসইউসিআইর ছাত্র সংগঠন ডিএসও, মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর, সিপিআই (এমএল) এবং নতুনকরে কলকাতায় গড়া ‘সংগঠন বাঁচাও সমিতি’ কলকাতায় এই আইনের প্রতিবাদে সভা সমাবেশ করেছে।

এদিকে এই আইন বলবৎ হওয়ার পর কলকাতা পুলিশের সদর দপ্তর লালবাজারে একটি ভিডিও কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়। সেখানে পুলিশ কর্মকর্তাসহ আইনজীবীরা অংশ নেন। এখানেই এই আইন নিয়ে আলোচনা হয়। জানানো হয় এই আইন কার্যকর হওয়ার পর প্রথম দিনেই কলকাতা পৌর এলাকায় দুই শতাধিক মামলা হয়েছে। আইনজীবীদের একাংশ মনে করছেন, এই আইন কার্যকর হওয়ায় অনেক আইনজীবী ও মক্কেল সমস্যায় পড়বেন। অনেকে আবার বলছেন, এই আইনে সংশোধন এনে বহু আইনকে আরও কড়া করা হয়েছে। দণ্ডের পরিধি বাড়ানো হয়েছে। গণপিটুনির মতো অপরাধের শাস্তি যাবজ্জীবন থেকে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত করার বিধান রাখা হয়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

বিজেপির হিন্দুত্ব নিয়ে রাহুল গান্ধীর মন্তব্যে উত্তাল লোকসভা

আপডেট সময় : ০৮:৪২:০৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ জুলাই ২০২৪

➤ ভারত থেকে বিদায় নিল ৪২০

ভারতের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) হিন্দুত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দেশটির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভার বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধী। গত সোমবার বিজেপিকে উদ্দেশ করে রাহুল গান্ধী বলেছেন, তারা প্রকৃত হিন্দুই নয়। সদ্য নির্বাচনের পর লোকসভার প্রথম অধিবেশনে অংশ নিয়ে প্রথমবারের মতো বক্তব্য দিতে গিয়ে রাহুল এই মন্তব্য করেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লোকসভা অধিবেশনে অংশ নিয়ে বিজেপির নেতৃত্বে জাতীয় গণতান্ত্রিক জোটের সরকারকে বিভিন্ন ইস্যুতে তীব্রভাবে আক্রমণ করেন রাহুল গান্ধী। এর মধ্যে দেশটির জাতীয় মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস, সশস্ত্র বাহিনীর অগ্নিবীর প্রকল্প, কৃষিসংক্রান্ত বিভিন্ন ইস্যু উল্লেখযোগ্য।

রাহুল গান্ধী বলেন, অভয়মুদ্রা হলো কংগ্রেসের প্রতীক…অভয়মুদ্রা হলো নির্ভীকতার প্রতীক, এটি আশ্বাস ও নিরাপত্তার প্রতীক, যা ভয়কে দূর করে এবং হিন্দু, ইসলাম, শিখ, বৌদ্ধ এবং অন্যান্য ভারতীয় ধর্মকে ঐশ্বরিক সুরক্ষা ও নিশ্চয়তা প্রদান করে। আমাদের সব মহাপুরুষই অহিংসার কথা বলেছেন, ভয়ের বিনাশের কথা বলেছেন…’ এ সময় হিন্দু ধর্মের দেবতা শিবের ছবি হাতে নিয়ে তিনি বিজেপিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘কিন্তু যারা নিজেদের হিন্দু বলে দাবি করে তারা শুধু হিংসা, বিদ্বেষ ও অসত্যের কথা বলে…আপ (বিজেপি) হিন্দু হো হি নেহি… (অর্থাৎ, আপনারা হিন্দুই না)।

