০৫:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রণক্ষেত্র ঢাবি ক্যাম্পাস, আহত দুই শতাধিক

✦কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের দফায় দফায় সংঘর্ষ
✦থমথমে ঢাবি ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকা
✦সতর্ক অবস্থানে পুলিশ, প্রভোস্ট কাউন্সিলের জরুরি বৈঠকে পাঁচ নির্দেশনা
✦চটগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ, সংঘর্ষ

কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের দফায়-দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিশ্ববদ্যালয়ে। এতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ঢাবি ক্যাম্পাস, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও আশপাশের এলাকা। গতকাল দুপুরের পর থেকে সংঘঠিত এ ঘটনায় সাংবাদিক ও ছাত্রীসহ দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। ঘটনার পর থেকে ক্যাম্পাস ও আবাসিক হলগুলোতে থমথমে পরিস্তিতি বিরাজ করছে। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ক্যাম্পাস এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এছাড়া বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি ভবনে প্রভোস্ট কাউন্সিলের জরুরি বৈঠকে বহিরাগতদের অবস্থান নিষিদ্ধসহ পাঁচটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সোমবার একই স্থানে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ও ছাত্রলীগের সমাবেশ কেন্দ্র করে এ সংঘাতের সূচনা হয়।
সূত্রমতে, রোববার মধ্যরাত থেকেই ঢাবি ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছিলো। কোটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিবাদে আন্দোলনকারীরা মধ্যরাতে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এসময় ছাত্রলীগও সতর্ক অবস্থান নিয়েছিল। পরে দুই পক্ষই রাতে নিজ নিজ ঠিকানায় ফিরে যায়। তবে সোমবার সকাল থেকে ক্যাম্পাসে চলছিল থমথমে পরিস্থিতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ডাকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা ও ছাত্রলীগ। বেলা সোয়া ১২টা থেকে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। পরে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ মিছিল নিয়ে হল পাড়ায় দিকে যান। বিজয় একাত্তর হলে গিয়ে ঢুকতে চাইলে হলের ওপর থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জুতা নিক্ষেপ করে। এতে দুই গ্রুপের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। এরপর আন্দোলনকারীদের মধ্যে যারা রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান করছিলেন তারাও যোগ দেন। এদিকে মধুর ক্যান্টিনের সামনে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগের একটি অংশ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হল, জিয়াউর রহমান হল, বিজয় একাত্তর ও জসীমউদদীন হলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। হলপাড়ায় থেমে থেমে মারামারি, ইটপাটকেল নিক্ষেপ চলতে থাকে। এসময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্রলীগের পাশাপাশি যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীদের জড়ো হতে দেখা যায়। এছাড়া মহানগর ছাত্রলীগ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। পরে সংঘর্ষের একপর্যায়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন। তখন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নেন। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের লাঠি-রড নিয়ে ক্যাম্পাসে মহড়া দিতেও দেখা গেছে। পরে আহতদের চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজে নেওয়া হলেও ছাত্রলীগ হাসাপাতালের গেটে অবস্থান নেয়। বিকাল থেকে বেশ কয়েকবার চেষ্টা চালানোর পর অবশেষে রাত সাড়ে ৭টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ঢুকে হামলা চালায় ছাত্রলীগ। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হেলমেট পরে, লাঠিসোঁটা নিয়ে ঢামেকে প্রবেশ করে। এসময় অনেকের হাতে রড ও চাইনিজ কুড়াল দেখা যায়। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কোটা সংস্কার আন্দোলনে আহত কয়েকজন শিক্ষার্থীর ওপর আবারও হামলা চালায়।
প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত অব্যাহত ছিলো সংঘর্ষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল এলাকায় কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ চলছিলো। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রাত ৮টার পরেও হলের বাইরের সড়কে অবস্থান নিয়ে আছেন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের কেউ হলের বাইরে বের হলে তার ওপর হামলা চালাচ্ছেন। অন্যদিকে হলের ভেতর অবস্থান নিয়ে আছেন আন্দোলনকারীরা।
বিকালে শহীদুল্লাহ হল ও বার্ন ইনস্টিটিউটের মাঝামাঝি স্থানে দেখা যায়, সেখানে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা হেলমেট পরে লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান নিয়েছেন। তারা হলের ভেতর ঢোকার চেষ্টা করছিলেন। তবে হলের ফটকে ও ভবনের ছাদে থাকা আন্দোলনকারীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করছিলেন। সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে সেখানে পুলিশ সদস্যরা আসেন। এরপরও সংঘর্ষ চলতে থাকে।
এদিকে অধ্যাপক আসিফ নজরুল ও লেখক ফরহাদ মজহার শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের দিকে ঠেলে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন। তিনি বলেন, ‘এখানে আসিফ নজরুল আছেন, ফরহাদ মজহার আছেন, তারা বিভিন্নভাবে সংঘর্ষের দিকে ছাত্রদের ঠেলে দিচ্ছেন। আন্দোলনে মেয়েদের ব্যবহার করা হয়েছে। তারা সূর্যসেন হলে হামলা করেছে, বিজয় একাত্তর হলে আক্রমণ করেছে, বঙ্গবন্ধু হলে হামলা করেছে, তারা তো মেয়ে না, তারা শিবির-ছাত্রদলের ক্যাডার। আন্দোলনকারী শিবির-ছাত্রদলের সঙ্গে আদর্শিক লড়াইয়ের অংশ হিসেবে আমরা দাঁড়িয়েছি। এদিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ থেমে গেলেও পুরো ক্যাম্পাসে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
সংঘর্ষের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয় পুলিশ। সংঘর্ষের ঘটনায় হল প্রভোস্টদের নিয়ে জরুরি সভা ডাকে প্রশাসন। এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পাঁচ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভবনে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তিপূর্ণ শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখার জন্য কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে- (১) শিক্ষার্থীরা স্ব স্ব হলে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করবেন; (২) প্রাধ্যক্ষ ও আবাসিক শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিধানে সার্বক্ষণিকভাবে হলে অবস্থান করবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন; (৩) হলগুলোতে কোনও বহিরাগত অবস্থান করতে পারবেন না; (৪) যেকোনও ধরনের গুজব ও অপপ্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে আহ্বান জানানো হ; (৫) সবাইকে নাশকতামূলক কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য বলা হয়েছে, কেউ নাশতকতামূলক কাজে জড়িত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে ঢাকার বাইরে ছাত্রলীগ ও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় চট্টগ্রাম নগরীর দুই নম্বর ষোলশহর এলাকা। বিকাল ৫টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিকাল ৫টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত এ সংঘর্ষ চলছে। এতে ২০ এর অধিক অহত হন বলে জানা গেছে। এদিকে ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীরা কোটা আন্দোলনে যোগ দিতে ক্যাম্পাস থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যের দিকে আসতে চাইলে কলেজ ছাত্রলীগের মেয়েরা তাদের ওপর হামলা উঠেছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

