ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন “মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম” শীর্ষক প্রকল্পে দীর্ঘ ৩১ বছর যাবৎ কর্মরত বৈষম্যের শিকার, জনবলকে চাকরিতে যোগদানের সময় থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে আত্তীকরণ/রাজস্বকরণের দাবি উঠেছে। এ দাবিতে সংশ্লিষ্টরা রোববার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সামনে অবস্থান ও বিক্ষোভের পর সোমবার সচিবালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। এ বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাত করে তাদের প্রতিনিধিরা দাবির বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন বলেও জানা গেছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর একটি আবেদন জমা দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
গণমাধ্যমে পাঠানো আবেদনে বলা হয়, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন “মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম” প্রকল্পটি ১৯৯৩ সাল থেকে শুরু হয়। প্রকল্পটি ৩১ বছর যাবত অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে দেশব্যাপী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। বর্তমানে ৭ম পর্যায়ে ৭৩,৭৬৮টি শিক্ষা কেন্দ্র ও ২,০৫০টি রিসোর্স সেন্টারের মাধ্যমে ২০২০ সাল থেকে চলমান রয়েছে। দেশব্যাপী বৈষ্যম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মাধ্যমে বৈষম্যের শিকার হওয়া চাকরিজীবী ও আমজনতার উপর জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসা বৈষম্যের অবসান শুরু হয়েছে। প্রকল্পটি জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে সারা দেশের মসজিদ অবকাঠামো ব্যবহার করে দরিদ্র, সুবিধা বঞ্চিত ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশুদেরকে বিনামূল্যে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির হার বৃদ্ধি, শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধ, কিশোর-কিশোরী ও বয়স্কদের পবিত্র কুরআন শিক্ষা, নৈতিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ শিক্ষা প্রদান করে আসছে। বিগত ৩১ বছরে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি শিক্ষার্থীকে নৈতিক ও ধর্মীও শিক্ষা প্রদান করা হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, আলেম-ওলামা ও সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত প্রায় ৮০ হাজার বেকার নারী ও পুরুষের দারিদ্র্য দূরীকরণ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি, মানবিক ও নৈতিকতার উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক তৈরি, সরকারের উন্নয়ন কৌশল সম্পর্কে জনগণকে ধারণা প্রদান ও উন্নয়ন কর্মসূচিতে সম্পৃক্তকরণে এ প্রকল্পটি ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে।
প্রকল্পের ১ম ও ২য় পর্যায়ে নিয়োগপ্রাপ্ত জনবল ইতোমধ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে ভূতাপেক্ষভাবে আত্তীকরণ/ রাজস্বখাতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পের ৩য়, ৪র্থ, ৫ম ও ৬ষ্ঠ পর্যায়ের জনবল দীর্ঘদিন কাজ করার পরও তাদেরকে রাজস্বখাতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। প্রকল্পের ৩য় পর্যায় থেকে পর্যায়ক্রমে পরবর্তীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কোন জনবলের বার্ষিক বেতন- ভাতা বৃদ্ধি করা বা পদোন্নতি হয়নি। সম্প্রতি প্রকল্পের ৩য় থেকে ৬ষ্ঠ পর্যায়ের জনবলকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে আত্তীকরণ/ রাজস্বকরণের লক্ষ্যে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে, যার কোন অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি। উল্লেখ্য অত্র প্রকল্পে ৭ম পর্যায়ে ৭১ জন জনবল নতুন করে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম বাস্তবায়নে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সমন্বয়পূর্বক প্রতিটি কাজে প্রকল্পের জনবলই মুখ্য ভূমিকা পালন করে। সরকারের প্রতিটি দপ্তরের কর্মচারীদের মত সমহারে কাজ করেও কেবল প্রকল্পে কর্মরত থাকার কারণে বেতন বৈষম্যের শিকার হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। প্রকল্পের বিদ্যমান জনবল সরকারি চাকরির বয়স অত্রিক্রম করার কারণে প্রকল্প শেষে চাকরি হারানোর ভয়ে চরম হতাশায় জীবনযাপন করছে। প্রকল্পের বঞ্চিত ও হতাশাগ্রস্ত ৬৩২ জন নিয়মিত জনবলকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে আত্তীকরণ/রাজস্বখাতে স্থানান্তর করা হলে তারা মাঠ পর্যায়ে সরকারের সকল পলিসি বাস্তবায়নে অধিকতর সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে।
মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পে বর্তমানে কর্মরত জনবলের পদভিত্তিক সংখ্যা: সহকারী পরিচালক- ০৫ জন, হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা-০১ জন, ফিল্ড অফিসার-৬৩ জন, উচ্চমান সহকারী-০৩ জন, হিসাব রক্ষক-০২, মাস্টার ট্রেইনার-৬১ জন, ফিল্ড সুপারভাইজার-৪১৮, স্টোর কিপার-০১ জন, কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক কাম অফিস সহকারী-৫৫, আর এন্ড ডি ক্লার্ক-০১ জন, ড্রাইভার-১৩ জন, ডেসপাস রাইডার কাম ম্যাসেঞ্জার-০১ জন, অফিস সহায়ক-০৪ জন, ক্লিনার-০১ জন, সুইপার-০১ জন, নাইটগার্ড-০২, সর্বমোট- ৬৩২ জন।
এমতাবস্থায়, মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পের ৩য়, ৪র্থ, ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম পর্যায়ে কর্মরত এই ৬৩২ জন নিয়মিত জনবলকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে আত্তীকরণ/রাজস্বখাতে স্থানান্তর বিষয়ে আশু পদক্ষেপ কামনা করেন প্রকল্পের আওতায় কর্মরতরা


























