নরসিংদী জেলা প্রতিনিধি
নরসিংদী জেলার মনোহরদী থানার জ্ঞান পিপাসু, পণ্ডিত, সুশীল সমাজ, রাজনীতিবিদ, অনেকের ত্যাগ-তিতীক্ষার ফসল আজকের এই মনোহরদী সরকারি কলেজ। ১৯৬৮ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। জ্ঞানের মশাল জ্বেলে সমাজের অজ্ঞতা দূর করাই ছিল কলেজ গঠনের মূল লক্ষ্য।
স্মৃতি আর বিস্তৃতিতে গাঁথা কলেজের ইতিহাস। রাজনীতি, সংস্কৃতি, ছাত্র সংসদ নির্বাচন, শিক্ষাব্যবস্থা আজও ইতিহাসের ধারক হয়ে আছে। বর্তমানে মনোহরদীর শিক্ষার হার ৬৯ ভাগ। এখানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১০২টি, বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৯টি, কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬টি, জুনিয়র উচ্চ বিদ্যালয় ৬টি, উচ্চ বিদ্যালয় (সহ শিক্ষা) ২৩টি, উচ্চ বিদ্যালয় (বালিকা) ১৪টি, দাখিল মাদ্রাসা ১৩টি, আলিম মাদ্রাসা ৪টি, ফাজিল মাদ্রাসা ৮টি, কলেজ সহপাঠ ৮টি, কারিগরি কলেজ ৩টি। এছাড়াও অনেক কওমি মাদ্রাসা রয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৮ আগস্ট শিল্পমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনের চেষ্টায় মনোহরদী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজটি সরকারি হওয়ার পাশাপাশি তিনটি বিষয় বাংলা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনায় অনার্স খোলা হয়। যার ফলশ্রুতিতে মনোহরদি কলেজটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে রূপান্তরিত হয়।
দেশজুড়ে বিস্তারলাভকারী ডেঙ্গু প্রতিরোধে কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ জানতে সম্প্রতি কলেজের কয়েকজন ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে কথা হয়। তারা বলেন, ভর্তি হওয়ার পর আমাদের হাতেগোনা মাত্র কয়েকটি ক্লাস হয়েছে। ক্লাস এক রকম হয় না বললেই চলে। কলেজের পূর্ব দক্ষিণ কোনা দিয়ে ঢুকতেই পুরাতন চারতলা বিল্ডিং, পূর্বের শিক্ষকদের রুমের চারপাশে ময়লার স্তূপ।
চারতলা বিশিষ্ট প্রধান ভবনে গিয়ে দেখা গেল দোতলা থেকে চারতলার বারান্দায় স্তূপ করে রাখা আছে কিছু ভাঙা বেঞ্চ। কোটি টাকার কম্পিউটার ল্যাব ধুলাবালি আর ময়লায় ধূসর বর্ণ ধারণ করে আছে। বোঝা গেল কয়েক বছরে এই রুমে কেউ ঢুকেনি। হাত ধোয়ার বেসিনগুলোতে সিগারেটের প্যাকেট, বিভিন্ন কোম্পানির ড্রিংকস’র বোতল এবং জমে থাকা পানিÑ যা ডেঙ্গু রোগ বিস্তারের সহায়ক। কোথাও বাথরুমের কল দিয়ে পানি পড়ছে অবিরত। নেই কোনো হাত ধোয়ার সাবান বা স্যানিটাইজেশন। বৈদ্যুতিক বোর্ড ও সুইচ ভাঙা। সিলিং ফ্যানের তার ছেঁড়া। কিন্তু ফ্যান নেই।
২০১৮ সালের ২৮ মার্চ শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর নরসিংদী যে ভবনটি নির্মাণ করে সেই ভবনের চার তলার ছাদ চুয়ে পানি পড়ে। বৃষ্টিতে ভিজে স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে গেছে চার তলার সিলিং।
এ বিষয়ে অধ্যক্ষ গোলাম ফারুককে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এসব কিছু না! উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কথা বলতেই কলেজ সভাপতি এড়িয়ে গেলেন।ইউএনও মো. রেজাউল করিম বলেন, যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কলেজের প্রিন্সিপালকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমি একমাত্র মাউসির কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য।
উল্লেখ্য, মো. গোলাম ফারুক অধ্যক্ষ হিসেবে ২০১২ সালের ১৩ নভেম্বর কলেজে যোগদান করেন। টিফিনের পর একজন সহকারী লেকচারার কেমিস্ট্রি পড়ান। ৭৪ জনের মধ্যে ছাত্রসংখ্যা চারজন। কলেজে নিয়মিত ছাত্রছাত্রী সংখ্যা ১৪০০।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মনোহরদী থানার পার্শ্ববর্তী থানা যেমন কাপাসিয়া, বেলাবো ও কটিয়াদী থেকে এখানে ছাত্রছাত্রীরা এসে পড়াশোনা করত। ছাত্রছাত্রী সংখ্যা বেশি হওয়ায় বিশেষ করে বাংলা এবং ইংরেজি ক্লাসে আসনের জন্য রীতিমতো যুদ্ধ লেগে যেত। নবীনদের বরণ করার জন্য প্রত্যেক রাজনৈতিক দলেরই ছিল নবীন বরণ অনুষ্ঠান। ছিল ছাত্র সংসদ নির্বাচন। ভোটারের সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৫০০ থেকে ৫ হাজারের মতো।
অনেকে মনে করেনÑ মনোহরদী কলেজ প্রগতিশীল রাজনীতির চিন্তাধারার এক মূর্তমান প্রতীক।


