বিপিএল: শোকের ম্যাচে রাজশাহী ওয়ারিয়র্সের বিপক্ষে জিতল ঢাকা

রণক্ষেত্র ঢাবি ক্যাম্পাস, আহত দুই শতাধিক

আপডেট সময় : ০২:২৪:১৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই ২০২৪

✦কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের দফায় দফায় সংঘর্ষ
✦থমথমে ঢাবি ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকা
✦সতর্ক অবস্থানে পুলিশ, প্রভোস্ট কাউন্সিলের জরুরি বৈঠকে পাঁচ নির্দেশনা
✦চটগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ, সংঘর্ষ

কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের দফায়-দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিশ্ববদ্যালয়ে। এতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ঢাবি ক্যাম্পাস, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও আশপাশের এলাকা। গতকাল দুপুরের পর থেকে সংঘঠিত এ ঘটনায় সাংবাদিক ও ছাত্রীসহ দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। ঘটনার পর থেকে ক্যাম্পাস ও আবাসিক হলগুলোতে থমথমে পরিস্তিতি বিরাজ করছে। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ক্যাম্পাস এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এছাড়া বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি ভবনে প্রভোস্ট কাউন্সিলের জরুরি বৈঠকে বহিরাগতদের অবস্থান নিষিদ্ধসহ পাঁচটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সোমবার একই স্থানে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ও ছাত্রলীগের সমাবেশ কেন্দ্র করে এ সংঘাতের সূচনা হয়।
সূত্রমতে, রোববার মধ্যরাত থেকেই ঢাবি ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছিলো। কোটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিবাদে আন্দোলনকারীরা মধ্যরাতে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এসময় ছাত্রলীগও সতর্ক অবস্থান নিয়েছিল। পরে দুই পক্ষই রাতে নিজ নিজ ঠিকানায় ফিরে যায়। তবে সোমবার সকাল থেকে ক্যাম্পাসে চলছিল থমথমে পরিস্থিতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ডাকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা ও ছাত্রলীগ। বেলা সোয়া ১২টা থেকে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। পরে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ মিছিল নিয়ে হল পাড়ায় দিকে যান। বিজয় একাত্তর হলে গিয়ে ঢুকতে চাইলে হলের ওপর থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জুতা নিক্ষেপ করে। এতে দুই গ্রুপের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। এরপর আন্দোলনকারীদের মধ্যে যারা রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান করছিলেন তারাও যোগ দেন। এদিকে মধুর ক্যান্টিনের সামনে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগের একটি অংশ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হল, জিয়াউর রহমান হল, বিজয় একাত্তর ও জসীমউদদীন হলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। হলপাড়ায় থেমে থেমে মারামারি, ইটপাটকেল নিক্ষেপ চলতে থাকে। এসময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্রলীগের পাশাপাশি যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীদের জড়ো হতে দেখা যায়। এছাড়া মহানগর ছাত্রলীগ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। পরে সংঘর্ষের একপর্যায়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন। তখন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নেন। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের লাঠি-রড নিয়ে ক্যাম্পাসে মহড়া দিতেও দেখা গেছে। পরে আহতদের চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজে নেওয়া হলেও ছাত্রলীগ হাসাপাতালের গেটে অবস্থান নেয়। বিকাল থেকে বেশ কয়েকবার চেষ্টা চালানোর পর অবশেষে রাত সাড়ে ৭টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ঢুকে হামলা চালায় ছাত্রলীগ। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হেলমেট পরে, লাঠিসোঁটা নিয়ে ঢামেকে প্রবেশ করে। এসময় অনেকের হাতে রড ও চাইনিজ কুড়াল দেখা যায়। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কোটা সংস্কার আন্দোলনে আহত কয়েকজন শিক্ষার্থীর ওপর আবারও হামলা চালায়।