হিন্দুধর্ম নিয়ে রাহুল গান্ধীর এই মন্তব্য লোকসভায় ব্যাপক হট্টগোলের সৃষ্টি করে। তার মন্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া জানানো হয় ট্রেজারি বেঞ্চ থেকে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও তার মন্তব্যের আপত্তি জানান। মোদি বলেন, পুরো হিন্দু সম্প্রদায়কে হিংস্র বলা একটি অত্যন্ত গুরুতর বিষয়। গণতন্ত্র এবং সংবিধান আমাকে শিখিয়েছে যে, আমাকে বিরোধীদলীয় নেতাকে গুরুত্বসহকারে নিতে হবে। রাহুল গান্ধীর মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তাকে ক্ষমা চাইতে বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও। তিনি বলেন, বিরোধী দলের নেতা স্পষ্টভাবে বলেছেন, যারা নিজেদের হিন্দু বলে দাবি করে, তারা হিংসার কথা বলে এবং সহিংসতা চালায়। তিনি জানেন না যে, কোটি কোটি মানুষ নিজেদের হিন্দু বলে গর্ব করে। যেকোনো ধর্মের সঙ্গে সহিংসতা যুক্ত করা ভুল। তার ক্ষমা চাওয়া উচিত।

গত সোমবার বিদায় হয়ে গেল ভারতের দণ্ডবিধির ‘ফোর টোয়েন্টি’ বা ‘৪২০’ ধারা। ফলে ব্রিটিশ যুগের ভারতের দণ্ডবিধি আইন বদলে গেল। জালিয়াতি বা প্রতারণার দণ্ড থাকলেও সেই দণ্ড আর দণ্ডবিধির ৪২০ ধারায় নেই। সেই ধারা বদলে গেছে নতুন করে কার্যকর হওয়া ভারতের ‘ন্যায় সংহিতা’ আইনে। ভারতে দণ্ডবিধি আইনকে আমূল পরিবর্তন করে চালু করা হয়েছে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা বা বিএনএস। এই বিএনএস অনুযায়ী, প্রতারণা ও জালিয়াতির ধারা বদলে হয়েছে ৩১৮ (৪) ধারা। আবার গৃহবধূ নির্যাতনের ধারা ছিল দণ্ডবিধির ৪৯৮ এ। নতুন কার্যকর হওয়া ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় সেই ধারা বদলে হয়েছে ৮৫। এ ছাড়া কিছু দণ্ডের ধারা বদলে গেছে ন্যায় সংহিতায়।

১৮৬০ সালে তৈরি হয় ‘ইন্ডিয়ান পেনাল কোড’ (ভারতীয় দণ্ডবিধি)। গত সোমবার ভারতে কার্যকর হয়েছে এই ন্যায় সংহিতা। তবে ৩০ জুন রাত ১২টার আগে সংগঠিত অপরাধের বিচার হবে ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুয়ায়ী, আর রাত ১২টা পর সংগঠিত অপরাধের জন্য এই আইন কার্যকর হবে নতুন ন্যায় সংহিতার ধারা অনুযায়ী। যদিও এই আইনের বদলকে একদল আইনজীবীও মেনে নেয়নি। আলিপুর, কলকাতার ব্যাঙ্কশাল কোর্ট ও শিয়ালদহের আদালতে আইনজীবীদের একাংশ এই আইনের প্রতিবাদ করে কালো ব্যাজ পরলেও আবার অনেকেই মামলায় শামিল হয়েছেন। তবে গতকাল বামফ্রন্ট, এসইউসিআইর ছাত্র সংগঠন ডিএসও, মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর, সিপিআই (এমএল) এবং নতুনকরে কলকাতায় গড়া ‘সংগঠন বাঁচাও সমিতি’ কলকাতায় এই আইনের প্রতিবাদে সভা সমাবেশ করেছে।

এদিকে এই আইন বলবৎ হওয়ার পর কলকাতা পুলিশের সদর দপ্তর লালবাজারে একটি ভিডিও কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়। সেখানে পুলিশ কর্মকর্তাসহ আইনজীবীরা অংশ নেন। এখানেই এই আইন নিয়ে আলোচনা হয়। জানানো হয় এই আইন কার্যকর হওয়ার পর প্রথম দিনেই কলকাতা পৌর এলাকায় দুই শতাধিক মামলা হয়েছে। আইনজীবীদের একাংশ মনে করছেন, এই আইন কার্যকর হওয়ায় অনেক আইনজীবী ও মক্কেল সমস্যায় পড়বেন। অনেকে আবার বলছেন, এই আইনে সংশোধন এনে বহু আইনকে আরও কড়া করা হয়েছে। দণ্ডের পরিধি বাড়ানো হয়েছে। গণপিটুনির মতো অপরাধের শাস্তি যাবজ্জীবন থেকে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত করার বিধান রাখা হয়েছে।