◉ ভোট গ্রহণ শুরু, ফলাফল ঘোষণা আজ
◉ আসন ৬৫০, ভোটার ৪ কোটি ৬০ লাখ, প্রার্থী রেকর্ডসংখ্যক
◉ প্রথমবারের মতো ফটো আইডি দেখাতে হচ্ছে ভোটারদের
যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে গতকাল স্থানীয় সময় সকাল সাতটায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। একটানা চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত। রাত ১১টার দিকেই প্রথম আসনের ফলাফল ঘোষণা করা হবে আর শুক্রবার স্থানীয় সময় ৯টার মধ্যেই অধিকাংশ আসনের ফলাফল জানা যাবে। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আগামী পাঁচ বছরের জন্য হাউস অব কমন্সের ৬৫০ জন এমপিকে বেছে নেবেন ভোটাররা। এবারের নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত ভোটার প্রায় ৪ কোটি ৬০ লাখ। নির্বাচনে ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত ৯৮টি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করছে। তবে ৩৫টি রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থীর সংখ্যা মাত্র একজন করে। ২০১০ সালের নির্বাচনে ৪১৫০ জন প্রার্থীর রেকর্ড ভেঙে এবার ৪৫১৫ জন প্রার্থী হয়েছেন। একেকটি আসনে গড়ে সাতজন করে প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৩১৭টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন ৪৫৯ জন। ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পরপরই গণনা শুরু হবে। নিয়ম অনুযায়ী, সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পাওয়া দলকে সরকার গঠন ও দলের নেতাকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আহ্বান জানাবেন যুক্তরাজ্যের রাজা তৃতীয় চার্লস। প্রতিটি জায়গার ফলাফল রাতে এবং আজ সকালে ঘোষণা করা হবে। সরকার গঠনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে অর্ধেকের বেশি অর্থাৎ অন্তত ৩২৬টি আসনে জয় পেতে হবে।
দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পাওয়া দল পার্লামেন্টে প্রধান বিরোধী দল হবে। আর দলটির নেতা প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা হবেন। তবে নির্বাচনে যদি কোনো দলই সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন না পায়, তখন সেটি ঝুলন্ত পার্লামেন্ট হবে। এমন অবস্থায় তুলনামূলক সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়া দলটি অন্য দলের সঙ্গে জোট সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। অথবা সংখ্যালঘু সরকার হিসেবে কাজ করতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে পার্লামেন্টে কোনো আইন পাস করানোর জন্য অন্যান্য দলের ভোটের ওপর নির্ভর করতে হবে তাদের। ৯ জুলাই নতুন পার্লামেন্ট সদস্যদের শপথ গ্রহণ ও স্পিকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ১৭ জুলাই রাজা তৃতীয় চার্লসের উদ্বোধনী বক্তব্যের মাধ্যমে নতুন সরকারের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে। যুক্তরাজ্যে এবারের সাধারণ নির্বাচনে বিভিন্ন দলের মনোনয়নে প্রার্থী হয়েছেন বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক। এর বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কেউ কেউ। সবমিলিয়ে ৯ নারীসহ অন্তত ৩৪ জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এরই মধ্যে ব্রিটেনে জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও তার স্ত্রী অক্ষতা মূর্তি। ইয়র্কশায়ারে স্থানীয় রিচমন্ড ভোটকেন্দ্রে তাদেরকে ভোট দিতে দেখা গেছে। এ সময় তাদেরকে বেশ হাসিখুশি দেখা যায়। লন্ডনের উত্তরে ক্যামডেনে ভোট দিয়েছেন ব্রিটেনে বিরোধী লেবার দলের নেতা স্যার কিয়ার স্টারমার ও তার স্ত্রী ভিক্টোরিয়া। এর আগে ওই একই কেন্দ্রে ভোট দেন অভিনেতা চার্লস ড্যান্স। সাধারণ ভোটাররা কেন্দ্রে আসা শুরু করেছেন। অনেক ভোটার পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিয়েছেন। জরুরি প্রয়োজনে কোনো ভোটার সরাসরি কেন্দ্র গিয়ে ভোট দিতে না পারলে তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তারা প্রক্সি ভোট দিতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন তাদের যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সময় বিকাল পাঁচটার মধ্যে নিজ নিজ কাউন্সিলের সঙ্গে যোগাযোগ বা অনলাইনে আবেদন করতে বলেছে। যুক্তরাজ্যে এবারই প্রথম সাধারণ নির্বাচনে ভোটারদের ব্যালট পেপার নেওয়ার আগে পরিচয়পত্র দেখাতে হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে ভোটারদের ছবিযুক্ত পরিচয়পত্র নিয়ে ভোটকেন্দ্রে যেতে বলা হয়েছে। গত ২ মের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন পরিচয়পত্র না নিয়ে ভোটকেন্দ্র গেলে তার ভোট গ্রহণ করেননি কর্মকর্তারা। ফলে তাকে ভোট না দিয়ে ফিরে যেতে হয়।
ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনে রাজনৈতিক পালাবদল এক প্রকার নিশ্চিত- জনমত সমীক্ষার ভিত্তিতে এমনটাই ধরে নেওয়া হচ্ছে। সেই হিসাব অনুযায়ী প্রায় ১৪ বছর ধরে একটানা ক্ষমতায় থাকার পর রক্ষণশীল টোরি দলের ভরাডুবি আসন্ন। সে ক্ষেত্রে ঋষি সুনাককে ক্ষমতাচ্যুত করে বিরোধী লেবার পার্টির নেতা কিয়ার স্টার্মার ব্রিটেনের আগামী প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, টোরি পার্টি এতকাল ক্ষমতায় থাকলেও দলের মধ্যে চরম কোন্দল ও অস্থিরতা জনপ্রিয়তা কমার অন্যতম কারণ। গত আট বছরে পাঁচবার প্রধানমন্ত্রী বদল হয়েছে। ফলে ভোটাররা অবশেষে দেশের নেতৃত্বে পরিবর্তন চাইছেন। সক্রিয়ভাবে লেবার পার্টিকে অনেকেই সমর্থন করছেন না। বরং টোরিদের বিরুদ্ধে ক্ষোভের ফায়দা তুলতে পারছে বিরোধী লেবার পার্টি।
কোণঠাসা টোরি পার্টির নেতা ঋষি সুনাক মেয়াদ শেষ হওয়ার কয়েক মাস আগেই সাধারণ নির্বাচন ঘোষণা করে দলের মধ্যেও সমালোচনার মুখে পড়েছেন। দলের জনপ্রিয়তার অভাব কার্যত মেনে নিয়েই নির্বাচনের প্রচারে তিনি সরাসরি পুনর্র্নিবাচনের ডাক না দিয়ে লেবার দল ক্ষমতায় এলে দেশের কী দশা হবে, সে বিষয়ে ভোটারদের সতর্ক করে দিচ্ছেন। ভোটগ্রহণের দিনেও তিনি বলেন, লেবার আগামী সরকার গঠন করলে করের হার বাড়বে, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া থমকে যাবে এবং ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার এই সময়ে ব্রিটেন আরো দুর্বল হয়ে পড়বে।


