প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত অব্যাহত ছিলো সংঘর্ষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল এলাকায় কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ চলছিলো। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রাত ৮টার পরেও হলের বাইরের সড়কে অবস্থান নিয়ে আছেন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের কেউ হলের বাইরে বের হলে তার ওপর হামলা চালাচ্ছেন। অন্যদিকে হলের ভেতর অবস্থান নিয়ে আছেন আন্দোলনকারীরা।
বিকালে শহীদুল্লাহ হল ও বার্ন ইনস্টিটিউটের মাঝামাঝি স্থানে দেখা যায়, সেখানে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা হেলমেট পরে লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান নিয়েছেন। তারা হলের ভেতর ঢোকার চেষ্টা করছিলেন। তবে হলের ফটকে ও ভবনের ছাদে থাকা আন্দোলনকারীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করছিলেন। সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে সেখানে পুলিশ সদস্যরা আসেন। এরপরও সংঘর্ষ চলতে থাকে।
এদিকে অধ্যাপক আসিফ নজরুল ও লেখক ফরহাদ মজহার শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের দিকে ঠেলে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন। তিনি বলেন, ‘এখানে আসিফ নজরুল আছেন, ফরহাদ মজহার আছেন, তারা বিভিন্নভাবে সংঘর্ষের দিকে ছাত্রদের ঠেলে দিচ্ছেন। আন্দোলনে মেয়েদের ব্যবহার করা হয়েছে। তারা সূর্যসেন হলে হামলা করেছে, বিজয় একাত্তর হলে আক্রমণ করেছে, বঙ্গবন্ধু হলে হামলা করেছে, তারা তো মেয়ে না, তারা শিবির-ছাত্রদলের ক্যাডার। আন্দোলনকারী শিবির-ছাত্রদলের সঙ্গে আদর্শিক লড়াইয়ের অংশ হিসেবে আমরা দাঁড়িয়েছি। এদিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ থেমে গেলেও পুরো ক্যাম্পাসে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
সংঘর্ষের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয় পুলিশ। সংঘর্ষের ঘটনায় হল প্রভোস্টদের নিয়ে জরুরি সভা ডাকে প্রশাসন। এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পাঁচ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভবনে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তিপূর্ণ শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখার জন্য কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে- (১) শিক্ষার্থীরা স্ব স্ব হলে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করবেন; (২) প্রাধ্যক্ষ ও আবাসিক শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিধানে সার্বক্ষণিকভাবে হলে অবস্থান করবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন; (৩) হলগুলোতে কোনও বহিরাগত অবস্থান করতে পারবেন না; (৪) যেকোনও ধরনের গুজব ও অপপ্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে আহ্বান জানানো হ; (৫) সবাইকে নাশকতামূলক কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য বলা হয়েছে, কেউ নাশতকতামূলক কাজে জড়িত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে ঢাকার বাইরে ছাত্রলীগ ও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় চট্টগ্রাম নগরীর দুই নম্বর ষোলশহর এলাকা। বিকাল ৫টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিকাল ৫টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত এ সংঘর্ষ চলছে। এতে ২০ এর অধিক অহত হন বলে জানা গেছে। এদিকে ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীরা কোটা আন্দোলনে যোগ দিতে ক্যাম্পাস থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যের দিকে আসতে চাইলে কলেজ ছাত্রলীগের মেয়েরা তাদের ওপর হামলা উঠেছে।